৭ বছরেও হয়নি পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নীতিমালা। প্রতিনিয়ত ঘটছে সন্তান কর্তৃক অসহায় পিতা-মাতাকে নির্যাতনের ঘটনা। দেশে বাড়ছে পশ্চিমা ‘ওল্ডহোম’ সংস্কৃতি।শুধু নীতিমালা বাস্তবায়নেই নয় বরং দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ প্রচার-প্রসারেই রয়েছে এর সুষ্ঠ সমাধান।

সংখ্যা: ২৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হেডিং হয়েছে, “বৃদ্ধা মায়ের আশ্রয় এখন নৌকার নীচে”

খবরে বলা হয়, “এক বৃদ্ধা মাকে দেড় বছরের বেশি বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তারই জন্মদাতা সন্তান। এ বাড়ি ও বাড়িতে অবস্থানের পর অবশেষে সেই মায়ের আশ্রয় এখন রাস্তার উপর রাখা একটি নৌকার নীচে। ঘটনাটি নড়াইলের।”

– গত ১১ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীতে অসুস্থ হওয়ায় মাকে রাস্তায় ফেলে গেলো ছেলে

– গত ১৩ জুন বরগুনায় বয়স্ক ভাতার টাকার জন্য মাকে রাস্তায় ফেলে গেলো সন্তান

– গত ১লা জুলাই নারায়নগঞ্জে বৃদ্ধা মাকে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে গেলো সন্তানরা

– গত ২৬ মে জয়পুরহাটে জমিজমা লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে ঈদের দিন রাস্তায় ফেলে গেলো ৩ ছেলে

শুধু উল্লেখিত হেডিংই নয়। এরূপ হেডিং রয়েছে আরো শত শত। আর বাস্তবে ঘটনা ঘটছে হাজার হাজার। কিন্তু সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয়ভাবে হচ্ছেনা এসবের প্রতিকার।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমান প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাড়াবে প্রায় ২ কোটিতে। বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রবীণ অসুস্থ, অসহায়, অবহেলিত, নিঃসঙ্গ ও সেবাহীন জীবনযাপন করছেন। আর কারণ হিসেবে প্রথমেই চলে আসছে পরিবার ও নিজ সন্তান থেকে নিপীড়ণ ও নির্যাতনের শিকার। জীবনের শেষ সময়ে এসে পরিবারের বয়স্ক পিতা-মাতা আপন সন্তানের হাতেই বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে। নিজ পরিবারে জায়গা না দিয়ে সন্তান তাদের জোরপূর্বক রেখে আসছে বৃদ্ধাশ্রমে। এমনকী ফেলে দিচ্ছে রাস্তায়। নাঊযুবিল্লাহ! এতে করে সমাজে ক্রমেই বেড়ে চলেছে অমানবিকতা, নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধের চেতনা। আর এই বিষয়টাকে সমাজ থেকে নিরসন করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৩ সালেই পিতামাতার ভরনপোষণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলো। কিন্তু নীতিমালা খসড়াতেই আটকে আছে গত ৭ বছর ধরে। বিধিমালা আর চূড়ান্ত হচ্ছে না। এর ফলে প্রতিদিনই খবরের কাগজে আসছে সন্তান কর্তৃক অসহায় বয়স্ক পিতামাতার প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্যের নানা অমানবিক খবর।

উল্লেখ্য, ‘খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, পিতামাতার প্রতি সর্বাবস্থায় মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও যতœসহকারে দেখভাল করতে হবে। পিতামাতার মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পিতামাতার শারীরিক, মানসিক বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় সেবা শুশ্রুষা, পথ্য ও অন্যান্য উপকরণ যথাসম্ভব দ্রুত সরবরাহ করতে হবে। পিতামাতার নিজস্ব সম্পদ বিনষ্ট করা যাবে না। খসড়া বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, সন্তান পিতামাতাকে সঙ্গে রাখতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে পিতামাতা যার সঙ্গে বসবাস করতে চান, তা প্রধান্য দিতে হবে। অন্য সন্তারা সমভাবে পিতামাতার ভরণ-পোষণ ব্যয় বহন করবেন।’

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে আমাদের দেশে বৃদ্ধ পিতা-মাতা কত যে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন, বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায় না। অনেক সময় বৃদ্ধ পিতা-মাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়ি পাহারা, সন্তান দেখাশোনা, বাজার করানো, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, ধমক দিয়ে কথা বলা, অপমানজনক আচরণ করা, চিকিৎসা না করানো, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে আলাদা রাখা, এমনকি শেষ সম্বল পেনশনের টাকা, জমি-জায়গা, বাড়ি পর্যন্ত জোর করে লিখে নেওয়া হচ্ছে। অনেক বাবা-মা সন্তান ও পুত্রবধুর কাছ থেকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনকি মাদকাসক্ত ছেলে মেয়ে, বাবা-মাকে হত্যা পর্যন্ত করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশক আগেও বাংলাদেশে সন্তান কর্তৃক পিতামাতা নির্যাতনের ঘটনা শোনাই যেতোনা। বৃদ্ধাশ্রম নামক কোনো শব্দও ছিলোনা। এখনও বাংলাদেশের লাখ লাখ পরিবারে বয়স্ক পিতা-মাতা অত্যন্ত গণমাণ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এরপরও দেশে বৃদ্ধাশ্রম বাড়ছে। এটি হচ্ছে মূলত পশ্চিমা অপসংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রবেশ করার কুফল।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৯৮ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলিম। বাংলাদেশ সরকার নিজেদের পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বাস্তবায়নকারী সরকার হিসেবে নিজেদের দাবী করে থাকে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত পিতামাতার প্রতি সন্তানের অবিচারের ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তৃব্য সম্পর্কে শক্তভাবে আদেশ-নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা বণী ইসরাইল শরীফ উনার ২৩ ও ২৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত-বন্দেগী করো না এবং পিতা-মাতার প্রতি ইহসান, আদব রক্ষা করো। উনাদের দু’জন অথবা একজনকে বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অবস্থায় পেলে উনাদের কোন আদেশ-নির্দেশ পালনে কোন উহ্ বলো না, উনাদেরকে উহ্ বলার সুযোগ দিওনা এবং উনাদেরকে কখনও ধমক দিয়ো না। আর পিতা-মাতাদের সাথে শরাফতপূর্ণ আদবপূর্ণ কথা বলো। আর পিতা-মাতার জন্য তোমাদের দয়ার হাতগুলো বিছায়ে দাও, তোমার সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ি তোমার পিতা-মাতার প্রতি ইহসান করো। (আর মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করো) হে বারী ইলাহী! (আমাদের পিতা-মাতা) উনাদের উভয়ের প্রতি আপনি রহম করুন, যেমন উনারা ছোট বেলায় আমাদের উপর দয়া-ইহসান তথা আমাদেরকে লালন-পালন করেছেন”।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার উদ্দেশ্যে পিতা-মাতার আনুগত্য করে তার জন্য পবিত্র জান্নাতের দুটি দরজা খোলা থাকবে; আর যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হয় তার জন্য জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা থাকবে।’

মূলত দেশের সমাজব্যবস্থা আজ নাস্তিক্যবাদী ও পশ্চিমা ধাচে গড়ে উঠছে। যার কারণে সমাজের মানুষেরা নিজেদের মুসলমান দাবী করলেও তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও চেতনা থেকে বহু দুরে সরে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ আপন পিতামাতার প্রতি নির্যাতন করতেও তারা দ্বিধাবোধ করছেনা। তাদের রুখতে সরকার থেকে আইন করা হচ্ছে, যা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তবে যতই আইনের খসড়া কিংবা কঠোর প্রয়োগ করা হোক না কেন যতক্ষন না পর্যন্ত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে সমাজব্যবস্থা প্রণয়ন না করা হবে, যুবসমাজের প্রতি দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন না করা হবে ততক্ষন পর্যন্ত সমাজে পশ্চিমা এই ‘ওল্ডহোম’ সংস্কৃতি এবং পিতামাতা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, পিতামাতার প্রতি সন্তানের নির্যাতন, নিপীড়ণের এই কুফরী রুখতে সরকারের উচিত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ চেতনা দেশবাসীর মধ্যে প্রচার ও প্রসার করা।

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালী উল্লাহ, মুন্সীগঞ্জ।

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৩

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩১