সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সকল প্রশংসা মহামহিম আল্লাহ পাক-এর জন্য। মহান রমাদ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।” (সূরা বাক্বারা)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাযির হয়েছে।”

রোযা পৃথিবীর প্রাচীনতম ইবাদতসমূহের একটি। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকেই এর প্রচলন। তিনি যে, রোযা রাখতেন তা ‘আইয়ামে বীজ’ নামে পরিচিত। অন্যান্য ধর্মেও রোযার ধারণার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রীক, পারস্য, মিশর, ভারতেও এর প্রচলন ছিল। গ্রীক বর্ষপঞ্জির থিসমোফোরিয়া মাসের তৃতীয় দিনের উপবাস, পারসিকদের পাঁচসালা উপবাস এবং হিন্দুদের একাদশীর ব্রত তার উদাহরণ। এছাড়া প্রায়শ্চিত্য ছিয়াম, আরবী মাসের প্রথম নয়দিনে সিয়াম পালনের ব্রত ইহুদীদের মাঝে রয়েছে।

উল্লেখ্য, পৃথিবীতে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি ও প্রচলন হলেও ইসলামকেই আল্লাহ পাক পরিপুর্ণ দ্বীন বা ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দ্বীন বা ধর্ম সম্পর্কে তাই ইসলামী মূল্যবোধের আলোকেই ছহীহ সমঝ অর্জন করা আবশ্যকীয়।

ধর্ম, ধর্মান্ধ এবং ধর্মভীরু এ তিনটি বিষয়েরই বস্তুনিষ্ঠ ধারণা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের বিশেষ ঘাটতি রয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করে থাকে যে, “এদেশের লোকেরা খুব ধর্মভীরু।” আসলে ব্যাপারটি তা নয়। কারণ ধর্মভীরু হওয়ার জন্য প্রয়োজন ধর্ম সম্পর্কে যথোপযুক্ত জ্ঞান। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আলিমরা (জ্ঞানীরা) আল্লাহ পাককে বেশি ভয় করেন।” (সূরা ফাতির)

আমাদের দেশের লোকেরা ধর্মের নামে যে আবেগে আপ্লুত হয়, যে হুজুগে মেতে উঠে, ইসলামের বিষয় দেখলে যেরূপ শ্রদ্ধাবনত হয়, রং ঢং মিশ্রিত সুরেলা ওয়াজ শুনলে যেরূপ মাতোয়ারা হয়ে উঠে, ইসলাম রক্ষার নামে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে বললে যেরূপ তিলের পাহাড় তৈরি করে ফেলে তাতে সঙ্গতকারণেই তাদেরকে সাব্যস্ত করতে হয় ধর্মান্ধ হিসেবে। ধর্মভীরু রূপে নয়। যে কারণে তারা বুঝতে অক্ষম হয় আমাদের দেশের যেসব কথিত হুযূররা কিস্তি টুপি, সাইড-কাটা পাঞ্জাবি, শেরওয়ানী পরে তারা মূলত আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম নয় বরং তারা গান্ধী তথা হিন্দুদের টুপি-পোশাকেরই আমল করে। নিজ প্রবৃত্তিকে সংশোধন না করে, যথোচিত ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন না করে, প্রজ্ঞাচিত কায়দায় যারা ওয়াজ না করে, ইসলামের মূল্যায়ন মাপকাঠিতে মাহফিলের মঞ্চে বসার যোগ্যই তারা নয়।

উল্লেখ আবশ্যক, এদেশের ধর্মান্ধদের ব্যবহার করছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিজেরা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও ধর্মের নামে প্রতারণা করার তথা কয়েমী স্বার্থবাদ হাছিলের পন্থা দক্ষভাবে রপ্ত করেছে।

বস্তুতঃ ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দেয়। এই অপব্যাখ্যা দিয়েই ওরা স্বাধীনতা যুদ্ধে হানাদারদের ঘৃণ্য সহযোগিতা করেছে। দেশের মাল-সম্পদ লুন্ঠন করেছ। এ দেশের নারীর মান-সম্ভ্রম হরণ করেছে। স্বার্থগত কারণে ওরা কখনও মেয়ে লোকের নেতৃত্ব নাজায়িয ঘোষণা করছে, আবার কখনও ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মেয়ে লোকের আচলে জোট বাঁধছে।

ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েই ওরা ধর্মের নামে হরতালের মত ধ্বংসাত্মক কাজ জায়িয করছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েই ওরা লংমার্চ করছে, ব্লাসফেমী আইন চাইছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েই ওরা মৌলবাদী হতে বলছে। অথচ পবিত্র রমযানের আহ্বান হলো মুত্তাক্বী হওয়া, খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্ট বা হিন্দুদের মত মৌলবাদী হওয়া নয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “যাতে তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পার।” (সূরা বাক্বারা) “তোমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত যে মুত্তাক্বী।” (সূরা  হুজুরাত)

মূলতঃ ধর্মের নামে যেনো-তেনো কিছু করার নাম ধর্মান্ধতা। আর ধর্মের আলোকে সঠিক পথে চলাই ধর্মভীরুতা। সঠিক পথ বিচ্যুত আচার, ধর্মের নামে করলেও তাতে ধর্ম পালিত হয় না। যথাযথভাবে রোযা পালন আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দেয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “অনেক ছিয়াম পালনকারী এমন যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকাই সার হয়। তদ্রুপ অনেক ইবাদতকারী এমন যাদের বিনিদ্র রজনী ব্যর্থ হয়।” (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

প্রসঙ্গতঃ এই হাদীছ শরীফ-এর আলোকে এই প্রতিভাত হয় যে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের নামে যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনভিত্তিক আন্দোলন করছে, ধর্মের নামে হারাম পন্থায় মৌসুমী ও সুযোগ সন্ধানী দল করছে তাতে ধর্ম তথা ইসলাম পালন হচ্ছে না। আর এতে করে ধর্মান্ধরা তাতে কেবল প্রতারিত হচ্ছে তাই ধর্মের প্রেক্ষিতে হওয়া চাই ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। আর কেবলমাত্র হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহর ছোহবতের মাধ্যমে সঠিক ইলম অর্জন করে যথাযথভাবে রোযার হক্ব আদায়ে ধর্মভীরু তথা মুত্তাক্বী হওয়া সম্ভব। 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়