সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ হলো পবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত

সংখ্যা: ২৩১তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা বলেছেন, করেছেন বা অন্যের কোন কথা বা কাজের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন উনাকে সুন্নাহ শরীফ বা হাদীছ শরীফ বলে। ব্যাপক অর্থে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ ও সম্মতিকেও হাদীছ শরীফ বলে। তবে কারো মতে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ ও সম্মতিকে আছার বলা হয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যেসকল ওহী মুবারক নাযিল করেছেন তা দু’শ্রেণীর। এক- ওহীয়ে মাতলূ, তা হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ। দুই- ওহীয়ে গইরে মাতলূ, অর্থাৎ ওহী দ্বারা প্রাপ্ত মূল ভাবটিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় ভাষায় প্রকাশ করেছেন, ইহাই পবিত্র হাদীছ শরীফ। ইহা ক্বিরায়াত হিসেবে পাঠের হুকুম নামাযে দেয়া হয়নি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ বা আছার শরীফ বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে এবং যিনি বর্ণনা করেন উনাকে রাবী বলে।  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী পরম্পরাকে সনদ বলে। কোন হাদীছ শরীফ উনার সনদ বর্ণনা করাকে ইসনাদ বলে। কখনো ইসনাদ ‘সনদ’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সনদ বর্ণনা করার পর যে মূল হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হয়, উনাকে মতন বলে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রথমত তিন প্রকারের। ক্বওলী, ফে’লী ও তাকরীরী। কথা জাতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে ক্বওলী, কার্যবিবরণ সম্বলিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে ফে’লী এবং সম্মতিসূচক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে তাকরীরী হাদীছ শরীফ বলে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন- মারফু, মাওকুফ, মাকতু, মুত্তাসিল, মুনকাতি, মুরসাল, মুআল্লাক, মুদাল্লাস, মুদ্বতারাব, মুদরাজ, ছহীহ, হাসান, দ্বয়ীফ, মাওদূ, মাতরূক, মুবহাম, গরীব, আযীয, মাশহূর, মুতাওয়াতির ইত্যাদি। এ সমুদয় প্রকারভেদ রাবী বা বর্ণনাকারীর বর্ণনার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে নয়। সুতরাং কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে এ কথা বলা কখনই শুদ্ধ হবে না যে, ওমুক হাদীছ শরীফখানা দ্বয়ীফ, বরং বলতে হবে যে, ওমুক হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকারী বা রাবী দ্বয়ীফ।

মূল কথা হলো, পবিত্র হাদীছ শরীফ হলো ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْـهَوٰى  اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْى يُوحٰى

অর্থ : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতিত নিজের থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت الـمقدام بن معديكرب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا انى اتيت القران ومثله معه الا يوشك رجل شبعان على اريكته يقول عليكم يـهذا القران فما وجدتـم فيه من حلال فاحلوه وما وجدتـم من حرام فحرموه وان ماحرم رسول الله صلى الله عليه وسلم كما حرم الله تعالى.

অর্থ : æহযরত মিক্বদাম ইবনে মা’দী কারিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জেনে রাখো, আমাকে পবিত্র কুরআন শরীফ দেয়া হয়েছে এবং উনার সাথে উনার অনুরূপও অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ দেয়া হয়েছে। সাবধান, অচিরেই এমন এক সময় আসবে, যখন উদরপূর্ণ লোক তার গদীতে বসে বলবে, তোমরা শুধু এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকেই গ্রহণ করবে। উনাতে যা হালাল পাবে, তা হালাল হিসেবে জানবে এবং উনাতে যা হারাম হিসেবে পাবে তা হারাম হিসেবে জানবে। অথচ নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা হারাম করেছেন তা মহান আল্লাহ পাক তিনি যা হারাম করেছেন তারই অনুরূপ।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

عن حضرت العرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ايـحسب احدكم متكئا على اريكته يظن ان الله لـم يـحرم شيئا الا ما فى هذا القران الا وانى والله قد امرت ووعظت ونـهيت عن اشياء انـها كمثل القران او اكثر.

অর্থ : æহযরত ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমাদের মধ্যে) দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদীতে হেলান দিয়ে একথা মনে করে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যা হারাম করেছেন তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? তোমরা জেনে রাখো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেক বিষয় আদেশ দিয়েছি,  উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি। আমার এ সমস্ত বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ উনার বিষয়সমূহের ন্যায় বরং তা অপেক্ষা অধিক হবে।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা থেকে প্রতীয়মাণ হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তুলনায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বেশি। শুধু তাই নয়, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধি-বিধান পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই অধিক সাব্যস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা সাধারণত ফরয বিষয়সমূহ নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল যাবতীয় বিষয় নির্ধারিত হয়েছে। সুতরাং কার্যক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তুলনায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার গুরুত্ব অধিক বলে প্রমাণিত।

এছাড়া কেউ যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ না মানে বা বিশ্বাস না করে তাহলে তার পক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকেও বিশ্বাস করা সম্ভব হবে না। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ যে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম তা আমাদেরকে কে বললেন? বা কে জানালেন? তা আমাদেরকে বলেছেন বা জানিয়েছেন আমাদের যিনি নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অর্থাৎ যিনি আমাদেরকে উক্ত বিষয় সম্পর্কে বলেছেন বা জানিয়েছেন উনার সেই বলাটা ও জানানোটাই তো পবিত্র হাদীছ শরীফ। কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা এত অধিক যে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ ও উছূল বিশারদগণ হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে-

السنة هى اكثر من عدد الرمل والـحصى

অর্থ : সুন্নাহ শরীফ বা হাদীছ শরীফ হলো বালুকণা ও পাথরকণা অপেক্ষা অধিক।” (উছূলুশ শাশী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে-

ن حضرت مالك بن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم تركت فيكم امرين لن تضلوا ماتـمسكتم بـهما كتاب الله وسنة رسوله.

অর্থ : হযরত মালিক ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি নিয়ামত রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত নিয়ামত দু’টি আকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না। এক- মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব কুরআন শরীফ, দুই- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাহ শরীফ বা হাদীছ শরীফ।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মোট কথা, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৪টি উছূল বা মূলনীতির মধ্যে দু’টি হচ্ছে প্রধান – কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৪টি উছূলের মধ্যে দ্বিতীয় উছূল হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ। পবিত্র হাদীছ শরীফ ব্যতীত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বোঝা, উপলব্ধি করা, সম্মানিত দ্বীন উনার উপর চলা কখনোই সম্ভব নয়। এ সম্মানিত উছূল তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করা ঐরূপ কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ যেরূপ পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে অস্বীকার করলে কাফির ও জাহান্নামী হতে হয়।

-আল্লামা মুফতী মুজতবা আহমদ।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম