সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব

সংখ্যা: ২৯৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

تُـعَزِّرُوْهُ وَتُـوَقِّـرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْـرَةً وَّاَصِيْلًا

অর্থ: “তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক করো, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে অনন্তকালব্যাপী।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

مَا بَـعَثَ اللهُ نَبِيًّا اِلَّا اَخَذَ عَلَيْهِ الْعَهْدَ لَـئِنْ بُعِثَ وَهُوَ حَىٌّ لَـيَــتْـبَـعَنَّهٗ وَاَخَذَ عَلَيْهِ اَنْ يَّأْخُذَ عَلـٰى اُمَّتِهٖ لَئِنْ بُعِثَ سَيِّدُنَا حَبِيْـبُـنَا شَفِيْـعُنَا مَوْلـٰـنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَـيْهِ وَسَلَّمَ وَهُمْ اَحْيَاءٌ لَـيَـتْـبَـعُـنَّهٗ وَيَـنْصُرُنَّهٗ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেননি, যাঁর থেকে এই সম্মানিত ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করেননি যে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করা হবে, তখন যদি উনাদের কেউ দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন, তাহলে উনাকে অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইত্তিবা মুবারক করতে হবে (অর্থাৎ অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনতে হবে এবং) উনাকে অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে হবে।) আর মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে এই সম্মানিত ওয়াদা মুবারকও গ্রহণ করেছেন যে, উনারা যেন উনাদের উম্মতের থেকে অনুরূপ ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করা হবে, যদি উনাদের উম্মতরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পায়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইত্তিবা মুবারক করতে হবে এবং অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে হবে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গোলামী মুবারক করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে আদ্বওয়াউল বায়ান ৮/১১০)

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি যখন হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম উনার নিকট চিঠি পাঠালেন সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করার জন্য, তখন হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম তিনি উনার অনেক সেনাপতি এবং সৈন্য-সামন্তসহ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনাদের দুজনের মধ্যে বিশেষ কথোপকথন মুবারক হয়। এক পর্যায়ে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,

وَيْـحَكِ يَا حَضْرَتْ بِلْقِيْسَ عَلَـيْـهَا السَّلَامُ اَفْـنَـيْتِ شَبَابَكِ فِـىْ عِبَادَةِ الشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالَتْ يَا نَبِـىَ اللهِ دَعْ مَا مَضٰى فَالْاٰنَ قَدْ دَخَلْتُ فِـىْ دِيْــنِكَ وَقُـلْتُ بِـمَقَالَتِكَ وَشَهِدْتُ بِشَهَادَتِكَ غَيْـرَ اَنِّـىْ اَرٰى خَاتِـمَكَ مَنْـقُوْشًا بِلَا حَفْرٍ وَلَا كِـتَابَةٍ فَمَا الَّذِىْ عَلـٰى خَاتِـمِكَ قَالَ حَضْرَتْ سُلَيْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَآ اِلـٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ حَضْرَتْ بِلْقِيْسُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ مَنْ سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَضْرَتْ سُلَيْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِـىْ اٰخِرِ الزَّمَانِ قَالَتْ حَضْرَتْ بِلْقِيْسُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ فَلِمَ صَارَ اِسْـمُهٗ عَلـٰى خَاتِـمِكَ دُوْنَ اِسْـمِكَ فَـقَالَ لِاَنَّهٗ اَكْـرَمُ عَلَى اللهِ مِنِّـىْ وَلَنْ يَّــنْـفَعَكِ الْاِيْـمَانُ وَلَنْ يَّــقْبَلَ اللهُ مِنْكِ صِرْفًا وَلَا عَدْلًا حَتّٰـى تُـؤْمِنِـىْ بِسَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاٰمَنَتْ حَضْرَتْ بِلْقِيْسُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وَمَنْ مَّعَهَا بِنَبِـيِّـنَا سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَـبْلِ اَنْ يُّـوْلَدَ بِدَهْرٍ طَوِيْلٍ

অর্থ: “হে হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম! আপনার জন্য আফসোস! আপনি আপনার যৌবনকালটা (জীবনের মূল সময়টা) মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী না করে সূর্যের উপাসনা করে কাটিয়েছেন।’ হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম! যেটা অতীত হয়ে গেছে, সেটার জন্য আমি লজ্জিত এবং তাওবা-ইস্তিগফার করছি। এখন তো আমি আপনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করেছি, আপনার নছীহত মুবারক অনুযায়ী কথা বলছি এবং আপনার সাক্ষ্য অনুযায়ী সাক্ষ্য দিয়েছি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান এনেছি। তবে আমি আপনার সম্মানিত আংটি মুবারক উনার মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর নক্বশাকৃত একটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি যা খোদাই করাও নয়, লিখিতও নয়। আপনার সম্মানিত আংটি মুবারক উনার মধ্যে যেই নক্বশা মুবারক, এটা মূলত কী? হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, (এটা হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ-) لَآ اِلـٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার সম্মানিত নক্বশা মুবারক। হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ‘সাইয়্যিদুনা মাওলানা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কে?’ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘তিনি আখিরী যামানায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিবেন।’ হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ‘তাহলে আপনার সম্মানিত আংটি মুবারক উনার মধ্যে আপনার সম্মানিত নাম মুবারক না হয়ে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক হলেন কেন?’ তখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘কারণ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার চেয়ে অনেক সম্মানিত। আর সম্মানিত ঈমান আপনাকে কস্মিনকালেও ফায়দা দিবে না এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফলসহ যত প্রকার ইবাদত-বন্দেগী রয়েছেন, সমস্ত প্রকার ইবাদত-বন্দেগী এবং তাওবা-ইস্তিগফার কোনো কিছুই কস্মিনকালেও ক্ববূল করবেন না; যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আপনি সম্মানিত ঈমান না আনবেন।’ অতঃপর হযরত রানী বিলক্বীস আলাইহাস সালাম তিনি এবং উনার সাথে যাঁরা ছিলেন সকলেই আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী এবং রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাশরীফ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক) প্রকাশের অনেক পূর্বেই উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান আনেন।” সুবহানাল্লাহ! (দারজুদ দুরার ফী তাফসীরিল আয়ি ওয়াস সুওয়ার ৩/১৩৪০-১৩৪১)

কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান আনা, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গোলামী মুবারক করা, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা সমস্ত সৃষ্টির উপর ফরয। সুবহানাল্লাহ! যাঁরা এটা করতে পারবেন, উনাদের জন্য রয়েছেন ইহকাল ও পরকালে সর্বোচ্চ নিসবত-কুরবত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর যারা এটা করবে না এবং বেয়াদবী করবে, তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে অত্যন্ত ভয়াবহ কঠিন পরিণতি। না‘ঊযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে একটি মশহূর ঘটনা বর্ণিত রয়েছেন। হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রধান কাতিব ছিলো কাফিল পাদ্রী। সে পবিত্র তাওরাত শরীফ লিপিবদ্ধ করতো। একদিন সে লক্ষ্য করলো- সম্পূর্ণ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক থেকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক অনেক বেশি আলোচিত হয়েছেন, অনেক বেশি উল্লেখ রয়েছেন। তখন তার অন্তরে হিংসা পয়দা হলো এবং সে মনে মনে চিন্তা করলো- হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন আমাদের সম্মানিত নবী-রসূল, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলেন। উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নবী আর কে হতে পারেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক থেকে অনেক বেশি আলোচিত হবে, অনেক বেশি উল্লেখ থাকবে এটা কেমন কথা? এটা চিন্তা করে কাফিল পাদ্রি সম্পূর্ণ পবিত্র তাওরাত শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক কেটে দিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! সাথে সাথেই তার উপর কঠিন লা’নত বর্ষিত হলো। সে একটি বড় গুঁই সাপে পরিণত হয়ে গেলো। তখন সে চিন্তা করলো- এই অবস্থায় যদি কেউ তাকে দেখে ফেলে, তাহলে গুঁই সাপ মনে করে মেরে ফেলবে। তাই সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলে যেয়ে আশ্রয় নিল। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কাফিল পাদ্রিকে দেখতে না পেয়ে তার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তাকে অনেক খেঁাজাখুঁজি করা হলো; কিন্তু পাওয়া গেলো না। অতঃপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত তুর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা মুবারক বলতে যাবেন, এমন সময় হঠাৎ তিনি দেখলেন সামনে একটা বড় গুঁই সাপ। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে সে সালাম দিলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘কে তুমি?’ তখন সে তার পরিচয় দিয়ে বললো- সে হচ্ছে কাফিল পাদ্রি। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘তোমার এই অবস্থা হলো কেনো?’ সে বললো- ‘আমি চরম বেয়াদবী করেছি।’ তারপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট সে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো এবং তওবা-ইস্তিগফার করতে থাকলো। সে বার বার বলতে থাকলো- ‘আমি বুঝতে পারিনি। আমি চরম বেয়াদবী করেছি। আমি খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করতেছি। আপনি দয়া করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার জন্য একটু সুপারিশ করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।’ তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘তুমি সর্বনাশ করেছো, চরম বেয়াদবী হয়েছে। তোমার জন্য সুপারিশ করাও অত্যন্ত কঠিন। ঠিক আছে; তুমি যেহেতু বার বার তওবা-ইস্তিগফার করতেছো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমার জন্য সুপারিশ করবো।’ অতঃপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে জরুরী কথা মুবারক বলা শেষ করে কাফিল পাদ্রির চরম বেয়াদবীর কথা এবং সে লা’নতগ্রস্ত হয়ে গুঁই সাপে পরিণত হওয়ার বিষয় পেশ করে বললেন- ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! কফিল পাদ্রি চরম বেয়াদবী করেছে। সে বুঝতে পারেনি। এখন সে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করতেছে। আপনি দয়া করে তার ক্ষমার একটা ব্যবস্থা করে দিন।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন- ‘সে চরম বেয়াদবী করেছে। সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। তবে আপনি যেহেতু তার জন্য সুপারিশ করেছেন, তাই আমি তাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। সরাসরি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তিনি যদি দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলেই শুধু সে ক্ষমা লাভ করবে; অন্যথায় সে চির জাহান্নামী হবে। তার ক্ষমা লাভের আর কোনো ব্যবস্থা নেই।’ তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো এখনো দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছোহবত মুবারক সে পাবে কিভাবে? আপনি দয়া করে তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। যাতে আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন- ‘ঠিক আছে; আমি তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিলাম।’ অতঃপর গুঁই সাপ রূপী কাফিল পাদ্রী মিশর থেকে হেঁটে হেঁটে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার আবূ কুবায়েছ পাহাড়ে এসে আশ্রয় নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক (আগমন মুবারক) উনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছোহবত মুবারক লাভ করবে এবং উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সেজন্য সে অপেক্ষা করছিলো। যথাসময়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত এবং রিসালাত মুবারক প্রকাশের পর একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ মুবারক করছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছোহবত মুবারক লাভ করে উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য গুঁই সাপ রূপী কাফিল পাদ্রী আবূ কুবায়েছ পাহাড় থেকে নেমে কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের বাড়ির সামন দিয়ে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে হঠাৎ আবূ জাহিল ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো একটি বড় গুঁই সাপ। সে একটি লাঠি নিয়ে গুঁই সাপটিকে মেরে ফেললো। অতঃপর তাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ঐ ছাইগুলি একটি কাপড়ের মধ্যে পোটলা করলো। তারপর সে এই পোটলা নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার নিকট গিয়ে সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেলো। তখন কাট্টা কাফির আবূ জাহিল চরম বেয়াদবের মত সম্বোধন করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললো- ‘বলুন তো এই কাপড়ের পোটলার ভিতরে কী রয়েছে? যদি আপনি বলতে পারেন, তাহলে আমি ঈমান আনবো।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘আমি না বলে ঐ কাপড়ের পোটলার ভিতরে যে আছে, সে যদি বলে, তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে?’ কাট্টা কাফির আবূ জাহিল বললো, ‘হঁ্যা; তাহলে অবশ্যই আমি ঈমান আনবো।’ তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,

قُمْ بِاِذْنِ اللهِ يَا كَافِلُ

‘হে কাফিল পাদ্রী! তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে জিন্দা হয়ে যাও।’ সুবহানাল্লাহ!

সাথে সাথে কাফিল পাদ্রি একটা জিন্দা মানুষের ছূরত ধারণ করে কাপড়ের পোটলা থেকে লাফ দিয়ে নেমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করলো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ) লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলো। সুবহানাল্লাহ! কাট্টা কাফির আবূ জাহিল স্বচক্ষে এই দৃশ্য দেখে কঠিন ভয় পেয়ে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে এক দৌড়ে অনেক দূরে গিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি অনেক বড় বড় জাদুকর দেখেছি; কিন্তু আপনার মতো এতো বড় জাদুকর আর দেখিনি। আপনার মতো জাদুকর আর একজনও নেই।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আর কাফিল পাদ্রী যে চরম বেয়াদবী করেছে, সেটা সে স্বীকার করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফিল পাদ্রিকে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর কাফিল পাদ্রি ছাহাবী উনার মর্যাদা লাভ করে সম্মানিত ঈমান উনার সাথে ইন্তিকাল করেন। সুবহানাল্লাহ!

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে কাফিল পাদ্রি কঠিন লা’নতগ্রস্ত হয়ে গুঁই সাপে পরিণত হয়ে যায়। সরাসরি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সুপারিশ করে বলেন, ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! কফিল পাদ্রি চরম বেয়াদবী করেছে। সে বুঝতে পারেনি। এখন সে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করতেছে। আপনি দয়া করে তার ক্ষমার একটা ব্যবস্থা করে দিন।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন- ‘সে চরম বেয়াদবী করেছে। সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। তবে আপনি যেহেতু তার জন্য সুপারিশ করেছেন, তাই আমি তাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। সরাসরি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তিনি যদি দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলেই শুধু সে ক্ষমা লাভ করবে; অন্যথায় সে চির জাহান্নামী হবে। তার ক্ষমা লাভের আর কোনো ব্যবস্থা নেই।’ হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুপারিশে তার হায়াত বৃদ্ধি করে দেয়া হলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি কিন্তু কাফিল পাদ্রিকে ক্ষমা করলেন না। সে প্রায় ১৫০০ বছর লা’নতগ্রস্ত অবস্থায় গুঁই সাপের ছূরতে থাকলো। একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণেই কাফিল পাদ্রি ক্ষমা লাভ করেছে। অন্যথায় তার ক্ষমা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।

তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছেন, সেটা সমস্ত সৃষ্টির চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে সমস্ত কায়িনাতবাসীসহ আমাদের সবাইকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মহাসম্মানিত বুলন্দী শান মুবারক উপলদ্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম