-সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুনিস মুর্শেদ
সাম্প্রতিককালে অত্যন্ত আশংকার সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী ও ইসলামের শত্রু কুরআন শরীফের অনুবাদের নামে বিকৃত বঙ্গানুবাদ, ‘বাংলা কুরআন শরীফ’ নাম দিয়ে জনগণের কাছে প্রচার-প্রসারে লিপ্ত হয়েছে; এবং এদের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন বই মেলায়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরী, অফিস, আদালতসহ গ্রামে-গঞ্জে বিনামূল্যে লিফলেট, পুস্তিকা ইত্যাদি বিতরণ করছে এবং তাদের প্রস্তুতকৃত বাংলা কুরআন শরীফ পড়ে সে অনুযায়ী জীবন গঠনের আহবান জানাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে ব্যাপারটি বেশ সৎ উদ্যোগ বলেই জনসমাজে প্রতীয়মান হচ্ছে। (তারা মানুষকে বোঝাচ্ছে, “আরবী কুরআন হচ্ছে বিদেশী ভাষায়। যদি তুমি এটা পড়ে নাই বুঝলে, তবে কি লাভ বলো? সুতরাং এই বাংলা কুরআন পড়।”) এ সমস্ত অজ্ঞ বন্ধু ও বন্ধুবেশী শত্রুদের প্ররোচনায় পড়ে যারা ইসলামের শত্রু এবং বাতিল ফিরকা সমূহের মনগড়া তাফসীর এবং কুরআন শরীফের অর্থের বিকৃত অনুবাদ পড়ছে, তারা নানা সন্দেহ ও সংশয়ের শিকার হচ্ছে। আর কুরআন শরীফের আয়াত ও হাদীস শরীফ ভুল বুঝার কারণে সন্দিহান হয়ে হারাচ্ছে মূল্যবান ঈমান। মূল দাজ্জাল আসার আগে দাজ্জালের অনেক পূর্বসূরী চেলা-চামুন্ডের আবির্ভাবের খবর হাদীস শরীফে রয়েছে এবং এমন ধরণের দাজ্জালদের আলোচনায় আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يدعون الى كتب الله.
অর্থাৎ “তারা মানুষকে আল্লাহ্ পাক-এর কুরআনের দিকে ডাকবে।”
আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
والذين اذا ذكروا بايت ربهم لم يخروا عليها صما وعميانا.
অর্থাৎ- “আল্লাহ্ তায়ালার আয়াত সমূহ মুসলমানদের সামনে পেশ করলে অন্ধ ও বধিরের মত তারা এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনা।”(সূরা ফুরক্বান/৭৩) ‘কুরআন শরীফের’ কোন্ তরজমা গ্রহণযোগ্য, সে প্রসঙ্গে “মাকতুবাতে ইমামে রব্বানীর” ১ম খন্ডের ১৯৩ নং মাকতুবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের উলামা-ই-কিরাম কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের যে অর্থ অনুধাবন করেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন একমাত্র সেটাই সঠিক, মূল্যবান এবং প্রকৃত শিক্ষা।” প্রত্যেক বাতিল বিপথগামী, বিদয়াতী, গোমরাহ, জাহিল ব্যক্তিও মনে করে এবং দাবী করে যে সে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুযায়ী হক্ব মত ও হক্ব পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। সে কারণে, কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের যে অর্থই করা হবে সেটাই গ্রহণযোগ্য এবং মূল্যবান নয়। মনগড়া তাফসীর প্রসঙ্গে “মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী” ১ম খন্ডের ২৩৪ নম্বর মাকতুবে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিদয়াতী ফিরক্বা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের বিকৃত অর্থের ছদ্মাবরণে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من قال فى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের (তাফসীর) স্বীয় রায় অনুযায়ী করে, সে তার অবস্থানকে যেন দোযখে নির্ধারণ করে নেয়।” (তিরমিযী) অর্থাৎ বুযুর্গানেদীন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিক্ষা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর কাছ থেকে শিখে যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন যারা তার বিরোধিতা করবে তারা কাফির।” আমাদের এমনসব ঈমান বিধ্বংসী বই, পুস্তক, অনুবাদ, মনগড়া তাফসীর পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত যেগুলো পয়সা কামানোর উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্ন মতলবে রচিত হয়েছে এমন সব লোকদের দ্বারা যারা ফিকাহ্, আক্বাইদ, তাছাউফ সম্পর্কে আসলে কিছুই জানেনা। কুরআন শরীফ সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদেরকে সে সকল কিতাবাদী পড়তে হবে যা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ কর্তৃক প্রণীত মাযহাবী শিক্ষার অনুসরণে রচিত ইল্মে হালের শিক্ষা প্রদান করে। অর্থাৎ আক্বাইদ, ফিক্বাহ এবং ইল্মে তাছাউফের কিতাবসমূহ। এর জন্য অত্যাবশ্যক একজন হক্কানী শায়খের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করা।
(অসমাপ্ত)
পবিত্র ১৯ শে রমাদ্বান শরীফ বাংলা ভাষার আজাদী দিবস পালন করা কেন জরুরী