সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম পবিত্র মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২২১তম সংখ্যা | বিভাগ:

ঈদ মুবারক!      ঈদ মুবারক!!    ঈদ মুবারক!!!

কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার পবিত্র মাস হচ্ছে সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম রবীউল আউয়াল শরীফ। এ মাসেরই বারোই শরীফ পবিত্র সোমবার দিনটিই হচ্ছে উনার মুবারক বিলাদত শরীফ উনার দিন। এই মুবারক বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি করাটাকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম ও সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ ঈদ পালন করাকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য ফরয করা হয়েছে। ইরশাদে ইলাহী মুবারক হচ্ছে-

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون

অর্র্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সমস্তকিছু থেকে উত্তম, যা তারা (দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য) সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

প্রকাশ থাকে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ এবং উনাদের বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনগুলি রহমত, বরকত, নিয়ামত নাযিল ও হাছিলের দিন এবং সে দিনগুলি ঈদ বা খুশি প্রকাশের দিন।

যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব- মুয়াত্তা মালিক শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন ও উনার বিছাল শরীফ জুমুআর দিন সম্পন্ন হয়েছে। যার কারণে এ জুমুআর দিনটিকে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে ঈদের দিন ঘোষণা করেন এবং এ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। শুধু তাই নয়, এ দিনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সম্মানিত দিন হিসেবে ঘোষণা দেন। এমনকি এ দিনটিকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা এ দুই ঈদের দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত বলে ঘোষণা করেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব আল মুসতাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খণ্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ শরীফ ১ম খণ্ড ৮৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল শরীফ ১১ খণ্ড ৪৫৫ পৃষ্ঠা ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেসহ কোনকিছুই সৃষ্টি করা হতো না।

স্মরণীয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায়ের কারণে জুমুআর দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত হয় তাহলে যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেসহ কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করা হতো না এবং উনাদের বিশেষ কোন ঘটনাও সংঘটিত হতো না, শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো-কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ, এককথায় কায়িনাতের কোনকিছুই সৃষ্টি করা হতো না; উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ উনার দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ কত মহান, কত বড় খুশি বা ঈদের দিন হবে তা ফিকির করতে হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একদা-

اليوم اكملت لكم دينكم و اتممت عليكم نعمتى و رضيت لكم الاسلام دينا

অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন উনাকে পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য পবিত্র ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম এবং এতে সন্তুষ্ট রইলাম।” এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী বসা ছিলো সে বলে উঠলো, যদি এই পবিত্র আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো তাহলে আমরা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদ বলে ঘোষণা করতাম।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উল্লেখ্য, আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ সম্পর্কে ইহুদী সম্প্রদায়ের বক্তব্য হলো, তাদের প্রতি যদি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হতো তাহলে তারা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করতো। যদিও তাদের জানা ছিলো না যে, আসলে মুসলমানদের দুই ঈদ উনাদের দিনেই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছে- এক. জুমুআর দিন, দুই. আরাফার দিন।

কিন্তু যে বিষয়টি এখানে স্মরণযোগ্য তা হলো, পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার কেবল উক্ত ১খানা পবিত্র আয়াত শরীফই নয় বরং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসহ প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে ৬,৬৬৬খানা পবিত্র আয়াত শরীফ ও ১১৪টি পবিত্র সূরা শরীফসহ সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের যিনি কারণ, যিনি আগমন না করলে সেই পবিত্র কুরআন শরীফই নাযিল হতো না, উনার আগমন তথা পবিত্র বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ উনার দিনটি তাহলে কত বড় ঈদের দিন হবে তা সহজেই অনুধাবণীয়।

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার উম্মতের আরজু বা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দু‘আ করেছিলেন-

اللهم ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك وارزقنا وانت خير الرازقين. قال الله انى منزلها عليكم فمن يكفر بعد منكم فانى اعذبه عذابا لا اعذبه احدا من العالمين .

অর্থ: “হে আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল উনার দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪, ১১৫)

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উক্ত দু‘আর পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতকে নিয়ে ঈদ বা খুশির দিনরূপে পালন করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে  যিনি সৃষ্টির মূল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, উনাকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না; উনার বিলাদত শরীফ উনার দিনটিকে কিরূপ খুশির দিন হিসেবে পালন করা উচিত এবং সেদিন উপলক্ষে যদি কেউ খুশি প্রকাশ না করে তাহলে সে কত কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো লোকের সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে খুশি হয়, বিবাহ-শাদীতে খুশি হয়, চাকরি পেলে খুশি হয়, ব্যবসায় লাভ হলে খুশি হয়, বিপদ থেকে বেঁচে গেলে খুশি হয়, সুন্দর ঘর-বাড়ি করতে পারলে খুশি হয়, জায়গা-জমি কিনতে পারলে খুশি হয়, কোনো মর্যাদা কিংবা পদ লাভ করলে খুশি হয়, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ বা বের হলে খুশি হয়, বিশেষ করে মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার যেদিন ফল প্রকাশ হয় সেদিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী ও তার অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে মিষ্টি কিনে বিতরণ করে থাকে ও খেয়ে থাকে। তারা এত খুশি প্রকাশ করে যে, সেদিন মিষ্টির দোকানের সমস্ত মিষ্টি শেষ হয়ে যায়। দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী সামান্য নিয়ামত লাভে খুশি প্রকাশের দৃষ্টান্ত যদি এই হয়, তাহলে যিনি আগমন না করলে কুল-কায়িনাতের কিছুই সৃষ্টি হতো না, সৃষ্টি হতো না কোন পিতা-মাতার, না কোন সন্তানের সেক্ষেত্রে উনার মুবারক আগমন বা বিলাদত শরীফ উনার দিন উপলক্ষে কত বেশি খুশি প্রকাশ করতে হবে, মিষ্টি দিয়ে, মাল দিয়ে, না জান দিয়ে তা ফিকির করতে হবে।

যার কারণে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার মহান মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার পবিত্র ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ দিনটিতে খুশি প্রকাশার্থে সারা বছর মাহফিলের ব্যবস্থা করেন এবং বিশেষ করে পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার মাস পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উপলক্ষে এ বছর (১৪৩৪ হিজরী সন ০৪ মাহে ছফর থেকে ৩০শে মাহে ছফর পর্যন্ত প্রতিযোগিতা এরপর ০১ রবীউল আউওয়াল শরীফ থেকে ২৭শে রবীউল আউওয়াল শরীফ পর্যন্ত ওয়াজ শরীফ এবং তৎপরবর্তী ০৩ দিন সামা শরীফ) সুদীর্ঘ ৫৭ দিন ব্যাপী মাহফিলের ঘোষণা দেন। সুবহানাল্লাহ!

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা