সুইজারল্যান্ড কী তার সাত-শতাব্দীর কথিত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছে? দাবীকৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে? না-কী আমেরিকা, ফ্রান্স ও লন্ডনের ন্যায় অন্য সব কথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতই ‘ইসলামী অনুষঙ্গের’ ক্ষেত্রে তাদের কথিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অকার্যকর বলে প্রতিপন্ন করছে?  কথিত সব আন্তর্জাতিক সনদ, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের কাছে কী কেবল ‘ইসলাম’ই অপাঙ্ক্তেয়? তবে ভদ্রবেশী খোলসে না থেকে তারা ইসলাম বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ্যে স্বীকার করবে কী?  সনদ তথা কনভেনশনে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করবে কী? আর ২৫৫ কোটি মুসলমান- ইসলাম সম্পর্কে ভদ্রবেশী অমুসলিম বিশ্বের প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে সচেতন হবে কী? 

সংখ্যা: ১৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীর ছাত্ররাও সুইজারল্যান্ড সম্পর্কে অবগত হয়ে যায়।

কারণ, পাঠ্যপুস্তকে বর্তমান যুগে রাষ্ট্রের বিশালতার কারণে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র অন্য কোথাও নেই সে কথা যেমন লেখা থাকে; তেমনি তার সাথে একমাত্র ছোট একটি দেশ সুইজারল্যান্ড সেখানেই বর্তমান পৃথিবীর প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র চালু রয়েছে- সে কথা সংযুক্ত থাকে।

তবে যারা পড়াশোনা নাও করে তারাও সুইজ্যারল্যান্ড সম্পর্কে অবগত।

কারণ, এদেশের অশিক্ষিত মুসলমানরাও এখনো বিয়ের সময় পাত্র-পাত্রীকে সুইস ঘড়ি উপহার দিতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে।

দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতে এবং সুইস ঘড়ির বাজার হিসেবে মুসলিম দেশগুলোর অনুভূতির প্রতি মর্যাদা দেয়ার দায়বদ্ধতা সুইজারল্যান্ডের উপর বর্তায়।

উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ড একটি ক্ষদ্রায়তন রাষ্ট্র। পৃথিবীর ক্ষুদ্রাকৃতির স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এটি একটি। সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক আয়তন হলো মাত্র ১৫,৯৭৬ বর্গমাইল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের চেয়েও আয়তনে ছোট। পশ্চিম ইউরোপের মোটামুটি কেন্দ্রস্থলেই সুইজারল্যান্ড অবস্থিত। এবং চারদিকে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন  রাষ্ট্র। তাই সুইজারল্যান্ডকে বলা হয় ল্যান্ড লকড্  কান্ট্রি।

দেশটির হাজার মাইলের সীমানার পাশে আছে তিন বৃহৎ প্রতিবেশী। এরা হলো ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্স। তাছাড়া সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র হিসেবে অস্ট্রিয়া ও ক্ষুদ্রাকৃতির লিচেনস্টেইন। উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে আছে জার্মানি, পূর্ব সীমান্তে অস্ট্রিয়া পশ্চিমা সীমান্তে ফ্রান্স এবং দক্ষিণ সীমান্তে ইতালি। সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের কোন প্রাকৃতিক সীমারেখা নেই। ইউরোপের সুউচ্চ আলপস পর্বতমালার সর্বোচ্চ ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত।

এরকম তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানের কারণে সুইজারল্যান্ড একাধিক আন্তর্জাতিক নদীর উৎসস্থলে পরিণত হয়েছে। রাইন নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর সাগরে পড়েছে; দানিয়ুব ও প্রো প্রবাহিত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং পড়েছে কৃষ্ণসাগরে; রোনী দক্ষিণ পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। এই সমস্ত নদীর জলধারা দশটি বিদেশী রাষ্ট্রের ভিতর দিয়ে বা পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সুইজারল্যান্ড হলো মূলত একটি পর্বতসঙ্কুল দেশ। সুইজারল্যান্ডের মোট রাজ্যক্ষেত্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পার্বত্যভূমি। এবং মোট ভূভাগের সিকি ভাগের মত জায়গা বন্ধ্যা। সমগ্র আলপস অঞ্চলটি হলো পাহাড়-পর্বত ও তুষারক্ষেত্র। এর নিম্ন স্তরেই আছে বিশাল বনভূমি। দেশের মোট ভূখ-ের সিকি ভাগ হলো বনাঞ্চল। পার্বত্য জেলাগুলির প্রধান অর্থনিতিক উদ্যোগ হলো পশুচারণ ও ডেইরী ফার্ম। অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্য, শস্য, শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়। দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ ভূভাগ কৃষিকার্যে ব্যবহার করা হয়। তার উপর দেশের ক্রমবদ্ধমান ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ক্রমশ চাষ-আবাদের অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে। সভাবতই দেশবাসীর প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর বেশ কিছুটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দুর্গম গিরি ও বন্ধুর পথের জন্য সুইজারল্যান্ডের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ কঠিন।

সুইজারল্যান্ডে খনিজ সম্পদও অপ্রতুল। তেল এবং কয়লা নেই বললেই চলে। তাছাড়া শিল্পের জন্য কাঁচামালও এখানে কম পাওয়া যায়।

সুইজারল্যান্ড বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রজাতন্ত্র হিসাবে পরিচিত। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় সুইজারল্যান্ডের

গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অনেক বেশি দৃঢ়মূল বলে প্রচার করা হয়। দাবি করা হয়- সুইস গণতন্ত্রের ঐতিহ্য অল্পবিস্তর সাত শতাব্দীর। প্রজাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রচলন পৃথিবীর এই দেশটিতেই প্রথম পরিলক্ষিত হয়। এবং ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই সব সময় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য অল্পবিস্তর সাত শতাব্দীর। প্রজাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রচলন পৃথিবীর এই দেশটিতেই প্রথম পরিলক্ষিত হয়। এবং ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই সব সময় গণতন্ত্র বর্তমান আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য যে সমস্ত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র গ্রহণ করেছে সুইস শাসনব্যবস্থা তাদের পথ দেখিয়েছে। স্বাধীন জাতি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাবের প্রাক্কালে সুইস গণতন্ত্র ছিল মোটামুটি পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত।

সুইজারল্যান্ডকে গণতন্ত্রের জন্য পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণের ফলস্বরূপ বলা হয় এবং তারা সব গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিই তার অবদানকে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ব্রুকস তার

Government and Politice of Switzerland শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন” (Switzerland) is a laboratory of adenturous experiments, and her success contributes to the instuction of all republican public.

ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় ধাচের শাসনব্যবস্থার প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীকালে যে সমস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা সুইস শাসনব্যবস্থার অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করেছে। সুইজারল্যান্ডের অধিবাসীদের মধ্যে চারটি ভাষাভাষী মানুষ বর্তমান। সুইস শাসনব্যবস্থায় এই চারটি ভাষাকেই সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সুইজারল্যান্ডে ধর্ম সহিষ্ণুতার স্বাভাবিক প্রবণতাও বর্তমান বলে এযাবৎকাল প্রচারণা চালিয়ে আসা হচ্ছে এবং এজন্য এই সমস্ত কিছুর ফলশ্রুতি হিসেবে সুইজারল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় রীতিনীতির সার্থক প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়।

মডেল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নির্দশন হিসেবে সুইস রাজনীতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্বগত আলোচনায় তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি করা হয়েছে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে প্রাচীনকালে অ্যাথেন্স ছিল মডেল গণতন্ত্রের উদাহরণ, অনুরূপভাবে আধুনিককালে মডেল গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত হলো সুইজারল্যান্ডের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। এদেশের শাসনব্যবস্থায় দেশবাসীর অংশগ্রহণের প্রকৃতি ও পরিধি যদি সরকারের গণতান্ত্রিক মাত্রা নির্ধারণে মাপকাঠি হয় তা হলে সুইস শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হলো সর্বাধিক পরিমাণে গণতান্ত্রিক। পৃথিবীর অন্য কোন দেশের শাসনব্যবস্থায় রাজনীতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলিকে এতখানি অগ্রবর্তী করা হয়নি। সুইস রাজনীতিক ব্যবস্থায় নিজস্ব ধারায়

প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিপুষ্ট করা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের সাতটি ক্যানটনে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইন প্রণীত হয়। গণভোট, গণউদ্যোগ, গণসমাবেশ, প্রভৃতি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উপাদানসমূহ সুইস রাজনীতিক ব্যবস্থায় উপস্থিত দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে প্রচার করা হয়, সুইস রাজনীতিক ব্যবস্থার আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর নিরপেক্ষতা। সুইজাল্যান্ড বিশ্ব রাজনীতির জটিলতা এবং ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধ থেকে নিজেকে বরাবরই মুক্ত রেখেছে। কখনই আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটনীতিক তৎপরতার কেন্দ্রে পরিণত হয়নি। তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের রাজনীতিক ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসে এই নিরপেক্ষতা স্বীকৃত হয়েছে। এবং ১৯২০ জাতিসংঘের (League of Nations)  দ্বারাও তা পুনরায় স্বীকৃত হয়েছে।

এই নিরপেক্ষতা নীতির পরিপেক্ষিতে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. বম্বওয়াল মন্তব্য করেছেন,

* “… Switzerland has made neutrality a part of her formal constitution law which requires the Federal Assembly and rederal Council to protect the nation’s indepe ndence neutrality.”

প্রসঙ্গত প্রশ্ন উঠে যে, সুইজারল্যান্ড সাতশ’ বছরের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের দাবিদার

গণতান্ত্রিক আদর্শহেতু ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দাবিদার

এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষতার জ্বলন্ত প্রতীক দাবিদার

সেই সুইজারল্যান্ড কী মুসলমানদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকার দাবি করতে পারবে?

উল্লেখ্য, ৭০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ৫ লাখই মুসলমান। তাদের মাত্র দেড়শ’ মসজিদ। তš§ধ্যে মিনার ছিলো চারটির। আরো দুটিতে মিনার বানানোর উদ্যোগ নিতেই গণভোটের নামে তা বন্ধ করা হলো-

উল্লেখযোগ্য একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে

ধর্ম পালনের বিরুদ্ধে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী যখন গণভোট দেয় প্রশ্ন দাঁড়ায় তারা কী তাহলে গণতন্ত্র বুঝে? বা গণতন্ত্র পালন করে তা বলা যায়? তবে তারা সবাই ইসলাম বিদ্বেষী বললেই কেবল তার হিসাব পাওয়া যায়।

গণতন্ত্রের বুলি হাঁকলেও ইসলামের ক্ষেত্রে সাতশ’ বছরের গণতন্ত্রী ঐতিহ্যের দাবিদারও অগণতন্ত্রী হয়ে যায়- সেকথা স্বীকার করলেই তবে সমীকরণ মেলানো যায়। (নাঊযুবিল্লাহ)

মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৩

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩১