সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম

বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়াল: কতক লা-মাযহাবী ও সালাফীদের বক্তব্য হচ্ছে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন; এর নাকি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অধিকাংশ ইমাম উনাদের প্রণিধানযোগ্য মত হচ্ছে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। এ ব্যাপারে যথেষ্ট দলীল প্রমাণ উল্লেখ রয়েছে। সেখান থেকে কিছু প্রমাণাদী এখানে উল্লেখ করা হলো।

قال الغزالى فى الاحياء والصحيح ان رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى الله تعالى ليلة المعراج .

অর্থ: হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “ইহইয়াউল উলূমিদ্দীন” কিতাবে বলেন, এ কথা ছহীহ বা বিশুদ্ধ যে, মি’রাজ শরীফ উনার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (শরহে শিফা: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

قال النووى عند اكثر العلماء انه صلى الله عليه و سلم راى ربه بعينى رأسه ليلة المعراج الاسراء.

অর্থ: ইমাম নুওয়াওয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম উনাদের মত হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে স্বীয় মহান রব তায়ালা উনাকে কপালে অবস্থিত চক্ষু মুবারক দ্বারা দেখেছেন। (শরহে শিফা, শরহে মাওয়াহিব,শরহে মুসলিম)

اخرجه البيهقى فى كتاب الرؤية بلفظ ان الله اصطفى ابراهيم عليه السلام بالـخلة واصطفى موسى عليه السلام بالكلام واصطفى محمدا صلى الله عليه و سلم بالرؤية.

অর্থ: ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিতাবুত রু’ইয়াতে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বন্ধুত্ব, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথোপথন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার দীদার মুবারক দ্বারা মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ, খছায়িছুল কুবরা, শরহে মাওয়াহিব)

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه  كان يقول ان رسول الله صلى الله عليه و سلم راى ربه مرتين مرة ببصره و مرة بفواده.

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’বার মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। একবার চর্ম চোখ মুবারক দ্বারা ও একবার অন্তর চোখ মুবারক দ্বারা। (আল-মু’জামুল কবীর, আল-মু’জামুল আওসাত, মাওয়াহিবুল্লান্নিয়া, উমদাতুল ক্বারী, খছায়িছুল কুবরা ইত্যাদি)

قد روى الامام احمد بسند صحيح عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم رايت ربى عز و جل.

অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুসনাদ গ্রন্থে ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছি। (আল-জামিউছ ছগীর, আল মুসনাদ ১/২৯০)

قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه هو مقدم و موخر تدلى الرفرف لرسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة المعراج فجلس عليه ثم رفع فدنا من ربه قال فارقنى جبريل عليه السلام وانقطعت على الاصوات وسمعت كلام ربى عز و جل.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পূর্বাপর বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট রফরফ আসলো। তিনি তার উপর উঠে বসলেন তারপর উনাকে উপরে উঠানো হলো। এমনকি তিনি স্বীয় রব তায়ালা উনার নিকটবর্তী হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট থেকে বিদায় হয়ে গেলেন। সকল আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলে। তখন আমি আমার রব তায়ালা উনার কালাম বা কথা মুবারক শুনলাম।

عن حضرت عبد الرحمن ابن عائش رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم رايت ربى عز و جل فى احسن صورة.

অর্থ: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আয়েশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার মহান রব তায়ালা উনাকে সর্বোত্তম ছূরত বা আকৃতি মুবারকে দেখেছি। (মিশকাত শরীফ ১/২২৫, দারিমী শরীফ, মিরকাতুল মাফাতীহ)

ذكر النقاش رضى الله تعالى عنه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه فى قصة الاسراء عنه صلى الله عليه و سلم فى قوله تعالى دنا فتدلى قال فارقنى جبريل عليه السلام فانقطعت الاصوات عنى فسمعت كلام ربى وهو يقول ليهدأ روعك يا رسول الله صلى الله عليه و سلم ادن ادن.

অর্থ: হযরত নাক্কাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত বর্ণনায় মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম دنا فتدلى সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে একাকী রেখে চলে গেলেন, যখন সব ধরনের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো, তখন আমি মহান রব তায়ালা উনার পবিত্র কালাম শুনতে পেলাম, তিনি আমাকে বলছেন, আপনার ভয়ের কোনো আশঙ্কা নেই। আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আসুন, আমার নিকটে আসুন। (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা শরীফ, নাসীমুর রিয়াদ্ব)

حدثنا ابراهيم بن عبد العزيز المقوم قال ثنا عبد الرحمن بن عثمان ابو بكر البكراوى رحمة الله عليه قال اخبرنا شعبة عن قتادة عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قد راى ربه

অর্থ: হযরত ইবরাহীম ইবনে আব্দুল আযীয মুক্বাওয়িম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমাদের নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে উছমান আবূ বকর বাকরাউয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তিনি হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এবং তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় মহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (কিতাবুদ তাওহীদ: ইবনে খুযাইমা, শরহে মাওয়াহিব: আল্লামা ইমাম যুরকানী)

عن حضرت انس رضى االله تعالى عنه فى الصحيح عرج بى جبريل عليه السلام الى سدرة المنتهى ودنا الجبار رب العزة فتدلى حتى كان منه قاب قوسين او ادنى فاوحى اليه بما شاء و اوحى اليه خمسين صلوة

অর্থ: অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যান। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর তিনিও অতি নিকটবর্তী হলেন। এমনকি দুই ধনুকের মাথা তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হলেন। অতঃপর তিনি যা চাইলেন আমার উপর ওহী মুবারক করলেন ঐ সময় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আমার উপর ওহী মুবারক করলেন। (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা শরীফ, নাসীমুর রিয়াদ্ব)

روى حضرت شريك رحمة الله عليه عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه فى تفسير الاية قال راى النبى صلى الله عليه و سلم ربه

অর্থ: তাবিয়ী হযরত শারীক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ (অন্তর যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে বলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় মহান রব তায়ালা উনার দীদার মুবারক লাভ করেছেন। (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা শরীফ)

روى مالك بن يخامر عن حضرت معاذ رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه و سلم قال رايت ربى و ذكر كلمة محمد صلى الله عليه وسلم فيم يختصم الملأ الاعلى الى اخر الحديث

অর্থ: হযরত মালিক বিন ইউখামের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। অতঃপর কতিপয় বিষয় বর্ণনা করে ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মালায়ে আ’লার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কি নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত রয়েছেন। (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা শরীফ)

حضرت عبد الرزاق رحمة الله عليه قال كان الحسن رحمة الله عليه يحلف بالله ثلاثة لقد راى النبى صلى الله عليه و سلم ربه.

অর্থ: হযরত আব্দুর রয্যাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তিনবার ক্বসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (শিফা শরীফ ১/১১৫, শরহে শিফা শরীফ ১/৪২৮)

عن حضرت معاذ بن جبل رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم رايت ربى عز و جل فى احسن صورة.

অর্থ: হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান রব তায়ালা উনাকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছেন। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

عن حضرت عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم رايت ربى عز و جل ليس كمثله شىء.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি মহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছি। উনার সাথে কোনো সাদৃশ্য বা তুলনা নেই। (আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী শরীফ, ২/২৫৪)

عن حضرت الشعبى عن عكرمة عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال راى رسول الله صلى الله عليه و سلم ربه.

অর্থ: হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (আস সুন্নাহ: ইমাম শায়বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

عن حضرت الحكم بن ابان عن عكرمة عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال راى رسول الله صلى الله عليه و سلم ربه.

অর্থ: হযরত হাকাম বিন আবান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা উনার থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (আস-সুন্নাহ: ইমাম আবি আছিম)

عن حضرت عباس رضى الله تعالى عنه قال راى رسول الله صلى الله عليه و سلم ربه.

অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় মহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (তিরমিযী শরীফ)

اخرج الطبرانى فى الاوسط بسند صحيح عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه كان  يقول ان رسول الله صلى الله عليه وسلم راى ربه مرتين مرة ببصره و مرة بفواده.

অর্থ: হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মু’জামুল আওসাতের সূত্রে ছহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রব তায়ালা উনাকে দুইবার দেখেছেন। একবার চর্ম চোখ মুাবরক দ্বারা, আরেকবার অন্তর চোখ মুবারক দ্বারা। (আল-খছায়িছুল কুবরা: আল্লামা ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ইমাম হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال ان النبى صلى الله عليه وسلم قال اتنى ربى عز وجل الليلة فى احسن صورة.

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমার নিকট মহান রব তায়ালা (মি’রাজ শরীফ রজনীতে) উত্তম আকৃতি মুবারকে আগমন করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ ১/৩৬৮, তবারানী শরীফ, মু’জামুল কবীর)

عن قتادة عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه و سلم راى ربه عز و جل.

অর্থ: হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। (খছায়িছুল কুবরা, মুসনাদে বাযযার)

حدثنا سفيان عن ابن جريج عن ابن عطاء عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله  عليه و سلم راى ربه.

অর্থ: হযরত সুফইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত ইবনে আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (মুসনাদে বাযযার)

حكى ابن اسحاق ان مروان سأل ابا هريرة رضى الله تعالى عنه هل راى رسول الله صلى الله عليه وسلم ربه فقال نعم.

অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত মারওয়ান ইবনে আবান হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা)

رواه الحاكم و النسائى و الطبرنى ان حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال تقوية لقوله انه راى ربه بعينه.

অর্থ: হযরত  ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুস্তাদরাকে, ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের স্ব স্ব গ্রন্থে শক্তিশালী সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, তিনি মহান রব তায়ালা উনাকে স্বীয় চোখ মুবারকে দেখেছেন। (শরহে শিফা: আল্লামা মুল্লা ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাওয়াহিরুল বিহার: আল্লামা ইউসুফ নাবহানী)

ذكر ابن اسحاق ان حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ارسل حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه يسأله هل رأى رسول الله صلى الله عليه و سلم ربه فقال نعم والاشهر عنه رأى ربه بعينه روى ذلك عنه من طرق وقال ان الله تعالى اختص حضرت موسى عليه السلام بالكلام وحضرت ابراهيم عليه السلام بالخلة و حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم بالرؤية.

অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একবার একজনকে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট জানতে চেয়ে প্রেরণ করেছিলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন? তিনি জাওয়াবে বলেছিলেন হ্যাঁ, এ বিষয়ে অতি প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চর্ম চক্ষু মুবারকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক লাভ করেছেন। একথা বিভিন্নভাবে বর্ণিত রয়েছে। আরো বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথোপথন, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বন্ধুত্ব এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার দীদার মুবারক দ্বারা মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আশ-শিফা শরীফ, শরহে শিফা শরীফ)

ان النبى صلى الله عليه و سلم راه فى الدنيا لانقلابه نورا .

অর্থ: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি এ দুনিয়াতেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন, কেননা তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম তথা আপাদমস্তক ন্রূ। সুবহানাল্লাহ! (মিরকাতুল মাফাতীহ : আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

قال ابو الحسن على ابن اسماعيل الاشعرى رحمة الله عليه و جماعة من اصحابه راه تعالى ببصره وقال كل اية اوتيها نبى من الانبياء عليهم السلام فقد اوتى مثلها نبينا صلى الله عليه وسلم وخص من بينهم بتفضيل الرؤية .

অর্থ: আক্বায়িদ শাস্ত্রের ইমাম হযরত আবুল হাসান আলী আশ‘আরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনার এক জামায়াত সঙ্গী- সাথী উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় চক্ষু মুবারকে মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। উনারা আরো বলেন, অন্যান্য হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যেরূপ মু’জিযা শরীফ দেয়া হয়েছে তদ্রƒপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মু’জিযা শরীফ দেয়া হয়েছে। তবে উনাকে খাছভাবে দীদারে ইলাহী মু’জিযা শরীফ দেয়া হয়েছে। সুবহাল্লাহ! (আশ-শিফা শরীফ : আল্লামা ক্বাযী আয়াদ্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহে শিফা শরীফ: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

قال القاضى ابو الفضل وفقه الله والحق الذى لا امتراء الحق الذى لا امتراء فيه ان رؤيته تعالى فى الدنيا جائزة عقلا و ليس فى العقل ما يحيلها.

অর্থ: হযরত ক্বাযী আবুল ফদ¦ল আয়াদ্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সত্য কথা হলো আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোনো অবকাশ নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণ নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব। (আশ-শিফা শরীফ: আল্লামা ক্বাযী আয়াদ্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহে শিফা: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি )

উপরে উল্লেখিত দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হয়েছে যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে আরশে আযীমে তাশরীফ নিয়েছেন সেখানে উনার না’লাইন শরীফ পরিহিত অবস্থায়ই তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। সুবহনাল্লাহ! (ই’জাযুল কুরআন ৩/৬৩: ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ফাতহুল মুত্বা‘আল ফী মাদহি খইরিন নি‘আল ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩৮)

‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার একখানা

অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক

উনার অধিকারী’:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার পূর্বে (১৪৩৩ হিজরী শরীফ-এ)। আমাকে দেখানো হচ্ছিলো, দেখলাম সরাসরি সাক্ষাৎ হলো যিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে। তিনি আমাকে অনেক বড় বড় লেখকদের কতোগুলো আরবী বড় বড় কিতাব দেখালেন। এর মধ্যে অনেক ইবারত, অনেক ভুল। এখন যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখাচ্ছেন, আমি চিন্তা করলাম যে, সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমাদের তো নিসবত নেই। আমাদের নিসবত তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যম দিয়ে। এটা কেমন! তখন সাথে সাথে দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, হ্যাঁ, তিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখাচ্ছেন এবং দেখালেন কতগুলো অনেক বড় বড় কিতাব, আরবী বড় বড় ইবারত এখানে তারা যে লিখেছে একটাও শুদ্ধ না। একটাও শুদ্ধ না, অধিকাংশগুলোতে ভুল আছে। এরা বুঝতে পারে নাই, হাক্বীক্বতটা বুঝে নাই। আমাকে একখানে নিয়ে গেলেন। ঐ সম্মানিত আয়াত শরীফখানা-

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوا لَا تُـحِلُّوا شَعَائِرَ اللهِ وَلَا الشَّهْرَ الْـحَرَامَ وَلَا الْـهَدْىَ

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার যে, হাক্বীক্বতটা, মাক্বামটা ওখানে আমাকে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক বড় কামরা, রুম। এটা ইলম মুবারক-এ পরিপূর্ণ। এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বত, তা’যীম-তাকরীমের বিষয়টা। এরপর বললেন যে, এই যে, এতো হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ যে লেখা হয়েছে- সব কিছু রসম-রেওয়ায এবং অধিকাংশ হচ্ছে পুঁথিগত বিদ্যা, কপি করা। এরপর অনেক ইলম উনাদের একটা বড় মাক্বাম দেখালেন যে, উনার কোন কুল-কিনারা নাই। এরপর অপর এক জায়গায় আমাকে আবার নিয়ে আসলেন। একটা জিনিস দেখানো হলো, একটা কোণার মধ্যে, অল্প একটু জায়গার মধ্যে দুনিয়ার সমস্ত কিতাব যা আছে, দুনিয়ার যত কিতাব যা লিখা হয়েছে- সমস্ত কিতাবগুলির হাক্বীক্বতটা এক কোণার মধ্যে, অল্প একটু।

আর যিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের যে সম্মানিত ইলম মুবারক অনেক অসীম! সুবহানাল্লাহ! (মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাকে উনাদের সেই সম্মানিত অসীম ইলম মুবারক দেখিয়েছেন এবং সম্মানিত হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে উনার পক্ষে ‘মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের যে সম্মানিত ইলম মুবারক অনেক অসীম!’ এই বিষয়টি বর্ণনা করা সহজ এবং সম্ভব হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!)

কাজেই এই যে, ইলম যা প্রকাশ করা হচ্ছে, যা বিন্দু থেকে বিন্দুতম। যেটা আমরা বলি, এটা হলো সেটা। হাক্বীক্বত খুব কম এবং অনেক বইয়ের মধ্যে অনেক ভুল। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের শান মুবারক-এ লেখা যেগুলো আছে, অনেক গলদ আছে। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পর্কে অনেক অনেক বড় বড় আলিম-উলামা উনারা অনেকে অনেক তাফসীর, হাদীছ শরীফ উনার শরাহ লিখেছেন, কিন্তু অনেক গলদ। এই সমস্ত বিষয়গুলো গ্রহণ করা যাবে না।

এরপর কতোগুলো বিষয় জানার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম এবং বললাম তাহলে এ রকম হলো কেন? উনারা বললেন যে, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টা হচ্ছে এটা যার যার মাক্বামের সাথে সম্পৃক্ত। যিনি যেই স্তরে পৌঁছেছেন, যতটুকু বুঝেছেন, ততটুকুই লিখেছেন। হাক্বীক্বত এই লেখাগুলো কোনোটাই পূর্ণ না। পূর্ণ হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ। এখন বুঝ বা সমঝ পূর্ণ হবে উনারা যদি বুঝান। যিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা যদি বুঝান তাহলে বুঝ বা সমঝ পূর্ণ হবে। তাছাড়া পূর্ণ হবে না।” সবুহানাল্লাহ!

মূলত মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের পরিপূর্ণ অসীম ইলম মুবারক মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মুবারক করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ তৈমুর রহমান

আটোয়ারী, পঞ্চগড়।

মুহম্মদ রাকিবুল ইসলাম (ফাযিল ৩য় বর্ষ)

ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত আলিয়া মাদরাসা, পিরোজপুর

 

সুওয়াল: ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত “এখতেলাফী মাসায়েল” নামক বইয়ে ১৬৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়াআলাছছলাহ’ বলবেন তখন ইমাম ও মুক্তাদিগণ উঠে দাঁড়াবেন। যদি ইমাম ও মুক্তাদী মুয়াজ্জিনের ইক্বামত বলার সময় অথবা উহার পূর্বে নামায আরম্ভ হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন তবে এটা মাকরূহ (তাহরীমী) হবে। শুধু তাই নয়, এতে নাকি সুন্নত তরীক্বার বিরোধিতাও করা হয়। উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে ফিক্বাহর কিতাবের কিছু ইবারতও উল্লেখ করা হয়। অনুরূপ “ইকামতে কখন দাঁড়াবেন ও ৭৩টি ইখতিলাফী মাসাইলের সামাধান” নামক একটি বইতেও কিতাবের কিছু ইবারত উল্লেখপূর্বক ইকামতে মুয়াজ্জিনের “হাইয়্যা আলাছ ছলাহ” বলার সময় দাঁড়ানো উত্তম বলা হয়েছে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে প্রকাশিত বই দু’টি প্রেরণ করলাম। এ উদ্দেশ্যে যে, উল্লেখিত মাসয়ালাটির সত্যতা সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত বইটির উল্লেখিত মাসয়ালাটি মোটেও সঠিক হয়নি। বরং অশুদ্ধ, অস্পষ্ট ও স্ববিরোধী হয়েছে। যা বিভ্রান্তিকর। যেমন উক্ত বইয়ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় প্রথমে ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও শামী কিতাবের বরাত দিয়ে মুয়াজ্জিনের ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাঁড়াতে বলা হয়েছে। এরপর ১৬৫ পৃষ্ঠায় শরহে বেকায়া ফিক্বাহর কিতাবের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “ইমাম ও মুক্তাদীগণ মুয়াজ্জিনের ‘হাইয়া আলাচ্ছলাহ’ বলার সময় উঠে দাঁড়াবেন এবং ক্বদক্বামাতিচ্ছলাহ’ বলার সময় নামায আরম্ভ করবেন। এরপর ব্যাখ্যা করে আবার বলা হয়েছে, যেহেতু ইক্বামতের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব সেহেতু ইক্বামত শেষ হওয়ার পরক্ষণেই নামায আরম্ভ করাই উত্তম এবং এমতই গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য।

কিন্তু ১৬৭ পৃষ্ঠায় গিয়ে আবার বলা হয়েছে, ইমাম ছাহেব তাকবীর বলার পূর্বক্ষণে ডানে বামে লক্ষ্য করে কাতার সোজা করার জন্য হুকুম করতে পারেন। এ ব্যাপারে চার মাযহাবের ইমাম ও অনুসারীদের একই মত ও আমল।

এখন উক্ত বইয়ে প্রদত্ব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, চার মাযহাবের ইমাম ও অনুসারীদের একই মত ও আমল অনুযায়ী ইমাম ছাহেব তাকবীর বলার পূর্বক্ষণে ডানে বামে লক্ষ্য করে কাতার সোজা করার জন্য যদি হুকুম করেন তাহলে তিনি ইক্বামত শেষ হওয়ার পরক্ষণেই যে নামায আরম্ভ করা উত্তম এ আমলটি কখন ও কিরূপে করবেন?

উক্ত বইটিতে লিখক অনিচ্ছাসত্বে বলতে বাধ্য হয়েছেন, ইক্বামতের পূর্বে মসজিদে অবস্থানকারী মুছল্লীগণ সারিবদ্ধ বসে থাকার পরও কাতারে সামান্য ফাঁক ফোক বা অসমতা থাকতে পারে। আর সেটা নাকি মুয়াজ্জিনের ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাঁড়িয়েই সকলে কাতার সোজা করতে পারে। আবার বলেছেন, কাতারে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে ইক্বামত শেষে তাকবীরের পূর্বে ইমাম কর্তৃক কাতার সোজা করার ফরমান দ্বারা দূর করা সম্ভব।

উক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, কাতার সোজা করা এবং কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা বন্ধ করা উভয়টি ওয়াজিব। এই ওয়াজিব কাজটি যে মুয়াজ্জিনের হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময় উঠে সম্পাদন করতে হবে; তার দলীল কোথায়? লেখক এ বিষয়ে কোনই দলীল প্রমাণ উল্লেখ করেনি। বরং সম্পূর্ণ মনগড়াভাবেই উক্ত নিয়মের অবতারণা করেছেন এবং আরো অনেক বক্তব্যেরই অবতারণা করেছেন যা সত্যিই হাস্যকর। যেমন তিনি উনার বক্তব্যের শেষে মুছল্লীদেরকে মসজিদের আদব, কাতারে বসার আদব, নামাযে দাঁড়াবার আদব ইত্যাদি অবহিত করানোর জন্য আহ্বান করেছেন যাতে সুন্নত নিয়মগুলো পুরোপুরি আমলে আসে এবং বিদআতের অনুপ্রবেশ না ঘটে। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন মুয়াজ্জিনের ‘হাইয়্যা আলাছ ছলাহ’ বলার সময় ইমাম ও মুছল্লীদের দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করা সুন্নত অথবা মুয়াজ্জিনের ইক্বামত শেষে ইমাম কর্তৃক ঘোষণা দিয়ে কাতার সোজা করা সুন্নত। আর ইক্বামতের পূর্বে কাতার সোজা করা বিদআত। নাউযুবিল্লাহ!

উক্ত লিখক ও তার সমর্থনকারীদের বলতে চাই, আপনার কথিত সুন্নতের দলীল পেশ করুন। কেননা দলীল ব্যতীত কারো কোনো বক্তব্য ও লিখনী সম্মানিত শরীয়তে মোটেই গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, যারা বলে থাকে, “ইক্বামত বলার সময় ইমাম ও মুক্তাদী সবাই বসে থাকবেন।”

তাদের উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা তাদের উক্ত বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, ইক্বামত বলার সময় ইমাম ছাহিব বসে থাকার ব্যাপারে বাধ্য বা উনাকে খাছ করে হুকুম করা হয়েছে। অথচ ইমাম ছাহিব বসে থাকার ব্যাপারে বাধ্য নন।

যেমন- “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া” কিতাবের ২য় খন্ডের, ৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

امام کے لئے اس میں کوئی خاص حکم نھی

অর্থ: ইমামের জন্য এ ব্যাপারে খাছ কোন হুকুম নেই।

দ্বিতীয়ত: যারা বলে থাকে, “যখন মুয়াজ্জিন হাইয়া আলাছ ছলাহ” বা “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবেন তখন সবাই দাঁড়াবেন।

তাদের উক্ত বক্তব্যও সঠিক হয়নি। কারণ কোন কোন শর্তে …….. حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় সকলকেই দাঁড়াতে হবে সেসব শর্তের একটি শর্তও তারা উল্লেখ করেনি।

যেমন, এ প্রসঙ্গে সর্বজনমান্য ও বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ان كان المؤذن غير الامام وكان القوم مع الامام فى المسجد فانه يقوم الامام والقوم اذا قال المؤذن حى على الفلاح عند علمائنا الثلاثة وهو الصحيح.

অর্থঃ- যদি মুয়াজ্জিন ইমাম ব্যতীত অন্য কেউ হয় এবং মুক্তাদীগণ যদি ইমামের সহিত মসজিদে থাকে এমতাবস্থায় মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামতের মধ্যে حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলবে তখন আমাদের তিন ইমাম অর্থাৎ হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে, ইমাম এবং মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। আর এটাই বিশুদ্ধ মত।

উপরোক্ত কিতাবের ইবারতে যে শর্তগুলো পরিলক্ষিত হয় তাহলো ইমাম ও মুয়াজ্জিন যদি একই ব্যক্তি না হয় অর্থাৎ ইমামতি করার জন্য ইমাম যদি নির্দিষ্ট করা থাকে। অনুরূপ আযান-ইক্বামত দেয়ার জন্য মুয়াজ্জিন যদি নির্দিষ্ট করা থাকে। এরপর বলা হয়েছে, মুক্তাদীগণ যদি ইমামের সহিত মসজিদে বসে থাকে, সেক্ষেত্রে মুয়াজ্জিনের حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই দাঁড়াবেন। আর এটা হচ্ছে আম ফতওয়া। এছাড়াও আরো অনেক শর্ত রয়েছে।

তৃতীয়ত: যারা বলে থাকে, মুয়াজ্জিনের “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময় দাঁড়ানোই একমাত্র সুন্নত এবং ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের আমল।

তাদের এ বক্তব্যও ভুল। কারণ শুধু حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোই সুন্নত নয়, বরং ইক্বামত শেষ হওয়ার পরও দাঁড়ানো সুন্নত।

যেমন মিরকাত শরীফ ২য় খন্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا السنة ان لا يقوم المأموم حتى يفرغ المقيم من جميع اقامته.

অর্থ: “আমাদের আছহাবগণ বলেছেন, মুয়াজ্জিনের ইক্বামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তাদীগণের না দাঁড়ানো সুন্নত। অর্থাৎ ইক্বামত শেষ হওয়ার পরেই দাঁড়ানো সুন্নত।

আর শুধু حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল নয় বরং ইক্বামত শুরু হওয়ার আগে দাঁড়ানোও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল।

যেমন আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইক্বামত শুরু হওয়ার আগে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন এবং কাতারের ফাঁকে তীর ছুড়ে কাতার সোজা করতেন। আর কাতার সোজা করার ব্যাপারেও লোক নিয়োগ করতেন এবং কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

روى عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام انه كان يوكل رجالا باقامة الصفوف فلايكبر حتى يخبر ان الصفوف قد استوت وروى عن حضرت على و حضرت عثمان عليهما السلام انهما كانا يتعاهدان ذلك.

অর্থ: “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কাঁতার সোজা করার জন্য লোক নিয়োগ করতেন এবং কাতার সোজা হওয়ার খবর যতক্ষণ পর্যন্ত না দেয়া হতো ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নামাযের তাকবীর বলতেন না। অনুরূপভাবে হযরত উছমান যুননূরাইন আলাইহিস সালাম ও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের থেকে বর্ণিত আছে, উনারা উভয়েই অনুরূপ দেখাশুনা করতেন। (উমদাতুল ক্বারী লিল আইনী শরহে বুখারী, নাইলুল আওতার)

চতুর্থত: যারা বলে থাকে, “ইক্বামতের প্রাক্কালে শুরু থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্নতের খিলাফ বা পরিপন্থী।

তাদের এ বক্তব্যও সঠিক হয়নি। কেননা মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখনও মুক্তাদীগণের দাঁড়ানো মুস্তাহাব-সুন্নত।”

যেমন “তানজীমুল আশতাত” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عامۃ العلماء کے نزدیک مستحب یہ ھے کہ مؤذن جب اقامت شروع کرے تو تمام مصلی کھڑے ھو جائیں

অর্থ: অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট মুস্তাহাব হলো, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন সকল মুছল্লী দাঁড়িয়ে যাবে।

অর্থাৎ অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন সকল মুছল্লী দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।” ইহা শুধু তানজীমুল আশতাত কিতাবেই নয়। বরং তানজীমুল আশতাত কিতাব ছাড়াও বুখারী শরীফ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ উমদাতুল ক্বারী কিতাবে, মুসলিম শরীফ কিতাবের প্রসিদ্ধ শরাহ ‘শরহে নববীতেও’ উল্লেখ আছে। এছাড়াও হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ফতহুল বারীতে এ সম্পর্কে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফও বর্ণনা করেছেন।

যেমন, “ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খন্ডের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن حضرت ابن شهاب ان الناس كانوا ساعة يقول المؤذن الله اكبر يقومون الى الصلاة فلا يأتى النبى صلى الله عليه وسلم مقامه حتى تعتدل الصفوف.

অর্থ: “হযরত ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, মুয়াজ্জিন যে সময় “আল্লাহু আকবার” বলতেন, তখন লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত উনার স্থানে তাশরীফ আনতেন না।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وقد اختلف السلف متى يقوم الناس الى الصلوة فذهب مالك وجمهور العلماء الى انه ليس لقيامهم حد ولكن استحب عامتهم القيام اذا اخذ المؤذن فى الاقامة-

অর্থ: “মুছল্লী নামাযে কখন দাঁড়াবে (ইক্বামতের শুরুতে না শেষে) এ ব্যাপারে সলফে ছালিহীন ইমাম মুজতাহিদগণ ইখতিলাফ বা মতভেদ করেছেন। ইমাম মালিক ও জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন- (ইক্বামতের শুরু বা শেষে) নামাযে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। তবে অধিকাংশ সলফে ছালিহীন ইমাম-মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন যে, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখনই দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।

ছহীহ্ মুসলিম শরীফ কিতাবের শরাহ “শরহে নববী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وعامة العلماء انه يستحب ان يقوموا اذا اخذ المؤذن فى الاقامة.

অর্থ: “অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখনই মুছল্লীগণের দাঁড়ানো মুস্তাহাব।”

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, শর্ত সাপেক্ষে কোন কিতাবে حى على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই বিশুদ্ধ। এবং কোন কিতাবে حى على الصلوة (হাইয়্যা আলাছ ছলাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই বিশুদ্ধ। আবার কোন কোন কিতাবে قد قامت الصلوة (ক্বদ্ ক্বামাতিছ্ ছলাহ্) বলার সময় ইমাম ও মুক্তাদীগণের দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন কিতাবে ইক্বামত শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই সুন্নত। আবার কোন কোন কিতাবে অধিকাংশ ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ ও সলফে ছালিহীন উনাদের মতে মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন সকল মুছল্লীগণের দাঁড়ানোকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। আবার কোন কোন কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো কখনো কাতার সোজা করে বসে থাকতেন।

এখানে উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই আলিম ছিলেন। কিন্তু এ যামানায় অধিকাংশ মসজিদেই নামাযের কাতারে লাইন কাটা বা দাগ দেয়া থাকা সত্ত্বেও দাগের উপরে পায়ের অঙ্গুলির মাথা রাখার ফলে কাতার কখনোই সোজা হয়না। কারণ সমস্ত মানুষের পা সমান নয়, পা ছোট-বড় রয়েছে। আর অধিকাংশ মুছল্লী আলিম না হওয়ায় ও অন্যান্যদের পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্বীনী ইলিম না থাকায় কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় প্রায়ই কাতার বাঁকা হয়ে থাকে ও কাতারে ফাঁক থাকে। অথচ কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব। সুতরাং যদি ইমাম ছাহিব কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করার জন্য দাঁড়ান, তখন মুক্তাদীদের জন্যও দাঁড়ানো আবশ্যক। কারণ ইমাম ছাহিবের দাঁড়ানো অবস্থায় মুক্তাদীদের জন্য বসে থাকা মাকরূহ্ ও আদবের খিলাফ।

কাজেই-

(হাইয়্যা আলাছ ছলাহ) অথবা حى على الصلوة

(হাইয়্যা আলাল ফালাহ) حى على الفلاح

বলার সময় না দাঁড়িয়ে ইক্বামত বলার পূর্বে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করবে, যাতে সকলেই কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা যে ওয়াজিব তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে।

পঞ্চমত: যারা বলে থাকে, হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্ বলার পূর্বে দাঁড়ানো মাকরূহ। তাদের একথা সাধারণভাবে শুদ্ধ নয়। বরং শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ বলা হয়েছে। যেমন- কেউ যদি ইক্বামতের সময় মসজিদে প্রবেশ করে ইমাম ছাহিবের নামায আরম্ভ করার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে, বিনা প্রয়োজনে এরূপ দাঁড়িয়ে থাকাটাকে অনেকে মাকরূহ্ বলেছেন।

মূলত: হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্ বলার সময় দাঁড়ানো মুস্তাহাব, এটা সাধারণ ফতওয়া। তবে তাও শর্ত সাপেক্ষে মুস্তাহাব। শর্ত হলো, যদি ইমাম ও মুক্তাদী মসজিদে আগে থেকেই কাতারে বসে থাকেন এবং  মসজিদের সকল মুছল্লীই আলিম হন এবং কাতার সোজা করা ওয়াজিব, এ সম্পর্কে তারা যদি পূর্ণ ওয়াকিফহাল হন আর কোন অবস্থাতেই তারা নামাযের কাতার বাঁকা করবেন না ও কাতারে ফাঁক রাখবেন না, এটা নিশ্চিত হন, তখন হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্ বলার সময় দাঁড়ানো মুস্তাহাব।

কিন্তু বিশেষ অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার নিরিখে দেখা গেছে যে, দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে বসে পূনরায় হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্ বলার সময় দাঁড়ালে কাতার যেমন সোজা হয়না, তেমনি ফাঁকও বন্ধ হয়না। তখন মুছল্লীরা কাতারের প্রতি লক্ষ্য না করে নামাযে শামিল হওয়ার জন্য ও তাকবীরে উলা পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে নামাযে দাখিল হয়। যার ফলে দেখা যায়, ওয়াজিব তরক করে মুস্তাহাবের উপর আমল হয়। অর্থাৎ ওয়াজিবকে প্রাধান্য না দিয়ে মুস্তাহাবকে প্রাধান্য দেয়া হয়। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ কাতার সোজা করা ও কাতারের মাঝে ফাঁকা জায়গা বন্ধ করার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি পবিত্র হাদীছ শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো।

عن حضرت النعمان بن بشير رضى الله تعالى عنه، قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوي صفوفنا حتى كأنما يسوى بها القداح ، حتى رأى أنا قد عقلنا عنه ، ثم خرج يوما فقام حتى كاد أن يكبر ، فرأى رجلا باديا صدره من الصف ، فقال عباد الله لتسون صفوفكم ، أو ليخالفن الله بين وجوهكم

অর্থ: হযরত নু’মান ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন যেন তিনি কাতারের সাথে তীর সোজা করছেন। তিনি এরূপ এতদিন যাবৎ করলেন যাতে তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, আমরা এ সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি। একদিন তিনি (নামাযের জন্য) হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে আসলেন এবং পবিত্র নামাযে দাঁড়ালেন, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলবেন, এমন সময় লক্ষ্য করলেন, এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে সিনা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণ! আপনারা কাতার সোজা করে দাঁড়াবেন, নচেৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে দিবেন। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال سووا صفوفكم فان تسوية الصفوف من اقامة الصلاة

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা বা পূর্ণ করারই অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী শরীফ)

عن حضرت أبى مسعود رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يمسح مناكبنا فى الصلاة ويقول استووا ولا تختلفوا فتختلف قلوبكم

অর্থ: হযরত আবূ মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামাযের শুরুতে আমাদের পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং আগে পিছে হবেন না। অন্যথায় আপনাদের অন্তরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে। (বুখারী শরীফ)

عن حضرت البراء بن عازب رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يتخلل الصف من ناحية الى ناحية يمسح صدورنا ومناكبنا ويقول لا تختلفوا فتختلف قلوبكم

অর্থ: হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের সিনা ও কাঁধ সোজা করে দিতেন। আর বলতেন, আপনারা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়াবেন না। অন্যথায় আপনাদের অন্তরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اقيموا صفوفكم وتراصوا فانى اراكم من وراء ظهرى وكان احدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه وقدمه بقدمه

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইক্বামত হচ্ছে, এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দিকে চেহারা মুবারক করলেন এবং বললেন, আপনাদের কাতারগুলো সোজা করে নিন আর পরস্পরে মিলিয়ে দাঁড়ান। নিশ্চয়ই, আমি আমার পিছনের দিক থেকেও আপনাদেরকে দেখতে পাই। তখন আমাদের একজন আরেকজনের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে নিলেন। (বুখারী শরীফ)

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رصوا صفوفكم وقاربوا بينها وحاذوا بالأعناق فوالذي نفسي بيده إني لأرى الشيطان يدخل من خلل الصف كأنها الحذف

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা কাতার সোজা করো এবং ঘাড়কে বরাবর করো, নিশ্চয়ই যাঁর হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে উনার শপথ! আমি দেখি, শয়তান আপনাদের কাতারের ফাঁকে প্রবেশ করে কালো ভেড়ার বাচ্চার মতো। (আবূ দাউদ শরীফ)

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه،  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أقيموا الصفوف وحاذوا بين المناكب وسدوا الخلل ولينوا بأيدي إخوانكم ، ولا تذروا فرجات للشيطان ومن وصل صفا وصله الله ومن قطع صفا قطعه الله

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কাতার সোজা করুন এবং কাঁধসমূহকে মাঝ বরাবর রাখুন, ফাঁকাসমূহ পূরণ করুন এবং আপনাদের ভাইদের হাতে নরম থাকবেন অর্থাৎ কেউ ধরে সোজা করতে চাইলে তার আনুগত্য করবেন। আর শয়তানের জন্য খালি জায়গা রাখবেন না। যে কাতার মিলালো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে (রহমত দ্বারা) মিলিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! আর যে কাতার পৃথক করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে (রহমত থেকে) পৃথক করে দিবেন। নাউযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

تسویۃ الصفوف امام پر واجب ھے کما فی در المختار وترکھا مکروہ تحریما-

অর্থ: “নামাযের কাতার সোজা করা ইমামের উপর ওয়াজিব। যেমন দুররুল মুখতার কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- আর উহা তরক করা মাকরূহ্ তাহরীমী। (দুররুল মুখতার, আইনী, উরফুশ্শাজী/১২০, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, বযলুল মাযহুদ)

কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-

تسویۃ الصفوف کی متعلق احادیث میں امر ھے- خاص کرکے ترک پروعید بھی ھے جس سے معلوم ھوا  کہ وہ واجب ھے-

অর্থ: “কাতার সোজা করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আদেশ করা হয়েছে এবং খাছ করে উহা তরক করার কারণে আযাবের কথা বলা হয়েছে। যার দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ওয়াজিব।” (তানযীমুল আশতাত- ১/৩৮৩)

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

امر جو مقرون بالوعید ھو وہ وجوب پردلالت کرتا ھے- لھذا مناسب یھی ھے کہ تسویۃ الصفوف کو  واجب کھا جاوے-

অর্থ: “যে আদেশের দ্বারা আযাবের কথা বলা হয়েছে, উহা দ্বারা ওয়াজিবই ছাবিত হয়, এ জন্যই নামাযের কাতার সোজা করা ওয়াজিব।”

উপরোক্ত দলীলসমৃদ্ধ আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব। আর “হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ” বলা পর্যন্ত বসে থাকা ও তৎপর দাঁড়ানো মুস্তাহাব। তবে মুস্তাহাব আমল করতে গিয়ে যদি ওয়াজিব তরক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন উক্ত মুস্তাহাবের উপর আমল না করে ওয়াজিবের উপর আমল করাই ওয়াজিব। অন্যথায় যদি কাতার বাঁকা কিংবা কাতারে ফাঁক থাকে তবে ওয়াজিব তরকের কারণে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের অধিকাংশ মসজিদে নামাযের কাতারে লাইন কাটা বা দাগ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ মুছল্লী আলিম না হওয়ায় ও অন্যান্যদের পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্বীনী ইলিম না থাকায় কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় প্রায়ই কাতার বাঁকা হয়ে থাকে ও কাতারে ফাঁক থাকে। আর নামাযের জন্য কাতার সোজা ও ফাঁক বন্ধ করানো ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছাহিবের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই ইমাম ছাহিব যদি কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করার জন্য দাঁড়ান, তখন মোক্তাদীদের জন্যও দাঁড়ানো আবশ্যক। কারণ ইমাম ছাহিবের দাঁড়ানো অবস্থায় মুক্তাদীদের জন্য বসে থাকা মাকরূহ্ ও আদবের খিলাফ।

অতএব, “হাইয়্যা আলাছ ছলাহ” বলার সময় দাঁড়ানো মুস্তাহাব উনার উপর আমল না করে কাতার সোজা করার জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব উনার উপর আমল করাই আবশ্যক তথা ওয়াজিব।

{দলীলসমূহঃ- (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত শরীফ, (৪) তিরমিযী শরীফ, (৫) আবূ দাউদ শরীফ, (৬) ত্বহাবী শরীফ, (৭) মুসনাদে আব্দুর রজ্জাক শরীফ, (৮) ফতহুল বারী, (৯) উমদাতুল ক্বারী, (১০) আইনী, (১১) উরফুশ শাজী, (১২) মিরকাত, (১৩) তা’লিকুছ ছবীহ্, (১৪) তানজীমুল আশতাত, (১৫) মিরআতুল মানাজীহ, (১৬) মাজমাউয যাওয়ায়িদ, (১৭) বজলুল মাজহূদ, (১৮) মুয়াত্তা শরীফ, (১৯) যুরকানী, (২০) শরহে শিফা, (২১) নববী শরহে মুসলিম, (২২) বাদায়িউছ ছানায়ে, (২৩) জহীরিয়া, (২৪) মুহীত, (২৫) জামিউল মুজমিরাত, (২৬) কিতাবুল আছল, (২৭) কুহেস্তানী, (২৮) শরহে মাজমাআ, (২৯) খুলাছা, (৩০) নাহরুল ফায়িক, (৩১) কানযুদ দাকায়িক, (৩২) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৩৩) বাহরুর রায়িক, (৩৪) শরহে বিক্বায়া, (৩৫) শরহে নিকায়া, (৩৬) আইনুল হিদায়া, (৩৭) নুরুল হিদায়া, (৩৮) দুররুল মুখতার, (৩৯) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (৪০) তাতারখানিয়া, (৪১) রদ্দুল মুহতার, (৪২) মাজমাউল আনহুর, (৪৩) গায়াতুল আওতার, (৪৪) নুরুদ দিরায়া, (৪৫) মারাক্বিউল ফালাহ্, (৪৬) জাওয়াহিরুল ফিক্হ, (৪৭) বাহারে শরীয়ত, (৪৮) ফতওয়ায়ে রিজভীয়া ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ জামাল উদ্দীন

কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

 

সুওয়াল: সিন্দুক কবর প্রায় সীনা বরাবর গভীর করে লাশের মাথা ডান দিকে ঘুড়িয়ে যথাসম্ভব মুখম-ল ক্বিবলার দিক করে ইখতিলাফহীনভাবে দাফন করে আসছিল। সম্প্রতি ক্বওমী ও তাবলীগী কিছু আলিম ও তাদের সমর্থকরা সীনা বরাবর গভীরে সিন্দুক কবর খনন করে তারপর ওই কবরের তলদেশে মাঝ বরাবর লাশকে সম্পূর্ণ ডান কাত করে রাখা নিশ্চিত করার জন্য দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরে কোনরূপ লাশকে রাখা যায় এরুপ পূনরায় দ্বিতীয় আরেকটি ছোট গর্ত খনন করে, দ্বিতীয় ওই গর্তে লাশকে ডান কাতে ক্বিবলার দিক মুখ করে কাত করে রাখা হয় এবং বলা হয় যে, এটিই একমাত্র সুন্নত তরীক্বা। লাশকে কবরে নামাবার জন্য সাহায্যকারীগণ কবরের ভিতরে ক্বিবলার দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে বা বসে কার্য সম্পাদন করতে দ্বিতীয় ওই গর্তের কারণে ব্যাত্যয় ঘটে। ফলে এলাকায় ক্ষোভসহ জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় সঠিক জাওয়াব দিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসন করে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব: সাধারণত কবর দুই প্রকার। (এক) লাহাদ বা বগলী, (দুই) সাক বা সিন্দুকী। সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেও উক্ত দুই প্রকার কবরেই দাফন করা হতো। একজন ছাহাবী ছিলেন যিনি বগলী কবর খননে পারদর্শী ছিলেন। এবং অপর একজন ছাহাবী ছিলেন যিনি সিন্দুকী কবর খননে অভ্যস্ত ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলে উনার পবিত্র রওযা শরীফ নির্মাণ কাজের জন্য উক্ত দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে সংবাদ দেয়া হয়। উনাদের মধ্যে যিনি বগলী কবর খনন করতেন তিনি আগে আসেন। ফলে উনার দ্বারা বগলী কবর তথা পবিত্র রওযা শরীফ প্রস্তুত করা হয়। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا اَرَادُوْا اَنْ يـَّحْفِرُوْا لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثُوْا اِلٰى اَبِىْ عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يَضْرَحُ كَضَرِيْحِ اَهْلِ مَكَّةَ وَبَعَثُوْا اِلٰى اَبِىْ طَلْحَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ هُوَ الَّذِىْ يـَحْفِرُ لِاَهْلِ الْـمَدِيْنَةِ وَكَانَ يَلْحَدُ فَبَعَثُوْا اِلَيْهِمَا رَسُوْلَيْنِ فَقَالُوْا اَللّٰهُمَّ خِرْ لِرَسُوْلِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدُوْا اَبَا طَلْحَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَجِىْءَ بِه وَلَـمْ يُوْجَدْ اَبُوْ عُبَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَلُحِدَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রওযা শরীফ প্রস্তুত করার ইচ্ছা মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন উনারা হযরত আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে লোক পাঠালেন। তিনি মক্কা শরীফ অধিবাসীগণের কবর খননের ন্যায় (সিন্দুকী) কবর খনন করতেন। আর উনারা হযরত আবূ তলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছেও লোক পাঠালেন। তিনি মদীনা শরীফ অধিবাসীগণের কবর খননের ন্যায় লাহাদ বা বগলী কবর খনন করতেন। অতঃপর উনারা উক্ত দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাছে দুজনকে পাঠিয়ে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আপনি যা পছন্দ করেন, তাই করুন। উনারা হযরত আবূ তলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পেয়ে নিয়ে আসলেন। কিন্তু হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাওয়া গেল না। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য লাহাদ বা বগলী কবর খনন করা হলো। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

উল্লেখ্য, যেহেতু নূরে  মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য লাহাদ বা বগলী কবর খনন করা হয়, যার কারণে বগলী কবর সিন্দুক কবর অপেক্ষা উত্তম। কিন্তু যেসব স্থানের মাটি নরম, সেখানে বগলী কবর শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে, যার কারণে সেসব স্থানে সিন্দুকী কবর করাই উচিত। (ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক্ব, দুররুল মুখতার, ইনায়া, দারুল উলূম দেওবন্দ ইত্যাদি)

বগলী কবর খনন করার নিয়ম: লাশ যতটুকু লম্বা, কমপক্ষে তার অর্ধেক গভীর করে একটি গর্ত খনন করার পর পশ্চিম দিকে একটি বাক্সের ন্যায় বগল বানাতে হবে যাতে লাশটি ভালভাবে রাখা যায় এবং এতটুকু উঁচু হতে হবে যাতে লাশ উঠে বসতে পারে। যেনো এটি একটি ছাদ বিশিষ্ট কামরা। আর পশ্চিম দিকে খননকৃত বগলটি পশ্চিম দিকে হালকা ঢালু করে বানাতে হবে যাতে সম্পূর্ণ লাশটি ক্বিবলামুখী হয়ে থাকে। সেখানে লাশটি রাখার পর বগলী কবর ও গর্তের মাঝখানে কাঁচা বাঁশের খলফা বা কঞ্চি অথবা কাঁচা ইট ইত্যাদি দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে; অতঃপর গর্তটা মাটি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে কোনো মাটি যাতে লাশের দিকে না যায়।

সিন্দুকী কবর খননের নিয়ম: মৃত দেহের অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি পরিমাণ গভীর করে এবং পশ্চিম দিকে হালকা ঢালু করে বানাতে হবে যাতে লাশটি ভালভাবে রাখা যায় এবং সম্পূর্ণ দেহ ক্বিবলামুখী হয়ে যায়। হ্যাঁ, সম্পূর্ণ দেহ ক্বিবলামুখী করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে শুধু মাথাটা ক্বিবলামুখী করলেও যথেষ্ট হবে।

উদাহরণস্বরূপ দৈর্ঘ্যে ৪ বা সাড়ে ৪ হাত, প্রস্থে দুই হাত এবং আড়াই হাত গভীর করে কবর তৈরি করা যেতে পারে।

কাজেই, বগলী কবর ও সিন্দুকী কবর তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও লাশ রাখার ক্ষেত্রে কোনরূপ ভিন্নতা নেই। কেননা লাশ ক্বিবলামুখী করে রাখার জন্য বগীল কবর যেমন পশ্চিম দিকে হালকা ঢালু করে তৈরি করতে হয় তদ্রূপ সিন্দুকী কবরও পশ্চিম দিকে হালকা ঢালু করে তৈরি করতে হয়। আর উভয় কবরের উচ্চতাও একই রকম হবে।

অতএব, লাশকে ক্বিবলামুখী করার জন্য আলাদা কোন পদ্ধতি বর্ণিত নেই। আর লাশের চেহারা ডান দিকে করে দেয়ার হুকুম মৃত্যুর সাথে সাথে। দেরি হলে অনেকের ক্ষেত্রে ডানদিকে করা আর সম্ভব হয় না, শক্ত হয়ে যায়। আবার আক্বীদা ও আমলের ত্রুটির কারণেও ডান দিকে করা সত্বেও অনেকের চেহারা বাম দিকে ঘুরে যায়। নাঊযুবিল্লাহ! আবার আক্বীদা আমল শুদ্ধ হওয়ার কারণে অনেকের চেহারা আপসেআপ ডান দিকে হওয়ার সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, মৃত ব্যক্তির চেহারা বা দেহ ক্বিবলামুখী হওয়াটা কখনোই জীবিত ব্যক্তির মতো নয়। জীবিত ব্যক্তি ডান কাঁতে শোয়া অবস্থায় হাতদ্বয় তার পার্শ্বদেশে সোজা মিলানো থাকে না কিন্তু মৃত ব্যক্তির ডান হাত তার কাফনের ভিতর পার্শ্বদেশে সোজা মিলানো থাকে এবং তার নড়াচড়া বন্ধ থাকে। এমতাবস্থায় সে নিজেও কাঁত হয়ে থাকতে পারবে না এবং অন্য কেউ কাঁত করে দিলেও থাকবে না। বরং কেউ কাঁত করে রাখতে চাইলে খুঁটি দিয়ে বা কোন কিছুতে ঠেস দিয়ে রাখতে হবে। যা সম্মানিত শরীয়তসম্মত নয়।

অতএব, লাহাদ কবরের দোহাই দিয়ে কওমী ও তাবলীগীপন্থী মৌলভীরা যে পদ্ধতিতে কবর করছে এবং মৃত ব্যক্তিকে দাফন করছে তা সুন্নত তো দূরের কথা সম্মানিত শরীয়ত সম্মতই নয়। ফলে তাদের মনগড়া কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যই ফরয।

 

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম (বিএসসি)

চান্দামারি, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

 

সুওয়াল: মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-২০১৪ দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর আল আকায়েদ ওয়াল ফিক্হ পাঠ্যপুস্তকের ‘ছলাতুল মুসাফির’ অধ্যায়ে লিখিত হয়েছে, “কোনো মুসাফির যদি মুকী¡মের ইমামতি করে তাহলে মুসাফির দুই রাকাত নামায পড়ে সালাম ফিরাবে আর মুক্বীম তাদের (অবশিষ্ট দুই রাকাত) নামায পূর্ণ করবে।

এখন আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে, মুক্বীমগণ অবশিষ্ট দুই রাকাত কিভাবে সম্পন্ন করবেন? কেউ কেউ বলছেন যে, উক্ত দুই রাকাত আদায় করার সময় সূরা ফাতিহা শরীফ পড়তে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সূরা ফাতিহা শরীফ পড়া যাবে না অর্থাৎ সূরা ফাতিহা শরীফ ব্যতীতই নামায সম্পন্ন করতে হবে। কোনটি সঠিক? দলীল সহকারে জানিয়ে ইখতিলাফ নিরসন করবেন।

জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাবে মুক্বীম মুক্তাদীর জন্য ইমামের পিছনে সূরা-ক্বিরাআত পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী। তাই তাদেরকে সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ না করে, সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় অথবা তিন তাসবীহ্ পরিমাণ সময় চুপ থেকে যথারীতি নামায শেষ করতে হবে। এক কথায়, মুসাফির ইমামের পিছনে মুক্বীম মুক্তাদী শেষ দু’রাকায়াত নামায ঠিক ঐভাবে আদায় করবে, যেভাবে মুদরিক মুক্তাদী ইমামের পিছনে আদায় করে থাকে।

অর্থাৎ মুসাফির ইমাম যখন দু’ রাকাত নামায পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম দিকে সালাম ফিরোনো শুরু করবেন তখন মুক্বীম মুক্তাদীগণ অবশিষ্ট দু রাকাত আদায় বা পূর্ণ করার জন্য উঠে দাঁড়াবেন। অতঃপর সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা তিন তাসবীহ পড়ার সময় পরিমাণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে যথারীতি রুকূ, সিজদা করে অবশিষ্ট দু’ রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন। আর তাদের অবশিষ্ট নামায শেষ করা পর্যন্ত মুসাফির ইমাম মুছল্লায় বসে অপেক্ষা করবেন এবং একসাথে মুনাজাত করবেন।

উল্লেখ্য, মুসাফির ইমামের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, নামায শুরু করার পূর্বেই উপস্থিত মুক্বীম মুছল্লী বা মুক্তাদীদেরকে নিজে মুসাফির হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার সাথে সাথে তারা কিভাবে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে তাও জানানো। অতঃপর তিনি সালাম ফিরানোর সাথে সাথে পূনরায় মুক্বীম মুছল্লীদেরকে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করার জন্য বলবেন। কেননা মাসবুক মুছল্লী থাকতে পারে। মুসাফির ইমাম সালাম ফিরানোর পর অবশিষ্ট দু’ রাকাত আদায় বা পূর্ণ করার সময় মুক্বীম মুছল্লী তাই পড়বে যা মুক্বীম ইমামের পিছনে উক্ত দু’ রাকাত আদায় করার সময় পড়ে থাকে। অর্থাৎ মুসাফির ইমামের পিছনে মুক্বীম মুছল্লী ক্বিরাআত তথা সূরা ফাতিহা শরীফ পড়বে না।

যেমন এ প্রসঙ্গে ফতওয়ার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৪র্থ খণ্ড ২৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَاِنْ صَلَّى الْمُسَافِرُ بِالْمُقِيْمِيْنَ رَكْعَتَيْنِ سَلَّمَ وَاَتَمَّ الْمُقِيْمُوْنَ صَلَاتَهُمْ ، كَذَا فِى الْهِدَايَةِ وَصَارُوْا مُنْفَرِدِيْنَ كَالْمَسْبُوقِ الَّا َانَّهُمْ لَا يَقْرَءُوْنَ فِى الْاَصَحِّ، هٰكَذَا فِىْ التَّبْيِيْنِ ، وَيُسْتَحَبُّ لِلْإِمَامِ أَنْ يَقُوْلَ : اَتِمُّوْا صَلَاتَكُمْ فَاِنَّا قَوْمُ سَفْرٍ، كَذَا فِى الْهِدَايَةِ .

অর্থ: কোনো মুসাফির যদি মুক্বীম মুছল্লীদের ইমামতি করেন তাহলে মুসাফির ইমাম দু’ রাকাত নামায পড়ে সালাম ফিরাবেন। আর মুক্বীম মুছল্লীরা তাদের (অবশিষ্ট) দু’রাকাত পূর্ণ করবেন। অনুরূপ হিদায়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। তারা অর্থাৎ মুক্বীম মুছল্লীরা মাসবূক মুছল্লীর ন্যায় একা একা হয়ে যাবে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে তারা ক্বিরায়াত পড়বে না। ইহা তাবয়ীন কিতাবে বর্ণিত আছে। আর (মুসাফির) ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, সালাম ফিরানোর পর বলে দেয়া যে, আপনারা নিজ নিজ নামায পূর্ণ করুন। কেননা আমরা মুসাফির দল। অনুরূপ হিদায়া কিাতবের মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে।

মোটকথা, হানাফী মাযহাবের সকল ইমামের ঐক্যমতে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ ক্বিরাআত পড়বে না। এমনকি সূরা ফাতিহা শরীফও পড়বে না। বরং ইমামের পিছনে মুক্তাদীর চুপ থাকা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। তাই, যে কোন প্রকার নামাযেই মুক্তাদীর ক্বিরাআত বা সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।

যেমন “মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَلَايَقْرَأُ الْـمُؤْتَـمَّ بَلْ يَسْتَمِعُ حَالَ جَهْرِ الْاِمَامِ وَيَنْصِتُ حَالَ اِسْرَارِه لِقَوْلِه تَعَالٰى وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَه وَاَنْصِتُوْا وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْفِيْكَ قِرَاءَةُ الْاِمَامِ جَهْرًا وَخَافَتْ ….. قُلْنَا اِنْ قَرَأَ الْـمَاْمُوْمُ الْفَاتـِحَةَ اَوْ غَيْرَه كُرِهَ ذٰلِكَ تَـحْرِيْـمًا.

অর্থ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ ক্বিরাআত পড়বে না। বরং ইমামের প্রকাশ্যে ক্বিরাআত পড়া অবস্থায় মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং ইমামের চুপে ক্বিরাআত পড়া অবস্থায় মুক্তাদীগণ চুপ থাকবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা হবে তখন তোমরা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং চুপ করে থাকবে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইমামের ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট, চাই প্রকাশ্য হোক অথবা চুপে চুপে হোক। আর যদি মুক্তাদী পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা অন্য কোন সূরা পড়ে তাহলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

“রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَلَا الْفَاتِـحَةُ فِى السِّرِّيَّةِ اِتِّفَاقًا …….. اَىْ بَيْنَ اَئِمَّتِنَا الثَّلَاثَةِ.

অর্থ: “মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে কোন নামাযে কোন ক্বিরাআত এমনকি সূরা ফাতিহা শরীফও পড়তে পারবে না। চাই প্রকাশ্য নামাযেই হোক অথবা অপ্রকাশ্য (চুপে চুপে) নামাযেই হোক।” এমনকি আমাদের তিনজন ইমাম অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একমত হয়ে এর উপরই ফতওয়া দিয়েছেন।”

“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

اگر مقتدی قرات کرد نماز مکروہ تحریمی شود-

অর্থ: অতঃপর যদি কোন মুক্তাদী ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

مقتدیرا  قرأت حرامست.

অথ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্য ক্বিরাআত পড়া হারাম।”

অনুরূপ “আনওয়ারে মাহমুদা” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

مقتدی کیلئے قرات پر ھنا حرام ھے-

অর্থ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর ক্বিরাআত পড়া হারাম।”

অতএব, মাদরাসা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকের উক্ত মাসয়ালাটি অসম্পূর্ণ হয়েছে। মাসয়ালাটি পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনা করা উচিত ছিল। তখন আর কেউ বিভ্রান্তিতে পড়তো না।

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আজাদ

মতলব, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে বিডিনিউজ ২৪ ডটকম ব্লগে ‘মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক’ শিরোনামে হাসান মাহমুদ নামে মুসলমান নামধারী এক  জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক কিছু বাতিল ও মনগড়া দলীল যোগাড় করে ‘মূর্তিকে জায়িয প্রমান করার অপচেষ্টা করেছে। তার উক্ত বক্তব্যের  মাধ্যমে যে সকল বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলো-

(১) সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাত গ্রন্থ।

(২)  প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি  এক বিষয় নয়।

(৩) কুরআন শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলে উল্লেখ আছে।

(৪) হাদীছ শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলা হয়েছে।

(৫) পৃথিবীর অনেক দেশে মূর্তি ভাস্কর্য রয়েছে তাই তা জায়িয।

এখন আমার প্রশ্ন হলো- তার উক্ত বক্তব্যগুলো কতটুকু সঠিক হয়েছে? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যায় আমরা প্রমাণ করেছি যে, হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব যে বক্তব্য দিয়েছে, তার উক্ত বক্তব্যগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর  হয়েছে।

কেননা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি তৈরী করা, করানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো, সম্পূর্ণ রূপে হারাম ও নাজায়িয। চাই আরাধনা বা উপাসনার উদ্দেশ্যে হোক অথবা সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে হোক অথবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই হোক না কেন।

আর প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি এগুলোকে হালাল বা বৈধ বলা, হালাল বা বৈধ মনে করা কাট্টা কুফরী। মুসলমান পরিচয় দিয়ে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।

আর বর্তমান সংখ্যায় কাফির মাগদূবের দ্বিতীয় বক্তব্য (২) “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়।” তার খণ্ডনমুলক জাওয়াব প্রদান করা হবে। ইন্শাআল্লাহ্!

তার উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, গত সংখ্যায় আমরা অনেক নির্ভরযোগ্য লুগাত বা অভিধান গ্রন্থের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণ করেছি যে,  প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি শব্দগুলো সমার্থবোধক বা একই অর্থপ্রকাশক অর্থাৎ একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম।

এখন আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণ করবো যে, প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি শব্দগুলো সমার্থবোধক বা একই অর্থপ্রকাশক অর্থাৎ একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম।

যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

অর্থ: “হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি পূজা (অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কযর্, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি।) ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্য অপবিত্র বস্তু, শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর, এতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হতে পারবে।” (পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَا اُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰهِ بِه وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَا اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَاَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالأَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقٌ

অর্থ: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে ১. মৃত জন্তু ২. রক্ত, ৩. শুকরের গোশত ৪. মহান আল্লাহ্ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশু ৫. শ্বাস রোধে মৃত জন্তু‘ ৬. প্রহারে মৃত জন্তু ৭. যা উচু স্থান থেকে পড়ে মারা যায় ৮. যা শিংয়ের আঘাতে মারা যায় এবং ৯. যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে; তবে যাকে তোমরা যবাই করেছ তা হালাল ১০. আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয় এবং ১১. যা ভাগ্য নির্ধারক তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়। এসবগুলোই ফাসিকী (গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী)  কাজ।” (পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে وَالْأَنْصَابُ ও النُّصُبِ  শব্দ মুবারক দ্বারা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য, অপবিত্র, শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ করা হয়েছে।

মুলত: اَلْأَنْصَابُ শব্দ মুবারক এসেছে نُصُبٌ (নুছুবুন) শব্দ মুবারক থেকে। আর  نُصُبٌ (নুছুবুন)  শব্দ মুবারক একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَنْصَابٌ (আনছাবুন)। সুতরাং  نُصُبٌ (নুছুবুন) এবং انْصَابٌ (আন্ছাবুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, স্তম্ভ, স্থাপিত, পূজা বা বলীর বেদী,  স্ট্যেচু, (ংঃধঃঁব) ভাস্কর্য, পুতুল। যা ফাসিকী, গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী কাজ।”  ।

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللّٰهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّه عِنْدَ رَبِّه وَاُحِلَّتْ لَكُمُ الْاَنْعَامُ اِلَّا مَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِ

অর্থ: “ইহাই বিধান। আর কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানযোগ্য বিধানসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তা তার জন্য উত্তম। তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। ওইগুলি ব্যতীত যা তোমাদেরকে জানানো হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিসমূহের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাক।” (পবিত্র সূরাতুল হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَقَالَ إِنَّمَا اتَّخَذْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ أَوْثَانًا مَّوَدَّةَ بَيْنِكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّنْ نَّاصِرِيْنَ

অর্থ: “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তোমরা তো মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে মূর্তিগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে। পরে ক্বিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে লা’নত দিবে। তোমাদের শেষ আবাস স্থল জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই।”  (পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

وَإِبْرَاهِيْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِه اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاتَّقُوْهُ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ إِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُوْنَ اِفْكًا اِنَّ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ لَا يَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللّٰهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوْهُ وَاشْكُرُوْا لَهُ اِلَيْهِ تُرْجَعُونَ وَاِنْ تُكَذِّبُوا فَقَدْ كَذَّبَ اُمَمٌ مِّن قَبْلِكُمْ وَمَا عَلَى الرَّسُولِ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ

অর্থ: “স্মরণ করুন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার কথা। যখন তিনি উনার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইবাদত করো এবং উনাকেই ভয় করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। তোমরা তো মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ব্যতীত শুধু মূর্তি পূজাই করছো এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছো। তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার পরিবর্তে যাদের উপাসনা করছো, তারা তো তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই, মহান আল্লাহ্ পাক উনার কাছে রিযিক তালাশ করো, উনারই ইবাদত করো এবং উনার প্রতি শুকরিয়া করো। তোমরা উনার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা যদি মিথ্যা মনে করো তবে তোমাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যা মনে করেছিল। স্পষ্টভাবে পয়গাম পৌঁছে দেয়াই তো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দায়িত্ব।” (পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬, ১৭, ১৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে   الْأَوْثَانِ ও أَوْثَانًا শব্দ মুবারক দ্বারা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যার থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ করা হয়েছে।

মুলত: الْأَوْثَانِ ও أَوْثَانًا শব্দ মুবারক وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অর্থাৎ وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দ মুবারক একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ (আওছানুন)। সুতরাং وَثَنٌ (ওয়াছানুন) এবং اَوْثَانٌ শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَاجْنُبْنِىْ وَبَنِىَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ. رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِىْ فَاِنَّه مِنِّىْ وَمَنْ عَصَانِى فَاِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.

অর্থ: “যখন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া করলেন, আমার প্রতিপালক! এ (মক্কা) শহরকে নিরাপদ করুন। এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততি তথা আমার বংশধরকে মূর্তিসমূহের পূজা থেকে দূরে রাখুন। আমার প্রতিপালক! এ সকল মূর্তিগুলো তো অসংখ্য লোককে বিপথগামী করেছে। অতএব, যে আমার অনুসরণ করে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরাতু ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫-৩৬)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ لأَبِيْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةً اِنِّى اَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِىْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ.

অর্থ: “স্মরণ করুন, যখন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিসমূহকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে প্রকাশ্য গোমরাহীতে দেখতে পাচ্ছি।” (পবিত্র সূরাতুল আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৪)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ اِبْرَاهِيْمَ. اِذْ قَالَ لِأَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا تَعْبُدُوْنَ. قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِيْنَ. قَالَ هَلْ يَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ. اَوْ يَنفَعُوْنَكُمْ اَوْ يَضُرُّوْنَ. قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَا اٰبَاءَنَا كَذٰلِكَ يَفْعَلُوْنَ . قَالَ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا كُنتُمْ تَعْبُدُوْنَ. اَنْتُمْ وَاٰبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُوْنَ. فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّىْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ. الَّذِىْ خَلَقَنِىْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ. وَالَّذِىْ هُوَ يُطْعِمُنِىْ وَيَسْقِيْنِ. وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ. وَالَّذِىْ يُمِيْتُنِىْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ.

অর্থ: “আর আপনি তাদেরকে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন। যখন তিনি উনার চাচা ও উনার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের উপাসনা কর? তারা বললো, মূর্তি পূজা করি এবং সারাদিন নিষ্ঠার সাথে এদেরই পূজা করি। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তোমরা প্রার্থনা করলে তারা শোনে কি? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে? তারা বললো, না; তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এরূপ করতে দেখেছি। তিনি বললেন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, তোমরা কাদের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা; তারা সকলেই আমার শত্রু, জগৎসমূহের যিনি রব তিনি ব্যতীত। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। তিনিই আমার মউত ঘটাবেন, অতঃপর পূনরুজ্জীবিত করবেন।” (পবিত্র সূরাতুশ শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯ -৮১)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَجَاوَزْنَا بِبَنِىْ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلٰى قَوْمٍ يَّعْكُفُوْنَ عَلٰى أَصْنَامٍ لَّهُمْ قَالُوْا يَا مُوسَى اجْعَل لَّنَا اِلٰـهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌ قَالَ اِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ. انَّ هٰـؤُلَاءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمْ فِيْهِ وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ. قَالَ اَغَيْرَ اللّٰهِ اَبْغِيْكُمْ الٰـهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ

অর্থ: “আর যখন আমি বনী ইসরাঈলদেরকে সাগর পার করে দিয়েছি, তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলো, যারা স্বহস্তে নির্মিত মূর্তি পূজায় নিয়োজিত ছিল। তারা (বনী ইসরাঈল) বললো, হে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম! আমাদের জন্যও তাদের মূর্তির মতোই একটি মূর্তি তৈরি করে দিন। তিনি বললেন, তোমরা তো এক মূর্খ সম্প্রদায়। এরা যে কাজে নিয়োজিত রয়েছে, তা ধ্বংস হবে এবং তারা যা কিছু করছে, তা তো বাতিল-গোমরাহী। হযরত মূসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাহলে কি মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ অনুসন্ধান করবে? অথচ তিনিই তোমাদেরকে সারা বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।” (পবিত্র সুরাতুল আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৮-১৪০)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে  الأَصْنَامَ ও  أَصْنَامًا  এবং اَصْنَام   (‘আল আছনামা’, ‘আছনামান’, ‘আছনামিন’) শব্দ মুবারক দ্বারা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যা প্রকাশ্য বাতিল ও গোমরাহী।

মুলত:  الأَصْنَامَ ও  أَصْنَامًا  এবং اَصْنَام   (‘আল আছনামা’, ‘আছনামান’, ‘আছনামিন’) প্রত্যেকটি শব্দ মুবারক صَنَمٌ  (‘ছনামুন’) শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অর্থাৎصَنَمٌ  (‘ছনামুন’) শব্দ মুবারক একবচন এবং এর বহুবচন হলোاَصْنَامٌ  (‘আছনামুন’)। সুতরাংصَنَمٌ  (‘ছনামুন’) এবংاَصْنَامٌ  (‘আছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, দুর্গন্ধ, অপবিত্র।

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ وَاعَدْنَا مُوسٰى ارْبَعِيْنَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِه وَاَنْتُمْ ظَالِمُوْنَ.

অর্থ: “আর যখন আমি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির, অতঃপর তোমরা গো-বৎস মূর্তিকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছ হযরত মূসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার অনুপস্থিতে। বস্তুত: তোমরা ছিলে যালিম।” (পবিত্র সূরাতুল বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسٰى مِن بَعْدِه مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلاً جَسَدًا لَّه خُوَارٌ الَمْ يَرَوْا اَنَّه لاَ يُكَلِّمُهُمْ وَلاَ يَهْدِيهِمْ سَبِيْلاً اتَّخَذُوهُ وَكَانُواْ ظَالِمِينَ………  اِنَّ الَّذِينَ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِى الْحَياةِ الدُّنْيَا وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُفْتَرِيْنَ.

অর্থ: “হযরত মূসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার সম্প্রদায় উনার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলঙ্কারাদি দ্বারা একটি গরুর বাছুরের মূর্তি বানিয়ে নিল, তা থেকে হাম্বা হাম্বা শব্দ বের হচ্ছিল। তারা কি একথাও লক্ষ্য করল না যে, সেটি তাদের সাথে কথা বলছে না এবং তাদেরকে কোন পথও বলে দিচ্ছে না। তারা সেটিকে উপাস্য বানিয়ে নিল। মূলত তারা ছিল যালিম।………. যারা গো-বৎসের মূর্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালক উনার গযব ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবেই আমি অপবাদ আরোপকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি।” (পবিত্র সূরাতুল আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৮, ১৫২)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে الْعِجْلَ   শব্দ মুবারক দ্বারা গো-বৎস মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি,  পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যা প্রকাশ্য যুলুম তথা কুফরী।

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ اٰتَيْنَا اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَه مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ. اِذْ قَالَ لِأَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِىْ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ. قَالُوْا وَجَدْنَا اٰبَاءنَا لَهَا عَابِدِيْنَ. قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ اَنْتُمْ وَاٰبَاؤُكُمْ فِىْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ.

অর্থ: “আর আমি ইতিপূর্বে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সৎপথের জ্ঞান হাদিয়া করেছিলাম এবং আমি উনার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাতও ছিলাম। যখন তিনি উনার চাচা ও সম্প্রদায়কে বললেন, এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ? তারা বললো, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি। তিনি বললেন, তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ।” (পবিত্র সূরাতুল আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১-৫৪)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে  التَّمَاثِيْلُ শব্দ মুবারক দ্বারা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যা প্রকাশ্য গোমরাহী।

মুলত: تَمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) শব্দ মুবারক تِمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অর্থাৎ تِمْثَالٌ  (‘তিমছালুন’) শব্দ মুবারক একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। সুতরাং تِمْثَالٌ (তিমছালুন) ও تَمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) এবং مَثَلٌ (মাছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি, নক্শা, অঙ্কিত চিত্র।

উপরে উল্লেখিত পবিত্র আয়াতসমূহ দ্বারা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে সম্মান করাকে কুফরী ও শিরেকী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এগুলো কাফির ও মুশরিকদের প্রধান কাজ। এজন্য এগুলো তৈরি করা, তৈরিতে সাহায্য করা, সম্মান দেখানো ইত্যাদি সবই হারাম, কুফরী ও শিরেকী কাজ।

অতএব উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো  যে, মূর্তি  প্রতিমা ও ভাস্কর্য ভিন্নার্থক শব্দ নয়। বরং মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদি শব্দগুলো একই অর্থপ্রকাশক শব্দ। অর্থাৎ  একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম। একটি হারাম মানে সবগুলোই হারাম। সুতরাং, কোন মূর্তির উপাসনা করা হোক অথবা নাই হোক সবগুলোর একই হুকুম অর্থাৎ হারাম ও কুফরী।”

কাজেই, মুসলমান নামধারী মুনাফিক, উক্ত কাফির মাগদূব যে বলেছে, “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়” তার উক্ত বক্তব্য সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরী হয়েছে।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ