সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ, সম্মানিত মুহররম শরীফ ও সম্মানিত ছফর শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত ছানা-ছিফত যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইতি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য। স্বাগতম সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ। সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ উপলক্ষে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার দু’টি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। বর্ধিত কলেবরে সংখ্যা দু’টি ছাপানো হয়ে থাকে। যার মধ্যে যিনি সৃষ্টির মূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক বেমেছালভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে যাতে জিন-ইনসান, পুরুষ-মহিলা সকলেই মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, ফযীলত, হাক্বীক্বত মুবারক সম্পর্কে জেনে উনার প্রতি ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ করে হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করে উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করে নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পারে।

মূলত কায়িনাতবাসী তথা উম্মতের কামিয়াবী বা কল্যাণ হাছিলের মূলেই হচ্ছেন মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে ব্যতীত যিনি খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব হবেনা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِيْ يُحْبِبْكُمُ  اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ۗ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

অর্থ: (আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-সন্তুষ্টি হাছিল করতে চাও, তাহলে আমাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করো। (আমার অনুসরণ করলে) মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। অর্থাৎ তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হয়ে যাবেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি শর্তারোপ করেছেন যে, উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানলে, উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করলে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, ক্ষমা ও দয়া লাভ  করা যাবে। আর যদি উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করা না হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, ক্ষমা ও দয়া কোনটাই লাভ করা যাবে না।

মূল বিষয় হচ্ছে, মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত ব্যতীত কোনকিছুই গ্রহণযোগ্য ও কবুলযোগ্য নয়।

উদাহরণস্বরূপ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বুনিয়াদী বিষয়সমূহের মধ্যে প্রথম হচ্ছে পবিত্র ঈমান। পবিত্র ঈমান উনার মূল বিষয় হচ্ছেন কালিমাহ শরীফ তথা

لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ‎ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উক্ত কালিমাহ শরীফ পুরোটাই স্বীকার করতে হবে। এখন কেউ যদি শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বা উনাকে মানে কিন্তু উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে বা উনাকে না মানে তাহলে কস্মিকালেও সে ঈমানদার বা মু’মিন হতে পারবে না।

দ্বিতীয় হচ্ছে ছলাত বা নামায। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

صَلُّوْا  كَمَا رَأَيْتُمُوْنِـىْ اُصَلِّىْ

অর্থ: নামায পড় যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে নামায পড়া শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবেই নামায পড়তে হবে। নচেৎ নামায হবে না। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশকালে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় টুল-চেয়ারের ন্যায় চারপায়া বিশিষ্ট আসন থাকা সত্বেও তাতে বসে নামায পড়েননি বরং জমিনে বা ফ্লোরে জায়নামায মুবারক বিছিয়ে নামায পড়েছেন। কাজেই চেয়ার-টুলে বসে যারা নামায পড়বে, তাদের নামায হবে না।

শুধু তাই নয়, সম্মানিত নামায ও সম্মানিত দুআ বা মুনাজাতের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্মরণ বা ছানা-ছিফত করা ব্যতীত তা কবুল হবে না। যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ صَلَّى صَلَا ةً وَلَمْ يُصَلِّ فِيْهَا عَلَىَّ وَعَلٰى اَهْلِ بَيْتِىْ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি নামায পড়লো অথচ আমি ও আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করলো না অর্থাৎ ছানা-ছিফত করলো না। তার নামায কবুল হবে না। (সাওয়ায়িকে মুহরিকাহ)

যার কারণে সম্মানিত নামায উনার শেষ বৈঠকে পবিত্র তাশাহহুদ শরীফ উনার মধ্যে সালাম মুবারক পেশ করার বিধানটি এবং পবিত্র দুরূদে ইবরাহীম শরীফ উনার মধ্যে ছলাত শরীফ পড়ার বিধানটি নির্দিষ্ট ও আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে।

অনুরূপভাবে দুআ বা মুনাজাত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كُلُّ دُعَاءٍ  مَحْجُوْبٌ حَتّٰى يُصَلِّىْ عَلٰى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: প্রত্যেক দুআ আবৃত অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ কোন দুআই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পৌঁছবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করা না হবে। (তবারানী শরীফ, ফাইদ্বুল কাদীর, ৫ম খ- ১৯ পৃষ্ঠা)

তৃতীয় পবিত্র যাকাত উনার ক্ষেত্রেও বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত ও নির্ধারিত নিয়মে যাকাত, উশর, ফিতরা ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, দান-ছদকা না দেয়া পর্যন্ত তা কবুলযোগ্য হবে না। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে উনার নিকট যাকাত, উশর, ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা পৌঁছানো হতো। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার যারা খলীফাহ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট পৌঁছানো হতো এবং এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

خُذْ مِنْ اَمْوَالِـهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِـهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّـهُمْ وَاللهُ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.

অর্থ : (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উনাদের (উম্মতের) ধন-সম্পদ হতে ছদক্বা (যাকাত, ফিত্বরা, উশর, দান, হাদিয়া ইত্যাদি) গ্রহণ করুন, এর মাধ্যমে প্রদানকারীদেরকে এবং তাদের ধন-সম্পদকে পবিত্র করুন  ও পরিশুদ্ধ  করুন এবং আপনি তাদের জন্যে দোয়া মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া মুবারক তাদের জন্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং কামিয়াবী হাছিলের মাধ্যম। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)

প্রতিভাত যে, যাকাত, উশর, ছদকাতুল ফিতর ইত্যাদি দান-ছদকাহ পরবর্তীকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত খলীফাহ উনাদের নিকট পৌঁছানো ব্যতীত তা কবুল হবে না।

চতুর্থ হচ্ছে সম্মানিত রোযা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নিয়মে রোযা রাখার জন্য নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন সেভাবেই রোযা রাখতে হবে। তিনি মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার চাঁদ দেখে রোযা রাখতে বলেছেন এবং শাওওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখে রোযা ছাড়তে বা ঈদ করতে বলেছেন। বিশেষ করে রোযাদারের জন্য তারাবীহ নামায পড়ার বিধান তিনিই দিয়েছেন। আর সম্মানিত রোযা উনার ক্ষেত্রে তিনি মাসয়ালা জানিয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন

اَلْفَطْرُ مِمَّا دَخَلَ

অর্থাৎ রোযা অবস্থায় কোনকিছু শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। অথচ আজকাল কিছু জাহিল মুফতী এবং কিছু অজ্ঞ ডাক্তার বলে থাকে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন, ইনহেলার ইত্যাদি নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না। নাউযুবিল্লাহ!

পঞ্চম হচ্ছে পবিত্র হজ্জ। মহান আল্লাহ পাক তিনি হজ্জ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তর্জ-তরীক্বা মোতাবেক হজ্জ ও উমরাহ না করা হলে তা কস্মিনকালেও কবুল হবে না। যেমন বর্তমানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুম মুবারক ও সুন্নত মুবারক উনার বরখেলাফ করে ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে এবং ওকূফে আরাফার তারিখ পরিবর্তন করে হজ্জ করা হচ্ছে। নাউযূবিল্লাহ! এভাবে হজ্জ করলে তা আদৌ আদায় হবে না। তাছাড়া হজ্জ পালনের  ক্ষেত্রে পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত করা ব্যতীত হজ্জ মোটেও আদায় ও কবুল হবে না।

এমনিভাবে প্রতিটি ইবাদত বা আমল করতে হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক সাপেক্ষে করতে হবে। উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ আমল গ্রহনযোগ্য ও কবুলযোগ্য নয়।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলক্বদ এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা