সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ


মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

মুহম্মদপুর, ঢাকা

সুওয়াল: মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্ত কিছু কুদরতীভাবে সৃষ্টি করা হয়। এ সম্পর্কে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত দীর্ঘ মশহূর হাদীছ শরীফখানা যা মুছান্নাফ বা মুসনাদে আব্দির রযযাক্ব কিতাবে উল্লেখ আছে বলে দলীল পেশ করা হয়; এছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা আরো অনেক নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত অনেক কিতাবের মধ্যে শাব্দিক সামান্য তারতম্যে উল্লেখ রয়েছে। ইহা আমরা শুনেছি ও জেনেছি। কিন্তু কেউ কেউ উক্ত মুছান্নাফ বা মুসনাদে আব্দির রযযাক্ব কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ নেই বলে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা অস্বীকার করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحافظون

অর্থ: নিশ্চয়ই আমিই এই কিতাব অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফাযতকারী। (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তথাপি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সাথে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিষয়টিও শামিল বা সম্পৃক্ত রয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব ও ছহীফাসমূহের হিফাযতের যিম্মাদারী স্ব স্ব হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং উনাদের উম্মতের উপর ছিল। কিন্তু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিদায়ের পর উনাদের উম্মতরা তা বিকৃত করে ফেলে। নাউযুবিল্লাহ!

কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফাযতের জিম্মদারী মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং গ্রহন করার ফলে পবিত্র কুরআন শরীফ আজ পর্যন্ত  কেউ কোনরূপ পরিবর্তন করতে পারেনি এবং কখনোই তা পারবে না। তবে মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাফির ও মুনাফিকগোষ্ঠী পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى حضرت عمر الفاروق عليه السلام هل تعرف ما يهدم الاسلام قال قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الائمة المضلين

অর্থ: তাবিয়ী হযরত যিয়াদ ইবনে হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদা আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম  তিনি আমাকে বললেন, আপনি  বলতে পারেন কি, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে কিসে ক্ষতি করবে? হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, আলিমদের পদস্খলন, মুনাফিকদের কিতাব সম্পর্কে বিতর্ক বা বিকৃতিসাধন এবং গোমরাহ শাসকদের সম্মানিত শরীয়তবিরোধী আদেশ নির্দেশ। (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, মুসলমান নামধারী তিন শ্রেণীর লোকদের দ্বারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতি হবে। ১. উলামায়ে সূ অর্থাৎ আলিম নামধারী যেসব লোক মনগড়া আমল করে এবং মনগড়া ফতওয়া প্রদান করে। ২. মুসলমান ছূরতে মুনাফিকদের তর্ক-বিতর্ক সম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফ সম্পর্কে। অর্থাৎ শিয়া ইত্যাদি ৭২টি বাতিল ফিরক্বাসহ কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি ফিরক্বা। ৩. গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট শাসকগোষ্ঠী, যারা ক্ষমতার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে নিজেদের নফসানিয়াতের কারণে অথবা কাফির-মুশরিকদের প্রলোভনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আদেশ নির্দেশ জারী করে। নাউযুবিল্লাহ!

উক্ত তিন শ্রেণীর প্রত্যেকেই জাহান্নামী এবং তারা জাহান্নামের কঠিন আযাব গযবে গ্রেফতার হবে। নাউযুবিল্লাহ!

উক্ত জাহান্নামী ও বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত মুসলমান নামধারী মুনাফিক শ্রেণীর লোকেরাই দীর্ঘ দিন ধরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে জাল ও জয়ীফের প্রচারণা চালিয়ে মুসলমানদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছে। এতেও তারা যখন সন্তুষ্ট হতে পারেনি অর্থাৎ তারা যখন তাদের প্রচারণার সঠিক ও যথার্থ জাওয়াব পেয়েছে যে,  পবিত্র হাদীছ শরীফ যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেন তা কখনোই জাল বা জয়ীফ হতে পারে না।

তখন তারা কিতাবের মধ্য থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ কাট-ছাট শুরু করে দিয়েছে এমনকি তারা কিতাবের বাব বা অধ্যায়-পরিচ্ছেদ পর্যন্ত বাদ দেয়ার পাশাপাশি পবিত্র হাদীছ শরীফ গোপন করার চক্রান্ত করছে। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারকের কাছে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র অতি তুচ্ছ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন বিষয় প্রকাশ করতে চাইলে ষড়যন্ত্রকারীর কোন ষড়যন্ত্রই তা গোপন করে রাখতে পারে না। যার বহু প্রমাণের মধ্যে একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে ‘মুছান্নাফে আব্দির রযযাক্ব’ কিতাবে নূর সম্পর্কিত হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা। সুবহানাল্লাহ!

মুনাফিকগোষ্ঠীরা নূর সম্পর্কিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানাই যে গোপন করার চক্রান্ত করেছে তা নয় বরং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা যে বাব বা পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে উক্ত পুরো পরিচ্ছেদটি এবং তার মধ্যে বর্ণিত সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং আরো কিছু পরিচ্ছেদ বাদ দিয়ে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে মুছান্নাফে আব্দির রযযাক্ব কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা যে পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে উক্ত পরিচ্ছেদটি উল্লেখপূর্বক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হুবহু প্রকাশ করা হলো।

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা

كتاب الايمان

‘কিতাবুল ঈমান’ অর্থাৎ ঈমান অধ্যায়ে

باب فى تخليق نور محمد صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে বর্ণিত ১৮ নাম্বার পবিত্র হাদীছ শরীফ। হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-

عن حضرت عبد الرزاق رحمة الله عليه عن حضرت معمر رحمة الله عليه عن حضرت ابن الـمنكدر رحمة الله عليه عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال: سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اول شىء خلقه الله تعالى؟ فقال: هو نور نبيك صلى الله عليه وسلم يا حضرت جابر رضى الله تعالى عنه خلق الله، ثم خلق فيه كل خير، وخلق بعده كل شىء، وحين خلقه اقامه قدامه من مقام

القرب اثنى عشر الف سنة، ثم جعله اربعة اقسام فخلق العرش والكرسى من قسم: وحملة العرش وخزنة الكرسى من قسم، واقام القسم الرابع فى مقام الحب اثنى عشر ألف، ثم جعله اربعة اقسام فخلق القلم من قسم، واللوح من قسم، والجنة من قسم،

অর্থ: ‘হযরত ‘আব্দুর রায্যাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি মুহম্মদ ইবনে মুনকাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? জাওয়াবে নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আপনার যিনি নবী-রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর উনার মধ্যে সমস্ত কল্যাণ বা ভালাই মুবারক সৃষ্টি করেছেন। উনার পরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে উনার সম্মুখে মাক্বামে কুরব্ মুবারক তথা অতি নিকটে ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে ‘সম্মানিত আরশ মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত কুরসী মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত আরশ মুবারক বহনকারীগণ উনাদেরকে এবং সম্মানিত কুরসী মুবারক তত্বাবধানকারীগণ উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে মাক্বামে হুব্ব তথা সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! তারপর উক্ত সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের একভাগ দিয়ে সম্মানিত ক্বলম মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মনিত লাওহ মুবারক এবং আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত জান্নাত মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ!

ثم اقام القسم الرابع فى مقام الخوف اثنى عشر الف سنة جعله اربعة اجزاء فخلق الـملائكة من جزء، والشمس من حزء، والقمر والكوكب من جزء، واقام الجزء الرابع فى مقام الرجاء اثنى عشر الف سنة، ثم جعله اربعة اجزاء فخلق العقل من جزء والعلم والحكمة والعصمة والتوفيق من جزء واقام الجزء الرابع فى مقام الحياء اثنى عشر الف سنة ثم نظر الله عز وجل اليه فترشح النور عرقا فقطر منه مائة الف واربعة. (وعشرين الف واربعة آلاف) قطرة من نور، فخلق الله من كل قطرة روح نبى عليهم السلام، او روح رسول عليهم السلام ثم تنفست ارواح الانبياء عليهم السلام فخلق الله من انفاسهم الاولياء والشهداء والسعداء والمطيعين الى يوم القيامة، فالعرش والكرسى من نورى والكروبيون من نورى والروحانيون والـملائكة من نورى  والجنة وما فيها من النعيم من نورى، وملائكة السموات السبع من نورى،  والشمس والقمر والكواكب من نورى، والعقل والتوفيق من نورى، وارواح الرسل والأنبياء عليهم السلام من نورى، والشهداء والسعداء والصالحون من نتاج نورى،

অর্থ: তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে খওফ মুবারক উনার মধ্যে ১২ হাজার বছর রাখেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর উনাকে চার ভাগে ভাগ করেন। উনার এক ভাগ দিয়ে সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, আরেক ভাগ দিয়ে সূর্য এবং আরেক ভাগ দিয়ে চন্দ্র ও তারকারাজী সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আবার সম্মানিত চতুর্থ ভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে রজা’ তথা প্রত্যাশার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে চারভাগে ভাগ করেন। উক্ত চার ভাগের একভাগ দিয়ে সম্মানিত আক্বল মুবারক, আরেক ভাগ দিয়ে সম্মানিত ইলম মুবারক এবং আরেকভাগ দিয়ে সম্মানিত হিকমত মুবারক, সম্মানিত সততা বা সম্মান মুবারক ও সম্মানিত তাওফীক্ব মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সম্মানিত চতুর্থভাগ নূর মুবারক উনাকে সম্মানিত মাক্বামে হায়া তথা সম্মানিত লজ্জাশীলতা উনার মাক্বাম মুবারক-এ ১২ হাজার বছর অবস্থান করান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত বিশেষ দৃষ্টি মুবারক উনার কারণে উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে সম্মানিত নূর মুবারক বের হতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার সম্মানিত নূর মুবারক উনার ফোঁটা বা বিন্দু মুবারক বের হলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত প্রত্যেক সম্মানিত নূর মুবারক উনার ফোঁটা মুবারক থেকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক শ্বাস মুবারক গ্রহন করেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্বাস মুবারক থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতো হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, শহীদ, সৌভাগ্যশীল এবং আনুগত্যশীল বান্দা-বান্দী আসবেন উনাদের প্রত্যেকের সম্মানিত রূহ মুবারক সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) এমনকি, সম্মানিত আরশ মুবারক এবং সম্মানিত কুরসী মুবারকও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া নৈকট্যপ্রাপ্তগণ উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, পবিত্র আত্মার অধিকারীগণ উনারা এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলে আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত জান্নাত এবং উনার মধ্যে অবস্থিত সমস্ত নিয়ামত মুবারকও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সাত আসমানে অবস্থানরত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে  সৃষ্টি। আর সৃষ্টি সূর্য ও চন্দ্র এবং তারকাসমূহও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত আক্বল বা বিবেক মুবারক এবং তাওফীক্ব বা সামর্থ্য মুবারক পর্যন্ত আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রূহ মুবারক  উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! এবং সকল শহীদ, সৌভাগ্যশীল ও ছালিহীন তথা সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও আমার সম্মানিত নূর মুবারক উনারই ফসল তথা উনারাও সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ!

 ثم خلق الله اثنى عشر الف حجاب فاقام الله نورى وهو الجزء الرابع، فى كل حجاب الف سنة، وهى مقامات العبودية والسكينة والصبر والصدق واليقين، فغمس الله ذلك النور فى كل حجاب الف سنة فلما اخرج الله النور من الحجاب ركبه الله فى الارض فكان يضىء منها ما بين الـمشرق والـمغرب كالسراج فى الليل الـمظلم، ثم خلق الله حضرت أدم عليه السلام من الارض فركب فيه النور فى جبينه، ثم انتقل منه الى حضرت شيث عليه السلام، وكان ينتقل من طاهر الى طيب، ومن طيب الى طاهر، الى ان اوصله الله صلب حضرت عبد الله ذبيح الله عليه السلام بن حضرت عبد الـمطلب عليه السلام، ومنه الى رحم امى حضرت آمنة عليها السلام بنت حضرت وهب عليه السلام، ثم اخرجنى الى الدنيا فجعلنى سيد الـمرسلين وخاتم النبيين ورحمة للعالـمين وقائد الغر الـمحجلين وهكذا كان بدء خلق نبيك صلى الله عليه وسلم يا حضرت جابر رضى الله تعالى عنه.

অর্থ: অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ১২ হাজার সম্মানিত হিজাব মুবারক সৃষ্টি করেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে হিজাবে আযমত উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক-এ অবস্থান করান, অতঃপর সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব মুবারক উনার মধ্যে এক হাজার বছর করে রাখেন। সুবহানাল্লহ! আর উক্ত হিজাব মুবারক হচ্ছে, সম্মানিত উবূদিয়্যাহ (বন্দেগী মুবারক), সাকীনা (প্রশান্তি মুবারক), ছবর (ধৈর্য্য মুবারক), ছিদক্ব (সততা মুবারক) এবং ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস মুবারক) উনাদের মাক্বাম বা অবস্থান স্থল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে প্রত্যেক হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার মধ্যে এক হাজার বছর করে আচ্ছাদিত করে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন সম্মানিত হিজাব তথা পর্দা মুবারক উনার ভিতর থেকে সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে বের করে পৃথিবীতে সফর করালেন অর্থাৎ প্রেরণ করলেন তখন উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক-এ পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম এবং তন্মধ্যস্থিত যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো যেরূপ অন্ধকার রাতকে বাতি আলোকিত করে থাকে। সুবহানাল্লাহ! তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক উনার মাঝে সেই সম্মানিত নূর মুবারক উনাকে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হলেন। অতঃপর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক পবিত্র ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হলেন। অতঃপর উনার থেকে আমার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম বিনতে হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমাকে দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ভূষিত করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন এবং অতি উজ্জ্বল অর্থাৎ মনোনীত ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের ক্বায়িদ হিসেবে। এই হচ্ছে আপনার নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক উনার সূচনা বা উৎস হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! (মুছান্নাফে আব্দুর রযযাক্ব: হাদীছ শরীফ: ১৮, আল জুযউল মাফক্বূদ মিনাল জুযয়িল আউওয়াল মিনাল মুছান্নিছ লিহাফিযিল কাবীর আবী বকর আব্দির রযযাক্ব আছ ছন‘আনী ৬৩ পৃ.)

উল্লেখ্য, উক্ত নূর মুবারক সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মরফূ মুত্তাছিল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণিত হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একনিষ্ঠ খাদিম এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ৬ষ্ঠ ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা প্রথম সংকলন করেছেন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদের উস্তাদ অর্থাৎ দাদা ওস্তাদ বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ হাফিজ হযরত ইমাম আব্দুর রজ্জাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনার ‘মুছান্নাফ’ ও ‘জান্নাতুল খুলদ’ নামক কিতাবে। পরবর্তীতে উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ অনেকে নিজ নিজ কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সঙ্কলন করেছেন। যেমন হযরত ইমাম কুসতালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার রচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জীবনীগ্রন্থ “মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াহ” কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সংকলন করেছেন। হযরত আল্লামা ইউসুফ নাবেহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার রচিত “আনওয়ারে মুহম্মদিয়া” নামক কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ হযরত আবু নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার রচিত “দালায়িলুন নুবুওয়াত” কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত “মাদারিজুন নুবুওওয়াত” কিতাবেও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ আছে। এমনিভাবে আরো অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনারা উনাদের নিজ নিজ রচিত কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন।

 (দলীলসমূহ: মুছান্নাফে আব্দুর রযযাক, জান্নাতুল খুলদ লি আব্দির রযযাক্ব, তাবরিয়াতুয যিম্মাহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, আফজালুল কুরা, মাতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, আল মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, আনওয়ারে মুহম্মদিয়া, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ, নশরুত তীব  ইত্যাদি।)

 

মুহম্মদ মনসুর

ফেনী

 

সুওয়াল: ২৮শে মার্চ ২০১৫ ঈসায়ী দৈনিক কালের কণ্ঠ উপসম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, সববিষয়ে নবীদেরও নিরংকুশ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। নাউযুবিল্লাহ!

ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উক্ত লেখাটি শুদ্ধ হয়েছে কিনা? জানতে চাই।

জাওয়াব: দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার উক্ত লেখাটি মোটেই শুদ্ধ হয়নি। বরং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহানতম শান মুবারক উনার বিরোধী হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অবশ্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম হিসেবে নিরংকুশ ক্ষমতা দিয়েছেন। প্রথম দলীল হচ্ছেন পবিত্র কালিমা শরীফ। কারণ শুধুমাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পর্যন্ত মানলে ও স্বীকার করলে কোন বান্দা বান্দী কস্মিনকালে ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না মানবে ও স্বীকার করবে। নি¤েœ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে দলীল পেশ  করা হলো। প্রয়োজনে আরো বিস্তারিতভাবে ফতওয়া দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

স্মরণীয়, হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যা ফায়সালা করেছেন অর্থাৎ যা বলেছেন, করেছেন এবং সম্মতি দিয়েছেন অর্থাৎ যত হুকুম মুবারক করেছেন সবটাই যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নিজের হুকুম মুবারক হিসেবে গ্রহন করেছেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র কিতাব কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিয়েছেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وما كان لـمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.

অর্থঃ “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ফায়ছালা মুবারক করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করা বা নিজস্ব মত পেশ করা। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী করবে সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহ হবে।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

শুধু এতটুকুই নয় বরং উনাদেরকে সর্ববিষয়ে ইত্তিবা করলেই তিনি সে বান্দা ও বান্দীকে, বান্দা-বান্দী হিসেবে কবুল করবেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করে থাক বা উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আমাকে অনুসরণ করলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহকে ক্ষমা করে দিবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু হবেন।

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিরংকুশভাবে না মানলে বান্দা বান্দী হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لايجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما.

অর্থ: “আপনার মহান রব তায়ালা, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহিরী এবং বাতিনী প্রত্যেক বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সে বিষয়ে চু চেরা, ক্বীল ক্বাল থাকবে। এবং (বাহ্যিক-আভ্যন্তরীন) উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নেয়ার মতো মেনে না নিবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, এক ব্যক্তি ছিল, তার নাম ছিল বিশর। সে মুসলমান দাবি করতো, হাক্বীক্বত সে ছিল মুনাফিক। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর গন্ডগোল হয়ে যায়। যখন গন্ডগোল হয়ে গেল, তখন মুনাফিক বিশরকে ইহুদী বললো, হে বিশর এটার বিচার বা ফায়ছালা করতে হবে। কে বিচার করবেন? ইহুদী বললো, তোমাদের যিনি নবী ও রসূল, যিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন। মুনাফিক বিশর মনে মনে চিন্তা করলো, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি বিচার করেন, উনি তো হক্ব বিচার করবেন, যেহেতু বিশর না হক্ব, ইহুদীর পক্ষে রায় চলে যাবে। তখন মুনাফিক বিশর বললো যে, কেন, তোমাদের যে বিচারক, কা’ব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে ইহুদী রয়েছে তাদের কাছে চলো বিচারের জন্য। কিন্তু ইহুদী ব্যক্তি জানতো যে, কা’ব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে যদি বিচার করে, তাহলে তারা মুনাফিকী করবে, হেরফের করবে, তারা ঘুষ খেয়ে পক্ষপাতিত্ব করবে। কারণ পূর্বেও তারা এমন অনেক করেছে যার নযীর রয়েছে। তখন সেই ইহুদী অস্বিকার করে বললো না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন। এই কথা বলে মুনাফিক বিশরকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। বিচার হয়ে গেল, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো। মুনাাফিক বিশর সেখানে তা বাহ্যিকভাবে মেনে নিলেও দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে বললো, বিচারটা আমার মনপুতঃ হচ্ছে না। নাউযুবিল্লাহ। ইহুদী বললো, হে বিশর তুমি বল কি? তোমাদের যিনি রসূল, যিনি আল আমীন উনার বিচার তোমার মনপুতঃ হয়নি? তবে তুমি কার বিচার মানবে? সেই যামানায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতেন। মুনাফিক বিশর সে মনে করলো যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খুব জালালী তবিয়ত। উনার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

اشداء على الكفار.

অর্থাৎ “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরী ২৯)

তিনি হয়তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন এবং ইহুদী কাফির তার বিপক্ষে রায় দিবেন। মুনাফিক বিশর সে ইহুদীকে নিয়ে গেল হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কাছে বিচারের জন্য। ইহুদী খুব চালাক ছিল, তাই সে বিষয়টা বুঝতে পেরে যাওয়া মাত্রই বললো, হে উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ আমরা এই মাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ থেকে আসলাম তিনি নিজে বিচার করে দিয়েছেন। রায় আমার পক্ষে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশর সে বিচার মানতে নারাজ সেজন্য সে আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে পুনরায় বিচার করার জন্য। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি একথা শুনে বললেন, ঠিক আছে তোমরা বস, আমি তোমাদের বিচার করব। উনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে একটা তরবারী নিয়ে আসলেন। তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, এটাই তোমার বিচার। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মাননি। তোমার একমাত্র শাস্তি ও বিচার মৃত্যুদ-। যখন উনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্! হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে আপনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি আমাদের একজন আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, দেখ এটা কি করে সম্ভব? হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি তো খাছ লোক-

لوكان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب عليه السلام

“আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন, তাহলে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নবী হতেন।” কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে আনা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন?” হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূলতঃ আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করিনি বরং একজন মুনাফিককে বিচার অনুযায়ী শাস্তি দিয়েছি মৃত্যুদ-। কারণ সে মুনাফিক ছিল। কারণ আপনি যে বিচার করেছিলেন, সে বিচার সে মানেনি, সেজন্য আমি তাকে শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- দিয়েছি। তখন বিশরের আত্মীয়রা বললো, সে যে মুনাফিক ছিলো তার সাক্ষী কোথায়? তখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম! ইসলামে সাক্ষী ছাড়া কোন কথা গ্র্রহণযোগ্য নয়। তখন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন- “(ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিই সাক্ষী) আপনার মহান রব তায়ালা, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, কোন ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আপনাকে সীরতান-ছূরতান, জাহিরী-বাতিনী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ সবদিক থেকে ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে অর্থাৎ আপনার হুকুম-আহকাম এবং আপনাকে মেনে না নিবে।

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে ফায়ছালা দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিই বিনা চু-চেরা ও ক্বিল-ক্বালে মেনে নিতে হবে। কেননা উনাদের ফায়ছালাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়ছালা। অর্থাৎ উনাদেরকে নিরংকুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউই মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অর্থাৎ আমার আদেশ-নির্দেশ যথাযথ পালন না করবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

এবং অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لايؤمن احدكم حتى يكون هواه تبعا لـما جئت به.

অর্থ: “তোমাদের কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরণ সে না করবে।” (মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিটি আদেশ মুবারক, নিষেধ মানা বা পালন করা যেরূপ বান্দা-বান্দীর জন্য ফরয, তদ্রুপ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মুবারক মানা বা পালন করাও উম্মতের জন্য ফরয। শুধু যাহেরান মানলে চলবে না বরং জিসমানী, রূহানী বা জাহিরী-বাতিনী প্রত্যেক অবস্থাতে তা মেনে নিতে হবে। শুধু মানলেই চলবে না বরং কোন একটি বিষয়েও সামান্যতম চু চেরা, কী¡ল-ক্বাল অন্তরে থাকতে পারবে না। থাকলে সে কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না।

অতএব উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হলো হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিরংকুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর্ব ১৮)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

তৃতীয় প্রমাণ:

(বিগত সংখ্যায় সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত وَلَد خَلِيْفَةٍ  এবং اِبْنُ خَلِيفَةٍ  সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই সংখ্যায় বাকি অংশ তুলে ধরা হলো।)

বিগত সংখ্যার দলীলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ولد خليفة যেভাবেই পড়া হোক না কেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা وَلَدٌ  এই শব্দ মুবারকখানা সন্তান ও বংশধর উভয় অর্থেই ব্যবহার হয়। অনুরূপভাবে  اِبْنٌশব্দ মুবারকখানাও সন্তান বা বংশধর উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং আমরা اِبْنٌ ও وَلَدٌ উভয় শব্দ মুবারক উনাদের অর্থ মুবারক যখন বংশধর নিবো তখন  আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার অর্থ হবে-

يُقْتَلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ هٰذَا ثَلاَثَةٌ كُلُّهُمُ ابْنُ خَلِيفَةٍ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى وَلَدُ خَلِيفَةٍ.

অর্থ: ‘(হযরত ইমাম  মাহদী আলাইহিস সালাম উনার প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে) আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন, উনারা প্রত্যেকেই হবেন, একজন আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর। অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই হবেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর।’ সুবহানাল্লাহ!

আর اِبْنٌ ও وَلَدٌ  উভয় শব্দ মুবারক উনাদের অর্থ মুবারক যখন আমরা আওলাদ বা সন্তান নিবো, তখন  আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার অর্থ মুবারক হবে নি¤œরূপ,

يُقْتَلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ هٰذَا ثَلاَثَةٌ كُلُّهُمُ ابْنُ خَلِيفَةٍ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى وَلَدُ خَلِيْفَةٍ

অর্থ: ‘(হযরত ইমাম  মাহদী আলাইহিস সালাম উনার প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে) আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন, উনারা প্রত্যেকেই হবেন, একজন সম্মানিত হযরত খলীফা আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা সন্তান।’

 অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই হবেন ওই সম্মানিত হযরত খলীফা আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা সন্তান, যাঁর পবিত্র বিছাল শরীফ উনার সময় সম্মানিত সভাসদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিবে, উনার পরে কে খলীফা হবেন। তখন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে গোপন রাখার লক্ষ্যে সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। এই সম্পর্কিত সম্মানিত হাদীছ শরীফখানা বিগত কিস্তিগুলোতে কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে।

মোট কথা হলো, আমরা যেভাবেই অর্থ মুবারক করি না কেন, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার পর থেকে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত এই মুবারক ধারাবাহিকতায় তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন, উনারা প্রত্যেকেই আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর হবেন। আর এটা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ! তবে উনাদের মধ্যে ১১তম খলীফা, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল উমাম আল মানছূর হযরত শাহযাদা ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এবং ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনারা হচ্ছেন, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! উনারা ছাড়া সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে এই মুবারক ধারাবাহিকতায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন এবং সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করবেন, উনারা প্রত্যেকেই সৎ ও ইনসাফগার খলীফা হবেন। উনারাও যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক মনোনীত হবেন। সুবহানাল্লাহ! তবে উনারা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন। সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিতো অবশ্য অবশ্যই সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই; এমনকি সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বৎসর যাবৎ সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার পর উনার সুমহান আওলাদ আবুল খুলাফা, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হবেন এবং তিনিও সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বৎসর যাবৎ সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনার পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে সেই সম্মানিত খিলাফত মুবারকই ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে। আর তিনিও সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর হবেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রাসেল

খুলনা

 

সুওয়াল: হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি এখনও জীবিত আছেন কিনা? জানতে চাই।

জাওয়াব: হ্যাঁ, হযরত খিজির আলাইহিস সালাম তিনি এখনও জীবিত আছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! উনার ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থকার কারন সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি ‘আবে হায়াত’ পান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তি উক্ত ‘আবে হায়াত’ বিশেষ নিয়ামত পান করবে তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত হায়াত বা জীবন দান করা হবে।

উক্ত ‘আবে হায়াত’ তালাশে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত সিকান্দার যুল ক্বরনাইন আলাইহিস সালাম এবং উনার উযীরে আ’যম হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনারা দুজনেই বের হয়েছিলেন। কিন্তু হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি ‘আবে হায়াত’ উনার সন্ধান লাভ করেন এবং তা পান করেন। যার কারণে উনাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত হায়াত মুাবরক দান করা হয়। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনাকে কেউ কেউ নবী মনে করে থাকে। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। সঠিক হচ্ছে, তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার একজন বিশিষ্ট এবং উঁচু স্তরের ওলী। আর উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে উনার নাম মুবারকের পরে আলাইহিস সালাম সম্বোধন করা  হয়, যেরূপ সম্বোধন করা হয়ে থাকে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে। যিনি এখনও যমীনে আসেননি। তিনি আখিরী যামানার শেষভাগে আসবেন যখন দাজ্জাল বের হবে। আর তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি চতুর্থ আসমান থেকে আখিরী উম্মত হিসেবে পুনরায় যমীনে তাশরীফ গ্রহণ করবেন এবং তিনি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার হিদায়েতের কাজে সাহায্য করবেন আর দাজ্জালকে কতল করবেন। সুবহানাল্লাহ!

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২০

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪