হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত পরিচিতি মুবারক এবং বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক

সংখ্যা: ২৬৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

اُمَّهَاتٌ (উম্মাহাত) শব্দ মুবারকখানা اُمٌّ (উম্মুন) শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অর্থ মাতাগণ। আর الْمُؤْمِنِيْنَ (আল মু’মিনীন) শব্দ মুবারকখানা الْمُؤْمِن (আল মু’মিন) শব্দ মুবারক উনার বহুবচন। অর্থ মু’মিনগণ। আর الْمُؤْمِنِيْنَ (আল মু’মিনীন) শব্দ মুবারক উনার শুরুতে যে ال (আলিফ লাম) রয়েছে, তা হচ্ছে ال (আলিফ লামে) ইস্তিগরক্বি।

সুতরাং উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সবুহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমীনে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমীনে আসবেন উনাদের প্রত্যেকেরই মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বহহারাত আলাইহিন্নাস সালাম তথা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেহেতু একমাত্র যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম, তাই উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!

এই বিষয়টি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল করে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে হাক্বীক্বী ফায়ছালা মুবারক করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের নিকট তাদের জানের চেয়ে অধিক প্রিয়, তাদের মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার মহাসম্মানিতা ‘আযওয়াজুম মুত্বহহারাত’ (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৬)

হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা কতো জন এই নিয়ে অনেকেই অনেক ইখতিলাফ করেছেন। আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সমস্ত ইখতিলাফকে মিটিয়ে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট ১৩ জন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেয়ার মুবারক ধারাবাহিকক্রমে উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন-

১.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ঊলা কুবরা (হযরত খাদীজা) আলাইহাস সালাম।

২.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ (হযরত সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ) আলাইহাস সালাম,

৩.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ (হযরত আয়িশা) আলাইহাস সালাম।

৪.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ ইবনাতু আবীহা (হযরত হাফছাহ) আলাইহাস সালাম।

৫.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল খামিসাহ উম্মুল মাসাকিন (হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমাহ) আলাইহাস সালাম।

৬.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ (হযরত উম্মু সালামাহ বিনতে আবী উমাইয়্যাহ) আলাইহাস সালাম।

৭.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান (হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ) আলাইহাস সালাম।

৮.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছামিনাহ (হযরত জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ) আলাইহাস সালাম।

৯.         উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ (হযরত রায়হানাহ বিনতে শাম‘ঊন) আলাইহাস সালাম।

১০.       উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল ‘আশিরাহ (হযরত ছফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াই বিনতে আখত্বব) আলাইহাস সালাম।

১১.       উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার (হযরত উম্মু হাবীবাহ বিনতে আবী সুফিয়ান) আলাইহাস সালাম।

১২.       উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার (হযরত মারিয়াহ ক্বিবতিয়াহ) আলাইহাস সালাম।

১৩.      উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ‘আশার (হযরত মাইমূনাহ বিনতে হারিছ) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন:

যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের নিকট তাদের জানের চেয়ে অধিক প্রিয়, তাদের মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার মহাসম্মানিতা ‘আযওয়াজুম মুত্বহহারাত’ (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৬)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মু’মিন বলতে একমাত্র যিনি খ¦ালিক মালিক্ব রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলেই উদ্দেশ্য। সুবহানাল্লাহ! উনারা সকলেই মু’মিন। উনারা প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! কোন হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক দেয়া হয়নি, কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত রিসালাত মুবারক দেয়া হয়নি; যতক্ষণ পর্যন্ত উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক না এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনার পরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িানাতবাসী সকলেরই মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

আর সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رِضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ  عَلَیْهِ وَسَلَّمَ الْـجَنَّةُ تَـحْتَ اَقْدَامِ الْاُمَّهَاتِ.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত জান্নাত মুবারক সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে।” সুবহানাল্লাহ! (জামি‘উছ ছগীর ১/৫৬৩, আল কুনা ওয়াল আসমা’ ৩/১০৯১, মুসনাদে শিহাব ১/১০২, আল জামি’ লিখত্বীব বাগদাদী ৪/৪৬১, আল ফাওয়াইদ লিআবী শায়েখ ইস্পাহানী ১/২৬, আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/২৮১, মূজিবাতুল জান্নাহ ১/১১০, ফায়যুল ক্বদীর ৩/৪৭৭, আদ দুররুল মুনতাছিরাহ লিস সুয়ূত্বী ১/৯, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ২/৬২, জামি‘উল আহাদীছ ১২/৮০, দায়লামী শরীফ ২/১১৬, কাশফুল খফা ১/৩৩৫, কানযুল ‘উম্মাল ১৬/৪৬১, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/১১৬০৭, ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, মিরক্বাত শরীফ ইত্যাদি)

অর্থাৎ সন্তানদের সম্মানিত জান্নাত মুবারক সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!

সেটাই আমরা দেখতে পাই যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একই সাথে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! সেই সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একমাত্র মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার অনেক নিচে থাকবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত জান্নাত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান

মুবারক সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে:

পবিত্র ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

১ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيـْهَا السَّلَامُ اَنَّهَا قَالَتْ كُنْتُ اَكُوْنُ نَائِمَةً وَّرِجْلَاىَ بَيْنَ يَدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلّـِىْ مِنَ اللَّيْلِ فَاِذَا اَرَادَ اَنْ يَّسْجُدَ ضَرَبَ رِجْلَىَّ فَقَبَضْتُّهُمَا فَسَجَدَ.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঘুমিয়ে থাকতাম। আমার সম্মানিত ক্বদম (পা) মুবারক দুটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে থাকত। তিনি রাতে নামায মুবারক পড়তেন। যখন সিজদা মুবারক করতে চাইতেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত হাত মুবারক দিয়ে আমার সম্মানিত ক্বদম মুবারক সরিয়ে দিতেন। আমি সম্মানিত ক্বদম মুবারক সঙ্কোচিত করে নিতাম। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারক করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, মুস্তাখরজে আবী আওয়ানাহ শরীফ ১/১৮৯)

হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে অপর বর্ণনায় এসেছে-

২ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيـْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كُنْتُ اَنَامُ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَاىَ فِي قِبْلَتِهٖ فَاِذَا سَجَدَ غَمَزَنِـىْ فَقَبَضْتُّ رِجْلَىَّ وَاِذَا قَامَ بَسَطْـتُّهُمَا.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম আর আমার সম্মানিত ক্বদম মুবারক দুটি উনার সম্মানিত ক্বিবলা মুবারক বরাবর থাকতো। তাই তিনি যখন (রাতে নামায পড়ার সময়) সিজদা মুবারক করতেন, তখন তিনি উনার হাত মুবারক দিয়ে আমার সম্মানিত ক্বদম মুবারক সরিয়ে দিতেন। আমি সম্মানিত ক্বদম মুবারক সঙ্কোচিত করে নিতাম। আর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিয়াম করতেন (নামায মুবারক-এ দাঁড়াতেন), তখন আমি সম্মানিত ক্বদম মুবারক প্রসারিত করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুয়াত্ত্বা শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, আহকামুশ শরীয়াহ ২/১১৩, শরহুস সুন্নাহ শরীফ ২/৪৫৭, মুসনাদে সিরাজ ১/১৫৮, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ২/৩২, আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী ২/৩৯১, আল মুখতাছরুন নাছীহ ১/৩৪০, মুস্তাখরজে আবী আওয়ানাহ শরীফ ১/১৮৯ ইত্যাদি)

উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা গেলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন রাতে নামায মুবারক পড়তে উঠতেন, তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক দুটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে থাকতো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারক করার সময় উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক নিজ হাত মুবারক-এ সরিয়ে দিতেন। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক সঙ্কোচিত করে নিতেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিয়াম মুবারক করতেন, তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক প্রসারিত করতেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পুণরায় সিজদা মুবারক-এ যেতেন আবার উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক নিজ হাত মুবারক-এ সরিয়ে দিতেন এবং উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক সঙ্কোচিত করে নিতেন। তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারক-এ যেতেন। এইভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নামায মুবারক সম্পন্ন করতেন। সুবহানাল্লাহ!

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক উনার বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সুবহানাল্লাহ! যেখানে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বেকারার-পেরেশান কিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া যায়, কিভাবে উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক উনার ধূলি মুবারক নেয়া যায়, উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক নেয়া যায়, আর সেখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে সম্মানিত নামায মুবারক আদায় করার সময় হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক নিজ হাত মুবারক-এ সরিয়ে দিয়ে সিজদা মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! অথচ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে পৃথিবীর বুকে এমন কেউ নেই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক আদায় করবেন আর এমতাবস্থায় তার পা উনার সম্মুখে থাকবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যে ব্যক্তি এরূপ কল্পনাও করবে, সে সর্বশেষ স্তরের কাট্টা কাফির এবং চিরজাহান্নামী হবে। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক-এ স্বীয় হাত মুবারক-এ কারো পা সরিয়ে দিয়ে সিজদা মুবারক-এ যাবেন এটা তো প্রশ্নোই উঠে না। যদি তাই হয়, তাহলে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক কত বেমেছাল তা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এই বেমেছাল সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক উনার বিষয়টি বর্ণিত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যদিও সরাসরি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে, তথাপি অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ক্ষেত্রেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক উনার বিষয়টি হুবহু একই রকম, কোন পার্থক্য নেই। সুবহানাল্লাহ! কেউ যদি পার্থক্য সূচনা করে, তার ঈমান থাকবে না। তবে এক একজনের ক্ষেত্রে একেকভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে।

যেমন বর্ণিত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে বেমেছাল মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক উনার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। সুবহানাল্লাহ! যদি তাই হয়, তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান এবং পবিত্রতা মুবারক উনাদের বিষয়টি কত বেমেছাল সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি কেউ কখনো চিন্তা-কল্পনা করে মিলাতে পারবে না। তবে এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছে, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে হযরত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুাবরক উপলব্ধি করার মাধ্যমে উনাদের হাক্বীক্বী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত, মুহব্বত-মা’রিফত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

আল্লামা মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেন

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, সাইয়্যিদুল ফারীক্বাইন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ পালন করে খুশি প্রকাশ করেন

হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের খিলাফতকালে নাবিইয়ুর রহমাহ, নাজিইয়ুল্লাহ, নূরুম মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম, সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেছেন

বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম, সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয হওয়ার প্রমাণ