সম্মানিত যিলহজ্জ ও সম্মানিত মুহররম শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ৪টি সম্মানিত মাস উনাদের মধ্যে আবার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ ও সম্মানিত মুহররম শরীফ মাস।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা প্রিয় আর কোনো  দিনের ইবাদত নেই। সুবহানাল্লাহ! উক্ত প্রতি দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত পবিত্র শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া শুধু ৯ তারিখ সম্মানিত আরাফাহ উনার দিনে রোযা রাখলে পূর্বের এক বছর এবং পরের একবছরের গুনাহখতা ক্ষমা করা হয়। সুবহানাল্লাহ! আর ১০ই যিলহজ্জ শরীফ হচ্ছে ইয়াওমুন নহর অর্থাৎ কুরবানীর দিন। উক্ত রাতে সজাগ থেকে যারা ইবাদত করবে, হাশরের দিন কেবল তাদেরই অন্তর ইতমিনান থাকবে এবং তাদের সমস্ত নেক দুআ ও নেক আরজু কবুল করা হবে। আর উক্ত দিনে যারা কুরবানী করবে, কুরবানীর পশুর রক্ত যমীনে পড়ার পূর্বেই তাদের গুনাহখতা ক্ষমা করা হবে এবং কুরবানীর পশুর  গোশ্ত, হাড্ডি, খুর, পশম ইত্যাদির বিনিময়ে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে এবং জান্নাতে বহু নাজ-নিয়ামত প্রদান করা হবে। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, ক্বিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুগুলি তাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়ার বাহন হবে। সুবহানাল্লাহ!

এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, সামর্থবানদের জন্য নিজেদের নামে কুরবানী দেয়ার পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া কর্তব্য। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে ওছীয়ত মুবারক করেছেন। আর অসচ্ছল ব্যক্তিরাও হাট-বাজার থেকে গোশত না কিনে একাধিকজন মিলে পশু কিনে উনার এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী করে গোশত নিজেরাই খেতে পারে। এতে তারা কুরবানীর ফযীলত হাছিল করার পাশাপাশি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলে ধন্য হবে। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত আমল কায়িনাতবাসীকে বাস্তবে দেখিয়ে দিচ্ছেন যামানার সুমহান ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি এ বছর (১৪৩৯ হিজরী সন) ২টি বৃহৎ ও বিশেষ গরু, ২টি বৃহৎ ও বিশেষ মহিষ এবং ২টি বৃহৎ ও বিশেষ খাসি এবং ১টি বৃহৎ ও বিশেষ ভেড়া ব্যতীত ৩০০ শত গরু এবং ৬০০ শত খাসি কুরবানী করেন। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত কুরবানীসমূহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারকে, উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারকে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের নাম মুবারকে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী করা হয়। আর এ সমস্ত কুরবানী উনার তরফ থেকে উনাদের প্রতি হাদিয়া স্বরূপ। বলার অপেক্ষা রাখে না, যাদেরকে হাদিয়া করা হয় উনারা হাদিয়া প্রদানকারীর প্রতি সন্তুষ্ট হন, খুশি হন। সুবহানাল্লাহ! আর উনাদের খুশিতে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিও খুশি হন। সুবহানাল্লাহ! সেটাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তবে তারা যেনো মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে। কারণ উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হক্বদার।”

সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ মাসও অত্যধিক ফযীলতপূর্ণ। বর্ণিত রয়েছে, এ সম্মানিত মাস এবং উনার মধ্যে অবস্থিত আশূরা শরীফ দিবসকে যে ব্যক্তি সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে পানাহ দান করে এবং সম্মানিত জান্নাত দান করে সম্মানিত করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আশূরা শরীফ উপলক্ষে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ রোযা রাখা সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, সম্মানিত আশূরা শরীফ দিবসে যারা রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের বিগত বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। আর উক্ত দিনে কোন রোযাদারকে যে ইফতার করাবে, সে সমস্ত উম্মতকে ইফতার করানোর ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিনে তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে-পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সারা বৎসর সচ্ছলতা দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ উনার মধ্যে বিশেষ দিনসমূহ যথাক্রমে- ১, ২, ৫, ৮, ১০, ১৬, ২৩, ২৫ ও ২৬ তারিখ।

১ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক গ্রহণ দিবস।

২ আবু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস।

৫ ক) হযরত উম্মুল মুমিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। খ) হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

৮ হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস।

১০ ক) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক দিবস। খ) পবিত্র আশূরা শরীফ।

১৬ হযরত উম্মুল মুমিনীন আছ ছানিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

২৩ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত উম্মুল মুমিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমা শরীফ সম্পন্ন হওয়ার দিবস।

২৫ ক) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত উম্মুল মুমিনীন আল আশিরহ্ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমা শরীফ সম্পন্ন হওয়ার দিবস। খ) উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। গ) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত তথা বিছাল শরীফ দিবস।

২৬ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

অতএব, উম্মতের প্রতি কর্তব্য হচ্ছে, উক্ত বিশেষ দিনসমূহ পালন করে ফযীলত, নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।

 

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা