স্বীয় সন্তানদেরকে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী- সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরযে আইন

সংখ্যা: ২৪৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

স্বীয় সন্তানদেরকে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী- সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরযে আইন


এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَدّبُوْا اَوْلَادَكُمْ عَلـٰى ثَلَاثِ خِصَالٍ حُبّ نَـبِـيّكُمْ وَحُبّ اَهْلِ بَيْتِهٖ وَقِرَاءَةِ الْقُرْاٰنِ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করো ১. তোমাদের যিনি নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত।” সুবহানাল্লাহ! (আল জামিউছ ছগীর ফী হাদীছিল বাশীর ওয়ান নাযীর লিস সুয়ূত্বী ১/২২, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৫৭, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২/৮৯, দায়লামী শরীফ, কাশফুল খফা লিল ‘আজূলানী ১/৮৫ ইত্যাদি)

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক পিতা-মাতার উপর স্বীয় সন্তানদেরকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয করে দিয়েছেন ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ!

এখানে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপর উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হয়েছে সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ!

প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় হচ্ছে সরাসরি সম্মানিত ঈমান উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর শেষোক্ত বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় শিক্ষার মাধ্যমে ঈমান লাভ হবে। আর শেষোক্ত বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে আমল সুন্দর হবে।

আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, ঈমান পরিশুদ্ধ না থাকলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যায়। আর ঈমান ঠিক থাকলে, আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও সে এক সময় নাজাত পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন কারো অন্তরে যদি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত থাকে, নিঃসন্দেহে সে নাজাত পাবে। যদিও তার আমলে কিছু ত্রুটি থাকুক না কেন।

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَـجَـلِـىّ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيْدًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُوْرًا لَّهٗ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ تَائِبًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُّسْتَكْمِلَ الْاِيْـمَانِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشَّرَهٗ مَلَكُ الْمَوْتِ بِالْـجَنَّةِ ثُـمَّ مُنْكَرٌ وَّنَكِيْرٌ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ اِلَـى الْـجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوْسُ اِلـٰى بَيْتِ زَوْجِهَا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ الله لَهٗ فِـىْ قَبْرِهٖ بَابَيْنِ اِلَـى الْـجَنَّةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ الله قَبْرَهٗ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْـمَةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلَى السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি অতঃপর হযরত মুনকার ও নাকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে কনেকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ব্যক্তি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উপর ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ الله وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرْبَعَةٌ اَنَا لَـهُمْ شَفِيْعٌ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُكْرِمُ لـِذُرّيَـتِـىْ وَالْقَاضِىْ لَـهُمْ حَوَائِجَهُمْ وَالسَّاعِىْ لَـهُمْ فِـىْ اُمُوْرِهِمْ عِنْدَ مَا اضْطَرُّوْا اِلَيْهِ وَالْمُحِبُّ لَـهُمْ بِقَلْبِهٖ وَلِسَانِهٖ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন চার শ্রেণীর লোকদের সুপারিশ করবো এক. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবে। দুই. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মালী তথা আর্থিকভাবে খিদমত মুবারক উনার আনজাম দিবে। তিন. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জান দিয়ে তথা শরীরিকভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দিবে। এবং চার. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অন্তরে মুহব্বত করবে এবং জবানে উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবে। সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি’, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৭/১১, দায়লামী শরীফ)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন। কারো বাহ্যিক আমল সুন্দর; কিন্তু ঈমানে ত্রুটি রয়েছে, তাহলে সে নিশ্চিত জাহান্নামী। অর্থাৎ কারো পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বিশুদ্ধ এবং অতি সুন্দর; কিন্তু তার অন্তরে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে, তাহলে তার পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে সে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوْبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ اٰيِسٌ مِّنْ رَّحْـمَةِ اللهِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَشُمَّ رَائِحَةَ الْـجنَّةِ.

অর্থ: “ সাবধান! আর যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ اَنَّ رَجُلًا صَفَّ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْـمَقَامِ فَصَلّى وَصَامَ ثُـمَّ لَقِىَ اللهَ وَهُوَ مُبْغِضٌ لِّاَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ النَّارَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকন ইয়ামেন এবং মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে। অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে। কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (যাখাইরুল ‘উক্ববা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, খ্বছায়িছুল কুবরা ২/৪৬৫)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحَسَنِ بْنِ عَلِـىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُبْغِضُنَا وَلَا يَحْسُدُنَا اَحَدٌ اِلَّا ذِيْدَ عَنِ الْـحَوْضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِسِيَاطٍ مِّنْ نَّارٍ.

অর্থ: “ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান ইবনে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনাদের বিরোধীতা করবে, উনাদের সাথে হিংসা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে সম্মানিত হাউযে কাওছার হতে আগুনের দোররা দ্বারা প্রহার করে তাড়িয়ে দেয়া হবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৭২, আদ দুররুল মানছূর ফিত তাফসীরি বিল মা’ছূর ১৩/৫১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৮, আছ ছওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ ২/৫০৪ )

অন্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে এসেছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعْتُهٗ وَهُوَ يَقُوْلُ يَا اَيُّهَا النَّاسُ مَنْ اَبْغَضَنَا اَهْلَ الْبَيْتِ حَشَّرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَهُوْدِيًّا فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّى قَالَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّى وَزَعِمَ اَنَّهٗ مُسْلِمٌ.

অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা মুবারক দিলেন এবং বলতে থাকলেন যে, হে লোক সকল! যারা আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, উনাদের বিরোধিতা করলো, তাদের হাশর-নশর হবে ইহুদীদের সাথে।

আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদিও তারা রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ! যদিও তারা রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দাবি করে যে, তারা মুসলমান। (তা সত্ত্বেও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করার কারণে, উনাদের শত্রু হওয়ার কারণে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সমস্ত ইবাদত বিনষ্ট করে দিয়ে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন ইহুদীদের দলভুক্ত করে উঠাবেন।)” (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিতত্ববারণী ৪/২১২, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ১০/৪৭৫, জামউল জাওয়ামি‘ লিস সুয়ূত্বী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৯/৭১২, তারীখে জুরজান ৩৬৯ পৃষ্ঠা)

এরূপ আরো অনেক সম্মানিত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ রয়েছে এবং এই বিষয়ে বাস্তবে অসংখ্য ঘটনাও রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অতএব, প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য স্বীয় সন্তানদেরকে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত শিক্ষা দেয়া ফরয উনার উপর ফরয। শুধু তাই নয়, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ অন্য সকল যাহিরী ইলম শিক্ষা দেয়ার চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। সুবহানাল্লাহ!

আর মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হলে অবশ্যই উনাদের সম্পর্কে জানতে হবে, উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক জানতে হবে, উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক জানতে হবে। অন্যথায় উনাদেরকে মুহব্বত করা আদৌ সম্ভব নয়।

সুতরাং প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে স্বীয় সন্তানদেরকে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সকল দেশের সরকারের জন্য ফরয আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!


-আল্লামা মুহম্মদ ছাদিক্ব ইবনে ছিদ্দীক্ব।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম