সরকারের জবাবদিহিতামূলক আচরণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয় বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। সরকারের মেগা প্রকল্পে জড়িয়ে আছে মেগা দুর্নীতি আর মেগা সময়ক্ষেপণ। মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে প্রকল্প আগে গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সরকার সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবে।

সংখ্যা: ২৬৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) আকার বাড়ছে; যার সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে বিশাল বিশাল প্রকল্পে বা তথাকথিত মেগাপ্রকল্পে। কিন্তু প্রতিটি মেগা প্রকল্পের শুরুতে যে ব্যয়ের হিসাব দেয়া হচ্ছে, সময় গড়ানোর সাথে সাথে তা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় প্রতিবেশী দেশ তো বটেই, অনেক পশ্চিমা দেশের তুলনায়ও বেশি। যদিও বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি যেকোনো দেশের তুলনায় কম। নির্মাণ সামগ্রীর দামও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে অনেক কম। এরপরও প্রকল্পের ব্যয় বিশ্বের প্রায় সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। দুর্নীতি আর অপচয় যে অতিরিক্ত এই ব্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ তা এখন সর্বজনবিদিত।

ফলে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির সাথে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ব্যয়। কোনো কোনো প্রকল্পে ২০০ শতাংশও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। সময় বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যায় সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধিতে সব চেয়ে এগিয়ে আছে পদ্মা সেতু। ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকায়। অন্যদিকে সময় বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে মালিবাগ-মগবাজার ফাইওভার নির্মাণ প্রকল্প। ৩ বছরের প্রকল্পে সময় লেগেছে ৭ বছর। প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে কোনো রকম জবাবদিহিতা ছাড়াই ব্যয় বেড়ে যায়। এ কারণে প্রায় কোনো প্রকল্পই সময়মতো শেষ হয় না। যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে যা ধার্য করা হয়, পরে সেটি আর ঠিক থাকে না।

গত দুই অর্থবছরে সংশোধিত ১৩২টি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে সরকারের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় অনেক আগে থেকেই বারবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২ বছরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ৪২৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রকল্প সংশোধিত। এসব সংশোধিত প্রকল্পের প্রত্যেকটিতে ব্যয় বেড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবার পরে ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি। তবে এ প্রকল্পটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা (২০০ কোটি ডলার)। কিন্তু চূড়ান্ত দরপত্রে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ধরা হয় ২১ হাজার ৯শ ৮৫ কোটি টাকা। ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প। ২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পে এ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে ৪বার। ফলে আড়াই বছরের প্রকল্পে লেগেছে ৬ বছর। এ প্রকল্পে মোট ৪ দফায় ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১২শ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে সর্বশেষ ১ বছর সময় ও ৬শ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণে ভারত, চীন, ইউরোপের চেয়েও বেশি ব্যয় হচ্ছে। সংস্থাটির এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে খরচ হচ্ছে ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার। চীনে খরচ ১৩ থেকে ১৬ লাখ ডলার, ইউরোপে খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে ঢাকা-মাওয়া চার লেন সড়কের খরচ হচ্ছে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৭০ লাখ ডলার। রংপুর-হাটিকুমরুল সড়কে খরচ হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ৬৬ লাখ ডলার। তুলনামূলক কম খরচ পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়কে। সেটিও ইউরোপের খরচের সমান অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ২৫ লাখ ডলার। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় এখন সরকারি হিসাবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দলিলে এই ব্যয়ের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় সম্পর্কে আগে যা প্রকাশ হয়েছে, এই ব্যয় তার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থ, পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আলাদা আলাদা সূত্র বলেছে, রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় আরো বাড়বে। তাদের কাছে আরো যেসব সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, তাতে সরাসরি এই প্রকল্প ও তার আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট।

এগুলোর বাইরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল ও এলএনজি টার্মিনাল খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ আছে।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, এসব মেগা প্রকল্প শুধুই মেগা দুর্নীতির উৎসব নয়, পাশাপাশি এটা সাংবিধানিকভাবেও শুদ্ধ নয়। কারণ সংবিধানে ৫টি মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ আছে। কাজেই সে ৫টি মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্যই সবার আগে সরকারকে পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

বলাবাহুল্য, বর্তমানে রাজধানীতে ৬০ লাখ বস্তিবাসী রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি লোক গৃহহীন রয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ পথশিশু রয়েছে। সর্বোপরি দেশের ২০ কোটি জনগণের প্রায় ১২ কোটিই দরিদ্র। কিন্তু তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রকল্প গ্রহণ না করে সরকার প্রতি বছর নানা ধরনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। যার ব্যয় বহুগুণ বেড়েই যাচ্ছে। এতে লাখ লাখ কোটি টাকা অপচয়, অনিয়ম ও লুটপাট করা হচ্ছে। অথচ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারই এখনো ২০ কোটি জনগণের মধ্যে অধিকাংশের জন্যই পূরণ করতে পারেনি সরকার। কিন্তু সে সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সরকারের নজর নেই।

এটা বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত সোনার বাংলার গড়ার অন্তরায়। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমরা শোষিতের পক্ষে’। সেটা প্রধানমন্ত্রীও বলেছে। তাই শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে উচিত- এ মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলো বাদ দেয়া। বরং বঞ্চিত জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের প্রতি আগে দৃষ্টি দেয়া। সেই সাথে প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।

প্রসঙ্গত, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক, তোমরা তোমাদের রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”

সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী সরকার জনগণের রক্ষক। জনগণ সরকারের কাছে সর্বোচ্চ সেবা, সুযোগ-সুবিধা আশা করে। শোষণ, নিপীড়ন থেকে পরিত্রাণ আশা করে। এখন যদি সরকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও জনবান্ধবমুক্ত প্রকল্পগুলো বাদ না দেয়, তাহলে জনগণ আরো শোষণ, নিপীড়ন, ভোগান্তির শিকার হবে। ফলে সরকারকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।

-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৫

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৪ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩৩ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা পরিত্যাগ করে ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর এখন পুঁজিবাদের বেনিফেসিয়ারী নিজেকে বদলে ফেলার কারণে এখন অন্যকেও বদলানোর নছীহত খয়রাত করেছেন কিন্তু সমাজতন্ত্র আর পুঁজিবাদ যেমন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ; তেমনি ‘প্রথম আলো’র বদলানোর আহ্বানও এক অনাচার থেকে আর এক অনাদর্শের দিকে। চরিত্রহীন, আদর্শহীন, ধর্মহীন- মতি মিয়ার যোগ্যতা কোথায়? ‘বদলানোর রূপকার’ তথা ‘সংস্কারক’ সাজার।বরং এ আহ্বান ফেরি করে মতি মিয়া যে নতুন পুরস্কার বাণিজ্যের ধান্ধায় রয়েছেন তা বলতে গেলেই সবাই বুঝতে পারছেন