আরবী বছরের নবম মাস রমাদ্বান। এ মাসটি মহান ও বরকতময়। এ মাসের মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস হতে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। আল্লাহ পাক এ মাসের দিনগুলোতে রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা তারাবীহ্র নামায পড়া সুন্নত করে দিয়েছেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম)
এ মুবারক মাসে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি নফল আমল অন্যান্য মাসে একটি ফরয আমলের ছওয়াবের সমান এবং একটি ফরয আমল অন্যান্য মাসের সত্তরটি ফরয আমলের সমান। তবে একটি পাপের ক্ষেত্রে একটি পাপই লিখা হয়ে থাকে।
এ মাসের প্রথম দশদিন রহমতের। দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভের। অর্থাৎ প্রথম দশদিনে এত অধিক রহমত নাযিল করা হয় যা বছরের অন্যান্য দিনে নাযিল করা হয়না এবং দ্বিতীয় দশদিনে এত অধিক ক্ষমা করা হয় যা বছরের অন্যান্য দিনে ক্ষমা করা হয়না এবং তৃতীয় দশদিনে এত অধিক মুক্তি দান করা হয় যা অন্যান্য দিনে করা হয়না।
এটি কুরআন শরীফ নাযিলের মাস। অর্থাৎ এ মাসেই কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করা হয়। এবং তেইশ বছর ব্যাপী নাযিল শেষ করা হয়। এর মধ্যে প্রতি রমাদ্বান শরীফে যে পরিমাণ নাযিল করা হতো হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনাতেন আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তিলাওয়াত করতেন এবং তা হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম শুনতেন।
মূলত: কুরআন শরীফই হচ্ছে ইলমের মূল। তাই প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জরুরত আন্দাজ এর ইলম্ অর্জন করা ফরয। কাজেই যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়া জানেনা তার জন্য উত্তম ও সুন্নত হচ্ছে এ মাসেই শিক্ষা গ্রহণ করা। আর যে পড়া জানে তার জন্য উত্তম ও সুন্নত হচ্ছে এ মাসে কুরআন শরীফ খতম করা।
উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম যিনি দ্বিতীয় শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি রমাদ্বান শরীফে একষট্টি বার কুরআন শরীফ খতম করতেন। প্রতি দিনে এক খতম এবং রাতে এক খতম; এভাবে (ত্রিশ+ত্রিশ)= ষাট খতম। আর সম্পূর্ণ তারাবীহ্র নামাযে এক খতম। প্রকৃতপক্ষে এটা তাঁর কারামতের অন্তর্ভুক্ত।
মূলত: প্রত্যেক শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমামই অন্যান্য মাস থেকে রমাদ্বান মাসে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও খতমের জোর তাকিদ দিয়েছেন। যার বাস্তব নমুনা আমরা দেখতে পাই বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর যিনি মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মুবারক আমলের মধ্যে। তিনি নিজে খতম করেন আবার খতম শুনেও থাকেন যা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদে রমাদ্বান শরীফের পহেলা তারিখ থেকে বিশ তারিখ পর্যন্ত কুরআন শরীফ ছহীহ্ভাবে শিক্ষার জন্য তা’লীমের ব্যবস্থা করেন। অতঃপর ই’তিকাফের কারণে পরবর্তী দশদিন তা’লীম বন্ধ রাখেন।
সংক্ষেপে এ সত্য কথাটি উম্মাহ্কে না বলেই পারছিনা যে, একজন মুসলমানের জন্য মাহে রমাদ্বান শরীফে কি করনীয় অর্থাৎ সে রমাদ্বান মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে পুরো মাসটি কিরূপ আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে ইবাদত-বন্দিগী করবে, কখন ও কি নিয়মে তারাবীহ্ নামায পড়বে, তারাবীহ্ শেষ করার পর থেকে সাহ্রীর পূর্ব পর্যন্ত কিভাবে অতিবাহিত করবে, সাহ্রী কি দিয়ে করবে এবং কখন করবে, ফজরের নামায কখন পড়বে, কখন বিশ্রাম নিবে, দিনের বেলায় কি করবে, কোন নিয়মে ও কি দিয়ে ইফতার করবে এবং শেষ দশদিন ই’তিকাফ কিভাবে করবে, লাইলাতুল ক্বদর কবে ও কিভাবে তা যাপন করবে ইত্যাদি জানার জন্যে যিনি যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম তাঁর শরানাপন্ন হওয়া উচিত। অন্যথায় ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক সে নিম্নবর্ণিত হাদীছ শরীফের মিছদাক হয়ে যাবে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কতক রোযাদার এরূপ আছে যাদের রোযা দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ব্যতীত কিছুই লাভ হয়না এবং কতক রাতে নামায আদায়কারী আছে যাদের রাতে জাগরণ ব্যতীত কিছুই লাভ হয়না।” (দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)
মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা