সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারে পবিত্র বাইতুল মাল উনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

ভূমিকা: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهِ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই আপনাদের যিনি খলিক, যিনি মালিক, যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে যিনি মহাসম্মানিত নছিহতকারী

وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ

যিনি অন্তরের শেফা দানকারী, আরোগ্য দানকারী

وَهُدًى وَّرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ

যিনি মহাসম্মানিত হিদায়েত দানকারী এবং খাছ করে মু’মিনদের জন্য, ‘আমভাবে সকলের জন্য রহমত দানকারী তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ। তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ। এই পরিপ্রেক্ষিতে যিনি খলিক, যিনি মালিক যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক, তিনি সমস্ত কায়িনাত, সমস্ত মখলুকাত তাদের কী দায়িত্ব কর্তব্য সেটা তিনি বলে দিচ্ছেন। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। (তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো) তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

সবকিছুর একটা মূল থাকে, গাছের মূল না থাকলে ফুল ফল আসবে না, গাড়ীর মূল ফুয়েল, সৃষ্টির মূল, যামানার মূল; তাহলে “ফালইয়াফরাহূ” উদযাপন উনার মূল কি? খরচ করা। কিভাবে মূল: ইবাদত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ

অর্থাৎ- একমাত্র আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। যেহেতু আদেশ, তাই ইবাদত এবং ফরয ইবাদত।

অন্যান্য ইবাদত ২ প্রকার: ১. বদনী: নামায, রোযা ২. মালী: যাকাত, ফিতরা, ওশর, কুরবানী ৩. বদনী-মালী: হজ্জ।

কিন্তু মূল হচ্ছে মালী ইবাদত। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَأْتِـيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَنْفَعُ فِيْهِ إِلَّا الدِّيْنَارُ وَالدِّرْهَمُ

অর্থাৎ- “মানুষের মাঝে এমন একটি সময় আসবে যখন দীনার ও দিরহাম বা টাকা-পয়সা ব্যতীত ফায়দা হাছিল করা যাবে না।”

কাজেই মাল ছাড়া দৈহিক শক্তি অর্জন করা যায়না। তাই সকল কিছুর মূল হচ্ছে খরচ করা।

বাইতুল মাল কি: বিভিন্ন উৎস হতে সংগৃহীত অর্থ- সম্পদ, যা খলীফা উনার তত্ত্বাবধানে তহবিল হিসেবে সংরক্ষিত থেকে খিলাফতের প্রয়োজনে এবং জনগনের কল্যাণে ব্যায় করা হয়, তাকে ‘বাইতুল মাল’ বলে। “বাইতুল মাল” শব্দটি খিলাফতের কোষাগার অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

শাব্দিক বিশ্লেষণ : বায়তুল মাল (بَيْتُ الْـمَالِ) শব্দটি আরবী শব্দ। বাইত (بَيْتُ) শব্দের অর্থ ঘর আর মাল (اَلْـمَالُ) শব্দের অর্থ সম্পদ। সুতরাং বায়তুল মাল (بَيْتُ الْـمَالِ) শব্দের অর্থ” কোষাগার। ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় বায়তুল মাল (بَيْتُ الْـمَالِ) বলতে খিলাফতের অধীন সমস্ত এলাকার যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের জন্য অর্থ-সম্পদ সংরক্ষিত করে রাখার ব্যবস্থা। অর্থাৎ সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, বাইতুল মাল হচ্ছে সম্মানিত ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা।

বাইতুল মালের ইতিকথা: মানুষের জান-মাল, সম্মান-সম্ভ্রম, মৌলিক অধিকার, আর্থিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম পবিত্র বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তীতে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক সময়েও পবিত্র বাইতুল মাল ছিলো সকল মানুষের কাছে পবিত্র আমানত স্বরূপ। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং অনিবার্য প্রয়োজন পূরণ করাই ছিলো পবিত্র বাইতুল মাল উনার প্রথম ও প্রধান কাজ। সুবহানাল্লাহ!

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকালে পবিত্র বাইতুল মাল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাসহ বাইতুল মাল উনার আনুষ্ঠানিক মজবুত ভিত্তি স্থাপিত হয় আশিদ্দাউ আলাল কুফফার হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকালে। অতঃপর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম এবং আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক খিলাফতকালে পবিত্র বাইতুল মাল ব্যবস্থা সুক্ষ্মভাবে পরিচালিত হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত অনুসরণে উনারা বাইতুল মাল উনার অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয় করেন। সুবহানাল্লাহ!

বাইতুল মালে শরীক থাকার প্রয়োজনীয়তা:

মুসলমানের খুছুছিয়ত হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জান-মাল কিনে নিয়েছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَـهُم بِأَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন উনাদের জান-মাল খরীদ করে নিয়েছেন জান্নাত উনার বিনিময়ে।

বিপরীত: বখীল শত্রু। ছখী-হাবীবুল্লাহ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلسَّخِىُّ حَبِيْبُ الله وَلَوْ كَانَ فَاسِقًا اَلْبَخِيْلُ عَدُوُّ الله وَلَوْ كَانَ عَابِدًا

অর্থ: দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু যদিও সে ফাসিক বা তার আমলে ত্রুটি থাকুক না কেন। আর বখীল মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু যদিও সে আবিদ হোক না কেন।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ أَمْوَالَـهُمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاءُ ۗ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ

অর্থ: “যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ হলো সেই শস্য দানার মতো যা থেকে গজায় সাতটি শীষ, আর প্রত্যেকটি শীষে ১০০টি করে দানা (উৎপন্ন) হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রাচুর্য্যময়, প্রশস্ত, সর্বজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِّنْ مَّالٍ

অর্থ: দানে সম্পদ কমেনা। (মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلصَّدَقَةُ تَرَدُّ الْبَلَاءُ

অর্থ : “দান-ছদকা বালা-মুছীবত দূর করে।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মৃত্যুর জন্যে সদা প্রস্তুতি নিতে হবে। হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম তিনি চলে আসলে আর প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাওয়া যাবেনা। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوَكُمْ بِالشَّرِّ وَالْـخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ

অর্থাৎ- প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

ইন্তিকালের পর সমস্ত আমল বন্ধ: ৩টি ছাড়া।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِذَا مَاتَ الْاِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ اِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ‏:‏ اِلَّا صَدَقَةٍ جَارْيَةٍ، اَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهٖ، اَوْ وَلَدٍ صَالِـحٍ يَدْعُوْ لَهٗ

অর্থ: যখন কোন মানুষ ইন্তিকাল করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতীত। ১. ছদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম ৩. নেককার সন্তান যে তার জন্য দুয়া করে। (মিশকাত শরীফ)

৩টি ছাড়া বাকী কোন কিছুই নিজের না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بنِ الشِّخِّيْرِ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، اَنَّهٗ قَالَ: أتَيْتُ النَّبِـيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْرَأُ: (أَلْـهٰكُمُ التَّكَاثُرُ) [اَلتَّكَاثُرُ:١] قَالَ: يَقُوْلُ اِبْنُ اٰدَمَ: مَالِـيْ، مَالِـيْ، وَهَلْ لَكَ يَا ابْنَ اٰدَمَ مِنْ مَالِكَ إِلَّا مَا أكَلْتَ فَأفْنَيْتَ، أَولَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ، أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ ؟

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এলাম, এমতাবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ প্রাচুর্য্যরে প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) তিলাওয়াত করছিলেন। তিনি বললেন, আদম সন্তান বলে, আমার মাল, আমার মাল। অথচ তিনটি ব্যতীত কোনটিই তার মাল নয়।

১. খাদ্য: যা সে খেয়ে হজম করে ফেলেছে।

২. বস্ত্র বা কাপড়: যা সে পরিধান করে পুরাতন করে ফেলেছে; অন্য কারো পক্ষে তা আর পরিধান করা সম্ভব নয়।

৩. সম্পদ: যা সে পরকালের জন্য দান করে দিয়েছে। (মুসলিম শরীফ)

আমার নিজের জন্যে খরচটা কোথায়: ‘মা ক্বদ্দামা’ ইন্তিকালের পূর্বে কি অগ্রীম পাঠিয়েছি। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَبْلُغُ بِهٖ  قَالَ: إِذَا مَاتَ الْمَيِّتُ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ: مَا قَدَّمَ  وَقَالَ بَنُوْ اٰدَمَ: مَا خَلَّفَ؟

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যখন কেউ মৃত্যুবরণ করে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জিজ্ঞাসা করেন- “কি সে অগ্রীম পাঠিয়েছে?” আর বণী আদম (তার ওয়ারিশগন) বলে, “কি সে আমাদের জন্য রেখে গেল?” (শুয়াবুল ঈমান)

সাবধান! কোটি কোটি মানুষ আসে যায়: দৈনিক- জন্ম ৩.৬ লক্ষ, মৃত্যু ১.৫১৬ লক্ষ, ঘন্টায়- জন্ম ১৫ হাজার; মৃত্যু ৬.৩১ হাজার। কারো জন্যে দুনিয়ার কোন কাজ থেমে থাকবেনা। কাজেই, এখন থেকেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

সংকীর্ণতা অবস্থায় খরচ করলে প্রশস্ততা আসে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِيُنفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهِ ۖ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا اٰتَاهُ اللهُ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا مَا اٰتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا

অর্থ: বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি তার রিযিকের ব্যাপারে সংকীর্ণতা অনুভব করে সে যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। মহান আল্লাহ পাক কষ্টের পর সুখ দেবেন। (পবিত্র সূরা ত্বলাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে মুজাদ্দিদে আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদুর রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সুমহান সুন্নত পালনার্থে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে মসজিদ মাদরাসা স্থাপনের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পবিত্র মসজিদে নববী শরীফসহ অসংখ্য পবিত্র মসজিদ। যে পবিত্র সম্মানিত মসজিদসমূহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বুনিয়াদি নিদর্শন ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে আলোকিত থাকবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنُ عَفَّانٍ ذِى النُّوْرَيْنَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلّٰهِ بَنَى اللهُ لَهٗ فِي الْـجَنَّةِ مِثْلَهٗ.

অর্থ: হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য একটি মসজিদ তৈরি করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি বালাখানা তৈরি করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

 

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. إِنَّ مِـمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهٖ بَعْدَ مَوْتِهٖ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِـحًا تَرَكَهُ وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِّاِبْنِ السَّبِيْلِ بَنَاهُ أَوْ نَـهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَّالِهٖ فِيْ صِحَّتِهٖ وَحَيَاتِهٖ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهٖ

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন উনার ইন্তিকালের পর উনার যে নেক আমলসমূহের ছওয়াব তিনি লাভ করতে থাকেন তা হচ্ছে- ইলম যা তিনি শিক্ষা করেছেন এবং প্রচার করেছেন। নেক সন্তান যাকে তিনি দুনিয়ায় রেখে গিয়েছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার নুসখাহ, যা তিনি মিরাছস্বরূপ রেখে গেছেন। মসজিদ যা তিনি নির্মাণ করেছেন। মুসাফিরখানা যা তিনি সফরকারীদের জন্য তৈরী করেছেন। পানির জন্য যে কুপ খনন করেছেন এবং উনার সুস্থ এবং জিবীত অবস্থায় উনার মাল হতে যা কিছু দান করেছেন। সমস্ত কিছুই উনার আমলনামায় ছদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে পৌঁছতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ, তাফসীরে কুরতুবী শরীফ)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মত উনাদেরকে বেশী বেশী পবিত্র মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে এবং ইসলামী কিতাবাদী প্রকাশ, প্রচার-প্রসার করে সুন্নত আদায় করার মাধ্যমে বেশুমার ফযীলত-বরকত লাভ করতে এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে বুলন্দ করার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন। কাজেই, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, এই মহাসম্মানিত সুন্নত আদায় করার লক্ষ্যে মহান নেক কাজ তথা ছদকায়ে জারিয়ায় সার্বিকভাবে অংশগ্রহণ করতঃ মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আক্বীদা ও আমল বিশুদ্ধ করার কাজে আর্থিকভাবে শরীক হওয়া। আর এই জন্য গঠন করা হয়েছে বাইতুল মাল। সুবহানাল্লাহ!

মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে কোটি কোটি কোটি মসজিদ, মাদরাসা, গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবেন এবং কোটি কোটি কিতাবাদী প্রকাশ করবেন, সে মহান ছদকায়ে জারিয়ায় শরীক হওয়ার অন্যতম সুযোগ এই বাইতুল মাল। যা পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সমাজের সকল মুসলমানের জন্য বাইতুল মালে শরীক হওয়ার মহান সুযোগ সর্বদা উন্মুক্ত। এছাড়াও বাইতুল মাল সমস্ত নেক কাজে ব্যবহার করা যায় বলে মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। তাই যারা এই বাইতুল মালে শরীক থাকবেন তারা কোটি কোটি মসজিদ, মাদরাসা, গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং কোটি কোটি কিতাবাদী প্রকাশ, প্রচার ও প্রসারের বেমেছাল ছদকায়ে জারিয়ার ফযীলত হাছিল করতে পারবেন বিনা সন্দেহ। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। অর্থাৎ যারাই বাইতুল মালে শরীক থাকবেন, প্রত্যেকেই অনন্তকালব্যাপী ছদকায়ে জারিয়ার ছওয়াব লাভ করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল মুসলমানকে হাক্বীক্বীভাবে বাইতুল মালে শরীক হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

-মীর মুহম্মদ তৈমুর রহমান।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম