সুওয়াল জাওয়াব:

সংখ্যা: ২৮৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আহসান হাবীব, মীরগঞ্জ, রংপুর।

 

সুওয়াল:  বাতিল ফিরক্বার লোকদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কেউই ইলমে গইব উনার ইলিম রাখেন না। এমনকি যিনি কুল-মাখলূক্বাতের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নাকি ইলমে গইব উনার ইলিম রাখেন না। নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন খালিক্ব, মালিক, রব। আর অন্য সকলেই হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মাখলূক্ব বা সৃষ্টি। কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন মাধ্যম বা মধ্যস্থতা ব্যতিরেকেই সবকিছু জানেন বা সব বিষয়ে উনার ইলিম মুবারক রয়েছে। তা যাহিরাহ (প্রকাশ্য) হোক, বাতিনাহ  (গোপন) হোক, শাহাদাহ (দৃশ্য) হোক, গইব (অদৃশ্য) হোক। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَالِـمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য  সম্পর্কে জানেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি বিনা মধ্যস্থতায় ইলমে গইব উনার অধিকারী। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মু’মিনূন: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)

অনুরূপ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ইলমে গইব সম্পর্কিত যত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে সবখানেই মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারকে উক্তরূপ অর্থ গ্রহণ করতে হবে যে, তিনি বিনা মধ্যস্থতায় সবকিছু জানেন।

আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইলমে গইবের বিষয়টি হচ্ছে-

مُطَّلَعٌ عَلَى الْغَيْبِ

অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে উনারা জেনেছেন বা উনাদেরকে জানানো হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এ আক্বীদাই সকল মু’মিন মুসলমানদেরকে পোষণ করতে হবে। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই ইলমে গইব উনার অধিকারী।

যেমন এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ’ উনার ২৬ ও ২৭ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَالِـمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ أَحَدًا.‏ إِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ

অর্থ: “তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, উনার গইব সম্পর্কিত ইলিম উনার মনোনীত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত কারো নিকট তিনি প্রকাশ করেন না। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তিনি ইলমে গইব হাদিয়া মুবারক করেছেন।”

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে বাগবী শরীফে” উল্লেখ আছে যে-

يَـعْنِىْ اِلَّا مَنْ يَّصْطَفِيْهِ لِرِسَالَتِهٖ وَنُـبُـوَّتِهٖ فَـيُظْهِرُهٗ عَلٰى مَا يَشَاءُ مِنَ الْغَيْبِ حَتّٰى يَسْتَدِلَّ عَلٰى نُـبُـوَّتِهٖ مِمَّا يُـخْبِرُ بِهٖ مِنَ الْـمُغِيْـبَاتِ

অর্থ : “যাঁকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক উনার জন্য মনোনীত করেন, উনাকে যে পরিমাণ ইচ্ছা ইলমে গইব হাদিয়া মুবারক করেন। উনার ইলমে গইব উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক উনার প্রমাণ স্বরূপ এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মু’জিযা মুবারকও বটে।”

শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে সাবী এবং তাফসীরে আযীযীতেও উল্লেখ আছে।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৭৯নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلٰكِنَّ اللهَ يَجْتَبِيْ مِنْ رُّسُلِهٖ مَنْ يَّشَآءُ ۖ

অর্থ: “ মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িত্ব এটা নয় যে, গইব বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ইলমে গইব হাদিয়া করেন।”

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহূর তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে জালালাইন শরীফে” উল্লেখ আছে যে-

وَلٰكِنَّ اللهَ يَـجْتَبِىْ وَيَـخْتَارُ مَنْ يَّشَاءُ فَـيَطَّلِعُ عَلٰى غَيْبِهٖ كَذَا اَطْلَعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى حَالِ الْمُنَافِقِيْنَ

অর্থ : “তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে (নবী-রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, উনাকে ইল্মে গইব হাদিয়া করেন। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।”

হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُـيُـوْتِكُمْ

অর্থ : “তোমরা কি খেয়ে এসেছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ তা সবই আমি (হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম) বলে দিতে পারি।” (সম্মানিত ও  পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য:

قَالَ أَلَـمْ أَقُلْ لَّكُمْ إِنِّيْۤ أَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَـعْلَمُوْنَ

অর্থ : “আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি এমন সব বিষয় জানি যা তোমরা জান না? অর্থাৎ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি জীবিত আছেন এবং তিনি উনার পিতা আলাইহিস সালাম উনার সাথে মিলিত হবেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৬)

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার  সম্মানিত নবী ও রসূল হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম উনার ইলমে গইব উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

حَتّٰىۤ إِذَا أَتَـوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَـمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُـوْدُهٗ وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ.‏ فَـتَـبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّنْ قَوْلـِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْـعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ

অর্থ : “যখন উনারা (হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার সৈন্যবাহিনী) পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছলেন তখন এক পিপীলিকা বললো, হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর। অন্যথায় হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং উনার বাহিনীর অজান্তেই তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবেন। তার (পিপীলিকার) কথা শুনে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ দান করুন যাতে আমি আপনার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা আপনি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া   মুবারক করেছেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নমল শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮,১৯)

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে রয়েছে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পিপীলিকার সেই কথা তিন মাইল দূরবর্তী স্থান থেকে শুনেছিলেন যা উনার ইলমে গইবের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়ায়ে শায়েখযাদাহ)

একইভাবে সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৩২নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَالُوْا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَـنَا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ ‎

অর্থ: হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি অতি পবিত্র, আমাদের কোন ইলম নেই, কেবল ততটুকু ব্যতীত যা আপনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি মহান জ্ঞানী এবং মহান হিকমতওয়ালা।

এখানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইলিমপ্রাপ্ত। উক্ত ইলমের মধ্যে গইব সম্পর্কিত ইলিমও রয়েছে।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম বা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইলমে গইব সর্ম্পকে বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট মানুষের ছূরতে আসা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি কোথায় আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে কয়েক মুহূর্ত চক্ষু বন্ধ করে বলে দিয়েছিলেন, সৃষ্টি কায়িনাতের কোথাও উনাকে খুজে পাওয়া যায়নি, নিশ্চয়ই আপনিই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপ আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুমুয়া শরীফ উনার খুতবাহ মুবারক প্রদানকালে শত শত মাইল দূরে উনার প্রেরিত মুজাহিদদেরকে কাফিরদের আক্রমণ থেকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইয়া সারিয়াহ আল জাবাল, আল জাবাল।

একইভাবে হযরত খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে এক ব্যক্তি উনার সাক্ষাত করতে আসার সময় পথের মধ্যে জনৈক সুন্দরী মহিলাকে দেখে অন্তরে বদ ধারণা করতে করতে উনার পবিত্র দরবার শরীফে প্রবেশ করতেই হযরত খলীফাতুল মুসলিমীন আলাইহিস সালাম তিনি উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, এমন লোক আমার দরবারে আসলো যার চক্ষু দিয়ে ব্যভিচারের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। লোকটি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ওহে খলীফাতুল মুসলিমীন! হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম কি এখনও আপনার কাছে আসেন? নচেৎ আপনি জানলেন কি করে।

একইরূপে খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার অভ্যন্তরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার কিছুক্ষণ পরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেই সালাম মুবারক পেশ করেছিলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার যাঁরা ওলী উনাদেরকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলমে গইব বা অদৃশ্যের জ্ঞান হাদিয়া করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا

অর্থ: ‘আমি উনাকে ইলমে লাদুন্নী অর্থাৎ আমার তরফ থেকে ইলিম হাদিয়া করেছি।’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

স্মরণীয় যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের মতে, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি হলেন একজন ওলীআল্লাহ। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলমে লাদুন্নী তথা ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন। এর প্রমাণস্বরূপ হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার তিন তিনটি গইবের বিষয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেসব ইলমে গইব উনার সংবাদ জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা সত্যায়ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ইলমে গইবসহ সর্বপ্রকার ইলিম ও নিয়ামত হাদিয়া করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘ইলমে লাদুন্নী, ইলহাম ও ইলক্বা। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ইলমে গইবসহ সর্বপ্রকার ইলিম ও নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে ওহী। বলার অপেক্ষা রাখে না, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুবহানাল্লাহ!

আর যাঁরা প্রকৃত ওলীআল্লাহ উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত। উনাদের সবকিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত বা ক্ষমতা বলেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই উনাদের গইব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন বিষয় নয়।

এ প্রসঙ্গে ‘শরহে মাওয়াহিব’ কিতাবে ‘লাতায়িফুল মিনান’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ আছে যে, কোন কামিল বান্দা বা হক্কানী ওলীআল্লাহগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের ইলিম তথা ইলমে গইব লাভ করা আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِتَّـقُوْا فِرَاسَةَ الْـمُؤْمِنِ فَاِنَّهٗ يَنْظُرُ بِنُـوْرِ اللهِ

অর্থ: ‘মু’মিনের অর্থাৎ প্রকৃত মু’মিন তথা ওলীআল্লাহ উনার অন্তরদৃষ্টিকে ভয় করো। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক দ্বারা অবলোকন করেন।’  (মিশকাত শরীফ)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত অর্জনকারী ওলীআল্লাহ উনার শান মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

كُنْتُ سَـمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِهٖ كُنْتُ بَصَرَهُ الَّذِىْ يُـبْصِرُ بِهٖ كُنْتُ لِسَانَهُ الَّذِىْ يَـنْطِقُ بِهٖ كُنْتُ يَدَهُ الَّتِىْ يَـبْطِشُ بِهَا كُنْتُ رِجْلَهُ الَّتِىْ يَـمْشِىْ بِـهَا

অর্থ: আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কান মুবারক-এ শ্রবণ করেন। আমি উনার চক্ষু হই, তিনি আমার কুদরতী চোখ মুবারক-এ দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী যবান মুবারক-এ কথা বলেন। আমি উনার হাত হই, তিনি আমার কুদরতী হাত মুবারক-এ ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পা মুবারক-এ চলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী শরীফ)

অতএব, হযরত ওলী-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্ষেত্রে যেখানে ইলমে গইব থাকাটা বাস্তবসম্মত সেখানে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইলমে গইব থাকাটা আরো কত বেশি বাস্তবসম্মত তা সহজেই অনুমেয়।

তাহলে যিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, সমস্ত জিন-ইনসান উনারাসহ সমস্ত মাখলূক্বাত উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষেত্রে  ইলমে গইব সম্পর্কে কি ফায়ছালা! বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনি শুধু ইলমে গইব উনার অধিকারীই নন বরং তিনি হচ্ছেন ইলমে গইবসহ যাবতীয় ইলিম মুবারক উনার মালিক ও বণ্টনকারীও বটে। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে আলোকপাত করা হলো:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ يَا أَيُّـهَا النَّاسُ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكُمْ جَمِيْعًا

অর্থ: আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেন দিন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮ (চলবে)

 

মুহম্মদ আশরাফুর রহমান, ফতেহপুর, সদর

সুওয়াল: আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি যে, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে প্রচার করছে যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আরো প্রচার করছে যে, পবিত্র ২৭শে রজবুল হারাম শরীফ রাতেই পবিত্র মি’রাজ শরীফ হয়েছে এ কথা সঠিক নয়। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াব: আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র মি’রাজ শরীফ পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতেই হয়েছে। এটাই মশহূর বা প্রসিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। এর বিপরীত মতগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। তাদের কোন কথাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, মুসলমানগণের ঈমান-আমল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের যারা চিহ্নিত শত্রু- ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী ইত্যাদি তাবৎ কাফির-মুশরিক তারা পরোক্ষভাবে কাজ করে আর তাদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। এই উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা কাফির-মুশরিকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলামনগণের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব ধ্বংস করার লক্ষ্যে হারাম টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, জায়িযকে নাজায়িয, সুন্নতকে বিদয়াত, বিদয়াতকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুসলমানদের ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের তারিখ নিয়েও সমাজে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি করছে; উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানগণ যেনো ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকে এবং সেই রাত ও দিনসমূহের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেমন তারা সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস আসলেই প্রচার করে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাউযুবিল্লাহ!

তদ্রƒপ এখন তারা প্রচার করছে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা বোঝাতে চাচ্ছে যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো, যে কোন বিষয়ে মতভেদ হতে পারে বা থাকতে পারে। কারণ হক্ব তালাশীগণ যে বিষয়টিকে হক হিসেবে গ্রহণ করেন, যারা নাহক্ব বা বাতিলপন্থী তারা কি সে বিষয়টিকে হক্ব হিসেবে গ্রহণ করবে? কখনই না। তাহলে তো এমনিতেই মতভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল এবং তাই হচ্ছে।

এছাড়া হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণও বিভিন্ন বিষয়ে ইখতিলাফ করেছেন, ইখতিলাফ করেছেন বলে সেসব বিষয় বাদ দিতে হবে তা নয়। বরং এক্ষেত্রে সম্মানিত শরীয়ত উনার সুস্পষ্ট সমাধান রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا أَطِيْـعُوا اللهَ وَأَطِيْـعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَـنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَـرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْـتُمْ تُـؤْمِنُـوْنَ بِاللهِ وَالْيَـوْمِ الْاٰخِرِ ۚ ذٰلِكَ خَيْـرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে (উলিল আমরগণের মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেশি অনুগত বা যার মতের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ বেশি রয়েছে উনাকে বা উনার মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বীল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৯)

কাজেই, কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, সেটিই আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে; এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি ব্যতীত কিছু নয়। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।

স্মরণীয় যে, মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতে হয়েছে এটাই মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রূহুল বয়ান ৫ম জিলদ্ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَهِىَ لَيْـلَةُ سَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ لَيْـلَةُ الْاِثْـنَـيْنِ وَعَلَيْهِ عَمَلُ النَّاسِ قَالُوْا اِنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ بُعِثَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَاُسْرِىَ بِهٖ لَيْـلَةَ الْاِثْـنَـيْنِ وَخَرَجَ مِنْ مَّكَّةَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَدَخَلَ الْـمَدِيْـنَةَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَمَاتَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ

অর্থ: “রাতটি ছিলো পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)।” এর উপরই বিশ্বের সকল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের আমল। উনারা বলেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), উনার আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত প্রকাশ পেয়েছে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসরা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ হয়েছে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বের হয়েছেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেছেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এবং তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।”

পাক ভারত উপমহাদেশে মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রচার-প্রসারকারী হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

اِعْلَمْ اَنَّهٗ قَدْ اِشْتَـهَرَ فِيْمَا بَيْنَ النَّاسِ بِدِيَارِ الْعَرَبِ اَنَّ مِعْرَاجَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لِسَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশসমূহের লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতেই।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার’ কিতাবুছ ছলাত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে-

وَجَزَمَ الْحَافِظُ عَبْدُ الْغَنِىِّ الْـمَقْدِسِىِّ فِىْ سِيْـرَتِهٖ بِاَنَّهٗ لَيْـلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبِ وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ الْاَمْصَارِ

অর্থ: হযরত ইমাম হাফিয আব্দুল গণী মাক্বদিসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সীরাতগ্রন্থে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন যে, মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ হয়েছে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসর উনার ২৭ তারিখ এবং এর উপরই সমগ্র দেশবাসী উনাদের আমল। এছাড়াও আরো নির্ভরযোগ্য অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে হয়েছে।

কাজেই, যারা টিভিসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيْلٌ لِّاُمَّتِىْ مِنْ عُلَمَاءِ السُّوْءِ يَـتَّخِذُوْنَ هٰذَا الْعِلْمَ تِجَارةً يَبِيْـعُوْنَـهَا مِنْ اُمَرَاءِ زَمَانِـهِمْ رَبْـحًا لِّاَنْـفُسِهِمْ لَا اَرْبَحَ اللهُ تِـجَارَتَـهُمْ

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের উলামায়ে ‘সূ’দের জন্য জাহান্নাম; যারা ইলিমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের যামানার আমীর-উমরা বা রাজা-বাদশাহদের কাছে অর্থ ও পদ লাভের জন্য তা বিক্রি করে থাকে। তাদের এ ধর্মব্যবসায় আল্লাহ পাক তিনি কখনো বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)

মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

وَعَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِيْ اٰخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُـوْنَ يَأْتُـوْنَكُمْ مِّنَ الْأَحَادِيْثِ بِـمَا لَـمْ تَسْمَعُوْا أَنْـتُمْ وَلَا اٰبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلَا يَـفْتِنُـوْنَكُمْ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শোনা, তাদের ফতওয়া মানা, তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম আর তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার ২৮ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَـلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّـبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهٗ فُـرُطًا

অর্থ: “তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা যার ক্বল্ব্ আমার যিকির থেকে গাফিল। সে নফসের পায়রবী করে আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।” অর্থাৎ যারা শরীয়তের খিলাফ কাজ করে তথা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْـنَكُمْ

 অর্থ: “নিশ্চয়ই (মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার) ইলিমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো।” (মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তথা যারা টিভিতে প্রোগ্রাম করে, ওয়াজ ভিডিও করে তাদের থেকে ইলিম হাছিল করা যাবে না, তাদের ওয়াজ শুনা যাবে না, তাদের ফতওয়া মানা যাবে না, তাদের পিছনে নামায পড়া যাবে না।

অতএব, যারা টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের কোনো কথাই সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। আর পবিত্র ২৭শে রজবুল হারাম শরীফ তারিখ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ; এটা সঠিক নয় বলে তারা যে বক্তব্য প্রচার করছে তাদের সে প্রচারণা সম্পূর্ণ মনগড়া ও দলীলবিহীন। সম্মানিত ইসলামে দলীলবিহীন কোন বিষয় আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هَاتُـوْا بُـرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْـتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল পেশ করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

কাজেই, যেসব উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ সংঘটিত হওয়ার বিশুদ্ধ ও মশহূর বর্ণনাকে সঠিক নয় বলে প্রচার করছে; তাদেরকে প্রমাণ দিতে হবে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াসের কোথায় বা কোন দলীলে উল্লেখ আছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ হয়েছে; তা সঠিক নয়। এরূপ প্রমাণ তারা কখনই দিতে পারবে না।

উল্লেখ্য, যারা সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত সম্পর্কে মনগড়া ফতওয়া দেয় তাদেরকেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আরাফাত হুসাইন, মাধবদী, নূরানীবাদ

সুওয়াল: আপনারা বলে থাকেন, ‘লাইলাতুর রগায়িব’ অন্যান্য দিন ও রাত্রি থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অথচ অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ অন্য রাতের তুলনায় বেশি ফযীলতপূর্ণ। কোনটি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: প্রথমত: সমস্ত ইজ্জত-হুরমত, ফযীলত, ছানা-ছিফত ও প্রশংসার মালিক স্বয়ং খালিক, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা  তিনি।

যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

এরপর মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অত:পর যারা মু’মিন-মুসলমান উনারা ইজ্জত-সম্মানের মালিক বা অধিকারী। যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ

অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা এ সম্পর্কে আদৌ অবগত বা অবহিত নয়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

মূলত: সৃষ্টিরাজির ভিতরে সবচাইতে ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এরপর সৃষ্টিরাজির মধ্যে ব্যক্তি হোক, বস্তু হোক, স্থান হোক, সময় হোক যার যতবেশি তায়াল্লুক-নিসবত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তার ততবেশি ফযীলত বা সম্মান। সুবহানাল্লাহ!

উদাহরণস্বরূপ, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই হচ্ছে উনাদের মর্যাদা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কায়িনাতের সকলেই ও সবকিছুই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। আর সমস্তু উম্মতের অর্থাৎ কায়িনাতের মা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আযওয়াজুম মুত্বাহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, ‘পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর’ ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইজ্জত-সম্মান মুবারক, ফযীলত মুবারক উনার কারণেই। অতীতের কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের জন্য ‘পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর’ ছিল না।

তদ্রƒপ ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ এ ফযীলতপূর্ণ রাতটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন ও রাতের চেয়ে বেশি ফযীলতের অধিকারী হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই। সুবহানাল্লাহ!

এ রাতটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতে বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত এই কারণে যে, এই রাতের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্ক-তায়াল্লুক, নিসবত মুবারক রয়েছে। এ রাতটিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনবেন তার আগাম শুভ লক্ষণ প্রকাশ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, এ রাতটি না হলে অন্যান্য রাত ও দিনের ফযীলত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেতো না। তাহলে এ রাতটি কেন অন্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন অপেক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ ও ফযীলতপূর্ণ হবে না? অবশ্যই হবে।

স্মরণীয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস। উল্লেখ্য যে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার পহেলা তারিখ হলেন তারিখ হিসেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ এবং পহেলা জুমুআ শরীফ উনার রাতটিই হচ্ছেন রাত হিসেবে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ। এই মহিমান্বিত ও অতীব সম্মানিত রাতটিতে কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ত্বাহিরাহ, তইয়িবাহ, রদ্বিয়াহ, মারদ্বিইয়াহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুস সাইয়্যিদাত হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার পাক-পবিত্রতম খিদমত মুবারক-এ মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেন। সুবহানাল্লাহিল আকবার! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম সৃষ্টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওজূদ মুবারক- নূর মুবারক সম্পূর্ণ কুদরতীভাবে সাইয়্যিদুল বাশার সাইয়্যিদুস সাদাহ হযরত আবূ রসূলিনা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে সাইয়্যিদাতুস সাইয়্যিদাত হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট স্থানান্তরিত হন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ এ ফযীলতপূর্ণ মর্যাদাম-িত রাতটির নিসবত বা সম্পর্ক যেহেতু সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক তাশরীফ আনার সাথে তাই এ রাতের মর্যাদা ‘পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের চাইতেও লক্ষ কোটিগুণ বেশি।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরাতুল কাওছার শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন ও লিখেছেন। তবে যিনি রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ‘কাওছার’ শব্দের ব্যাখ্যায় দুটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো ‘হাউযে কাওছার’ যার পানি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাকে পান করার অনুমতি দিবেন কেবল তিনিই পান করবেন এবং সেই পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসা লাগবে না। আর কাওছার-এর আরেকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন ‘খইরে কাছীর’ তথা অধিক উত্তম বা ভালাই বা কল্যাণ। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমতপূর্ণ ছোহবতে, নিসবতে, স্পর্শে যা কিছু এসেছেন সবকিছুই সবচেয়ে উত্তম, সর্বোৎকৃষ্ট হয়েছেন এবং সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

আর এ কারণেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ অন্য সকল ফযীলতপূর্ণ দিন ও রাতের চেয়ে সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ রাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনার ফযীলত সম্পর্কে সরাসরি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে সত্যিই। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার বর্ণনা যদিও সরাসরি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ নেই; তবে এ কথা অবশ্যই সত্য যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার মাধ্যমে যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছে তাই এ রাতটির মর্যাদা পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ অপেক্ষা লক্ষ-কোটি গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি যমীনে মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহন না করতেন তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ সহ কোন ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতেরও আগমন ঘটতো না। তাই, অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অনেকেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ হচ্ছে সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতেও শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!

যেমন বিশেষ করে এ বিষয়ে ফতওয়া প্রদান করেছেন হিজরী তৃতীয় শতকের মহান মুজাদ্দিদ, হাম্বলী মাযহাবের যিনি ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ-উনার ফযীলত পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলত পূর্ণ দিন-রাতের চেয়েও বেশি।” তিনি যখন এ বক্তব্য পেশ করলেন, তখন সমসাময়িক আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা উনার নিকট এসে বললেন,  হুযূর! পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির ফযীলত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ বা পবিত্র শবে রগায়িব শরীফ উনার বর্ণনা তো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই, তাহলে কিভাবে এ রাত্রির ফযীলত উল্লিখিত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশি হতে পারে? তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা কি জানেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ কোন রাত্রিকে বলে? উনারা জানেন না বলে স্বীকার করলেন। তখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় তুলে ধরে বললেন যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ হচ্ছে ঐ রাত্রি যে রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক এ কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ রাত্রির ফযীলত অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে অনেক বেশি এই জন্য যে, যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারক এ তাশরীফ মুবারক না নিতেন এবং অতঃপর যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক না আনতেন তাহলে পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত কোনটিই আসতোনা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আগমন মুবারক উনার ওসীলাতেই পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রি এসেছে।

কাজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার ফযীলত সবচেয়ে বেশি। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় ও ফযীলত তুলে ধরলেন, তখন সকল আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ নির্দিধায় মেনে নিলেন।

অতঃপর একই ফতওয়া প্রদান করেন হিজরী ষষ্ঠ শতকের মহান মুজাদ্দিদ, যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বাদিরিয়া তরীক্বার ইমাম- গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

অতঃপর এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীফ শাস্ত্রের প্রচার প্রসার করেছেন, যিনি সম্মানিত ক্বাদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও অনুরূপ ফওতয়া প্রদান করেন।

অতঃপর যিনি আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম-মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তিনি উনার মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনাদের মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সবচাইতে বেশি ফযীলতপূর্ণ রাত সে সম্পর্কে মুবারক লিখনী প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মতের বিপরীতে সাধারণ মু’মিন মুসলমানের বিশ্বাস ও মতামত আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। (দলীলসমূহ: গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, রযীন, মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, আল বাইয়্যিনাত শরীফ, আল ইহসান শরীফ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল, ফাদ্বায়িলূশ শুহূরি ওয়াল আইইয়াম ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ আতিকুর রহমান, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র শবে বরাতে কি আমল করতে হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র শবে বরাত হচ্ছেন মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য।

পবিত্র পবিত্র শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে।

যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَتْ لَيْـلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَـقُوْمُوْا لَيْـلَهَا وَصُوْمُوْا يَـوْمَهَا فَإِنَّ اللهَ تَـعَالٰى يَـنْزِلُ فِيْـهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْـيَا فَـيَـقُوْلُ: أَلَا مِنْ مُّسْتَـغْفِرٍ فَأَغْفِرَلَهٗ أَلَا مُسْتَـرْزِقٌ فَأَرْزُقَهٗ أَلَا مُبْـتَـلًى فَأُعَافِيَهٗ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا حَتّٰى يَطْلُعَ الْفجْرُ

অর্থ: “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছীবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ تَـعَالٰى لَيَطَّلِعُ فِيْ لَيْـلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَـيَـغْفِرُ لِـجَمِيْعِ خَلْقِهٖ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-

পবিত্র বরাতের নামায

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।

ছলাতুত তাসবীহ নামায

অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।

তাহাজ্জুদ নামায

অতঃপর তাহাজ্জুদ উনার নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মীলাদ শরীফ ও

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মীলাদ শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।

পবিত্র যিকির-আযকার

যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

কবর যিয়ারত

কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।

দান-ছদকা

গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।

হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো

উল্লেখ্য, পবত্রি শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা সম্মানিত শরীয়তে নাজায়িয নয়। পবিত্র শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন উনারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ পবিত্র শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন উনাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু উনারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।

এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْـجَنَّةَ بِسَلَامٍ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)

তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো পবিত্র শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

দোয়া-ইস্তিগফার

মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।

স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর পবিত্র বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حَتّٰى يَطْلُعَ الْفَجْرُ

অর্থ: “ফজর বা ছুবহি ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।”

অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা {দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক,  (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, লাখাই, হবিগঞ্জ।

সুওয়াল: হবিগঞ্জ জেলাধীন শায়েস্তাগঞ্জে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের এক বক্তার আলোচনা আমি শুনেছি, তার বক্তব্য হচ্ছে, “নূর হওয়া, ইলমে গইব সর্ম্পকে জানা, হাযির-নাযির হওয়া এসব মহান আল্লাহ পাক উনার গুণ। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গুণ নয়। এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক করেছেন-

اُتِيْتُ عِلْمَ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার অর্থ সে করেছে, “আমার পূর্ববর্তী সকল লোকের সমপরিমাণ ইলিম, আমার পরবর্তী সকল লোকের সমপরিমাণ ইলিম, সমস্ত নবীগণের সমপরিমাণ ইলিম আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।”

এখন জানার বিষয় হলো, বক্তার উক্ত বক্তব্য ও তার কৃত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার অর্থ কতখানি শুদ্ধ হয়েছে?

জাওয়াব: তথাকথিত বক্তার উক্ত বক্তব্য এবং সে যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অর্থ করেছে কোনটিই শুদ্ধ হয়নি। যেমন সে বলেছে, “নূর হওয়া মহান আল্লাহ পাক উনার গুণ”। তার এ বক্তব্য কুফরী হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি নূর নন। বরং নূর হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি। আর তিনি হচ্ছেন নূর মুবারক উনার  সৃষ্টিকর্তা বা সৃষ্টিকারী। আর সে যে বলেছে, “নূর হওয়া, ইলমে গইব সর্ম্পকে জানা, হাযির- নাযির হওয়া মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গুণ নয়” তার এ বক্তব্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনার সৃষ্টি, তিনি ইলমে গইব উনার অধিকারী এবং তিনি সম্মানিত ইলিম ও সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনার দ্বারা সর্বত্র হাযির-নাযির। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়ে দলীল সাপেক্ষে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৮৪তম ও ২৮৫তম সংখ্যা পাঠ করুন। তাছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন সম্মানিত ইলিম মুবারক সর্ম্পকে অত্র সুওয়ালে যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার দ্বারাও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইলমে গইব মুবারক উনার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূর্বাপর সমস্ত সম্মানিত ইলিম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! বলার অপেক্ষা রাখে না, পূর্বের ও পরের সম্মানিত ইলিম দ্বারা ইলমে গইবই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!

অপর একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُتِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ

অর্থ: আমাকে সমস্ত সম্মানিত ইলিম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সমস্ত সম্মানিত ইলিম দ্বারা ইলমে যাহির ও ইলমে বাতিন তথা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্ত ইলিম এবং ইলমুল গইব ও ইলমুশ শাহাদাহ তথা দৃশ্য ও অদৃশ্য সমস্ত ইলিম মুবারাকই অর্ন্তভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সম্মানিত ইলমে গইব মুবারক উনার অধিকারী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১২৯তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব পাঠ করুন।

আর তথাকথিত বক্তা সুওয়ালে উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার যে অর্থ করেছে তা সর্ম্পূরূপে মনগড়া যা মোটেও শুদ্ধ হয়নি উপরন্তু উক্ত অর্থ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِىْ مَعَ اللهِ وَقْتٌ لَايَسْعَانِ فِيْهِ مَلَكٌ مُّقَرَّبٌ وَّلَا نَبِىٌّ مُّرْسَلٌ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমার প্রতিটি মুহূর্ত বা সময় এমনভাবে অতিবাহিত হয় যেখানে নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাও প্রবেশ করতে পারেন না।

আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সৃষ্টি কায়িনাতের সকলেই উনার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত। চাই উনারা সম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম হোন, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম হোন, অথবা অন্য সকল জিন- ইনসান হোন না কেন।

কাজেই যারা উম্মতের অর্ন্তভুক্ত উনাদের সমপরিমাণ সম্মানিত ইলিম উম্মতের যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেয়া হয়েছে বা হাদিয়া করা হয়েছে এ বক্তব্য যে কত বড় বেয়াদবি এবং কতখানি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক বিরোধী তা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। কিন্তু উক্ত উলামায়ে সূ বক্তার ন্যায় যারা ‘বালহুম আদ্বল্লু’ তথা পশু অপেক্ষা নির্বোধ কেবল তাদের পক্ষেই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যদিওবা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَسْتُ كَاَحَدٍ مِّنْكُمْ

অর্থ: আমি তোমাদের (উম্মতের) কারো মতো নই। (বুখারী শরীফ)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ পূর্বক ইরশাদ মুবারক করেন-

نَـحْنُ اَهْلُ بَـيْتٍ لَايُـقَاسُ بِنَا اَحَدٌ مَنْ قَاسَ بِنَا اَحَدًا فَـقَدْ كَفَرَ

অর্থ: আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। আমাদের সাথে কাউকে (কোন বিষয়ে) তুলনা করা যাবে না। আমাদের সাথে যে কাউকে তুলনা করলো, সে কুফরী করলো। নাঊযুবিল্লাহ!

মুহম্মদ ইবনে মুনীরুজ্জামান, ঢাকা

সুওয়াল: সম্প্রতি আবুল কালাম আজাদ (বাশার) এবং মিজান আজহারি টুপি ও পাঞ্জাবি সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করেছে তা আমার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী মনে হয়েছে। তাই তাদের প্রচারিত বক্তব্যটি আপনাদের জ্ঞাতার্থে প্রেরণ করলাম। আশা করি সঠিক জাওয়াব দিয়ে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব: তথাকথিত আজাদ এবং মিজান আজহারি এরা টুপি, পাঞ্জাবি তথা পোশাক সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করেছে তা শুধু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধীই হয়নি সাথে সাথে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, কল্পনাপ্রসূত, বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক বক্তব্যের কিছু জাওয়াব গত ২৮৫তম সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে। বাকী কিছু জাওয়াব এ সংখ্যায় প্রদান করা হলো।

(ধারাবাহিক)

(১)       তারা আরো বলেছে, “লম্বা জামা ভালো লাগে তাই তারাও পরে। লম্বা ও ঢিলেঢালা জামা পরিধান করা পর্দার জন্য বেশি উপযোগী ও পরিধানে বেশি আরাম বোধ হয়। তাই অনেক আলিমও এ পোশাক পছন্দ করেন। কিন্তু এটাকে কোন ইসলামী স্কলার সুন্নাত বলেন নি। এটি আদতের তথা অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, সুন্নাত কাকে বলে মুর্খটা জানেনা। মূলত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপম সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক উনাকে সুন্নাত বলে।

তাদের উক্ত বক্তব্যের সাথে অপর এক উলামায়ে সূ’র বেশ সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সে একবার উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলে যে, ওযূ করতে হয় কেন জানেন, ওযূ করলে দেহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, মন প্রফুল্ল থাকে ইত্যাদি। তখন শ্রোতাদের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, হুযূর! আমাকে তাহলে ওযূ করতে হবে না। কারণ আমি সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি এবং আমার মনও সবসময় প্রফুল্ল থাকে। তখন উক্ত উলামায়ে সূ নিরুত্তর নিশ্চুপ হয়ে যায়।

মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আমল মুবারক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কোন বিষয়ে কারণ ও যুক্তি খোঁজার কোন সুযোগ নেই। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَـهُمُ الْـخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ ۗ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَـقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْـنًا

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে মুবারক ফায়ছালা করেছেন, সে মুবারক ফায়ছালার মধ্যে কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবে না চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করা অর্থাৎ নিজস্ব মত পোষণ করা বা পেশ করা। আর যে ব্যক্তি নিজস্ব মত পেশ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী বা বিরোধিতা করবে ফলে সে অবশ্যই প্রকাশ্য গোমরাহীতে গুমরাহ হবে। অর্থাৎ কাট্টা কাফির হবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

এ প্রসঙ্গে “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ খণ্ডের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ  لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّأْيِ، لَكَانَ اَسْفَلُ الْخُفِّ اَوْلٰى بِالْمَسْحِ مِنْ اَعْلَاهُ وَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـمْسَحُ عَلٰى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ

অর্থ : “হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে; তিনি বলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম আহ্কাম গুলো যদি মানুষের আকল, সমঝ, বিবেক, বুদ্ধি দিয়ে ফায়সালা করা হতো, তাহলে মোজার উপরের অংশে মাসেহ না করে মোজার নিচের অংশে মাসেহ করাই অধিক উত্তম হতো। অথচ আমি নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মোজাদ্বয়ের উপরের অংশে মাসেহ করতে দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম আহ্কাম গুলো মানুষের আকল দিয়ে, সমঝ দিয়ে, বিবেক দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, উপমা দিয়ে, ভিন্ন দেশের তুলনা দিয়ে, সূত্র দিয়ে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে ফায়সালা করা যাবে না।

কাজেই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারকের হাজারো জাগতিক উপকারিতা রয়েছে। তবে সেই উপকারিতা মুসলমানের মূল মাকছূদ নয়। মূল মাকছূদ হচ্ছে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদেশ ও আনুগত্য মুবারক পালন করে উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। যেমন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্রপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَاللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ أَحَقُّ أَنْ يُّـرْضُوْهُ إِنْ كَانُـوْا مُؤْمِنِيْنَ

অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে সন্তুষ্ট করে। উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক হক্বদার। (সম্মানিত পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

অতএব, অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে প্রথম পর্বে পুরুষ ও মহিলাদের সুন্নতী কোর্তা বা পোশাকের যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী পুরুষ ও মহিলাদেরকে পোশাক পরিধান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোর্তা শুধু লম্বা হলেই সুন্নতী হয় না। কোর্তা সুন্নতী হওয়ার জন্য আরো একাধিক শর্ত রয়েছে।

স্মরণীয় যে, সুন্নতী কোর্তা বা পোশাক মুবারক পরিধান করা মুসলমান মাত্রই সকলের জন্য ফরয। তা কারো ভাল লাগা বা না লাগার উপর নির্ভরশীল নয়। পরিধানে বেশি আরাম বোধ হওয়া বা না হওয়ার সাথে নির্ভরশীল নয়। পর্দার জন্য বেশি উপযোগী বা অনুপযোগীর উপরও নির্ভরশীল নয়। অনুরূপ কথিত আলেমদের পছন্দ বা অপছন্দের উপরও নির্ভরশীল নয়। আর সুন্নতী কোর্তা বা পোশাক নিছক আদত বা অভ্যাসেরও অর্ন্তভুক্ত নয়। বরং সুন্নতী পোশাক মুবারক এমন এক পোশাক মুবারক তা কোন ইসলামী স্কলারদের স্বীকৃতির উপরও নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ কোন পোশাককে কথিত ইসলামী স্কলাররা সুন্নত বললে সে পোশাক সুন্নত হবে আর তারা না বললে সুন্নত হবে না তা মোটেও নয়। বরং যারা ইসলামী স্কলার দাবী করে তাদের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারকের কোনই সর্ম্পক নেই। উপরন্তু তাদের সর্ম্পক হচ্ছে বিদআত, বেশরা, হারাম ও গোমরাহী আমলের সাথে। নাঊযুবিল্লাহ!

(২)       তারা আরো বলেছে, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলেমগণও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করেন। কারো জামা টাখনু পর্যন্ত লম্বা। আবার কারো পায়ের নলার মাঝ পর্যন্ত প্রলম্বিত। কারো হাঁটু পর্যন্ত। কারো মাজা পর্যন্ত। কারো কোণা কাটা। কারো জোড়া লাগানো। কারো কলার বিশিষ্ট। কারো কলার বিহীন।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে প্রথম পর্বে সুন্নতী কোর্তা বা পোশাকের যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত বর্ণনার বিপরীত বর্ণনার কোন কোর্তা বা পোশাক পরিধান করা সুন্নত নয়। তা আলেম নামধারী যেই হোক এবং যে দেশেরই হোক না কেন। আর টাখনু পর্যন্ত লম্বা, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো মাজা পর্যন্ত, কারো কোণা কাটা, কারো কলার বিশিষ্ট ইত্যাদি ধরণের কোন কোর্তা বা পোশাকই সুন্নত নয়। তাছাড়া জামা বা কোর্তা শুধু লম্বা হলেই সুন্নতী হয় না। কোর্তা বা জামা সুন্নতী হওয়ার জন্য আরো অনেক শর্ত রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের প্রথম পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

(৩)       তারা আরো বলেছে, “পাকিস্তান, সৌদি আরব, বাংলাদেশ ও ইউরোপের আলেমগণ ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পরিধান করেন। এটা ইসলামের উদারতার কারণেই। যারা এ উদারতাকে সংকীর্ণ করবে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” নাঊযুবিল্লাহ!

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কোন দেশ, কোন অঞ্চল, কোন ব্যক্তি, কোন সংগঠন বা কোন দল ইসলামী শরীয়ত উনার দলীল নয় এবং অনুসরণীয়ও নয়। বরং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দলীল হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ এবং উনাদের আলোকে পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ। আর অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হচ্ছেন একমাত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার যারা পরির্পূণ অনুসারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। কেননা, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْـتَـهُوْا ۚ وَاتَّـقُوا اللهَ ۖ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “মহাসম্মানিত রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি তোমাদের যা আদেশ মুবারক করেন, তা আঁকড়িয়ে ধর। আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেন, তা থেকে বিরত থাক। এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানি ও পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। আর উনাকে এবং উনার আদর্শ মুবারককে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন।

উল্লেখ্য, যারা প্রকৃত আলিম অর্থাৎ উলামায়ে হক্কানী রব্বানী উনারা মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই অনুসরণ করেন ফলে উনার মতোই একই ধরনের সুন্নতী  কোর্তা বা পোশাক উনারা পরিধান করেন। উনারা কখনোই ভিন্ন ভিন্ন কোর্তা বা পোশাক পরিধান করেন না।

আরো উল্লেখ্য, আলিম তো অবশ্যই যারা সাধারণ মু’মিন মুসলমান তাদের জন্যও মনগড়ভাবে কোন আমল করার অধিকার বা ইখতিয়ার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই। এ প্রসঙ্গেই মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُـؤْمِنُـوْنَ حَتّٰى يُـحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَـيْـنَـهُمْ ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِىْۤ اَنْـفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ : “আপনার দমহান রব তায়ালা উনার কসম, তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্ট সমস্ত মত বিরোধে বা সমস্ত বিষয়ে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসাবে মেনে না নিবে। শুধু মেনে নিবে এতটুকু নয়, মেনে তো নিতেই হবে বরং সাথে সাথে আপনার ফায়সালাকৃত বিষয়ে তারা তাদের নিজেদের অন্তরেও কোন রকম চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল অর্থাৎ কোন প্রকার সংকীর্ণতাও অনুভব করতে পারবে না। শুধু এতটুকুই নয় বরং সাথে সাথে তা আনুগত্যের সহিত আনন্দচিত্তেও মেনে না নিবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

তাই, আলিম পরিচয় দিয়ে যারা সম্মানিত শরীয়ত ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ বা বিপরীত ভিন্ন ভিন্ন কোর্তা বা পোশাক পরিধান করবে তা আদৌ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনুসরণ ও উদারতা নয়। বরং তা তাদের নফসের অনুসরণ। আর যারা নফসের অনুসারী তারাই সীমালঙ্ঘনকারী এবং তারাই জাহান্নামী। নাঊযুবিল্লাহ! (চলবে)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব