সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ সাকিবুল আলম জনী

আহমাদুর রহমান সোহাগ

মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

মুহম্মদ রায়হান, মুহম্মদ নয়ন হুসাইন

টাটাপাড়া, নূরসিবাদ (নরসিংদী)

সুওয়াল: নরসিংদী জেলার মাধবদী ইউনিয়নের টাটাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম তিনি জুমুআর নামাযের আলোচনায় বলেছেন যে, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে, কাতার সোজা করা ওয়াজিব, তাহলে আমি কান কেটে, নাক কেটে এই মসজিদ ছেড়ে চলে যাবো। এখন আমাদের সুওয়াল হচ্ছে, নামাযের কাতার সোজা করার বিষয়ে পবিত্র শরীয়ত উনার ফায়ছালা কি?

জাওয়াব: জামায়াতে নামায আদায় কালে মুক্তাদীদের জন্য কাতার সোজা করা ওয়জিব। এটাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া।

কাতার সোজা করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তাগিদ আরোপ করা হয়েছে। ছহীহ মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ইত্যাদি কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت النعمان بن بشير رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوى صفوفنا حتى كانما يسوى بها القداح حتى راى انا قد عقلنا عنه ثم خرج يوم فقام حتى كاد ان يكبر فراى رجلا باديا صدره من الصف فقال عباد الله لتسون صفوفكم اوليخالفن الله بين وجوهكم.

অর্থ: হযরত নু’মান বিন বাশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নামাযের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি নামাযের কাতারের সাথে তীর সোজা করছেন। তিনি ইহা এতদিন (দীর্ঘদিন) যাবত করলেন যাতে তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, আমরা উহা ভালরূপে বুঝতে পেরেছি। একদিন তিনি (নামাযের জন্য) আসলেন ও নামাযে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন যে, এক ব্যক্তি নামাযের কাতার ভঙ্গ করে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণ! আপনারা নামাযের কাতার সোজা করবেন, নচেৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের চেহারাসমূহের মধ্যে পরিবর্তন সৃষ্টি করে দিবেন।”

ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت النعمان بن بشير رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوى صفوفنا اذا قمنا الى الصلوة فاذا استوينا كبر

অর্থ: হযরত নু’মান বিন বাশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, যখন আমরা নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াতাম তখন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দিতেন। যখন আমরা কাতার সোজা করে দাঁড়াতাম তিনি তখন তাকবীরে তাহরীমা বলতেন।

ছহীহ বুখারী শরীফ, ছহীহ মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ উনাদের মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سووا صفوفكم فان تسوية الصفوف من اقامة الصلاة.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা নামাযের কাতার সোজা করো। কেননা কাতার সোজা করা নামায কায়িম করারই নামান্তর।”

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

تسویۃ  الصفوف کی متعلق احادیث میں امر ھے- خاص کرکے ترک پروعید  بھی ھے جس سے معلوم ھوا کہ وہ واجب ھے-

অর্থ: কাতার সোজা করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে আদেশ করা হয়েছে এবং খাছ করে উহা তরক করার কারণে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যার দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ওয়াজিব।” (তানযীমুল আশতাত- ১/৩৮৩)

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-

امر جو مقرون بالوعید ھو وہ وجوب پردلالت کرتا ھے- لھذا مناسب یھی ھے کہ تسویۃ الصفوف کو واجب کھا جاوے-

অর্থ: امر (আমর) বা আদেশের দ্বারা শাস্তির কথা বলা হয়েছে, উহা দ্বারা ওয়াজিবই ছাবিত হয়। এ জন্যই নামাযের কাতার সোজা করা ওয়াজিব।”

কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-

تسویۃ الصفوف امام پر واجب ھے کما فی در المختار وترکھا مکروہ تحریما-

অর্থ: নামাযের কাতার সোজা করা ইমামের উপরে ওয়াজিব। যেমন দুররুল মুখতার কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- আর উহা তরক করা মাকরূহ্ তাহরীমী। (দুররুল মুখতার, আইনী, উরফুশ্শাজী/১২০, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, বযলুল মাযহুদ, তানযীমুল আশতাত-১/৩৮৩)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হলো যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ওয়াজিব। (দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, বযলুল মাযহূদ, মিরকাত,  আইনী, উরফুশ্শাযী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, তানযীমুল আশতাত, আলমগীরী, দুররুল মুখতার, হাশিয়ায়ে তাহতাবী,  আইনুল হিদায়া ইত্যাদি)।

 

আহমদ সানিমা মাহতাব

পশ্চিম নন্দীপাড়া, ঢাকা।

 

জাওয়াব: কোন মহিলা যদি মাজুরতার কারণে ৯, ১০ বা ১০, ১১ যে কোন ১টি রোযা রাখতে পারে, আরেকটা রোযা যদি না রাখতে পারে তাহলে সে কিভাবে আশূরার রোযার ফযীলত পাবে।

জাওয়াব: পবিত্র আশূরা শরীফ উনার মূল রোযা হচ্ছে ১টি। তা হচ্ছে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ১০ তারিখের রোযা।

যেহেতু কাট্টা মুশরিক ইহুদী সম্প্রদায় তারাও পবিত্র আশূরা শরীফ দিনটিতে অর্থাৎ ১০ তারিখে রোযা রেখে থাকে তাই তাদের সাথে যাতে মিল বা সাদৃশ্য না হয় সে কারণে সম্মানিত মুসলমান  উনাদেরকে উক্ত তারিখের আগে বা পরে আরেকটি রোযা রাখার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود وصوموا قبله يوما او بعده يوما.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,  তোমরা আশূরা শরীফ উনার রোযা রাখো। (এ বিষয়ে) ইহুদীদের খিলাফ বা বিপরীত করো। আশূরা শরীফ উনার আগের দিন অথবা পরের দিনেও রোযা রাখো। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ছহীহ ইবনু খুযাইমাহ শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ)

অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صوموا التاسع والعاشر وخالفوا فيه اليهود.

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররম শরীফ রোযা রেখে ইহুদীদের খিলাফ বা বিপরীত আমল করো।” (তিরমিযী শরীফ)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’টি রোযা রাখা সুন্নত মুবারক সাব্যস্ত হয়েছে। ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে উত্তম হচ্ছে ৯ ও ১০ তারিখ ২টি রোযা রাখা। কিন্তু শুধু ১০ই মুহররম আশূরা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ হচ্ছে ইহুদীরা উক্ত ১০ই মুহররম শরীফ দিনটিতে রোযা রেখে থাকে।

কাজেই, মহিলারা স্বাভাবিক মাজূরতা ও বিশেষ (সন্তান প্রসবের) মাজূরতার কারণে যদিও আশূরা শরীফ অর্থাৎ ১০ই মুহররম শরীফ তারিখে রোযা রাখতে না পারে তথাপি তাদের নিয়ত, কোশেশ ও ইখলাছ বশতঃ ৯ তারিখ ও ১১ তারিখের রোযার উসীলায় পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযার ফযীলত মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে দিতে পারেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال نية الـمؤمن خير من عمله

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন ব্যক্তির নিয়ত উনার আমল থেকে উত্তম। (মু’জামুল কবীর, সুনানুছ ছুগরা, শরহুস সুন্নাহ, হিলইয়াতুল আউলিয়া ইত্যাদি)

বলার অপেক্ষা রাখে না, কোন মহিলা বা মেয়ে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে রোযা রাখার উদ্দেশ্যেই আগে ৯ তারিখ রোযা রেখেছে কিন্তু মাজূরতার কারণে ১০ তারিখ আশূরা শরীফ দিনে তার পক্ষে রোযা রাখা সম্ভব হয়নি। একইভাবে মাজুর মহিলা অপেক্ষা করছিল পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা রাখার জন্য কিন্তু মাজূরতা থাকায় ১০ তারিখ পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা রাখা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

অতঃপর মাজূরতা থেকে মুক্ত হওয়ায় ১১ তারিখ রোযা রেখেছে। অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার সাথে মিলে আগে অথবা পরে ১ দিন রোযা রাখার যে হুকুম, তা পালন করেছে।

কাজেই, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার আগের দিন এবং পবিত্র আশূরা শরীফ উনার পরের দিনটিও পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযার অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, মাজূরতা বা অক্ষমতা বশতঃ পবিত্র আশূরা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র মুহররম শরীফ উনার ৯ তারিখ অথবা পবিত্র মুহররম শরীফ উনার ১১ তারিখ রোযা রাখলে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযার ফযীলত হাছিল হবে নিয়ত অনুযায়ী।

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান

টাঙ্গাইল

 

সুওয়াল: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকে বলে থাকে যে, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম ছিল আযর এবং সে ছিল একজন মূর্তিপূজক।

অতএব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ উনাদের মধ্যে কেউ কি মূর্তিপূজক তথা কাফির-মুশরিক ছিলেন? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: আযর হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা, পিতা নন। পিতা হচ্ছেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম তিনি।

পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার অর্থ চাচা, পিতা নয়।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

واذ قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الـهة.

অর্থ : “আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৪)

হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে, ابيه ازر শব্দ মুবারক উনার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ‘আযর’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। অর্থাৎ উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার অর্থ পিতা না হয়ে উনার অর্থ হবে চাচা। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনেক স্থানেই اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ام كنتم شهداء اذ حضر يعقوب الموت اذ قال لبنيه ما تعبدون من بعدى قالوا نعبد الـهك واله ابائك ابرهيم واسمعيل واسحق الـها واحدا.

অর্থ : “তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার গ্রহণের সময় উপস্থিত হলো তখন তিনি উনার সন্তানগণ উনাদেরকে বললেন, ‘আপনারা আমার পর কার ইবাদত করবেন? উনারা উত্তরে বললেন, ‘আমরা আপনার রব তায়ালা উনার এবং আপনার পূর্ব পিতা (আপনার দাদা) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার চাচা) হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার পিতা) হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনার একক রব খালিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৩)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) দ্বারা দাদা, চাচা ও পিতা সকলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে  বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وكان ازر على الصحيح عما لابراهيم والعرب يطلقون الاب على العم كما فى قوله تعالى نعبد الـهك واله ابائك ابراهيم واسماعيل واسحاق الـها واحدا.

অর্থ : “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর আরবরা চাচাকেও اب (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনাদের একক প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।”

“তাফসীরে মাযহারী” কিতাব উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-

والعرب يطلقون الاب على العم.

অর্থ : “আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।” অনুরূপ তাফসীরে কবীর কিতাবের ১৩তম খ-ের ৩৮ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ রয়েছে।

সুতরাং, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং আয়াত শরীফে ابيه ازر এর অর্থ হলো আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা, পিতা নন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان ابا ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارح.

অর্থ : “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার সম্মানিত নাম মুবারক হলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।” (তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম, তাফসীরে ইবনে কাছীর- ৩/২৪৮)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২২১তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই এখন আমরা দেখবো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “সুনানু নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ১ম খ-ের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ركب فرسا فصرع عنه فجحش شقه الايمن فصلى صلاة من الصلوة وهو قاعد

অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক ঘোড়ায় আরোহন মুবারক করলেন এবং তা থেকে পড়ে উনার মুবারক ডান পাজরে আঘাত পেলেন। এরপর  এক ওয়াক্ত নামায যমীনের উপর বসে আদায় করলেন।”

“সুনানু নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় আরো  উল্লেখ আছে-

عَنْ ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةَ عليها السلام قَالَتْ لَمَّا ثَقُلَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ حضرت بِلَالٌ رضى الله تعالى عنه يُؤْذِنُهُ بِالصلوة فَقَالَ مُرُوا حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام رَجُل أَسِيفٌ وَإِنَّهُ مَتَى يَقُومُ فِي مَقَامِكَ لَا يُسْمِعُ النَّاسَ فَلَوْ أَمَرْتَ حضرت عُمَرَ عليه السلام فَقَالَ مُرُوا حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ فَقُلْتُ لِحَفْصَةَ عليها السلام قُولِي لَهُ فَقَالَتْ لَهُ فَقَالَ إِنَّكُنَّ لَأَنْتُنَّ صَوَاحِبَاتُ يُوسُفَ عليه السلام مُرُوا حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ قَالَتْ فَأَمَرُوا حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلَمَّا دَخَلَ فِي الصلوة وَجَدَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً قَالَتْ فَقَامَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَرِجْلَاهُ تَخُطَّانِ فِي الْأَرْضِ فَاذا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سَمِعَ حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام حِسَّهُ فَذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ قُمْ كَمَا أَنْتَ قَالَتْ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِ حضرت أَبِي بَكْرٍ عليه السلام جَالِسًا فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلّي بِالنَّاسِ جَالِسًا و حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام قَائِمًا يَقْتَدِي حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام بِرَسُولِ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ يَقْتَدُونَ بِالصلوة حضرت  أَبِي بَكْرٍ عليه السلام

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি শান মুবারক যখন বেড়ে গেলেন, তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নামাযের খবর দিতে আসলেন। তিনি বললেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন তিনি যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি (কেঁদে ফেলবেন) লোকদেরকে কিরআত শুনাতে পারবেন না। অতএব, যদি আপনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করতেন তাহলে ভাল হতো। তিনি বললেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করেন। তারপর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনাকে আমার কথা বলার জন্য বললাম যে, আপনিও উনাকে বলুন।  অতঃপর তিনিও উনাকে তা বললেন, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  বললেন যে, আপনারা (পীড়া-পীড়ি করার ব্যাপারে) অবশ্যই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতে আগমনকারিণী মহিলার মতো। আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। উম্মুল মু’মিনী হযরত ছিদ্দীকা¡ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে অনুরোধ করা হলে, যখন তিনি নামায শুরু করলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ করলেন, অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে (দ’ুজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। উম্মুল মু’মিনী হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,  উনার মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশের কারণে উনার পবিত্র দু’পা মুবারক মাটিতে  লেগে যাচ্ছিল। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন উনার  আগমনের শব্দ শুনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি পেছনে সরে আসতে চাইলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি  উনাকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিতে মুবারক করলেন।  উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ডানে রেখে যমীনের উপর বসলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনের উপর বসে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন দাঁড়ানো। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ইকতিদা করছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার। আর অন্যান্য লোক ইকতিদা করছিলেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নামাযের।

“তিরমিযী শরীফ” কিতাবের  ১ম খ-ের ৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وقد روي عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة عليها السلام أن النبي صلى الله عليه و سلم خرج في مرضه و حضرت أبو بكر الصديق عليه السلام يصلى بالناس فصلى إلى جنب أبى بكر الناس يأتمون بأبى بكر و أبو بكر يأتم بالنبي صلى الله عليه و سلم

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলইহাস সালাম উনার থেকে  বর্ণিত আছে,  তিনি বলেন যে,নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য) বের হলেন। যে সময় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসে নামাযের ইমামতি করছিলেন। অতঃপর লোকজন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নামাযের ইক্তিদা করতে লাগলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার নামাযের ইক্তিদা করে নামায আদায় করতে লাগলেন।”

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩১)

 

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত

মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ

আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামমামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক শানে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِن الْـخُدْرِىّ رَضِىَ الله تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْتِىْ عِنْدَ اِنْقَطَاعٍ مّـِنَ الزَّمَانِ وَظُهُوْرٌ مّـِنَ الْفِتَنِ رَجُلٌ يُّقَالُ لَهُ السَّفَّاحُ فَيَكُوْنُ اِعْطَاؤُهُ الْمَالَ حَثْيًا.

অর্থ : “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে যখন ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পাবে তথা বেপর্দা-বেহায়া, অত্যাচার-অবিচার, যুুলুম-নির্যাতনে, বে-ইনসাফীতে পুরো পৃথিবী ভরে যাবে, কোথাও পবিত্র ইনসাফ উনার লেশ মাত্র অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন। তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব, এমন একজন মহান খলীফা উনাকে ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ বলা হবে। অর্থাৎ তিনি সমস্ত বাতিলী শক্তি তথা কাফির-মুশরিক, ইহুদী-খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, মজুসী, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে, সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ, যুুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার, বে-ইনসাফীকে মিটিয়ে দিয়ে সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে পবিত্র ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক জারি করবেন। আর তিনি উনার দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেন।” (সুবহানাল্লাহ) (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ৬ষ্ঠ জিলদ ৫১৪ পৃষ্ঠা, খাছায়িছুল কুবরা লিস সুয়ূত্বী ২য় জিলদ ২০৩ পৃষ্ঠা, আস সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান, আহমদ, জামিউল আহদীছ, আবূ নাঈম, আল ফিতান, বিদায়া-নিহায়া ৬ষ্ঠ জিলদ ২৪৮ পৃষ্ঠা ইত্যাদি)

আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে ‘আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ বলা হয়েছে। তিনিই হচ্ছেন আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। (সুবহানাল্লাহ)

আমরা যদি পবিত্র হাদীছ শরীফখানা নিয়ে একটু চিন্তা-ফিকির করি তাহলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বলা হয়েছে-

এক. عِنْدَ اِنْقَطَاع ٍ مّـِنَ الزَّمَانِ “যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে।”

অর্থাৎ মহান খলীফা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে তাশরীফ মুবারক নিবেন। এই কথা মুবারক দ্বারা এই বিষয়টি রদ বা বাতিল করে দেয়া হলো যে, মহান খলীফা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যামানার শুরুর দিকেও আসবেন না, যামানার মাঝখানেও আসবেন না অথবা যামানার একবারে শেষেও আসবেন না। কারণ যামানার একবারে শেষে তো হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি আসবেন। আর মহান খলীফা, আওলাদে রসূল, হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যামানার শেষের দিকে তাশরীফ মুবারক নিবেন। (সুবহানাল্লাহ)

আমরা জানি, কোন রাস্তা, কোন কাঠি বা কোন বস্তুর শেষের দিক বলতে বুঝায় উক্ত রাস্তা, কাঠি বা বস্তুর চার ভাগের তৃতীয় ভাগের শেষের দিক অথবা চতুর্থ ভাগের শুরুর দিক। তাহলে এখানে যামানার শেষের দিক কোনটি?

আখিরী যামানা শুরু হয়েছে এক হাজার হিজরীর পর থেকে। তাহলে যামানার শেষের দিক বলতে এখানে অবশ্যই অবশ্যই এক হাজার হিজরীর পর বর্তমান পঞ্চদশ হিজরীর দিকে ইঙ্গিত করতেছে। কারণ এক হাজার হিজরীর আগে কখনও যামানার শেষের দিক হতে পারে না। যামানার শেষের দিক হতে হলে অবশ্যই অবশ্যই এক হাজার হিজরীর পরে হতে হবে। আর এই বিষয়টি সকলের জানা রয়েছে যে, এক হাজার হিজরীর পর থেকে এই পর্যন্ত ‘আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ লক্বব মুবারক উনার অধিকারী কোন খলীফা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ নেননি; খিলাফত মুবারক পরিচালনাও করেননি। তাহলে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত, সেই মহান খলীফা, আওলাদে রসূল, হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি কে? সুতরাং বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’। (সুবহানাল্লাহ)

দুই. আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে আরো বলা হয়েছে, ظُهُوْرٌ مّـِنَ الْفِتَنِ “যখন ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পাবে।”

এখানে اَلْفِتَنُ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। আর اَلْفِتَنُ শব্দটি হচ্ছে- اَلْفِتْنَةُ শব্দের জমা’ বা বহুবচন। যার অর্থ হচ্ছে, ফিতনা-ফাসাদসমূহ। অর্থাৎ আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বলা হয়েছে, যখন ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পাবে তখন মহান খলীফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন। (সুবহানাল্লাহ)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যামানায় যেভাবে ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পেয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আর কখনও কি এরূপ চরমভাবে ফিতনা-ফাসাদসমূহ প্রকাশ পেয়েছিল? না কস্মিনকালেও নয়। আমরা যদি আজ থেকে ৩০/৪০ বছর পূর্বের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে, বর্তমানে যেরূপ বেপর্দা-বেহায়া, খেলাধুলা, মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ, গান-বাজনা, টিভি, ছবি ইত্যাদি হারাম-নাজায়িয কার্যকলাপ হচ্ছে তখন এরূপ হারাম-নাজায়িয কার্যকলাপ ছিল না।

তখন বেপর্দা-বেহায়া, টিভি, ছবি, গান-বাজনা, সুদ-ঘুষ ছিল না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, বর্তমান যামানায় পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ উনাদের ভিতর সিসি টিভি রয়েছে। ইহুদী-নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান-মান নিয়ে চু-চেরা, ক্বিল-ক্বাল করছে, উনার শান মুবারক উনার খিলাফ ব্যঙ্গচিত্র করে যাচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ) হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক শানের খিলাফ ব্যঙ্গচিত্র করে যাচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ) এমনকি তারা ‘পবিত্র কুরআন শরীফ’ উনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিতে চাচ্ছে এবং এই জন্য আলাদা দিবসও পালন করে যাচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনও কি এরূপ কঠিন ফিতনার অবতারণা হয়েছিল? একজন মুসলমানের জন্য, একজন ঈমানদারের জন্য এর চেয়েও কি আর কোন বড় কঠিন ফিতনা থাকতে পারে?

এর জবাবে অবশ্যই প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তি বলবেন যে, না, কস্মিনকালেও এরূপ হয়নি এবং একজন মুসলমান উনার জন্য, একজন ঈমানদার উনার জন্য এর চেয়েও আর কোন বড় কঠিন ফিতনা থাকতে পারে না। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে একথা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ মুবারক উনার পর পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান যামানার ফিতনাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কঠিন এবং ভয়ঙ্কর ফিতনা।

শুধু তাই নয়, বর্তমান যামানার যে ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে তা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন এবং ভয়ঙ্কর। এ সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বিদায়াতুল হিদায়া’তে এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنَا مِنْ غَيْرِ الدَّجَّالِ اَخْوَفُ عَلَيْكُمْ مّـِنَ الدَّجَّالِ فَقِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُلَمَاءُ السُّوْءِ.

অর্থ: “আমি তোমাদের ব্যাপারে এক সম্প্রদায়কে দাজ্জালের চেয়েও অধিক বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি এবং এই ব্যাপারে অধিক চিন্তিত রয়েছি (যাদের ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর)। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে একজন জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কোন সম্প্রদায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, উলামায়ে সূ’। অর্থাৎ উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর।” না‘ঊযুুবিল্লাহ!

এখান থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ও কঠিন। কারণ দাজ্জালের কপালে কাফির লেখা থাকবে আর প্রত্যেক ঈমানদার, মুসলমান উনারা তা পড়তে পারবেন এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু বর্তমানে উলামায়ে সূ’রা মুসলমানদের সম্মানিত ঈমান উনাকে এমনভাবে হরণ করে নিচ্ছে যে, তারা কোন টেরই পাচ্ছে না। তাদের অজান্তেই তাদের ঈমান বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তারা উলামায়ে সূ’দের ফিতনা থেকে বাঁচার চেষ্টাও করছে না। (নাঊযুবিল্লাহ)

সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান যামানার ফিতনাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কঠিন এবং ভয়ঙ্কর ফিতনা। শুধু তাই নয়, বর্তমান যামানায় যে ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে তা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন এবং ভয়ঙ্কর।

আর এই চরম ফিতনা বেষ্টিত যামানাতেই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি।

সুতরাং মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’। (সুবহানাল্লাহ)

মুহম্মদ সিরাজুদ্দীন

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির; এ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত-এ দুটির কোনো একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও কুদরত মুবারক উনাদের দ্বারা কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও মু’জিযা শরীফ দ্বারা এবং ছিফত অর্থাৎ সম্মানিত নূর মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর এ বিষয়ে নক্বলী এবং আক্বলী অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ১০৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ الَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

অর্থ: ‘আমি (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনাকে  সারা কায়িনাতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

অর্থ: আমার সম্মানিত রহমত মুবারক সমস্ত কিছুকে বেষ্টন করে আছেন।

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পুরো সৃষ্টি জগতের জন্য সম্মানিত মুবারক রহমত। (সুবহানাল্লাহ) আর সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে সারা কায়িনাতকে বেষ্টন করে আছেন। কায়িনাত মাঝে রহমত শূন্য কোন স্থান নেই। তাই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাযিরী ও নাযিরী ব্যতিত কোন স্থান, কাল, পাত্র, ব্যক্তিও নেই। তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انا ارسلناك شاهدا

 অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’

জানা আবশ্যক, যিনি সাক্ষ্য দিবেন উনার জন্য যেরূপ হাযির বা উপস্থিত থাকা শর্ত, তদ্রƒপ নাযির বা দেখাও শর্ত। এ ছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قيل لرسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت صلاة الـمصلين  عليك ممن غاب عنك ومن ياتى بعدك ما حالـهما عندك فقال اسمع صلاة اهل مـحبتى و اعرفهم تعرض على صلاة غيرهم عرضا.

অর্থ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরজু করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যারা বাহ্যিকভাবে সরাসরি ছোহবত মুবারক হতে অনুপস্থিত এবং যারা আপনি দুনিয়া হতে পর্দা মুবারক করার পর দুনিয়াতে আসবে এবং তাদের পবিত্র ছলাত শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ শরীফ পাঠের বিষয়টি আপনার নিকট কিরুপ? তিনি  ইরশাদ মুবারক করেন, খালিছ মুহব্বতের সাথে পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠকারীগণ উনাদের পবিত্র ছলাত শরীফ আমি সরাসরি শুনি এবং উনাদেরকে আমি খুব ভাল ভাবে চিনে থাকি। আর গাফিলতির সাথে ছলাত পাঠকারীদের বিষয়টিও আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়। (দালায়িলুল খ¦ইরাত)

অর্থাৎ, যে বা যারা যখন, যেখান থেকে, যেভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে দরুদ শরীফ পাঠ করুক না কেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম তিনি সবই শুনেন এবং দেখেন। এ ছাড়া ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ’ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম বণ্টনকারী।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু নিয়ামত বণ্টন করেন। সুবহানাল্লাহ! উল্লেখ্য, যিনি কুল-মাখলুক্বাতের জন্য নিয়ামত  বণ্টনকারী; তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন, তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামত বণ্টনকারী, সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না- সবকিছুই উনার নিকট হাযির ও নাযির।

হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি, যেরূপ আমার হাত মুবারক উনার তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা কায়িনাতে সম্মানিত রহমত মুবারক, সম্মানিত স্বাক্ষী এবং সম্মানিত বন্টনকারী হিসেবে সারা মাখলুকাতে হাযির ও নাযির। আর এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেহেতু পবিত্র জিসিম ও পবিত্র ছূরত মুবারক রয়েছে, সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারক উনার অনুরূপ জিসিম মুবারক ও ছূরত মুবারক অর্থাৎ মিছালী ছূরত মুবারক-এ কায়িনাত মাঝে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে, এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মাওলানা মুহম্মদ ইয়াকুব আলী

সিংড়া, নাটোর

সুওয়াল: আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি নি¤œলিখিত বিষয়টি নিয়ে প্রচার করছে যে, ‘নাহজুল বালাগাহ’ (মূল: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, অনুবাদক: জাহিদুল ইসলাম) কিতাবের ৫৬নং খুতবায় বর্ণিত আছে যে, এ খুতবায় আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কতল করার আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশ নাকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি আদেশ মুবারকের ভিত্তিতেই তিনি দিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা যখন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমার মিম্বরে দেখবে তখন উনাকে কতল করো।

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো- উক্ত কথাটি কতটুকু সঠিক? দলীল প্রমানসহ আপনাদের বহুল প্রচারিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে প্রকাশ করে এলাকার মানুষের ঈমান হিফাযতে সহায়তা করতে অনুরোধ রইলো।

জাওয়াব: বিশিষ্ট ছাহাবী কাতিবে ওয়াহ্য়ী আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে সুওয়ালে উল্লেখিত জনৈক ব্যক্তির প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

“নাহজুল বালাগাহ” মূল কিতাবের মধ্যে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্বতল করার বিষয়ে স্পষ্ট কোন কথা উল্লেখ নেই। এমনকি অনুবাদক জাহিদুল ইসলাম কর্তৃক লিখিত নাহাজ-আল-বালাগ কিতাবের ৫৬নং খুতবার বঙ্গানুবাদ বা অর্থের মধ্যেও হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্বতল করার ব্যাপারে কোন কথা উল্লেখ নেই। তবে উক্ত বঙ্গানুবাদ কিতাবটিতে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে যেসব বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে তা সবই টিকাকারদের মন্তব্য। আর উক্ত মন্তব্য শুধু উনার নামেই করা হয়নি আরো অনেকের নামে উল্লেখ রয়েছে।

তাছাড়া “নাহজুল বালাগাহ” কিতাবটি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার লিখিত কিতাব কিনা অথবা উক্ত কিতাবের মধ্যে সংগৃহীত সকল খুতবাহ বা বর্ণনাসমূহ উনারই কিনা সে বিষয় নিয়েও যথেষ্ট ইখতিলাফ বা মতোবিরোধ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, উক্ত কিতাবটি বাতিল ও জাহান্নামী ৭২ ফিরক্বার অন্যতম শিআ সম্প্রদায়ভুক্ত কোন লোক লিখে তা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বলে চালিয়ে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, উক্ত ইখতিলাফযুক্ত কিতাবের বর্ণনা বা উদ্ধৃতি দিয়ে এবং বাতিল আক্বীদাপন্থী টিকাকারদের মন্তব্য দ্বারা কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্মত নয়। বরং তা সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ ও কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

স্মরণীয় যে, যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سألت ربى عن اختلاف اصحابى من بعدى فاوحى الى يا محمد ان اصحابك عندى بمنزلة النجوم فى السماء بعضها اقوى من بعض لكل نور فمن اخذ بشىء مماهم عليه من اختلافهم فهو عندى على هدى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার বিছাল শরীফ উনার পরে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বললেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার নিকট আকাশের তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো রয়েছে। সুতরাং, উনাদের যে কোন ইখতিলাফকেও যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারাও হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফসমূহ আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা (প্রত্যেকেই) তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, সেই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রতিভাত যে, স্বয়ং খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেখানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিলেন এবং যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তারকা সাদৃশ্য বললেন এবং অনুসরণ অনুকরণ করার জন্য আদেশ মুবারক করলেন এবং উনাদের অনুসরণ মুবারক হিদায়েত লাভের কারণ বলে উল্লেখ করলেন সেখানে উনাদেরই তরফ থেকে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার পেয়ারা রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে বিপরীতধর্মী বা স্ববিরোধী নির্দেশ কি করে হতে পারে? এটা নিঃসন্দেহে মুনাফিকদের কারসাজি ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

কাজেই, উক্ত লিখনী ও অপপ্রচার থেকে সকলকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। কোনভাবেই কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বিরূপ আক্বীদা পোষণ করা যাবে না। তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعدلهم عذابا مهينا.

 অর্থ: “নিশ্চয় যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن مغفل رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الله الله فى اصحابى لاتتخذوهم غرضا من بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهم فببغضى ابغضهم ومن اذاهم فقد اذانى ومن اذانى فقد اذى الله ومن اذى الله يوشك ان يأخذه.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগফফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আমার বিছাল শরীফ উনার পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করলো, আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিল, সে মুলতঃ আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল, আর যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিল, মহান আল্লাহ পাক তিনি শীঘ্রই তাকে পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ليغيظ بـهم الكفار.

অর্থ: “একমাত্র কাফিরেরাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায়  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت مالك بن انس رحمة الله عليه قال من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر

অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। (কানযুল উম্মাল)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا مابلغ مد احدهم ولا نصيفه.

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে তোমরা গালি দিওনা। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে, তবুও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের এক মূদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركم

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক।” (তিরমিযী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عويمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه وسلم قال ان الله اختارنى واختارلى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا وعدلا.

অর্থ: “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ উনাদের সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)

মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পরে যে ছাহাবা বিদ্বেষী নামে দ্বীন ইসলাম ধ্বংসকারী একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে, তাদের সম্পর্কে তিনি উম্মতকে সতর্ক করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন-

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سيأتى قوم يسبونهم ويستنقصونهم فلاتجالسوهم ولاتأكلوهم ولاتشاربوهم ولاتناكحوهم وفى رواية اخرى ولاتصلوا معهم ولاتدعولهم.

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষারোপ করবে বা গালি দিবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবেনা, তাদের সাথে পানাহার করবেনা, তাদের সাথে বিবাহশাদীর ব্যবস্থা করবেনা। অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পেছনে নামায পড়বেনা এবং তাদের জন্য দোয়া করবেনা।”

বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “ইসাবা” কিতাবের ১ম খ-ে প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ যারআ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিম্নোক্ত বর্ণনা  উদ্ধৃত করেছেন-

اذا رايت الرجل ينقص احدا من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق

অর্থ: “যখন কাউকে দেখবে যে, সে কোন একজন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবমাননা করছে, তখন তুমি জানবে, সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির।”

অতএব, যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে তারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ এবং তারা বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হলেন একজন জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওয়াহ্য়ী, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী রাবী।

অতএব, যে কেউ হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে অথবা অন্য যে কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্মান বিরোধী কথা বলবে, লিখবে, প্রচার করবে বুঝতে হবে, সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সান্নিধ্যে থেকে তা’লীম ও তরবিয়ত হাছিল করেছেন এবং অর্জন করেছেন সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার অগাধ ইলিম। যার কারণে রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে “ফক্বীহুল উম্মত” মনে করতেন।

যেমন, “বুখারী শরীফ” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, একবার হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বললেন-

اصاب انه فقيه.

অর্থাৎ- “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যা বলেছেন, তা ঠিকই বলেছেন, কেননা তিনি নিজে একজন ফক্বীহ।”

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

دعه فانه قدصحب النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও, কেননা তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ ছোহবতে ছিলেন।” (বুখারী শরীফ)

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতে থেকে যেমনিভাবে খাছ ফয়েয ও তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন, তেমনিভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভা-ার হতে সংরক্ষণ করেন অসংখ্য মূল্যবান পবিত্র হাদীছ শরীফ। তিনি মোট ১৬৩ খানা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, যার মধ্যে ৪ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ متفق عليه (মুত্তাফাকুন আলাইহি) অর্থাৎ একই ছাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ ইমাম বুখারী শরীফ ও ইমাম মুসলিম শরীফ উভয়ে বর্ণনা করেছেন। আর ৪ খানা শুধু বুখারী শরীফ উনার মধ্যে ও ৫ খানা শুধু মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। বাকিগুলো অন্যান্য হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে রয়েছে। (তাহযীবুল আসমা লিননববী)

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাস হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হুনাইনের জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন।

কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উনার বুযুর্গ পিতা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ এসে আরজ করলেন-

معاوية تجعله كاتبا بين يديك قال نعم.

অর্থ: “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপনি কাতিবে ওয়াহ্য়ী নিযুক্ত করলে ভাল হতো, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাতিবে ওয়াহ্য়ী নিযুক্ত করলেন।” (মুসলিম শরীফ)

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু যে কাতিবে ওয়াহ্য়ী উনার খিদমতেই নিয়োজিত ছিলেন তা নয়; বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট খাদিম হওয়ারও সৌভাগ্য লাভ করেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لى معاوية اعلمت انى قصرت من رأس النبى صلى الله عليه وسلم عند المروة بمشقص.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বলেন যে, আপনার জানা আছে কি? আমি (হজ্জের সময়) মারওয়াহ নামক স্থানে কেচি দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক কেটে ছিলাম।” (মুসলিম শরীফ)

একারণেই তো তিনি লাভ করেছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ দোয়া মুবারক-

اللهم اجعله هاديا مهديا واهد به.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হাদী ও হিদায়েতপ্রাপ্ত করুন এবং উনার দ্বারা লোকদেরকে হিদায়েত দান করুন।” (তিরমিযী শরীফ)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ দোয়াও উল্লেখ আছে-

اللهم علم معاوية الكتاب والحساب وقه العذاب.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিসাব-কিতাব শিক্ষা দিন এবং উনাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিন।” (আল ইছাবাহ, মাজমাউয যাওয়ায়িদ)

প্রসিদ্ধ ছাহাবী হযরত আমর ইবনুল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য এ দোয়া করতে শুনেছি-

اللهم علمه الكتاب ومكن له فى البلاد وقه العذاب.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কিতাব শিক্ষা দিন এবং শহরেই উনার স্থান নির্ধারণ করুন ও উনাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দিন।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ)

অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার সওয়ারীর উপর বসা, উনার পিছনে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বসালেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, “হে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার দেহের কোন অংশ আমার দেহ মুবারক স্পর্শ করে আছে?” হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! “আমার পেট ও বুক আপনার দেহ মুবারক উনার সাথে লেগে আছে।” এটা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া করেন-

اللهم املاه علما.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইলিম দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন।” (তারীখুল ইসলাম লি হাফিয যাহাবী)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি কি করে বিদ্বেষ পোষণ করা সম্ভব? মূলত: জাহিল ও গোমরাহ ব্যতীত কারো পক্ষেই উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, হযরত আবু ইদরীস খাওলানী রহমতুল্লাহি তিনি বলেন-

لـما زال حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام عمير بن سعد عن حمص ولى معاوية فقال عمير لا تذكر معاوية الا بخير فانى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اللهم اهد به.

অর্থ: “যখন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হামছ হতে হযরত উমাইর ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সরিয়ে সেস্থানে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে গভর্ণর নিযুক্ত করলেন, (তখন লোকজন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে জানতে চাইলে) হযরত উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, উনার সম্পর্কে তোমরা ভাল ব্যতীত খারাপ বলোনা। কারণ, আমি স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য এ দোয়া করতে শুনেছি যে, “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দ্বারা লোকদেরকে হিদায়েত দান করুন।” (তিরমিযী শরীফ)

মূলকথা হলো, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন বিশেষ মর্যাদার ছাহাবী যাকে ‘উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওয়াহ্য়ী উনাদের সদস্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইল্মের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ام حرام رضى الله تعالى عنها انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول اول جيش من امتى يغزون البحر قد اوجبوا.

অর্থ: “হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের জিহাদে অংশগ্রহণ করবে উনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র জিহাদের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।” (তাবারী শরীফ)

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান যুননূরাইন আলাইহিস সালাম, উনার পর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।” (বিদায়া)

এক ব্যক্তি হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি কোন প্রকার ক্বিয়াস করা যাবে না। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওয়াহ্য়ী এবং উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শ্রেষ্ঠ?” তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সেই ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)

অতএব, এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাক্বিছ বলে গালি দেয়, উনার সমালোচনা করে তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালি দেয়, নাক্বিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

 

আল্লামা মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম

বেলতলী বাজার, মতলব, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: শিরক নিয়ে অনেকেই ইফরাত-তাফরীত করে থাকে। তাই শিরকের সংজ্ঞা পরিচিতি উদাহরণ সহকারে জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যাত পাক (পবিত্র সত্মা) উনার সাথে অথবা মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফাত বা গুনাবলীর কোনটির মধ্যে উনার মতো অপর কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করার নাম শিরক। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার যাত পাক ও ছিফাতসমূহের মধ্যে কাউকে শরীক করে তাকে মুশরিক বলে।

মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া অসীম। তিনি ইচ্ছা করলে বান্দার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু শিরক এমনই মারাত্মক গুনাহ  বা অপরাধ যে, তিনি কিছুতেই শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পরিস্কারভাবে ঘোষণা করা হয়েছে-

ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সাথে শরীক করার গুনাহ অর্থাৎ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। এতদভিন্ন আর সমস্ত গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। (পবিত্র সুরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৬)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার  মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

انه من يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة وماواه النار

অর্থ: নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শিরক করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর জাহান্নামই তার বাসস্থান। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং-৭২)

শিরক দুই প্রকার। (এক) শিরকে জলী। জলী অর্থ প্রকাশ্য বা সরাসরি। অর্থাৎ সূর্য, আগুন, মূর্তি বা দেব-দেবী ইত্যাদির কোন কিছুকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে মা’বুদ সাব্যস্ত করার নাম শিরকে জলী। এই প্রকারের শিরক চির অমার্জনীয়। এমনকি এই প্রকার শিরক অনুষ্ঠানকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরকালীন কল্যাণের জন্য দুআ করা পর্যন্ত নিষেধ।

যেমন এ মর্মে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ما كان للنبى والذين امنوا ان يستغفروا للمشركين ولو كانوا اولى القربى من بعد ما تبين لهم انهم اصحب الجحيم

অর্থ: মুশরিকদের জাহান্নামী হওয়ার বিষয় পরিষ্কাররূপে জানা সত্বে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা কোন নবী আলাইহিস সালাম উনার পক্ষে কিংবা ঈমানদারগণ উনাদের পক্ষে কিছুতেই উচিত নয় যদিও তারা ঘণিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৩)

(দুই) শিরকে খফী। খফী শব্দের অর্থ গোপন বা অপ্রকাশ্য। এই প্রকার শিরক মু’মিন মুসলমান নিজেদের অজ্ঞতার কারণে ও  অজান্তে করে থাকে। এটা অতি সূক্ষ্ম বিষয়। যার কারণে সাধারণ মু’মিন মুসলমানদের পক্ষে এটা উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না বলে অনেকেই এই অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকে। যেমন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-

وما يؤمن اكثرهم بالله الا وهم مشركون

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনেক লোক ঈমান এনে থাকে এবং তারা শিরকও করে থাকে।” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১০৬)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাৎপর্য হচ্ছে, মু’মিনগণ অন্তরে বা আন্তরীকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে একমাত্র মা’বুদ বলে বিশ্বাস করে সত্যই, কিন্তু গুপ্ত বা সুক্ষ্মভাবে শিরকও করে থাকে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الشرك فى امتى اخفى من دبيب النمل على الصفا

অর্থ: আমার উম্মতের মধ্যে শিরক হচ্ছে পাহাড়ের বুকে চলন্ত পিপিলিকার পায়ের শব্দ হতেও অধিকতর সুক্ষ্ম। (জামে’ ছগীর)

মোট কথা, কোন লোক নেক কাজ করতে যেয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল ব্যতীত অন্য কোন পার্থিব উদ্দেশ্য রাখলে তা শিরকে খফীর পর্যায়ভুক্ত হয়ে পড়ে। যেমন কোন লোক নামায পড়লো লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। সে নামায পড়লো মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে কিন্তু নিয়ত করলো লোক দেখানোর। নাউযুবিল্লাহ! এভাবে সে অতি সূক্ষ্মভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অপরকে শরীক করে ফেললো। কোন ঈমানদার ব্যক্তি ঔষধ সেবন করে রোগ হতে আরোগ্য লাভের জন্য; কিন্তু সেই ঔষধকেই আরোগ্যদাতা মনে করলো। এতেও সে শিরকে খফীর অপরাধ করলো।

অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কারো কাছে সাহায্য পাওয়ার আশায় বলে, উপরে আল্লাহ নীচে আপনি ছাড়া আমার সাহায্যকারী কেউ নেই। অথবা বলে, আগে আল্লাহ পাক পরে আপনি অথচ এ ধরণের কথা শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত।

মুসলিম সৈন্যদল জিহাদে বিজয় লাভ করে যদি মনে করে যে, সৈন্যসংখ্যার আধিক্য ও অস্ত্রবলের কারনেই জিহাদে বিজয় লাভ করেছি, তবে সেটাও শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত হবে।

কোন উপার্জনকারী যদি মনে করে জীবিকা তার স্বহস্তে উপার্জিত এবং তাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কোন দান নেই, তবে সেও শিরকে খফীর অপরাধে অপরাধী। এরূপ আরো শত-সহ¯্র বিষয় মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের মধ্যে প্রকাশ পায়, যা শিরকে খফীর অন্তর্ভুক্ত। এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

উল্লেখ্য, শিরকে খফীর ফলে ঈমান আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে অন্তর হতে ঈমানের নূর মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ কারণেই প্রত্যেক মু’মিন মুসলমান পুরুষ মহিলার জন্য ফরয হচ্ছে, রিয়াসহ অন্তরের যাবতীয় বদখাছলত দূরীভূত করে অন্তরে ইখলাছ পয়দা করা এবং এজন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা। কেননা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ক্বলবী যিকির না করা পর্যন্ত কখনোই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে না,  রিয়া বা লোক দেখানো মনোভাবসহ অন্যান্য বদখাছলত দূরীভূত হবে না এবং ইখলাছও হাছিল হবেনা। ফলে শিরকে খফী হতে বেঁচে থাকাও সম্ভব হবে না এবং নাজাতও পাওয়া যাবে না।

মুহম্মদ আশরাফ আলী

সদর, নিলফামারী

সুওয়াল: কেউ কেউ পবিত্র সূরা হামীম সাজদাহ উনার ৬ নম্বর আয়াত শরীফ-

قل انـما انا بشر مثلكم يوحى الى

আয়াত শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায় তারা মূলত আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও পথভ্রষ্ট। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো মনে করা সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল। মূলতঃ যারা কাফির কেবল তারাই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তাদের মতো মানুষ বলে মনে করতো।

যেমন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বে-আদবী করতে গিয়ে বলেছিলো-

ان انتم الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)। (পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-

ما هذا الا بشر مثلكم يأكل مما تأكلون منه ويشرب مما تشربون

অর্থাৎ ইনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিনিও তা পান করেন। (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

এমনকি যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কেও কাফিরেরা বলেছিলো-

هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.

অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

কাজেই, উল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিজের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।

মূলত কাদিয়ানীরা যেমন  خاتم النبين এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করে থাকে তদ্রƒপ বাতিল আক্বীদা ও ফিরক্বার লোকেরা পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ ও পবিত্র সূরা হামীম সাজদা শরীফ উনার আয়াত শরীফ-

قل انـما انا بشر مثلكم يوحى الى

উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে বরং মেছালী অর্থ গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মতো মানুষ বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও মর্ম হলো- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে, আমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন বাশার বা মানুষ, (হাক্বীক্বতান আমি শ্রেষ্ঠতম রসূল) আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে। সুবহানাল্লাহ

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য কারো মতো মোটেও বলা হয়নি। এছাড়া উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই

يوحى الى

অর্থাৎ “আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে” এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কেননা অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।

উদাহরণস্বরূপ حيوان ‘হাইওয়ান’ বা প্রাণী বলতে মানুষকেও বুঝায় এবং অন্যান্য জীব-জন্তুকেও বুঝায়। তবে কোন মানুষ কি একথা বলবে যে, গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ইত্যাদির মতো তারা ‘হাইওয়ান’। নাউযুবিল্লাহ!

মূলত মানুষ হাইওয়ান বটে কিন্তু গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা প্রভৃতি হাইওয়ানের মতো নয়। কেননা মানুষ হলো  حيوان ناطق ‘হাইওয়ানে নাতিক্ব’ অর্থাৎ বাকশক্তিসম্পন্ন জীব। মানুষ বিবেক, জ্ঞান ও বাক শক্তির অধিকারী। যেরূপ এ ناطق (নাতিক্ব) বা ‘বাকশক্তি সম্পন্ন’ শব্দটি মানুষকে অন্যান্য জীব-জন্তু হতে পৃথক করে দিয়েছে তদ্রƒপ يوحى الى (আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে) এ বাক্য মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য মানুষ থেকে পৃথক করে দিয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ينساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসা আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

এখানে বিশেষভাবে জানা আবশ্যক যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা নিসা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যদি অন্য কোন মহিলাদের মতো না হন তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করে অন্য পুরুষ তথা অন্য মানুষের মতো হবেন? প্রকৃতপক্ষে তিনি কারো মতোই নন। যেমন এ প্রসঙ্গে ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لست كاحد منكم

অর্থাৎ- “আমি তোমাদের কারো মতো নই।”

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ايكم مثلى انى ابيت يطعمنى ربى ويسقينى

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কে আছো আমার মতো। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে রাত্রি যাপন করি, তিনিই আমাকে খাওয়ান এবং তিনিই আমাকে পান করান।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির পর থেকে যমীনে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নূর মুবারক উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক-এ ছিলেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নূর মুবারক উনার দ্বারা সৃষ্টি বলা হয়। তাই বলে কি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনও একথা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মতো? বললে কি শুদ্ধ হতো? কখনোই না। তাহলে মেছালী ছূরত মুবারক উনার কারণে তিনি অন্য মানুষের মতো হন কি করে?

আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছর যিন্দিগী মুবারক-এ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এরমধ্যে তিনি অনেক সময় ছাহাবী হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক ছূরত বা আকৃতিতে সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এছাড়া পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মানব আকৃতি ধারণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও ‘বাশার’ শব্দটি উল্লেখ আছে। এখন বাশার মেছালী ছূরত মুবারক ধারণ করার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো সাধারণ মানুষ বলছে, তারা তাহলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকেও তাদের মতো মানুষ বলুক। কিন্তু তারা তো তা বলছে না।

একইভাবে জিনেরাও মানুষের ছূরত ধারণ করে চলাফেরা করে, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে সেজন্য তাদেরকে কি মানুষ বলা শুদ্ধ হবে? কস্মিনকালেও নয়।

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করে যারা বলছে যে, তিনি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ জঘন্য উক্তি করছে তারা কি কখনও তাদের দলের আমীর, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতকে কুকুরের দাঁতের মতো বলবে? যদিও কুকুরের দাঁত তাদের আমীর, মুরুব্বী, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতের চেয়েও শক্ত।

আরো উল্লেখ্য, জগৎ কুখ্যাত নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাব এরাও তো মানুষ, তাহলে মাঝে মাঝে ওইসব কুলাঙ্গাররা নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য বলুক যে, সে এবং তাদের আমীর ও মুরুব্বী গং নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের মতোই।

এসব পথভ্রষ্ট জাহিলদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি যথার্থই ইরশাদ মুবারক করেছেন-

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।” (পবিত্র সূরাতুল জাছিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

ফলে, এদের পক্ষে হক্ব জানা, বুঝা, অনুধাবন করা এবং তা মানা ও গ্রহণ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাকী

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: আল-কুরাইশী পরিচয়ধারী এক ব্যক্তি কর্তৃক লিখিত কিতাবে উল্লেখ করেছে, “রাসূলে করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল মানুষের মত তিনিও নুতফা দ্বারা সৃষ্টি এবং সকল মানুষের মত উনার কবর মুবারকের মাটিও মায়ের রেহেম শরীফে স্থাপন করা হয়েছিল বিধায় উনার সৃষ্টির সাথে মাটির নিছবত প্রমাণিত। উক্ত বক্তব্যটি সঠিক কিনা? দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে ভুল, বানোয়াট, দলীলবিহীন, মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। যা বিশ্বাস করলে কেউই ঈমানদার থাকতে পারবে না। বরং সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। এতে কোন সন্দেহ, সংশয় নেই। যে সন্দেহ করবে সেও কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।

আলোচ্য প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় আলোচনার অবকাশ রাখে, প্রথমত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত অজুদ মুবারক প্রথম সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত: উনার পূত-পবিত্র জিসম মুবারক উনার সাথে নুতফার কোন সম্পর্ক নেই। তৃতীয়ত: উনার পূত-পবিত্র জিসম মুবারক উনার সাথে মাটিরও কোন সম্পর্ক বা নিসবত নেই। চতুর্থত: তিনি কারো মত নন।

খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তিনি উনার সম্মানিত রুবূবিয়াত প্রকাশের জন্য সর্বপ্রথম অজুদ মুবারক হিসেবে যে পবিত্র থেকে পবিত্রতম কুদরতময় নূর মুবারক সৃষ্টি করেন তিনিই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال: سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اول شىء خلقه الله تعالى؟ فقال: هو نور نبيك صلى الله عليه وسلم يا حضرت جابر رضى الله تعالى عنه خلق الله، ثم خلق فيه كل خير، وخلق بعده كل شىء، وحين خلقه اقامه قدامه من مقام القرب اثنى عشر الف سنة، ثم جعله اربعة اقسام فخلق العرش من قسم والكرسى من قسم: وحملة العرش وخزنة الكرسى من قسم، واقام القسم الرابع فى مقام الحب اثنى عشر ألف سنة ثم جعله اربعة اقسام فخلق القلم من قسم، واللوح من قسم، والجنة من قسم،

অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? জাওয়াবে নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আপনার যিনি নবী-রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর উনার মধ্যে সমস্ত কল্যাণ বা ভালাই মুবারক সৃষ্টি করেছেন। উনার পরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে উনার সম্মুখে মাক্বামে কুরব্ মুবারক তথা অতি নিকটে ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে ‘সম্মানিত আরশ মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত কুরসী মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত আরশ মুবারক বহনকারীগণ উনাদেরকে এবং সম্মানিত কুরসী মুবারক তত্বাবধানকারীগণ উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে হুব্ব তথা সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের একভাগ দিয়ে সম্মানিত ক্বলম মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মনিত লাওহ মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত জান্নাত মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ!

ثم اقام القسم الرابع فى مقام الخوف اثنى عشر الف سنة ثم جعله اربعة اجزاء فخلق الـملائكة من جزء، والشمس من حزء، والقمر والكوكب من جزء، واقام الجزء الرابع فى مقام الرجاء اثنى عشر الف سنة، ثم جعله اربعة اجزاء فخلق العقل من جزء والعلم والحكمة من جزء والعصمة والتوفيق من جزء واقام الجزء الرابع فى مقام الحياء اثنى عشر الف سنة ثم نظر الله عز وجل اليه فترشح النور عرقا فقطر منه مائة الف واربعة. (وعشرين الف واربعة آلاف) قطرة من نور، فخلق الله من كل قطرة روح نبى عليهم السلام، او روح رسول عليهم السلام ثم تنفست ارواح الانبياء عليهم السلام فخلق الله من انفاسهم الاولياء والشهداء والسعداء والمطيعين الى يوم القيامة، فالعرش والكرسى من نورى والكروبيون من نورى والروحانيون والـملائكة من نورى  والجنة وما فيها من النعيم من نورى، وملائكة السموات السبع من نورى،  والشمس والقمر والكواكب من نورى، والعقل والتوفيق من نورى، وارواح الرسل والأنبياء عليهم السلام من نورى، والشهداء والسعداء والصالحون من نتاج نورى،

অর্থ: তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে খওফ মুবারক উনার মধ্যে ১২ হাজার বছর রাখেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উনার এক ভাগ দিয়ে সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, আরেক ভাগ দিয়ে সূর্য এবং আরেক ভাগ দিয়ে চন্দ্র ও তারকারাজী সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আবার সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে রজা’ তথা প্রত্যাশার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে চারভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের একভাগ দিয়ে সম্মানিত আক্বল মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত ইলম মুবারক ও সম্মানিত হিকমত মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত সততা বা সম্মান মুবারক ও সম্মানিত তাওফীক্ব মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সম্মানিত চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে হায়া তথা সম্মানিত লজ্জাশীলতা উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত বিশেষ দৃষ্টি মুবারক উনার কারণে উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে সম্মানিত নূর মুবারক বের হতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার সম্মানিত নূর মুবারক উনার ফোঁটা বা বিন্দু মুবারক বের হলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত প্রত্যেক সম্মানিত নূর মুবারক উনার ফোঁটা মুবারক থেকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক ও শ্বাস মুবারক গ্রহন করেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্বাস মুবারক থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতো হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, শহীদ, সৌভাগ্যশীল এবং আনুগত্যশীল বান্দা-বান্দী আসবেন উনাদের প্রত্যেকের সম্মানিত রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) এমনকি, সম্মানিত আরশ মুবারক এবং সম্মানিত কুরসী মুবারকও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া নৈকট্যপ্রাপ্তগণ উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, পবিত্র আত্মার অধিকারীগণ উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলে আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত জান্নাত এবং উনার মধ্যে অবস্থিত সমস্ত নিয়ামত মুবারকও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সাত আসমানে অবস্থানরত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে  সৃষ্টি। আর সৃষ্টি সূর্য ও চন্দ্র এবং তারকাসমূহও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত আক্বল বা বিবেক মুবারক এবং তাওফীক্ব বা সামর্থ্য মুবারক পর্যন্ত আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক  উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! এবং সকল শহীদ, সৌভাগ্যশীল ও ছালিহীন তথা সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক উনারই ফসল তথা উনারাও সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ!

 ثم خلق الله اثنى عشر الف حجاب فاقام الله نورى وهو الجزء الرابع، فى كل حجاب الف سنة، وهى مقامات العبودية والسكينة والصبر والصدق واليقين، فغمس الله ذلك النور فى كل حجاب الف سنة فلما اخرج الله النور من الحجاب ركبه الله فى الارض فكان يضىء منها ما بين الـمشرق والـمغرب كالسراج فى الليل الـمظلم، ثم خلق الله حضرت أدم عليه السلام من الارض فركب فيه النور فى جبينه، ثم انتقل منه الى حضرت شيث عليه السلام، وكان ينتقل من طاهر الى طيب، ومن طيب الى طاهر، الى ان اوصله الله صلب حضرت عبد الله ذبيح الله عليه السلام بن حضرت عبد الـمطلب عليه السلام، ومنه الى رحم امى حضرت آمنة عليها السلام بنت حضرت وهب عليه السلام، ثم اخرجنى الى الدنيا فجعلنى سيد الـمرسلين وخاتم النبيين ورحمة للعالـمين وقائد الغر الـمحجلين وهكذا كان بدء خلق نبيك صلى الله عليه وسلم يا حضرت جابر رضى الله تعالى عنه.

অর্থ: অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ১২ হাজার সম্মানিত হিজাব মুবারক সৃষ্টি করেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে হিজাবে আযমত উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক-এ অবস্থান করান, অতঃপর সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব মুবারক উনার মধ্যে এক হাজার বছর করে রাখেন। সুবহানাল্লহ! আর উক্ত হিজাব মুবারক হচ্ছে, সম্মানিত উবূদিয়্যাহ (বন্দেগী মুবারক), সাকীনা (প্রশান্তি মুবারক), ছবর (ধৈর্য্য মুবারক), ছিদক্ব (সততা মুবারক) এবং ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস মুবারক) উনাদের মাক্বাম বা অবস্থান স্থল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার মধ্যে এক হাজার বছর করে আচ্ছাদিত করে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন সম্মানিত হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার ভিতর থেকে সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে বের করে পৃথিবীতে সফর করালেন অর্থাৎ প্রেরণ করলেন তখন উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক-এ পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম এবং তন্মধ্যস্থিত যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো যেরূপ অন্ধকার রাতকে বাতি আলোকিত করে থাকে। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মাঝে সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হলেন। অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক পবিত্র ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হলেন। অতঃপর উনার থেকে আমার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম বিনতে হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমাকে দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ভূষিত করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন এবং অতি উজ্জ্বল অর্থাৎ মনোনীত ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের ক্বায়িদ হিসেবে। সুবহানাল্লাহ! এই হচ্ছে আপনার নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক উনার সূচনা বা উৎস, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক্ব: হাদীছ শরীফ: ১৮, আল জুযউল মাফক্বূদ মিনাল জুযয়িল আউওয়াল মিনাল মুছান্নিছ লিহাফিযিল কাবীর আবী বকর আব্দির রাযযাক্ব আছ ছন‘আনী ৬৩ পৃ., জান্নাতুল খুলদ লি আব্দির রাযযাক্ব, তাবরিয়াতুয যিম্মাহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, আফজালুল কুরা, মাতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, আল মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, আনওয়ারে মুহম্মদিয়া, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ, নশরুত তীব  ইত্যাদি।)

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার মশহূর ও বিখ্যাত “তাফসীর রূহুল বয়ান” উনার মধ্যে একখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه انه عليه الصلاة والسلام سأل جبريل عليه السلام فقال يا جبريل كم عمرك من السنين فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لست اعلم غير ان فى الحجاب الرابع نجما يطلع فى كل سبعين الف سنة مرة رأيته اثنين وسبعين الف مرة فقال يا جبريل عليه السلام وعزة ربى انا ذلك الكوكب.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে হযরত জিবরায়ীল আলাইহিস সালাম উনার বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, জবাবে হযরত জিবরায়ীল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি শুধু এতটুকু জানি যে, চতুর্থ হিজাবে আযমত মুবারকে একটি নূরানী তারকা ৭০ হাজার বৎসর পরপর একবার উদয় হতেন, আমি সেই তারকা মুবারক ৭২ হাজারবার উদয় হতে দেখেছি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমিই সেই নূরানী তারকা মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

আরো বর্ণিত রয়েছে, মিশরের বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও প্রখ্যাত আলিম আল্লামা ইউছুফ নাবেহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব “আনওয়ারে মুহম্মদিয়া” এবং বিখ্যাত কিতাব আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবদ্বয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كنت نورا بين يدى ربى قبل خلق ادم عليه السلام باربعة عشر الف عام.

অর্থ: “আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে আমার রব উনার নিকট ‘সম্মানিত নূর মুবারক’ হিসাবে বিদ্যমান ছিলাম। সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপ ‘আল ইনসানুল কামিল’ কিতাবেও উল্লেখ আছে। এ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اول ما خلق الله نورى وخلق كل شىء من نورى

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উনার থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)

বিখ্যাত তাফসীরকারক, তাজুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে রূহুল বয়ান ৪র্থ জিঃ ৬৪৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করেন-

ثم اسكن نور محمد صلى الله عليه وسلم فى ظهر ادم عليه السلام فصارت الـملائكة تقف خلفه صفوفا ينظرون الى النور فقال ادم عليه السلام يا رب مال هئلاء الـملائكة يقفون خلفى قال ينظرون الى نور محمد صلى الله عليه وسلم قال يا رب اجعله فى مكان فى جبهتى فنقل الله تعالى ذالك النور الى جبهته فصارت الملائكة تقف امامه ثم قال ادم عليه السلام يا رب اجعله فى موضع اراه فجعله فى اصبعه الـمسبحة فرفعها ادم عليه السلام وقال اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا رسول الله صلى الله عليه وسلم …

অর্থ: “অতঃপর “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার পিঠ মুবারকে রেখে দিলেন। সাথে সাথে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার পিছনে কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নয়ন ভরে “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে লাগলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম  তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কি হলো যে, উনারা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন? জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আবুল বাশার আলাইহিস সালাম! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার হাবীব উনার “সম্মানিত নূর মুবারক” তথা “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখছেন। তখন হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম আরয করলেন, হে বারে ইলাহী! মেহেরবানী করে উক্ত “সম্মানিত নূর মুবারক” মুবারক উনাকে আমার সামনে এনে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার পৃষ্ঠ মুবারক থেকে উনার কপাল মুবারকে এনে রাখলেন। এবার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার সম্মুখে এসে কাতার ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম  উক্ত “সম্মানিত নূর মুবারক” উনার আশিক্ব হয়ে আরয করলেন, হে আমার রব তায়ালা! দয়া করে এ “নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনাকে এরূপ স্থানে রাখুন যেন আমি নিজেও দেখতে পাই। মহান আল্লাহ পাক হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক কবুল করে উক্ত “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে” উনার মুসাব্বাহা বা তর্জনী নামক আঙ্গুল মুবারকে রেখে দিলেন, তিনি সে আঙ্গুল মুবারকটি উপরের দিকে উত্তোলন করে স্বচক্ষে উক্ত “সম্মানিত নূর মুবারক” অবলোকন করতঃ ঈমান এনে বলেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং এটাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল। সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই বা উনার সম্মানিত ওজূদ নূর মুবারক তিনিই সর্বপ্রথম কুদরতময় সৃষ্টি এবং উনার থেকেই কায়িনাতের সবাইকে ও সবকিছু কুদরতীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের আক্বীদাহ হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র জিসম মুবারক উনার সাথে নুতফার কোন সম্পর্ক নেই। বরং তিনি সর্বদা মহাসম্মানিত নূর মুবারক হিসেবেই স্থানান্তরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

এ সম্পর্কে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-

 فلما قدر الله الاجتماع بين ادم عليه السلام وحواء عليها السلام على عرافات ارسل الله اليه نهرا من الجنة فاغتسل وغشى حواء فانتقلت الانوار اليها ثم لم يزل نور محمد صلى الله عليه وسلم ينتقل من صلب الى صلب ومن بطن الى بطن الى انتقل الى صلب ابراهيم عليه السلام.

অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা মুবারক অনুযায়ী হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম ও উম্মুল বাশার হযরত হাওওয়া আলাইহিস সালাম উনারা আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার নিকট বেহেশেতের নহর পাঠিয়ে দিলেন। হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম বেহেশেতের মুবারক নহরে গোসল করে হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাকে আলিঙ্গন করলেন, যার ফলে “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পৃষ্ঠ মুবারক হতে উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক নিলেন। এরপর থেকে “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন পুরুষ উনার পৃষ্ঠ মুবারক হতে অন্য একজন পুরুষ উনার পৃষ্ঠা মুবারক-এ ও একজন মহিলা উনার রেহেম শরীফ থেকে অন্য একজন মহিলা উনার রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়ে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন। (নূরে মুহম্মদী)

وبالجملة كان ذالك النور فى فطرة أدم عليه السلام محفوظا مؤدعا حتى بدا ذالك النور فى جبين عبد الـمطلب عليه السلام وابنه عبد الله عليه السلام منتقلا ثم نقله الى صدف رحم زوجته امنة الزهرية عليها السلام-

অর্থ: “মূল কথা হচ্ছে উক্ত “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পিঠে রক্ষিত ছিলেন, তারপর সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ক্রমান্বয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র কপাল মুবারকে এবং সেখান থেকে উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছলেন, অতঃপর উক্ত “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উম্মু রসূলিনা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফে পৌঁছে দেন, ।” (নূরে মুহম্মদী)

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিযুল হাদীছ, আলিমুল কাবীর আল্লামা আবূ বকর আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত হাদীছ শরীফ গ্রন্থ “মুছান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক” উনার ৫ম যিলদ ৩১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

وكان عبد الله عليه السلام احسن رجل رئى فى قريش قط فخرج يوما على نساء من قريش مجتمعات فقالت امرأة منهن يانساء قريش؟ أيتكن يتزوجها هذا الفتى فتصطب النور الذى بين عينيه قال وكان بين عينيه نور.

অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা আলাইহিস সালাম তিনি অত্যধিক সুদর্শন পুরুষ ছিলেন, এরূপ সুদর্শন পুরুষ কুরাইশদের মধ্যে দেখা যেতনা। সুতরাং সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা আলাইহিস সালাম একদিন মহিলাদের জামায়াতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহিলাদের মধ্য হতে একজন বললো, হে কুরাঈশ মহিলাগণ! তোমরা কি চাও যে, এই সম্মানিত পুরুষ তোমাদের কাউকে বিবাহ করুন! অতঃপর উনার কপাল মুবারকে যে “নূর মুবারক” রয়েছেন তা তোমাদের নিকট ফিরে আসেন! রাবী বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারকে “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন।

“উমদাতুন নুকূল” কিতাবে বর্ণিত আছে-

والذى يدل على انه صلى الله عليه وسلم كان نورا فى بطن امه عليها السلام ايضا مروى زكريا فى بطن امه عليها السلام تسعة اشهر فلا تشكوا وجعا ولا مغصا ولاريحا.

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পূত-পবিত্র রেহেম শরীফেই “সম্মানিত নূর মুবারক” হিসেবে ছিলেন উনার প্রমাণ হলো- হযরত যাকারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নয় মাস মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পূত-পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থান মুবারক নিয়েছিলন। এ সময়ে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি কোন ব্যাথা-বেদনা ও বায়ূ আক্রান্ত হননি এবং গর্ভবতী অন্যান্য মহিলাদের ন্যায় কোন আলামতও প্রকাশ পায়নি।” সুবহানাল্লাহ!

ফক্বীহুল মিল্লাত, ইমামুল মুহাদ্দেসীন, শায়খুল ওলামা, আশেকে রাসূল, আল্লামা আহমদ আব্দুর রহমান আল বান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “বলূগুল আমানী” নামক কিতাবের ২০ তম জিঃ ১৮৩ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কিত আরেকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন-

وروى البيهقى فى الدلائل سنده عن عثمان بن ابى العاص رضى الله تعالى عنه حدثتنى امى انها شهدت حضرت امنة بنت وهب عليها السلام ولادة رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة ولدته قالت فما شىء انظره فى البيت الا نور-

অর্থ: ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “দালায়িলুন নুবুওওয়াত” নামক হাদীছ শরীফ গ্রন্থে হযরত ওসমান ইবনে আবিল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, যে বরকতময় রাত্রি মুবারক-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সে বরকতময় রাত্রি মুবারক-এ আমার মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সে বরকতময় রাত্রি মুবারক-এ আমি ঘরের ভিতর “সম্মানিত নূর মুবারক” ব্যতীত আর কিছুই দেখিনি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক সৃষ্টি করার পর উনার মধ্যে রূহ মুবারক ফুঁকে দেয়ার পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ওজূদ নূর মুবারক উনাকে অবস্থান মুবারক করান।

উক্ত সম্মানিত ওজূদ নূর মুবারক আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক থেকে হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার পূত-পবিত্র রেহেম শরীফ অর্থাৎ জিসিম মুবারক উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হন। ফলশ্রুতিতে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন হযরত শীছ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! যখন আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় ঘনিয়ে আসলো তখন তিনি হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনাকে কাছে ডাকলেন এবং ওছিয়ত মুবারক করলেন যে, আপনার মধ্যে অবস্থিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেনো কোন অপবিত্রা মহিলাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করা না হয় এবং এ বিষয়ে তিনিও ওছিয়ত মুবারক অব্যাহত রাখেন। এভাবে একজন সম্মানিত পুরুষ থেকে ও সম্মানিতা মহিলা অর্থাৎ সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম এবং সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনাদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আব্বা সাইয়্যিদুল আবায়ি হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত হযরত ত্বাহিরাহ আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে উক্ত সম্মানিত ওজূদ নূর মুবারক তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে সম্মানিত ছূরত বা জিসিম মুবারক ধারণ করেন এবং যমীনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক দ্বারা জিসিম মুবারক ধারণ করার কারণেই একমাত্র উনাকেই নূরে মুজাসসাম বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, এ কথা সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসিম মুবারক নুতফা, মাটি, পানি, আগুন ইত্যাদি কোনকিছুর দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়নি।

উল্লেখ্য, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে মহান কুদরতময় সৃষ্টি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনার থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্ট মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয় হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক এবং উনার জিসিম মুবারক উনার বাম পাঁজর মুবারক উনার বরকতময় হাড় মুবারক দ্বারা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়। সুবহানাল্লাহ! হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম এবং উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের দুজনের কেউই কিন্তু নুতফা দ্বারা সৃষ্টি নন। আবার উনাদের অধঃস্তন সন্তান হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র রেহেম শরীফে ছূরত মুবারক বা জিসিম মুবারক ধারণ করে যমীনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিও কিন্তু নুতফা দ্বারা সৃষ্টি নন বা সৃষ্টি হননি।

প্রমাণিত হলো, মানুষ হলেই যে নুতফা দ্বারা সৃষ্টি হবেন তা নয়। মহান আল্লাহ পাক উনার সকল সৃষ্টির বিধান বা তরতীব এক রকম নয়। সাধারণ মানুষের সৃষ্টি, যমীনে আগমন, বিদায় গ্রহণ আর মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বাধিক মনোনীত বান্দা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায় গ্রহন এক নয়। যদি তাই হয় তাহলে যিনি সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সম্মানিত নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সকল জিন-ইনসান এবং সমস্ত মাখলূক্বাতের সম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক, যমীনে আগমন মুবারক, বিদায় গ্রহণ মুবারক এবং উনার পূত-পবিত্র সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায় গ্রহণ মুবারক উনাদের পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা মুবারক চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করার জন্য যেই খামির মুবারক নাভিমূলে রাখার কথা বলা হয়, উক্ত খামির মুবারক উনাকেও উনার প্রকৃত অবস্থায় রূপান্তরিত করে অর্থাৎ সম্মানিত নূর মুবারকে পরিণত করে তারপর রাখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت كعب الاحبار رحمة الله عليه قال لـما اراد الله تعالى ان يخلق محمدا صلى الله عليه وسلم امر جبريل ان ياتيه بالطينة التى هى قلب الارض وبهائها ونورها قال فهبط جبريل فى ملائكة الفردوس وملائكة الرفيع الاعلى فقبض قبضة رسول الله صلى الله عليه وسلم من موضع قبره الشريف وهى بيضاء منيرة فعجنت بماء التسنيم فى معين انهار الجنة حتى صارت كالدرة البيضاء

অর্থ: “হযরত কা’ব আহবার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এমন খামীর মুবারক নিয়ে আসার নির্দেশ মুবারক দিলেন যা মূলতঃ যমীনের আত্মা, সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন এবং ঔজ্জ্বল্য ও ‘নূর’। এ নির্দেশ মুবারক পেয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি জান্নাতুল ফিরদাউস ও সর্বোচ্চ আসমানের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অতঃপর সম্মানিত রওজা শরীফ উনার স্থান থেকে এক মুষ্ঠি স্বচ্ছ নূরানী খামির মুবারক নেন। অতঃপর উক্ত খামির মুবারক উনাকে বেহেশতের প্রবাহিত ঝরণাসমূহের মধ্যে ‘তাসনীম’ নামক ঝরণার পানি দ্বারা ধৌত করার পর তা একখানা শুভ্র মুক্তার আকার ধারণ করেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সম্মানিত বিশুদ্ধ সাদা নূর মুবারক-এ পরিণত হয়ে যান। …” সুবহানাল্লাহ!  (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)

অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাভী মুবারক উনার মধ্যে যে খামীর মুবারক রাখা হয়েছে তা মাটির ছূরতে রাখা হয়নি।  কারণ সম্মানিত নূর মুবারক উনার দ্বারা সৃষ্টি বা গঠিত জিসিম মুবারক অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ উনার নাভী মুবারকে খামীর মুবারক উনাকে মাটির ছূরতে রাখা অসম্ভব। তাই উক্ত খামীর মুবারক উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে রূপান্তরিত করে অর্থাৎ নূর মুবারক বানিয়ে সেই নূর মুবারক উনার নাভী মুবারকে রাখা হয়। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতময় সৃষ্টি সম্মানিত নূর মুবারক উনার নিছবত প্রমাণিত।

যার কারণে অন্য মানুষের ক্ষেত্রে যেরূপ ঘাম, থুথু, ছোট ইস্তিঞ্জা, বড় ইস্তিঞ্জা, রক্ত, অশ্রু, চুল, দাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ব্যবহার করা যাবে না। বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালল্লাম উনার শান মুবারকে পবিত্র নূর মুবারক উনার সাথে নিছবতযুক্ত করে যা ব্যবহার করতে হবে তা হচ্ছেন- পবিত্র নূরুত ত্বীব মুবারক, পবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক, পবিত্র নূরুশ শিফা মুবারক, পবিত্র নূরুল গইব মুবারক, পবিত্র নূরুন নাজাত মুবারক, পবিত্র নূরুল মুহব্বত মুবারক, পবিত্র নূরুল ফাতহ্ মুবারক, পবিত্র নূরুন নিয়ামত মুবারক ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ।

শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার মধ্যে উক্ত সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রম। এমনকি যারা তা পান করেছেন বা খেয়েছেন উনারাও পবিত্র হয়ে গেছেন এবং জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حضرت أَبِي ذَرّ رضى الله تعالى عنه قَالَ  سَمِعْتُ رسول الله صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا يُجْتَنَى مِنَ الشَّوْكِ الْعِنَبُ

অর্থ: হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কাটাযুক্ত গাছ হতে আঙ্গুর ফল আশা করা যায় না।” (আমছালুল হাদীছ)

ঠিক সুওয়ালে উল্লিখিত আল কুরাইশী পরিচয়ধারী ব্যক্তিটিও অনুরূপ। সে যেহেতু গোমরাহ ও বদবখত, সেহেতু সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান মুবারক উপলব্ধি করতে পারেনি। যার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে সে যথাযথ আক্বীদাহ পোষণ করতে পারেনি। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

মূলকথা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নূর মুবারক উনার সৃষ্টি। উনার যমীনে আগমন মুবারক, যমীনে অবস্থান মুবারক, যমীন থেকে বিদায় বা বিছালী শান মুবারক গ্রহণ সবকিছুই নূর মুবারক হিসেবে। উনার মহাসম্মানিত অজুদ মুবারক নুতফার সাথে সম্পর্কিত নন। আর উনার পূত-পবিত্র রওজা শরীফ নির্ধারণের জন্য উনার পূত-পবিত্র জিসিম মুবারক উনার মাঝে কোন মাটি রাখা হয়নি। বরং যা কিছু সংযুক্ত করা হয়েছে, সবই নূর মুবারক হিসেবে করা হয়েছে। মাখলূক্বাত বা সৃষ্টিরাজির মধ্যে তিনি একক। তিনি কারো মতো নন এবং উনার মতো কেউ নেই। আর এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা প্রকাশ্য গুমরাহীতে গোমরাহ, প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত, কাট্টা কাফির এবং চির লা’নতগ্রস্ত।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৬০তম সংখ্যা হতে ৮২তম সংখ্যা পর্যন্ত পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ মা’ছুমুর রহমান

নন্দীপাড়া, ঢাকা

 

সুওয়াল: ৩ মাকরূহ ওয়াক্তে কি লাশ দাফন করা যায়?

জাওয়াব: হ্যাঁ, মাকরূহ ওয়াক্তে দাফন করা যাবে। এ ব্যাপারে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে কোন রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

 

উম্মে আহমদ

নন্দীপাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল: আমরা জানি ১টি সুন্নত আদায় করলে ১০০ শত শহীদের ছওয়াব পাওয়া যায়, এখন আমার জানার বিষয় হলো জায়নামাযের দোয়া, ওযূ গোসলের দোয়া, ঘুমের আগে বা পরে, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদির সময় দোয়া পড়লেও কি তেমনি ফযীলত পাওয়া যাবে? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: হ্যাঁ, ১টি সুন্নত আদায় করলে ১০০ শত শহীদের ছওয়াব পাওয়া যায়, তবে এ ব্যাপারে শর্ত রয়েছে। খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَأَطِيعُوا اللّـهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

অর্থ: তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরন করো। অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابـى هريـرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تـمسك بسنتـى عند فساد امتـى فله اجر مأة شهيد.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যামানায় আমার একটি সুন্নত মুবারক যে  দৃঢ়তার সাথে আমল করবে তার জন্য একশত শহীদের প্রতিদান রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাতুল মাছাবীহ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন অনুকরন করলেই রহমত প্রাপ্ত হওয়া যাবে। আবার উম্মতের ফেৎনা-ফাসাদের সময় একখানা সুন্নত আকড়ে ধরলে একশত শহীদের ছওয়াব পাওয়া যাবে। এখন উম্মতের ফেৎনা-ফাসাদের সময়টা কখন?

একাদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এক হাজার হিজরীর পর উম্মতের ফেৎনা-ফাসাদের সময় তথা আখেরী যামানা।

অর্থাৎ, আখেরী যামানায় মৃত্যু পর্যন্ত একখানা সুন্নত আকড়ে থাকলে একশত শহীদের ছওয়াব পাওয়া যাবে। সুবহানাল্লাহ!

কুল মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরী ২১)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ-অনুকরণ করা উম্মতের জন্য ফরয। উনাকে যে যত বেশি অনুসরণ অনুকরণ করবে সে ততবেশি ফযীলত ও মর্যাদা হাছিল করবে। ইলিম-আক্বায়িদ, আমল-ইবাদত, মুআমিলাত, মুআশিরাত, দুআ, দুরূদ, তাসবীহ, তাহলীল, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, নিদ্রা-জাগরণ, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে তিনি যা করেছেন, বলেছেন ও অনুমোদন করেছেন তাই সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সমস্ত দুআ মুবারক পড়েছেন, সে সমস্ত দুআ মুবারক পড়াও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত যতো দুআ মুবারক রয়েছে প্রতিটি দুআ মুবারক পাঠে মৃত্যু পর্যন্ত আকড়ে থাকলে একশত শহীদের ছওয়াব লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

 

উম্মে মুহম্মদ

গোড়ান, ঢাকা।

সুওয়াল: নিষ্পাপ শিশু বাচ্চা ইন্তিকালের পর তার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হয়। কারণ তাদের তো কোন গুনাহখতা নেই।

জাওয়াব: সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে সবার জন্য দুআর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে একেক জনের জন্য দুআর পদ্ধতি একেক রকম। যেমন, পিতা-মাতার জন্য এক রকম। মুসলমানদের জন্য এক রকম। অপর দিকে কাফিরদের জন্যও দুআর ব্যবস্থা রয়েছে, তবে সেটা হেদায়েতের জন্য বা হেদায়েত না থাকলে ধ্বংসের জন্য দুআ।

নিষ্পাপ শিশু বাচ্চা ইন্তিকালের পর তার জন্য দুআ করার স্বতন্ত্র দুআর পদ্ধতি রয়েছে। যার বাস্তব প্রমাণ হলো জানাযা নামায। প্রাপ্ত বয়স্কদের জানাযা নামাযে দুআর পদ্ধতি হলো-

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِـحَيّنَا وَمَيّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثٰنَا اَللّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَه مِنَّا فَاَحْيِه عَلَى الْاِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَه مِنَّا فَتَوَفَّه عَلَى الْاِيْـمَانِ بِرَحْـمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرّحِـمِيْنَ.

অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাদের জীবিত, মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট, বড়, পুরুষ এবং মহিলাদেরকে ক্ষমা করুন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন, তাদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর জীবিত রাখুন। আর যারা ইন্তিকাল করবে, তাদেরকে সম্মানিত ঈমান উনার উপর ইন্তিকাল দান করুন আপনার রহমত মুবারক উনার দ্বারা। আয় দয়াময়!

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জানাযা নামাযে দুআর পদ্ধতি হলো-

اَللّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا.

অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! এই সন্তানকে আমাদের জন্য অগ্রগামী, প্রতিদান এবং পুঁজি হিসেবে মনোনীত করুন। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী এবং সুপারিশ কবুলকৃত হিসেবে গ্রহণ করুন।

অর্থাৎ, প্রাপ্ত বয়স্করা ইন্তিকাল করলে তাদের মাগফিরাতের জন্য দুআ করতে হয়। আর শিশুরা ইন্তিকাল করলে তাদেরকে উছিলা বানিয়ে দুআ করতে হয়।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ