সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রুস্তম আলী, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল:  পবিত্র তারাবীহ উনার নামায কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে থাকে, ১২ রাকায়াত। কোন মতটি ছহীহ?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

{দলীলসমূহ:  (১) আবু দাউদ শরীফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা শরীফ, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফ, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী শরীফ, (৪) আল জাওহারুন্নাকী শরীফ, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত শরীফ, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালিবীন ইত্যাদি}

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।

 

মুহম্মদ আকরাম হুসাইন, গাউছিয়া, ঢাকা

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

اِنَّ الْـمُفْتٰـى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

{দলীলসমূহঃ-  (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ ফিরোজ হুসাইন, মীরগঞ্জ, রংপুর

সুওয়াল: মহিলারা তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ আহসান হাবীব, বাগেরহাট

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: “যাকাত” অর্থ বরকত বা বৃদ্ধি, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে।

‘মালী’ তথা মাল-সম্পদে বরকত হবে, বৃদ্ধি হবে, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে।

জিসমানী হচ্ছে তার দৈহিকভাবে বৃদ্ধি হবে, সে সুস্থ থাকবে, সব ধরনের পবিত্রতা হাছিল হবে। কোন বর্ধন তার হারাম দ্বারা হবে না। বরং হালাল দ্বারা হবে।

‘রূহানী’ বৃদ্ধি হচ্ছে তার তাযকিয়া অর্জন হবে, রূহানী যে বাধাসমূহ থাকে তা কেটে যাবে। আর রূহানী পবিত্রতা মানেই হচ্ছে সে কামালিয়াত অর্জন করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে। সুবাহানাল্লাহ!

যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ কারও কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%।  কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমযান মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমযানের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পৌছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর অর্থাৎ ১৪৪২ হিজরীতে ঢাকা শহরে ভালো লাল আটা ৪১.০০ টাকা কেজি। সে হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৬৮.০০ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৪১.০০ টাকা।

প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৪১.০০/১০০০= ০.০৪১ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭x০.০৪১=৬৭.৯৩৭ টাকা অর্থাৎ ৬৮ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ৯৩৩ টাকা তোলা হিসেবে ৪৮,৯৮৩ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ: যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

 

নং জমির বর্ণনা ফল/ফসল উৎপাদনের সময় (মাস/তারিখ) ফল/ফসলের নাম উৎপন্ন

ফল/ফসলের পরিমাণ

উশর বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (১০ ভাগের ১ ভাগ নিছফে-উশর পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (২০ ভাগের ১ ভাগ ফল/ ফসলের বাজার দর (টাকা) উশর-নিছফে উশর বাবদ বিক্রকৃত অর্থ (টাকা)
বাড়ির আঙ্গিনা   আম ৫০০ টি ৫০ টি X ১০ ৫০০
অমুক জমি-১ বিঘা   ধান ১০০ মন X ৫ মন ৮০০ ৪০০০

 

মুহম্মদ রফীকুল ইসলাম, নওগাঁ

সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান কি?

জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اَذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَّعَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَرْجُوْهُ.

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)

 

মুহম্মদ আব্দুল কাদির, পঞ্চগড়

সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِـرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَاتَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

১. যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়। যারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকেও যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।

হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন।  যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦াতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ শেষ নবী স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! এ কারণে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।

এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে, নাঊযুবিল্লাহ যারা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, নাঊযুবিল্লাহ!  যারা বলে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মান নিয়ে নানা কথা বলে, নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! শিশুর মতো নাঊযূবিল্লাহ! এবং পাগলের মতো নাঊযূবিল্লাহ! সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে শরীয়তের ফতওয়া মতে তার ঈমান থাকতে পারে না।

ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ!  কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযূবিল্লাহ! তারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর কিছুই দেয়া যাবে না। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।

এছাড়া আরো যাদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:

১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।

২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-

ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকা-ে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।

৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আক্বীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।

৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৭। দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন সন্তান অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৯। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।

১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।

১২। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের হুকুম অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৩। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।

১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহির্ভুত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

 

মুহম্মদ আলী হায়দার, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: পূর্বের অনাদায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে কি না? হলে কিভাবে প্রদান করতে হবে?

জাওয়াব: অনাদায়ী যাকাত ঋণ স্বরূপ। পবিত্র যাকাত, ফিতরা, ওশর হচ্ছে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয এবং ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করাও ওয়াজিব। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী যাকাত, ফিতরা, ওশর আদায় করতে হবে। তবে কারো পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)।

বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি কারো অতীত যাকাত, ফিতরা, ওশর অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। যার কোন কাফফারা নেই। নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে এই ঋণ তার ওয়ারিছদের উপর বর্তাবে এবং তা ওয়ারিছদের আদায় করতে হবে। যদি পূর্ববর্তী বৎসরগুলিতে যাকাত কত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা না হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান বাজার দরে আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ আল আমীন, কাপাসিয়া, গাজীপুর

সুওয়াল:   পবিত্র যাকাত কখন দেয়া উত্তম?

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার কারণে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তরগুণ বেশি নেকী দান করেন সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। যেমন- এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَقُوْلُ هٰذَا شَهْرُ (رَمَضَانَ) زَكَاتِكُمْ فَمَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ فَلْيُؤَدِّ دَيْنَهٗ حَتّٰـى تَـحْصِلَ اَمْوَالَكُمْ فَتُئَدُّوْنَ مِنْهُ الزَّكَاةَ.

অর্থ: “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস আপনাদের পবিত্র যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে তিনি যেন উনার ঋণ পরিশোধ করেন, যেন সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং আপনারা তা থেকে (সঠিকভাবে) পবিত্র যাকাত প্রদান করতে পারেন।” (মুয়াত্তা শরীফ) উক্ত হাদীছ শরীফখানা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন।

 

মুহম্মদ শরীফুল ইসলাম, মাওয়া, মুন্সীগঞ্জ

 

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

 

মুহম্মদ গোলাম হুসাইন, শাহতলী, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

 

মুহম্মদ ইয়াকুব আলী, মুন্সীগঞ্জ

 

সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না।  (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

 

মুহম্মদ মামুনুর রহমান, কক্সবাজার

 

সুওয়াল:  রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ আনীছুর রহমান, রাজশাহী

 

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

আহমাদ মারগুবা, নূরানীবাদ

 

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

 

মুহম্মদ সাইফুল হাবীব, বগুড়া

 

সুওয়াল: সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফতওয়া দিয়েছে যে, রোযা রেখে করোনার টিকা নেয়া যাবে। তাদের প্রদত্ত ফতওয়াটি শুদ্ধ হয়েছে কি?

জাওয়াব: রোযা রেখে করোনার টিকা নেয়া সংক্রান্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রদত্ত ফতওয়াটি সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী হওয়ার কারণে  কুফরী হয়েছে। এ থেকে সকলকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। মূলত রোযা অবস্থায় করোনা টিকাসহ যেকোন ধরনের ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন গ্রহণে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُـؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ ইয়া’লা শরীফ ৪/৩২৮: হাদীছ শরীফ ৪৬০২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ مِنْ قَوْلِهٖ اِنَّـمَا الْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ وَلَيْسَ مِـمَّا دَخَلَ وَالْفَطْرُ فِى الصَّوْمِ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ ১/১১৬: হাদীছ ৫৬৬, ত্ববারানী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَالْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ শায়বা শরীফ ৩/৩৯: হাদীছ ৯২৯৩, ত্ববারানী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।

আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ইনজেকশনের দ্বারা প্রবেশকৃত ওষুধ পাকস্থলী ও মগজে পৌঁছে থাকে। আর শরীয়তের বিধান হলো, পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে; তা যেভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন।

যেমন এ সম্পর্কে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে উছূল তা হলো, “রোযা অবস্থায় বাহির থেকে যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, যদি তা পাকস্থলী অথবা মগজে প্রবেশ করে, তবে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে”, এই উছূলের উপরেই ফতওয়া এবং অন্যান্য ইমাম মুজতাহিদগণও এ ব্যাপারে একমত যে, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, ওষুধ মগজে অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছেছে, তবে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

আর যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা নেয়া হোক না কেন, সে ওষুধ কিছু সময়ের মধ্যে রক্তস্রোতে মিশে যায়। রক্ত এমন একটি মাধ্যম, যার সাথে সরাসরি শরীরের প্রত্যেকটি কোষ (ঈবষষ) ও কলা (ঞরংংঁব)-এর সংযোগ রয়েছে। ফলে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তের মাধ্যমে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে মগজে পৌঁছে যায়। যার কারণে রোযাদার রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

যেমন- এ সম্পর্কে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাব “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَمَنْ اِحْتَقَنَ ….. اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ.

অর্থ : “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَاِذَ اِحْتَقَنَ ….. اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ.

অর্থ : “যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَمَنْ اِحْتَقَنَ ….. اَفْطَرَ

অর্থ : “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।

আর ফিক্বাহর বিশ্বখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘মাবসূত’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

وَاَبُوْ حَنِيْفَةَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالٰى يَقُوْلُ اَلْـمُفْسِدُ لِلصَّوْمِ وُصُوْلُ الْـمُفْطِرِ اِلٰى بَاطِنِهٖ فَالْعِبْرَةُ لِلْوَاصِلِ لَا لِلْمَسْلَكِ.

অর্থ : “হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো, রোযা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা। সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য, মূল রাস্তা নয়।”

অনুরূপ ফিক্বাহর বিশ্বখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফতহুল ক্বাদীর’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

وَاَبُوْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يُعْتَبَرُ الْوُصُوْلُ

 অর্থ : “হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”

ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা:

সাধারণতঃ ইনজেকশন বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেয়া হয়। এর মধ্যে নিচেরমাধ্যমগুলি উল্লেখযোগ্য-

১. ইন্ট্রাভেনাস (Intravenous) : এ পদ্ধতিতে শিরা (vein)-এর মাধ্যমে রক্তে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে যায়।

২. ইন্ট্রা আরটারিয়াল (Intra areterial)) : এ পদ্ধতিতে ধমনী (ধৎঃবৎু)-এর মাধ্যমে রক্তে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে যায়।

৩. সাবকিউটেনিয়াস (Subcutaneous) : শরীরে ত্বকের এবং মিউকাস মেমব্রেনের এক বা একাধিক স্তরের মধ্য দিয়ে এ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতেও ওষুধ রক্ত স্রোতে মিশে যায়।

৪. ইন্ট্রাডার্মাল (Intradermal) : শরীরে ত্বকের নিচে এ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতেও ওষুধ রক্ত স্রোতে মিশে যায়।

৫. ইন্ট্রামাসকিউলার (Intramuscular) : এ পদ্ধতিতে ওষুধ শরীরের পেশীসমূহের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং কিছু সময় পর ওষুধ রক্ত স্রোতে গিয়ে মিশে।

৬. ইন্ট্রাথিকাল (Intrathecal) : অনেক সময় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System বা CNS)-এ ওষুধ অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে বিলম্বে পৌঁছে, আর সে কারণেই এখন এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে ওষুধ সহজেই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে।

প্রতিভাত হচ্ছে যে, ইনজেকশনের যে কোন পদ্ধতিতেই শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানোর কিছু সময় পরেই রক্ত স্রোতের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে Goodman Gilman Pharmacology -তে বলা হয়েছে-

“Heart, liver, kidney, brain and other highly perfused organs receive most of the drug during the first few minutes after absorption.”

অর্থাৎ ওষুধের শোষণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনী, মগজ এবং অন্যান্য অঙ্গে বেশীরভাগ ওষুধ চলে যায়।

ওষুধ মূলতঃ রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে, কেননা রক্তকে বলা হয় সংযোগ কলা (connective tissue)। রক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়-

“Blood is vehicle for transport of food nutrients oxygen, water and all others essentials to the tissue, cells and their waste products are carried away. It (blood) is a special type of connective tissue.”

অর্থাৎ রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরনের সংযোগ কলা।

সুতরাং রক্তে পৌঁছে ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায়, অর্থাৎ মগজে পৌঁছে।

স্যালাইনের ব্যবহার ও প্রকার:

সাধারণত স্যালাইন ইনজেকশনের ন্যায় শিরা বা ধমনীতে দেয়া হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পায়ুপথ দিয়েও স্যালাইন দেয়া হয়। স্যালাইন যেভাবেই দেয়া হোক না কেন, স্যালাইন দ্বারা প্রবেশকৃত ওষুধ খুব সহজেই রক্তে মিশে যায় এবং দ্রুতগতিতে তা পাকস্থলিতে পৌছে যায়। তাই, যে কোন স্যালাইনের ব্যবহারে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়।

ইনহেলারের ব্যবহার ও প্রকার:

সাধারণতঃ শ্বাস কষ্ট লাঘবে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। যা যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসে ওষুধ দেয়া হয়। সে ওষুধ শ্বাসনালী দ্বারা খুব সহজেই ফুসফুস পর্যন্ত পৌছে যায়। অতপর, ফুসফুস হতে তা রক্তে মিলিত। ইনহেলারের আধুনিক বিভিন্ন রুপ রয়েছে। নেবুলাইজও ইনহেলারের একটি প্রকার। ইনহেলার বা নেবুলাইজ দ্বারা যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তা যেহেতু ফুসফুস হয়ে রক্তে মিশে যায়, সেহেতু ইনহেলার ও এজাতীয় সব ধরণের ওষুধ ব্যবহারে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

ইনসুলিনের ব্যবহার ও প্রকার:

ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় ইনসুলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। বিভিন্ন দেশে ইনহেলারের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়ার প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। তবে আমাদের দেশে চামড়ার নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়ার পদ্ধতি প্রচলিত। চামড়ার নিচে ইনসুলিন সাধারণত দুইভাবে নেওয়া হয়। ইনসুলিন ভায়াল বা শিশি থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে এবং ইনসুলিন পেন বা কলমের মতো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে। ইনসুলিন রক্তের শর্করা বা সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত, ইনসুলিন হলো ইনজেকশনেরই একটি প্রকার। যা খুব সহজেই রক্তে মিশে যায়। তাই, সর্বপ্রকার ইনসুলিন ব্যবহারে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

টিকার ব্যবহার ও প্রকার:

আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগের জন্য নবজাতক হতে শুরু করে সব বয়সী মানুষদেরকে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়। তবে টিকা তিনভাবে প্রয়োগ করা হয়। প্রথমত, ট্যাবলেট বা সিরাপের ন্যায় খাওয়ানো হয়। দ্বিতীয়ত, শিরা বা ধমনীতে ইনজেকশন দ্বারা প্রয়োগ করা হয়। তৃতীয়ত, গোশত পেশিতে ইনজেকশন দ্বারা প্রয়োগ করা হয়। এখন, যে টিকাই নেয়া হোকনা কেন, সেটা সরাসরি রক্তে মিশে যায় অথবা পাকস্থলীতে পৌছে যায়। তাই, সর্বপ্রকার টিকার ব্যবহারে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

উল্লেখ্য যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন পালন করতে গিয়ে আমরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বহু নতুন সমস্যার সম্মুখীন হবো সত্য কথাই, তবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট সকল সমস্যার সমাধানই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে।

মোটকথা ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি শরীরের গোশতপেশিসহ যে কোন স্থানেই দেয়া হোক না কেন তা মগজে পৌঁছে থাকে। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার উছূল হলো- ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

সুতরাং ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক রায় বা ফতওয়া হলো- “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নিলে রোযা অবশ্যই ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ নিশ্চিতভাবে মগজে পৌঁছে থাকে।”

কাজেই, রোযা রেখে ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা নেয়ার পক্ষে যারা বলে তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও মূর্খ হওয়ার কারণে ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা দিয়ে অসুস্থ লোককেও রোযা রাখাতে চায়। যদিও এ তর্জ-তরীকায়  রোযা তো হবেইনা বরং এ সমস্ত লোকগুলি রোযা না রাখার গুণাহে গুণাহগার তো হবেই সাথে সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী আক্বীদা পোষণ করার কারণে কুফরী গুণাহে গুণাহগারও হবে।  এদের সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اُفْتِيَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ اِثْـمُهٗ عَلٰى مَنْ اَفْتَاهُ‏.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তিকে ইলিম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরেও বর্তাবে।” নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল ইলম্ : বাবুত তাওয়াক্বী ফীল ফুতইয়া : হাদীছ শরীফ নং ৩৬৫৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশ্বের সমস্ত মুসলমানকে দ্বীন ইসলাম উনার হাক্বীক্বী বুঝ দান করুন। আর ওলামায়ে ‘সূ’দের প্রদত্ত মনগড়া ও কুফরী ফতওয়া থেকে বেঁচে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার আহকাম’ কিতাবখানা এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১ ও ২২তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ কাউছার মিয়া (কুমিল্লা), মুহম্মদ ফজলুর রহমান (নোয়াখালী)।

 

সুওয়াল: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক-এ  ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করার হুকুম কী? এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক জওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: আল্লামা হযরত আবূ মুহম্মদ মাক্কী ইবনে আবী ত্বালিব হাম্মূশ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুখতার ক্বয়সী ক্বীরওয়ানী আন্দালুসী কুরতুবী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪৩৭ হিজরী) তিনি স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,

لَمَّا نَزَلَ {اِنَّ اللهَ وَمَلٰٓئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِـىِّ} اَتَاهُ الْمُؤْمِنُوْنَ يُهَنِّؤُوْنَهٗ بِذٰلِكَ فَقَالَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقُ الْاَكْبَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هٰذَا لَكَ خَاصَّةٌ فَمَا لَنَا فَاَنْزَلَ اللهُ جَلَّ ذِكْرُهٗ {هُوَ الَّذِىْ يُصَلِّىْ عَلَيْكُمْ وَمَلٰٓئِكَتُهٗ}.

অর্থ: “যখন (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ উনার ৫৬ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ) নাযিল হন-

اِنَّ اللهَ وَمَلٰٓئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِـىِّ

‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পেশ করেন।’ তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এসে সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত অভিন্দন মুবারক জানান। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা আপনার জন্য খাছ। আমাদের জন্য কী রয়েছে? তখন যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন,

هُوَ الَّذِىْ يُصَلِّىْ عَلَيْكُمْ وَمَلٰٓئِكَتُهٗ

‘মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের প্রতি ছলাত পাঠ করেন।’ সুবহানাল্লাহ! {(সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩) আল হিদায়াহ্ ইলা বুলূগিন নিহায়াহ্ ৯/৫৮৪৬}

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَتَاهُ قَوْمٌ بِصَدَقَتِهِمْ قَالَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِمْ وَاَتَاهُ اَبِـىْ بِصَدَقَتِهٖ فَقَالَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى اٰلِ اَبِـىْ اَوْفـٰى.

অর্থ: “যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কোনো গোত্র উনাদের ছদ্ক্বাহ নিয়ে আসতেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِمْ “আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনাদের উপর ছলাত পেশ করুন।’ একবার আমার সম্মানিত পিতা তিনি ছদক্বাহ্ নিয়ে আসলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى اٰلِ اَبِـىْ اَوْفـٰى ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি হযরত আবূ আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং উনার পরিবারের উপর ছলাত পেশ করুন।’ সুবহানাল্লাহ!

(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৪৭৮, আদ্ দু‘আ লিত্ ত্ববারনী ১/৫৫ ইত্যাদি)

হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে মুলক্বিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারাসহ আরো অনেকেই স্বীয় কিতাবে ইজমা’ বর্ণনা করেছেন। উনারা বলেছেন,

اَجْـمَعُوْا عَلَى الصَّلـٰوةِ عَلـٰى نَبِيِّنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَذٰلِكَ اَجْـمَعَ مَنْ يُّعْتَدُّ بِهٖ عَلـٰى جَوَازِهَا وَاسْتِحْبَابِـهَا عَلـٰى سَائِرِ الْاَنْبِيَاءِ وَالْـمَلَائِكَةِ اِسْتِقْلَالًا.

অর্থ: “আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠের ব্যাপারে অর্থাৎ উনাকে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলার বিষয়ে সকলে ইজমা’ করেছেন। অনুরূপভাবে এ বিষয়েও ইজমা’ করেছেন যে, সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ছলাত পাঠ করা অর্থাৎ উনাদের সকলের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা জায়েয ও মুস্তাহাব।” সুবহানাল্লাহ! (আল আযকার লিন নববী ১/১১৮, আল ই’লাম বিফাওয়াইদি উমদাতিল আহ্কাম ৩/৪৭৭, আল হাবাইক ফী আখবারিল মালাইক লিস সুয়ূত্বী ১/৮৪, বাহ্জাতুল মাহাফিল ২/৪১৬ ইত্যাদি)

আল্লামা হযরত ইমাম ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৭৪৩ হিজরী শরীফ) তিনি উল্লেখ করেন,

اَجْـمَعُوْا عَلَى الصَّلـٰوةِ عَلـٰى نَبِيِّنَا وَعَلـٰى سَائِرِ الْاَنْبِيَاءِ وَالْـمَلَائِكَةِ اِسْتِقْلَالًا.

অর্থ: “আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি স্বতন্ত্রভাবে ছলাত পাঠ করা অর্থাৎ উনাদের সকলের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করার বিষয়ে সকলে ইজমা’ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (ফুতূহুল গইব ফিল কাশফি ‘আন ক্বিনাইর রইব লিত ত্বীবী ১২/৪৭৫)

যদি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বাক্য মুবারকখানা ব্যবহার করা জায়েয ও মুস্তাহাব হয়ে থাকে, তাহলে এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয ও মুস্তাহাব তো অবশ্যই; এমনকি বিশেষ ফযীলত লাভের কারণ। সুবহানাল্লাহ! কেননা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন এবং ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমাদের সাথে কারো তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!

তবে উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَّا تَـجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا.

অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকো সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করোনা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩)

অর্থাৎ উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে বলা হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সমস্ত শব্দ মুবারক দ্বারা বা যেভাবে সম্বোধন করা হয়, সে সমস্ত শব্দ মুবারক দ্বারা বা সেভাবে উম্মতদেরকে সম্বোধন না করাই উত্তম।

তবে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একই নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি এবং উনার অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে এবং আহলু বাইত শরীফ হওয়ার কারণে ব্যবহার করতে পারেন। এটা উনাদের ইখতিয়ারও।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা হয়েছে এবং জায়েয রয়েছে। এর বহু প্রমাণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে।

তাই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে উনাদের শান মুবারক-এ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা এবং লিখা হচ্ছে উনাদের শান মুবারক প্রকাশের মাধ্যম।

কারণ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسْعُوْدِۣ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلّٰى صَلٰوةً لَّـمْ يُصَلِّ فِيْهَا عَلَىَّ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْـتِـىْ لَـمْ تُقْبَلْ مِنْهُ.

অর্থ: “হযরত আবূ মাস‘ঊদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি নামায পড়বে, কিন্তু নামাযে আমার এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না, তার নামায কবূল হবে না।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯, সুনানুদ দারাকুত্বনী ২/১৭১, শরহু সুনানি আবী দাঊদ লিল ‘আইনী ৪/২৬৬, আল বাদরুল মুনীর ৪/১৫, নাছবুর রাইয়াহ ১/৪২৭, আদ দিরায়াহ ১/১৫৮ ইত্যাদি)

অতিশীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিতাব মুবারক বের হবে। ইনশাআল্লাহ! (অপেক্ষায় থাকুন…….)

 

মুহম্মদ নূরুন নবী, লালমনিরহাট

 

সুওয়াল: ছবিধারী ইমাম-খতীবের পিছনে নামায পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব: ছবি তোলনেওয়ালা ইমামও খতীবের পিছনে নামায পড়া নাজায়েয ও হারাম। ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী। কারণ এরা যদি ছবি তোলা জায়েজ মনে করে তাহলে তারা মুসলমানই না, এরা কাফির। আর কাফির তো ইমাম ও খতীব হতে পারে না। কারণ হারামকে হালাল জানা কুফরী। অতএব যেসব ইমাম-খতীব নিজ বাড়িতে রঙিন টিভি, ডিস এন্টেনা রাখে, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাহফিলের ভিডিও প্রদর্শন করে এবং উক্ত ভিডিও স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ডিজিটাল পর্দায় মহিলাদের দেখিয়ে থাকে। এ ধরণের ইমাম-খতীবদের মাহফিলে সহায়তা করা, তাদেরকে ইমাম ও খতীব নিযুক্ত করা, তাদের পিছনে নামায আদায় করা, তাদের ওয়াজ শোনা ইত্যাদি কোনটিই সম্মানিত শরীয়তসম্মত নয় বা জায়িয নয়। কারণ এসব ইমাম-খতীবরাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উলামায়ে সূ, দাজ্জালে কাযযাবের অন্তর্র্ভুক্ত। এরা সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক বিরোধী আক্বীদা ও আমলের অধিকারী। এরাই হারামকে হালালকারী। এরাই যখন ছবি তোলে, ছবির সাহায্যে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, ভিডিও করে এবং তা নিজে দেখে ও অন্যদেরকে দেখার কথা বলে তখন সাধারণ মানুষ ছবি, টিভি, ভিডিও ইত্যাদিকে জায়িয মনে করে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ ছবি ও ছবি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রদর্শনী বা প্রচার মাধ্যম সবই হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ

অর্থ: প্রত্যেক ছবি বা প্রতিকৃতি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা বা মূর্তি বানানেওয়ালা জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

اِنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি ছবি বা প্রতিকৃতি তোলে বা আঁকে অথবা মূর্তি তৈরী করে। (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ.

অর্থ: নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ইলিমই হচ্ছেন সম্মানিত দ্বীন। অতএব কার নিকট থেকে তোমরা দ্বীন বা ইলিম গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ যেসব ইমাম-খতীবের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুযায়ী নয় তাকে কখনোই অনুসরণ করা যাবে না, তার ওয়াজ শোনা যাবে না, তাকে ইমাম বানানো বা তার পিছনে নামায পড়া যাবে না।

শুধু তাই নয়, অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فَاِيَّاكُمْ وَاِيَّاهُمْ لَايُضِلُّوْنَكُمْ وَلَايَفْتِنُوْنَكُمْ

অর্থ: তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে না পারে এবং ফিতনায় ফেলতে না পারে অর্থাৎ কুফরী ও হারাম কাজে মশগুল করে জাহান্নামী করতে না পারে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মূলকথা হচ্ছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা সবক্ষেত্রেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ক্ষেত্রেই বৈধ করা হয়নি। তবে দ্বীন ধ্বংসকারী তিন শ্রেণীর লোক অর্থাৎ উলামায়ে ‘সূ’, মুনাফিক ও পথভ্রষ্ট শাসক এদের কারণে মানুষ হারাম কাজ করতে বাধ্য হয়। এজন্য উক্ত তিন শ্রেণীর লোকদেরকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের কারণেই আজ মানুষ ছবি, টিভি, সিনেমা, ভিডিও, নাচ, গান, খেলাধুলা, বেপর্দা, বেহায়াপনা ইত্যাদি হারাম-নাজায়িয কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

যা হারাম তা কখনো হালাল বা বৈধ হয় না। অনুরূপ কোন হালালও কখনো হারাম হয় না। হারামকে হালাল মনে করা এবং হালালকে হারাম মনে করা উভয়ই কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। তাই ছবির ব্যবহার সবসময়ের জন্য ও সবক্ষেত্রেই হারাম। আর মাজূরতা বা অক্ষমতার মাসয়ালা সেটাতো কেবল জান ও মাল হিফাজতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ কারো জীবন রক্ষার জন্য এবং ইজ্জত-আবরু হিফাজতের জন্য হারামটা মুবাহ বলা হয়েছে কিন্তু হালাল বা বৈধ নয়। যেমন কেউ তিনদিন না খাওয়া; এই ব্যক্তি হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলো না তখন তার জন্য মৃত হাস-মুরগী, গরু-ছাগলের গোশত খাওয়াটা মুবাহ বলা হয়েছে জরুরত আন্দাজ। অতিরিক্ত নয়।

স্মরণীয় যে, যারা ছবি তোলে ও তোলার জন্য পরামর্শ দেয় ও বাধ্য করে তারা কখনোই হক্ব হতে পারে না। পীর হোক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব হোক, ইসলামী দল হোক প্রত্যেকের জন্য ছবি তোলা হারাম ও কবীরা গুনাহ। ছবিকে জায়িয বা বৈধ মনে করা কুফরী। এ ধরণের পীর ও ইসলামী নামধারী ব্যক্তি যদি ইমাম ও খতীব হয়, তাহলে তাদের পিছনে নামায পড়া তো পরের বিষয় বরং এদের থেকে দূরে থাকা ফরয।

মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, বরিশাল

সুওয়াল: এমন কোন কথা আছে কি যা বললে মু’মিন ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়?

জাওয়াব: হ্যাঁ, সমাজে এমন কতক বক্তব্য বা কথা প্রচলিত রয়েছে। যে কথাগুলো ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ করলে মু’মিন ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

যেমন- (১) কেউ যদি বলে, খোদাকে ভয় করি না, মানুষকে ভয় করলে কি হবে, এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(২) যদি কেউ বলে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই না, এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৩) কেউ যদি বলে, অমুক ব্যক্তি এতই লম্পট যে, তাকে হিদায়েত  করার সাধ্য খোদারও নেই। তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৪) যদি কেউ বলে, আমি মুসলমান না হয়ে যদি হিন্দু, খৃস্টান অথবা অন্য ধর্মাবলম্বী হতাম, তাহলে বেশ মজা লুটতে পারতাম। এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৫) কেউ যদি বলে, আমি খোদার হুকুমের ধার ধারি না। এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৬) যদি কেউ বলে, আমি খোদার রহমত হতে নিরাশ হয়ে পড়েছি, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৭) যদি কেউ বলে, হালাল পথে থেকে না খেয়ে মরবো কেন? হারাম পথে প্রচুর রোজগার করা যায়। তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৮) কেউ হারাম উপার্জন দান করে ছাওয়াবের আশা করলেও কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(৯) যদি কেউ বলে, তোমার হাতে টাকা নেই এ কথা হযরত জিবরীল ফেরেশতাও যদি বলে তবুও আমি বিশ্বাস করি না। এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১০) কেউ যদি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে মদ পান করে, সুদ-ঘুষের টাকা নেয় ইত্যাদি হারাম কাজ করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১১) কেউ যদি কোন সুন্নত মুবারক উনাকে অপছন্দ বা উপহাস করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১২) কেউ যদি কারো পরিধানে সুন্নতী লেবাস দেখে উনাকে কোনরূপ বিদ্রƒপ ও উপহাস করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৩) কেউ দাড়িওয়ালা লোক দেখে উনার দাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে ‘সাইনবোর্ড’ বলে ঠাট্টা করলে  সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৪) পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ উনাদের কোন বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রƒপ করলেও কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৫) কেউ যদি বলে হে খোদা! তুমি আমার উপর জুলুম করো না। এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৬) নামায পড়া ব্যায়াম ছাড়া আর কি? যে কোন খেলাধুলার  মাধ্যমে ব্যায়াম  করে নিলে, নামায না পড়লেও চলে। এরূপ কেউ  বললে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৭) কেউ যদি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফের আজে বাজে অর্থ  করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৮) দ্বীন ইসলাম পুরুষদের প্রয়োজনে একাধিক বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। কেউ যদি এই ব্যবস্থাকে ঘৃণার চোখে দেখে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(১৯) কেউ যদি কোন সম্মানিত নবী, কোন ছাহাবী কিংবা কোন ওলী উনাদেরকে গালি দেয় তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(২০) কেউ কাউকে বললো, তোমার নখ কাট, ইহা সুন্নত। তদুত্তরে সে বললো, আল্লাহর হুকুমই মানিনা, রসূলের সুন্নত আর কি পালন করবো। এতে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(২১) কেউ বললো, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহারের পর আঙ্গুল মুবারক চেটে খেতেন, একথা শুনে কোন ব্যক্তি যদি বলে, ইহা তো অভদ্রতা, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(২২) কেউ যদি কোন অত্যাচারীকে বলে, আচ্ছা  ক্বিয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তখন অত্যাচার করার মজাটা বুঝতে পারবে। একথার উত্তরে যদি অত্যাচারী ব্যক্তি বলে, ক্বিয়ামত কি কলাটা হইবে? তবে সে কাফির হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

(২৩) পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কতকগুলি আয়াত শরীফ রয়েছে যেগুলো পাঠ করার সময় যের যবর ইত্যাদি ওলট-পালট হয়ে গেলে অর্থও পরিবর্তন হয়ে যায়, যার ফলে তা কুফরী কালামে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে কাফির হতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!

সুতরাং কোন কোন আয়াত শরীফ ভুল পড়ার কারণে কুফরী কালামে পরিণত হওয়ার আশংকা আছে, তা কোন অভিজ্ঞ আলিমের নিকট থেকে জেনে নেয়া কর্তব্য।

অন্যথায় কুফরী কালামের কারণে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কুফরী বক্তব্য ও আমল থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা না করা পর্যন্ত কেউ ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে না।

 

মুহম্মদ হুসাইন আলী, নেত্রকোনা

 

সুওয়াল: কেউ যদি বলে, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম যদি গন্দম না খেতেন তবে আমরা বেহশতেই থাকতাম। আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য তিনিই মূল কারণ। নাউযুবিল্লাহ! এরূপ বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তির ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত নবী ও রসূল, আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শানে উক্তরূপ বক্তব্য সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল। ফলে বক্তব্য প্রদানকারী  ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে।

মূলতঃ হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে পাঠানোর জন্যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বিষয়টি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার  মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّـىْ جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوْاۤ أَتَـجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَـحْنُ نُسَبِّحُ بِـحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ اِنِّـىْۤ أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ.

অর্থ: স্মরণ করুন ঐ সময়ে কথা, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি যমীনে খলীফা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে) প্রেরণ করবো। তখন উনারা বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি কি সেখানে এমন এক সম্প্রদায় প্রেরণ করবেন যারা সেখানে ফিতনা-ফাসাদ করবে, ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং খুনাখুনি-রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরাই তো আপনার প্রশংসা  করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তোমরা তা জান না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করার জন্যই সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে। তবে তরতীব হিসেবে উনাকে সৃষ্টি করে প্রথমে সম্মানিত জান্নাতে অবস্থান করানো হয়। অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ের পর উনাকে যমীনে প্রেরণ করায়।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করবেন এটাই হচ্ছেই মূল বিষয়। তবে যমীনে পাঠানোর জন্য উনার গন্দম খাওয়ার বিষয়টি মূল নয়। জমিনে আসাটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই ফায়ছালাকৃত। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়টি মুসলিম শরীফে  বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কেননা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতিটি  কথা ও কাজ  মুবারক সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কাজেই, এ বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ বা ওহী  মুবারক উনার খিলাফ এবং উনার সম্মানিত রসূল হযরত  আবুল  বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে সুস্পষ্ট কুফরী এবং কাফির হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!

মুহম্মদ বদরুয যামান, কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: কবীর গুনাহ কাকে বলে এবং কবীরা গুনাহগুলো কি জানতে চাই।

জাওয়াব: গুনাহ শব্দের অর্থ পাপ, অপরাধ, অন্যায় ইত্যাদি। যেসব  কাজ করলে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন বা যেসব কাজ উনার অপছন্দনীয় তাই গুনাহ। গুনাহ দুই প্রকার। ছগীরা ও কবীরা।

ছগীরা গুনাহ: যে কাজ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন তবে যার কোন শাস্তি সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নির্ধারিত নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করলে তার জন্যও তাকে শাস্তি দিতে পারেন; সেটাই ছগীরা গুনাহ। মহান আল্লাহ পাক উনার ফরয হুকুমসমূহ পালন করলে এবং অন্যান্য নফল ইবাদতসমূহ করলে তার বরকতে ছগীরা গুণাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।

কবীরা গুনাহ: যে গুনাহর শাস্তি সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নির্ধারিত রয়েছে এবং খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত যে গুনাহ মাফ  হয়না, সেটাকেই কবীরা গুনাহ বলে। কবীরা গুনাহসমূহ অনেক। তবে কিছু  কবীরা গুনাহর বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো-

১। মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অপর কাউকে শরীক বা অংশীদার সাব্যস্ত করা।

২। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ কিছু বলা।

৩। হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাজের বিরূপ সমালোচনা করা।

৪। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিরোধিতা বা সমালোচনা করা।

৫। বিনা ওজরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোন ফরয হুকুম পালন না করা।

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয ও ওয়াজিব নামায তরক করা।

৭। পিতা-মাতা উনাদের প্রতি অসদাচরণ করা, উনাদেরকে গালিজ-গালাজ করা।

৮। অন্যায়ভাবে কাউকে কতল বা হত্যা করা।

৯। আত্মহত্যা করা-তা যে পরিস্থিতিতেই হোক।

১০। ব্যভিচার করা এবং ব্যভিচারের প্রতি অপরকে উৎসাহিত করা।

১১। মদ পান করা। অনুরূপ গাঁজা, আফিম ইত্যাদি মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা।

১২। ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা।

১৩। জুয়া খেলাসহ সকল প্রকার খেলায় অংশগ্রহন করা।

১৪। মাল বিক্রয়কালে ওজনে  কম দেয়া।

১৫। কাউকে কোনভাবে প্রতারণা বা ধোকা দেয়া।

১৬। মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা শপথ করা।

১৭। কারো প্রতি যাদুমন্ত্র-বাণ-টোনা প্রয়োগ করা।

১৮। অন্যের মাল-সম্পদ অপহরণ করা বা চুরি করা।

১৯। জবরদস্তিমূলক কারো বিষয়-সম্পত্তি আত্মসাৎ করা।

২০। সুদ খাওয়া এবং সুদ গ্রহণ করা।

২১। ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা।

২২। গণকবৃত্তি কিংবা অন্য উপায়ে ভবিষ্যৎবাণী করা।

২৩। অন্যায়ভাবে কোন পুরুষ কিংবা কোন মহিলার প্রতি তোহমত দেয়া।

২৪। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।

২৫। মৃত পশু বা মৃত পাখির গোশত ভক্ষণ করা।

২৬। কোন বিষয়ে ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা করে তা ভঙ্গ করা।

২৭।  জিহাদে যোগদান করতঃ জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।

২৮। মুসলমান দেশ এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

২৯। জেনে শুনে সত্যকে গোপন করা।

৩০। মনগড়া তাফসীর করা, মনগড়া হাদীছ বলা, মনগড়া ফতওয়া দেয়া।

৩১। দু’জন বা দু’দলের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া।

৩২। অহংকার করা, আচার-ব্যবহারে উদ্ধত্য প্রকাশ করা।

৩৩। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে  বদরছম-রেওয়াজ প্রচলন ও প্রবর্তন করা।

৩৪। মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্র, তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা।

৩৫। বিধর্মীদের কৃষ্টি-কালচার পালন  করা।

৩৬। ছগীরা গুনাহকে মামুলী মনে করে তা  বার বার করা।

৩৭। জনসাধারণকে অন্যায় ও পাপের পথে আহ্বান ও উৎসাহিত করা।

৩৮। কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে কাফির বলা।

৩৯। মাজুরতা সম্পন্না আহলিয়ার (স্ত্রী) সাথে নির্জনবাস করা।

৪০। পশু-পাখির সাথে ব্যভিচার করা।

৪১। পুরুষের  সাথে পুরুষ এবং মহিলার সাথে  মহিলা ব্যভিচার করা।

৪২। নাচ-গান ইত্যাদির আসরে যোগদান করা।

৪৩। বিধর্মীদের পূজা-পার্বনে যোগদান করা।

৪৪। হক্বদারদেরকে (মহিলাদেরকে) সম্পত্তির অংশ হতে বঞ্চিত করা।

৪৫। মানুষকে দেখানোর জন্য কোন ইবাদত বন্দেগী করা বা নেক কাজ করা।

৪৬। সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ আমল করা।

৪৭। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক হতে নিরাশ হওয়া।

৪৮। কোন মুসলমানের প্রতি হিংসা করা, শত্রুতা পোষণ করা।

৪৯। কোন মুসলমানের গীবত বা পরনিন্দা করা।

৫০। বখিলী বা কৃপণতা করা। ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ জসীমুদ্দীন, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর

সুওয়াল: ঢিলা-কুলুখ সম্পর্কে শরয়ী বিধান ও নিয়ম জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: ঢিলা-কুলখ ব্যবহার করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। কারণ এ ব্যাপারে উদাসীনতার ফলে শরীর ও কাপড় নাপাক থেকে যায় এবং ওজু ও নামাযও বাতিল হয়ে যায়।

শুকনা মাটির টুকরা, পাথর, নতুন বা পুরাতন কাপড়ের টুকরা, তুলা ইত্যাদি দ্বারা কুলুখ নেয়া জায়িয আছে। হাড়, শুকনা চামড়া, কয়লা ইত্যাদি কুলুখরূপে ব্যবহার করা মাকরূহ। কোন খাদ্যদ্রব্য দ্বারা কুলুখ নেয়া নিষিদ্ধ, হারাম।

পুরুষের ছোট ইস্তিঞ্জা একেবারেই সম্পূর্ণ নির্গত হয় না। খানিকটা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় ইস্তিঞ্জা বন্ধ হওয়া মাত্রই অপেক্ষা না করে পানি ব্যবহার করে উঠে গেলে পরে এক-দুই ফোঁটা ইস্তিঞ্জা বের হয়ে শরীরে ও কাপড়ে লেগে যেতে পারে। এজন্য ইস্তিঞ্জা বন্ধ হয়ে গেলে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে উঠা-বসা করলে, দুই-এক বার কাশি অথবা গলা খাঁকার দিলে এবং তলপেটে একটু ঝাঁকানী দিলে ইস্তিঞ্জার ফোঁটা নিঃশেষে বের হয়ে আসে। তারপর পানি ব্যবহার বা খরচ করলে কোন আশংকা থাকে না।

আর বড় ইস্তিঞ্জা করার পর যে কয়টি কুলুখ ব্যবহার করলে ইস্তিঞ্জা পরিস্কার হয়ে যায় সেই কয়টি ব্যবহার করতে হবে। সাধারণতঃ তিনটি কুলুখ ঠিকমত ব্যবহার করলে ইস্তিঞ্জা অবশিষ্ট থাকতে পারে না। তাই তিনটি কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নত সাব্যস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, পুরুষেরা শীতের মৌসুমে প্রথম কুলুখ পিছন দিক হতে সামনের দিকে, দ্বিতীয় কুলুখ সামনের দিক হতে পিছনের দিকে এবং তৃতীয় কুলুখ পুনরায় পিছন দিক হতে সামনের দিকে টানবে। গরমের মৌসুমে এই নিয়মের বিপরীত করবে অর্থাৎ প্রথমটি সামনের দিক হতে পিছনের দিকে, দ্বিতীয়টি পিছন দিক হতে সামনের দিকে এবং তৃতীয়টি প্রথমটির মতো সামনের দিক হতে পিছনের দিকে টানবে। আর মহিলারা সকল মৌসুমেই প্রথম ও তৃতীয় কুলুখ সামনের দিক হতে পিছনের দিকে এবং দ্বিতীয়টি পিছন দিক হতে সামনের দিকে টানবে। কুলুখ ব্যবহারের ফলে ইস্তিঞ্জা পরিস্কার হওয়ার পরই পানি ব্যবহার করা উত্তম।

আরো উল্লেখ্য, ইস্তিঞ্জাখানায় বসার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দাঁড়ানো থেকে বসার কাছাকাছি হয়ে তারপর সতর অনাবৃত করবে এবং বাম পায়ের উপর খানিকটা বেশি ভর দিয়ে বসলে তাড়াতাড়ি এবং ভালভাবে কোষ্ঠ পরিস্কার হয়।

ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশের দোয়া: ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশের পূর্বে মাথায় কাপড় দিতে হয় এবং বাম পা দিয়ে ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশের সময় এই দোয়া পড়তে হয়ে-

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْـخُبُثِ وَالْـخَبَائِثِ

উচ্চারণ : আলাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।

অর্থ : “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার নিকট অপবিত্রতা ও নাপাক বস্তু এবং জিন শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

ইস্তিঞ্জাখানা হতে বের হওয়ার দোয়া: ডান পা দিয়ে ইস্তিঞ্জাখানা হতে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পড়তে হয়-

غُفْرَانَكَ اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْۤ اَذْهَبَ عَنِّىْ الْاَذٰى وَعٰفَانِىْ

উচ্চারণ : গুফরানাকা আল হামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আননিল আযা ওয়া আফানী।

অর্থ : “আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করেছেন এবং প্রশান্তি দান করেছেন।”

 

মুহম্মদ ফযলে রাব্বী, নূরানীগঞ্জ

সুওয়াল: জামায়াতে নামায আদায় করার গুরুত্ব কতটুকু?

জাওয়াব: সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রত্যেক আক্বেল, বালেগ, সুস্থ পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা জামায়াত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

مَنْ سَـمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَاْتِ فَلَا صَلَاةَ لَهٗ اِلَّا مِنْ عُذْرٍ وَفِىْ رِوَاَيَةٍ عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَقَدْ هَـمَمْتُ اَنْ اٰمُرَ فَتِيَّتِىْ اَنْ يَّـجْمَعُوْا حَزْمَ الْـحَطَبِ ثُـمَّ اٰمُرُ بِالصَّلَاةِ فَتَقَامُ ثُـمَّ اُحْرِقُ عَلٰى اَقْوَامٍ لَا يَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ

অর্থ : “যারা আযান শুনল, কিন্তু মসজিদে জামায়াতে আসলো না, তাদের নামায হবে না। তবে শরয়ী ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। অন্য বর্ণনায় হযরত আবূ হুরায়রায় রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার ইচ্ছা হয়, আমার যুবক শ্রেণীদেরকে আদেশ দেই, যেন তারা আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করে এবং নামায আদায় করার নির্দেশ দেই, আর জামায়াত শুরু হয়ে গেলে যারা মসজিদে জামায়াতে নামায পড়তে উপস্থিত হবে না, তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেই।” (তিরমিযীর হাশিয়া উরফুশ শাযী : ১/৫২, হাদীছ শরীফ নং ২১৭)

ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং ছহীহ বলেছেন। তিনি আরও বলেন, “অগণিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের থেকে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, যারা ওযর ব্যতীত আযানের পরে জামায়াতে শরীক হবে না, তাদের নামায হবে না।”

এ প্রসঙ্গে ‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَافِظُوْا عَلٰى هٰؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْـخَمْسِ حَيْثُ يُنَادٰى بِـهِنَّ فَاِنَّـهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْـهُدٰى وَاِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْـهُدٰى وَلَقَدْ رَايْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا اِلَّا مُنَافِقٌ بَيِّنُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ رَاَيْتُنَا وَاَنَّ الرَّجُلَ لَيُهَادٰى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتّٰى يُقَامَ فِى الصَّفِّ وَمَا مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ اِلَّا وَلَهٗ مَسْجِدٌ فِىْ بَيْتِهٖ وَلَوْ صَلَّيْتُمْ فِىْ بُيُوْتِكُمْ وَتَرَكْتُمْ مَسَاجِدَكُمْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُـمْ.وَفِىْ رِوَايَةِ مُسْلِمٍ لَضَلَلْتُمْ.

অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে আযানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা‘আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (মসজিদে) যেতেন এবং উনাকে (সম্মানিত ছলাত উনার) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (সম্মানিত ছলাত উনার স্থান) নেই। এতদসত্ত্বেও তোমরা যদি মসজিদে আসা বন্ধ করে দিয়ে তোমাদের ঘরেই (ফরয) ছলাত আদায় কর, তাহলে তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক বর্জন করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক পরিত্যাগ করো, তথা তোমরা যদি মসজিদে আসা বন্ধ করো- তাহলে অবশ্যই তোমরা সুস্পষ্ট কুফরী করলে, তথা তোমরা কাফির/গুমরাহ হয়ে গেলে। নাউযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ)

‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, মসজিদে আসা বন্ধ করলে ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ বা গোমরাহ হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, যে ব্যক্তি দিনে রোযা রাখে ও রাত্রিতে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামায়াত ও পবিত্র জুমুয়ায় উপস্থিত হয় না। তার উত্তরে তিনি বলেছেন যে, উক্ত ব্যক্তি দোযখে তথা জাহান্নামে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

তাই ফিক্বাহর কিতাব “জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اَلْـجَمَاعَةُ سُنَّةٌ مُّؤَكَّدَةٌ اَىْ قَرِيْبَةٌ مِّنَ الْوَاجِبِ.

অর্থ : “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”

উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, শরয়ী ওজর ব্যতীত জামায়াত তরক করা কবীরা গোনাহ ও কুফরী।

 

মুহম্মদ জুনাইদ হুসাইন, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি মসজিদে নামায আদায়ের আহকাম সম্পর্কে  জানিয়ে বাধিত করবেন

জাওয়াব: সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি মসজিদে মুছল্লীদের ছবি উঠানো হয় বা তোলা হয়। সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে মানুষ কিংবা কোন প্রাণীর ছবি তোলা বা উঠানো হারাম এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই যেসব মসজিদে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভির সাহায্যে মুছল্লীদের ছবি উঠানো হয় সেসব মসজিদে নামায পড়া তো পরের বিষয় বরং সেখানে যাওয়াই জায়িয নেই। কাট্টা হারাম।

 

মুহম্মদ খুবাইব আহমদ, শহীদবাগ, ঢাকা

 

সুওয়াল: মাস্ক পরিধান করে নামায আদায় করার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা কি?

জাওয়াব: সাধারণভাবে মাস্ক পরিধান করে নাক-মুখ ঢেকে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব। অন্যথায় নামায তরক করার গুনাহে গুনাহগার হতে হবে। আর করোনা কিংবা অন্য কোন রোগ-ব্যাধিকে ছোঁয়াচে মনে করে অথবা বিধর্মীদের অনুকরণে মাস্ক পরিধান করে নাক-মুখ ঢেকে নামায আদায় করলে হারাম ও কুফরী হবে। আর কুফরী থেকে খালিছভাবে তওবা না করা পর্যন্ত তার কোন ইবাদত-বন্দেগী কবুল হবে না।

 

মুহম্মদ মাহমুদ হুসাইন, গোড়ান, ঢাকা

সুওয়াল: চেয়ারে বা টুলে বসে নামায পড়া সম্পর্কে শরীয়তের মাসয়ালা কি?

জাওয়াব: অসুস্থতার অজুহাতে চেয়ারে বা টুলে বসে নামায আদায় করা মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহানতম আদর্শ ও সুন্নাহ মুবারক উনার পরিপন্থি এবং বিদআতে সাইয়্যিয়াহ’র অন্তর্ভুক্ত। আর ইহুদী-নাছারাদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে তা কুফরীর শামিল। তাই যে বা যারা চেয়ারে অথবা টুলে বসে নামায আদায় করবে তাদের কারো নামায শুদ্ধ হবে না। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৮০তম সংখ্যা)

মুহম্মদ আলম, বেলাবো, নূরানীবাদ

সুওয়াল: মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বিরোধী ইমামের পিছনে নামায পড়া যাবে কি না?

জাওয়াব: মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বিরোধী ইমামের পিছনে কোন নামাযই হবে না। তা পাঞ্জেগানা হোক কিংবা জুমুআ ও ঈদের নামায হোক। সাধারণভাবে পুরুষরা পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমুআর নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পড়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যিনি মসজিদের ইমাম থাকবেন উনার আক্বীদা ও আমল উভয়ই অবশ্যই শুদ্ধ হতে হবে। অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী হতে হবে। আর সম্মানিত শরীয়ত ও সুন্নত অনুযায়ী আমলের অনুসারী হতে হবে। যে ব্যক্তির আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী হবে না, সে ঈমানদার নয়। অথচ ইমাম হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ থাকা। অতঃপর ইমাম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, ইমাম ফাসিক না হওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তির আমল সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ সে ফাসিক। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, ফাসিকের পিছনে নামায পড়লে উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার উদ্দেশ্যেই মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করা হয়।

কাজেই, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার বিরোধিতা মানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বিরোধিতা করা। নাউযুবিল্লাহ! যা কাট্টা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেও উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেন এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করার জন্য বান্দা-বান্দীদেরকেও আদেশ মুবারক করেন।

যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَآ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ছলাত পাঠ করেন বা ছানা-ছিফত মুবারক করেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। হে ঈমানদারগণ! উনার প্রতি আপনারাও ছলাত পাঠ করুন বা ছানা-ছিফত মুবারক করুন এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম মুবারক পেশ করুন অর্থাৎ দাঁড়িয়ে আদবের সাথে সালাম মুবারক পেশ করুন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অপর এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

تُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো এবং উনাকে সম্মান মুবারক করো এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সর্বদা বা দায়িমীভাবে। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

কাজেই, যেসব খতীব ও ইমাম পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার বিরোধিতা করে থাকে, মু’মিন-মুসলমান ও মুছল্লীদের অধিকার বলে হক্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও নাহক্ব বা অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রথমে উক্ত ইমাম-খতীবকেই বলতে হবে যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বিরুদ্ধে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করতে হবে। তারপরও যদি বিরুদ্ধে বলে, তখন তাদের কাছে দলীল চাইতে হবে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন্ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কিংবা কোন্ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়াকে নিষেধ করা হয়েছে এমন কোন দলীল পেশ করুন। তারা কখনোই কোন দলীল দেখাতে সক্ষম হবে না। কারন এমন কোন পবিত্র আয়াত শরীফ কিংবা এমন কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ নেই, যেখানে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বরং পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার পক্ষেই বহু আয়াত শরীফ ও বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ইমাম-খতীবকে বলার পরও তারা যদি সংশোধন না হয় তাহলে মসজিদের মুতাওয়াল্লী, সভাপতি, সেক্রেটারী ও সদস্যদেরকে বুঝিয়ে ইমাম-খতীবকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে পবিত্র মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ বিরোধী ইমাম-খতীবকে অপসারণ করতে হবে। যথাসাধ্য চেষ্টা-কোশেশ করার পরও যদি উক্ত ইমাম-খতীবদেরকে সরানো না যায় তাহলে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পক্ষের লোকজনকে নিয়ে আলাদা মসজিদ তৈরি করে সেখানে জামায়াতে নামায পড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাৎক্ষনিকভাবে মসজিদ তৈরী করা সম্ভব না হলে কোশেশ অব্যাহত রেখে পার্শ্ববর্তী অথবা দূরবর্তী কোন মসজিদে গিয়ে জুমুআর নামায আদায় করে আসতে হবে, যে মসজিদের খতীব পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করেন। তথাপি পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বিরোধী ইমাম-খতীবের পিছনে নামায পড়া জায়িয হবে না।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ