সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-২)

সংখ্যা: ২৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

 ৩৬তম ফতওয়া হিসেবে

 সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।

 সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ উনার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও

বুযূর্গী-সম্মান মুবারক

 (১) দুনিয়ার সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক হচ্ছেন সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক:

হযরত ইমাম আরযাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আখবারে মক্কা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ قَالَ كُنْتُ مَعَ اَبِىْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ بِمَكَّةَ فَبَيْنَمَا هُوَ يَطُوْفُ بِالْبَيْتِ وَاَنَا وَرَاءَهٗ اِذْ جَاءَهٗ رَجُلٌ شَرْجَعٌ مِّنَ الرِّجَالِ يَقُوْلُ طَوِيْلٌ فَوَضَعَ يَدَهٗ عَلـٰى ظَهْرِ اَبِـىْ فَالْتَفَتَ اَبِـىْ اِلَيْهِ فَقَالَ الرَّجُلُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّـىْ اُرِيْدُ اَنْ اَسْاَلَكَ فَسَكَتَ اَبِـىْ وَاَنَا وَالرَّجُلُ خَلْفَهٗ حَتّٰى فَرَغَ مِنْ اُسْبُوْعِهٖ فَدَخَلَ الْـحِجْرَ فَقَامَ تَـحْتَ الْمِيْزَابِ فَقُمْتُ اَنَا وَالرَّجُلُ خَلْفَهٗ فَصَلّٰى رَكْعَتَـىْ اُسْبُوْعِهٖ ثُـمَّ اسْتَوٰى قَاعِدًا فَالْتَفَتَ اِلَـىَّ فَقُمْتُ فَجَلَسْتُ اِلَـى جَنْبِهٖ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاَيْنَ هٰذَا السَّائِلُ فَاَوْمَاْتُ اِلَـى الرَّجُلِ فَجَاءَ فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَىْ اَبِـىْ فَقَالَ لَهٗ اَبِـىْ عَمَّا تَسْاَلُ قَالَ اَسْاَلُكَ عَنْۢ بَدْءِ هٰذَا الطَّوَافِ بـِهٰذَا الْبَيْتِ لـِمَ كَانَ وَاَنّٰـى كَانَ وَحَيْثُ كَانَ وَكَيْفَ كَانَ فَقَالَ لَهٗ اَبِـىْ نَعَمْ مِنْ اَيْنَ اَنْتَ قَالَ مِنْ اَهْلِ الشَّامِ قَالَ اَيْنَ مَسْكَنُكَ قَالَ فِـىْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ قَالَ فَهَلْ قَرَأْتَ الْكِتَابَيْنِ يَعْنِـى التَّوْرَاةَ وَالْاِنْـجِيْلَ قَالَ الرَّجُلُ نَعَمْ قَالَ اَبِـىْ يَا اَخَا اَهْلِ الشَّامِ احْفَظْ وَلَا تَرْوِيَنَّ عَنِّـىْ اِلَّا حَقًّا اَمَّا بَدْءُ هٰذَا الطَّوَافِ بِـهٰذَا الْبَيْتِ فَاِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالـٰى قَالَ لِلْمَلَائِكَةِ {اِنِّـىْ جَاعِلٌ فِـى الْاَرْضِ خَلِيْفَةً} [البقرة: ৩০]

فَقَالَتِ الْمَلَائِكَةُ اَىْ رَبِّ اَخَلِيفَةٌ مِّنْ غَيْرِنَا مـِمَّنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَيَتَحَاسَدُوْنَ وَيَتَبَاغَضُوْنَ وَيَتَبَاغَوْنَ اَىْ رَبِّ اجْعَلْ ذٰلِكَ الْـخَلِيْفَةَ مِنَّا فَنَحْنُ لَا نُفْسِدُ فِيْهَا وَلَا نَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَلَا نَتَبَاغَضُ وَلَا نَتَحَاسَدُ وَلَا نَتَبَاغٰى وَنَـحْنُ نُسَبِّحُ بِـحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ وَنُطِيْعُكَ وَلَا نَعْصِيْكَ فَقَالَ اللهُ تَعَالـٰى {اِنِّـىْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ} [البقرة: ৩০] قَالَ فَظَنَّتِ الْمَلَائِكَةُ اَنَّ مَا قَالُوْا رَدًّا عَلـٰى رَبِّـهِمْ عَزَّ وَجَلَّ وَاَنَّهٗ قَدْ غَضِبَ مِنْ قَوْلِـهِمْ فَلَاذُوْا بِالْعَرْشِ وَرَفَعُوْا رُءُوْسَهُمْ وَاَشَارُوْا بِالْاَصَابِعِ يَتَضَرَّعُوْنَ وَيَبْكُوْنَ اِشْفَاقًا لِغَضَبِهٖ وَطَافُوْا بِالْعَرْشِ ثَلَاثَ سَاعَاتٍ فَنَظَرَ اللهُ اِلَيْهِمْ فَنَزَلَتِ الرَّحْـمَةُ عَلَيْهِمْ فَوَضَعَ اللهُ تَعَالـٰى تَـحْتَ الْعَرْشِ بَيْتًا عَلـٰى اَرْبَعِ اَسَاطِيْنَ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَّغَشَاهُنَّ بِيَاقُوْتَةٍ حَـمْرَاءَ وَسُـمِّىَ ذٰلِكَ الْبَيْتُ الضُّرَاحَ ثُـمَّ قَالَ اللهُ تَعَالـٰى لِلْمَلَائِكَةِ طُوْفُوْا بِـهٰذَا الْبَيْتِ وَدَعُوا الْعَرْشَ قَالَ فَطَافَتِ الْمَلَائِكَةُ بِالْبَيْتِ وَتَرَكُوا الْعَرْشَ وَصَارَ اَهْوَنَ عَلَيْهِمْ مِنَ الْعَرْشِ وَهُوَ الْبَيْتُ الْمَعْمُوْرُ الَّذِىْ ذَكَرَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يَدْخُلُهٗ فِـىْ كُلِّ يَوْمٍ وَّلَيْلَةٍ سَبْعُوْنَ اَلْفَ مَلَكٍ لَّا يَعُوْدُوْنَ فِيْهِ اَبَدًا ثُـمَّ اِنَّ اللهَ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالـٰى بَعَثَ الْمَلَائِكَةَ فَقَالَ لَـهُمُ ابْنُوْا لِـىْ بَيْتًا فِـى الْاَرْضِ بـِمِثَالِهٖ وَقَدْرِهٖ فَاَمَرَ اللهُ سُبْحَانَهٗ مَنْ فِـى الْاَرْضِ مِنْ خَلْقِهٖ اَنْ يَّطُوْفُوْا بِـهٰذَا الْبَيْتِ كَمَا يَطُوْفُ اَهْلُ السَّمَاءِ بِالْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ فَقَالَ الرَّجُلُ صَدَقْتَ يَا ابْنَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هٰكَذَا كَانَ.

অর্থ: “ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি একদা আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত মক্কা শরীফ ছিলাম। যখন তিনি সম্মানিত সম্মানিত কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন, তখন আমি উনার পিছনে ছিলাম। হঠাৎ লোকজনের মধ্য থেকে একজন লম্বাকৃতির লোক আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার নিকট এসে উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ তার হাত রাখলো। তখন আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটির দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলেন। লোকটি বললো, আপনার উপর সালাম বর্ষিত হোক, হে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুওয়াল করতে চাই। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি চুপ থাকলেন। আমি এবং লোকটি আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি উনার তাওয়াফসহ প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা করার পূর্ব পর্যন্ত উনার পিছনে ছিলাম। তারপর তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হাতিমে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার মীযাবের নীচে দাঁড়ালেন। আমি ও লোকটি উনার পিছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি উনার প্রয়োজনীয় নামায শেষ করে বসলেন। অতঃপর আমার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলে আমি দাঁড়িয়ে উনার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে আমার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক ধরে সম্বোধন করে বললেন, ঐ সুওয়ালকারী কোথায়? তখন আমি লোকটির দিকে ইশারা করলাম। লোকটি এসে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সামনে বসলো। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কোন বিষয়ে সুওয়াল করতে চাচ্ছো? অর্থাৎ তুমি কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছো? (লোকটি বললো) আমি আপনাকে এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফের সূচনা সম্পর্কে সুওয়াল করছি তথা আমি আপনার নিকট সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি যে, কেন? কোথা থেকে? কখন? এবং কিভাবে এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফ শুরু হয়? আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটিকে বললেন যে, ঠিক আছে। তুমি কোথা থেকে এসেছো? লোকটি বললো, শামদেশ (সিরিয়া) থেকে। তিনি বললেন, তোমার অবস্থানস্থল কোথায়? লোকটি বললো, বাইতুল মুকাদ্দাস। তিনি বললেন, তুমি কি সম্মানিত দুখানা কিতাব অর্থাৎ সম্মানিত তাওরাত শরীফ ও সম্মানিত ইঞ্জীল শরীফ পড়েছো? লোকটি বললো, হ্যাঁ। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে শামদেশবাসী স্নেহাস্পদ! তুমি মুখস্ত করো এবং তুমি আমার থেকে কখনও সত্য ব্যতীত ব্যতিক্রম কিছু বর্ণনা করবে না। এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফ শরীফ উনার সূচনা হচ্ছে- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنِّـىْ جَاعِلٌ فِـى الْاَرْضِ خَلِيفَةً

নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ার যমীনে খলীফা প্রেরণ করবো’

তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি কী আমাদের ব্যতীত অন্য কাউকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করবেন, যারা দুনিয়ার যমীনে ফেতনা-ফাসাদ করবে, রক্ত প্রবাহিত করবে, পরস্পর পরস্পরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করবে, পরস্পর পরস্পরের সাথে শত্রুতা করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে যুলুম-নির্যাতন করবে? আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আমাদের মধ্য থেকেই সেই সম্মানিত খলীফা মনোনীত করুন! আমরা দুনিয়ার যমীনে ফেতনা-ফাসাদ করবো না, রক্ত প্রবাহিত করবে না, পরস্পর পরস্পরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করবো না, পরস্পর পরস্পরের সাথে শত্রুতা করবো না এবং পরস্পর পরস্পরকে যুলুম-নির্যাতন করবো না। আমরা আপনার সম্মানিত হামদ তথা প্রশংসা মুবারক উনার সম্মানিত তাসবীহ মুবারক পাঠ করবো, আপনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করবো, আপনারই অনুসরণ-অনুকরণ করবো এবং আপনার নাফরমানী করবো না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-

اِنِّـىْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

নিশ্চয়ই আমি যা জানি, আপনারা তা জানেন না।’

(আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম) তিনি বললেন, তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণা করলেন যে, উনারা যা বলেছেন নিশ্চয়ই তা উনাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মক্ববূল হয়নি। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের কথায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সাথে লেগে গেলেন, উনাদের মাথা মুবারক উত্তোলন করলেন, উনারা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে অনুনয়-বিনয় প্রকাশ করতে থাকলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি মুবারক উনার ভয়ে কাঁদতে লাগলেন। আর উনারা সম্মানিত ‘আরশে ‘আযীম মুবারক তিন যুগ তাওয়াফ করলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলেন। অতঃপর উনাদের উপর সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল হলো। তারপর যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নীচে চার স্তম্ভ মুবারক বিশিষ্ট একটি ঘর মুবারক তৈরী করেন। উক্ত স্তম্ভ মুবারকগুলো ছিলো জমরূদের এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সেগুলোকে লাল ইয়াকুত পাথর দ্বারা আবৃত করলেন। আর সম্মানিত ঘর মুবারক উনার নামকরণ মুবারক করলেন, ‘আল বাইতুদ্ব দ্বোরাহ্’। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ছেড়ে এই সম্মানিত ঘর মুবারক উনাকে তাওয়াফ করুন! আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, অতঃপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ছেড়ে সম্মানিত ঘর মুবারক তাওয়াফ মুবারক করা শুরু করলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য সম্মানিত আরশে ‘আযীম মুবারক তাওয়াফ করার চেয়ে উক্ত সম্মানিত ঘর মুবারক তাওয়াফ করা অধিকতর সহজসাধ্য হলো। সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছেন ‘সম্মানিত বাইতুল মা’মূর শরীফ’। যেই সম্মানিত ঘর মুবারক উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, প্রতিদিন ও প্রতিরাত উক্ত ঘর মুবারক-এ ৭০ হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রবেশ করে থাকেন। (যাঁরা একবার প্রবেশ করেন) উনারা আর কখনও সেই ঘর মুবারক-এ প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এই কথা বলে প্রেরণ করলেন যে, আপনারা দুনিয়ার যমীনে উক্ত সম্মানিত ঘর মুবারক উনার অনুরূপ ও উক্ত ঘর মুবারক উনার সমপরিমাণ একখানা সম্মানিত ঘর মুবারক তৈরী করুন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমানবাসী যেভাবে ‘সম্মানিত বাইতুল মা’মূর শরীফ’ তাওয়াফ করে থাকেন, সেভাবে পৃথিবীবাসীকে সম্মানিত কা’বা শরীফ উনাকে তাওয়াফ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ!

তখন লোকটি বললো, হে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি‘য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! আপনি সঠিক বিষয়টিই বর্ণনা মুবারক করেছেন। বিষয়টি এরূপই ছিলো।” সুবহানাল্লাহ! (আখবারু মাক্কা শরীফ)

আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اِنَّ الْـمَلَائِكَةَ بَنُوْهُ قَبْلَ خُلِقَ حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِاَلْفَىْ عَامٍ فَكَانُوْا يَـحُجُّوْنَهٗ فَلَمَّا حَجَّهٗ حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَتِ الْـمَلَائِكَةُ بَرَّ حَجُّكَ حَجَجْنَا هٰذَا الْبَيْتَ قَبْلَكَ بِاَلْفَىْ عَامٍ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর পূর্বে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত কা’বা শরীফ নির্মাণ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হজ্জ করতেন। অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হজ্জ মুবারক করেন, তখন উনাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, আপনার হজ্জ মুবারক পবিত্র হোক! আপনার দুই হাজার বছর পূর্বে আমরা এই সম্মানিত ঘর মুবারক উনার হজ্জ মুবারক করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/৯২)

হযরত ইমাম আবূল মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাতুরীদী শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন-

اِنَّ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَـمَّا اُمِرَ بِالْـحَجِّ فِيْهِ قَالَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَدْ حَجَّ فِيْهِ الْـمَلَائِكَةُ قَبْلَكَ بِاَلْفَىْ عَامٍ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন সম্মানিত কা’বা শরীফ-এ সম্মানিত হজ্জ মুবারক করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারকপ্রাপ্ত হন, তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনার দুই হাজার বছর পূর্বে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা এই সম্মানিত কা’বা শরীফ-এ সম্মানিত হজ্জ মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাতুরীদী)

দুনিয়ার যমীনে যত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক রয়েছেন সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের মূল হচ্ছেন সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ। সুবহানাল্লাহ! যা দুনিয়ার সর্বপ্রথম সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এক বর্ণনা মতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টির ৪০ বছর পূর্বে সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ তথা সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আরেক বর্ণনা মতে, পৃথিবী সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ সৃষ্টি করা হয়। আর সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফই হচ্ছেন পৃথিবীর অবস্থানস্থল। যা পানির উপর জমাটবদ্ধ পানি বা বরফ অথবা ছোট দ্বীপ আকারে ছিলেন। সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা রাত-দিন তথা সবসময় দায়িমীভাবে একাধারে দুই হাজার বছর সম্মানিত তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ উনার থেকে পৃথিবীকে বিস্তার করেন, সৃষ্টি করেন। তারপর সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে করেন পৃথিবীর ওয়াসাত্ব তথা মধ্যস্থান। সুবহানাল্লাহ!

অপর বর্ণনা মতে, আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার দুই হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ‘সম্মানিত ও পবিত্র বাইতুল মা’মূর শরীফ’ উনার হুবহু নীচে উনার অনুরূপ ও সম মর্যাদাসম্পন্ন সম্মানিত ও পবিত্র ঘর ‘সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ’ নির্মাণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَذْهَبُ الْاَرْضُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِلَّا الْمَسَاجِدَ فَاِنَّـهَا تَنْضَمُّ بَعْضُهَا اِلـٰى بَعْضٍ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ ব্যতীত। কেননা নিশ্চয়ই সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত হবেন।” সুবহানাল্লাহ!

যেহেতু দুনিয়ার যমীনে যত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক রয়েছেন সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের মূল হচ্ছেন সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ, যা দুনিয়ার সর্বপ্রথম সম্মানিত ও পবিত্র ঘর মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সাথে সংযুক্ত হবেন। শুধু তাই নয়, ক্বিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের অধিবাসী উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ চলে যাবেন। সুবহানাল্লাহ!

তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সম্মানিত ও পবিত্র মসজিদ মুবারক উনার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও বুযূর্গী সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁ, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩২