ছহীহ হদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কম আযাব ভোগী ব্যক্তির অবস্থা হবে এই যে, তার দু’পায়ের তলায় দু’টো উত্তপ্ত লোহার জুতা পড়ানো হবে। তাতে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে যেমনিভাবে কাচ তামার পাত্রে টগবগ করে ফুটতে থাকে।” আলোচ্য হাদীছ শরীফে কম আযাব ভোগকারীদের অবস্থা বলা হয়েছে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, এই যদি হয় কম আযাবের অবস্থা তাহলে কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক যেখানে বেশী আযাব তথা কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন তাদের অবস্থা কি দাঁড়াবে? উল্লেখ্য, কুরআন শরীফে যাদেরকে কঠিন আযাবের দ্বারা গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে তাদের এক প্রকার সম্পর্কে সূরা বাক্বারায় ইরশাদ হয়েছে “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অবিশ্বাস কর। যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির দ্বারা তাদের গ্রেফতার করা হবে। আল্লাহ পাক তোমাদের কাজ সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা বাক্বারা/ ৮৫) সুতরাং যে সমস্ত তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারী ইসলামের কথা বলে আর হালুয়া-রুটির ভাগ পেয়ে পিছিয়ে যায়, সাধারণ মানুষকে যেনোতেনো বুঝ দিয়ে তাদের ইসলামী খোলস আকঁড়ে রাখে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, আলিমুল গায়িব আল্লাহ পাক তাদের ধোঁকাবাজি সম্পর্কে অনবগত নন এবং অচিরেই তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দ্বারা গ্রেফতার করবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে যে, “খতীব উবায়দুল হক এবং মৌলবাদী সংগঠন জমিয়তে উলমায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ওরফে মাহিউদ্দীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মত মহিলা কুস্তি অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি দিয়েছে।” (দৈনিক সংবাদ, ১ম পৃষ্ঠা, ২২ জুলাই ’০৪) কুস্তি ফেডারেশন, তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের থেকে এই সম্মতি আদায় করেছে। খতীব, মাহিউদ্দিন গং তাদের ভাষ্যে বলেছে যে, “তারা যতটা অশালীন মনে করেছিলো ততটা অশালীন ভাবে এই মহিলা কুস্তি হবেনা।”
এখানে এর আগের ঘটনাবলী উল্লেখ করা প্রয়োজন। গত ২ জুলাই ২০০৪ বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমুয়ার বয়ানে তথাকথিত খতীব ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলা কুস্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায়। একইভাবে মাহিউদ্দীনও তার তথাকথিত জমিয়তে উলামায়ে সংগঠনের ব্যানারে তীব্র প্রতিবাদ মিছিল মিটিং করে। এমনকি বিবিসিতেও সে মহিলা কুস্তির বিরুদ্ধে ইসলামের শক্ত নিষেধবাণী শোনায়। কিন্তু পনের দিন পর তারাই আবার মহিলা কুস্তি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়।
উল্লেখ্য, ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলা কুস্তি নানাভাবে গর্হীত কাজ। যা খতীব ও মাহিউদ্দীন গংদের ঠিকই জানা রয়েছে।
খতীব উবায়দুল হক ও মাহিউদ্দীন গং এর জানা রয়েছে যে, কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক মেয়েদের শুধু ছতর ঢাকার ব্যাপারেই নির্দেশ দেননি পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক বিষয়েও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন,
ولايضرين بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن.
“নারীরা যেন সজোরে পদক্ষেপ না করে যদ্দরুন তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে যায়।”(সূরা নূর/৩১)
এতদ্বপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন নিক্ষিপ্ত হয় খতীব ও মাহিউদ্দীন গং এর প্রতিঃ তারা যে মহিলাদের কুস্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তাতে মহিলারা যদি ট্রাকসুটও পড়ে থাকে তাহলে তাদের লাফালাফি-মারামারির কি হুকুম হবে? উল্লিখিত আয়াত শরীফে যেখানে সজোরে পদক্ষেপই নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে মহিলা কুস্তির ফ্লাইং কিক এর ব্যাপারে মাহিউদ্দীন ও খতীব গং এর ফতওয়া কৈ যাবে? পাশাপাশি মহিলা কুস্তিগীররা ট্রাকসুট পড়লেও তারা যে টাইট ট্রাকসুট পড়বে এবং যেভাবে লাফালাফি ও মারামারি করবে তাতে তাদের আকৃতি অবয়ব অবশ্যই বিশেষভাবে প্রকাশিত হবে। অথচ আলোচ্য আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, “নারীরা যেন সজোরে পদক্ষেপ না করে যদ্দরুন তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে যায়।” অতএব, খতীব ও মাহিউদ্দীন গং যে উল্লিখিত আয়াত শরীফের বিরোধিতা করলো, অবমাননা করলো কুরআন শরীফের বিপরীত ফতওয়া দিলো তার কি হবে? আর খতীব ও মাহিউদ্দীন গং মহিলা কুস্তি অনুষ্ঠানের প্রতি অনুমতি দিয়ে শুধু একটি আয়াত শরীফেরই অবমাননা করেনি বরং তারা অনেক অনেক আয়াত শরীফ প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে, অবমাননা করেছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن.
“হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার সহধর্মিণী ও কন্যাগণকে এবং মু’মিনদের স্ত্রীগণকে বলুন তাঁরা যেন তাঁদের চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করে।” (সূরা আহযাব/৫৯) আরো ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা তাঁদের (মহিলাগণের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। আরো ইরশাদ হয়েছে, “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মু’মিনগণকে বলুন, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাঁদের জন্য অত্যধিক পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই তাঁরা যা করে আল্লাহ্ পাক সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। আর মু’মিনা নারীদেরকে বলুন, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাঁদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে।” (সূরা নূর/৩০,৩১) পাঠক! উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ সম্পর্কে খতীব ও মাহিউদ্দীন গংও ভালভাবে অবগত এবং খতীব বা মাওলানা হিসেবে এসব আয়াত শরীফ অস্বীকারের কোন উপায়ই তাদের নেই। কিন্তু তারপরও মাহিউদ্দীন ও খতীব গং শুধুমাত্র হালুয়া-রুটির ভাগ পেয়েই আজকে তাদের অবস্থান থেকে দূরে সরে গেলো। প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় মহিলা কুস্তির বিরুদ্ধে নিস্ফল আস্ফালন করে আবার সুর সুর করে অনুমোদন দিল। আর এ অনুমোদন দিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে তারা প্রকাশ্য কুরআন শরীফের আয়াত অস্বীকার করলো, অবমাননা করলো তথা কুফরী করলো। মূলতঃ মাহিউদ্দীন ও খতীব গং এর মহিলা কুস্তির বিরুদ্ধে মেকি হাক-ডাক যে আসলে হালুয়া-রুটির ভাগ নতুন করে নেয়ার জন্যই ছিল তা এমনিতেই বোঝা যায়। কারণ মহিলা কুস্তি ছাড়া এদেশে নির্বিবাদে চলে আসছে মহিলা সাঁতার, ফ্যাশন শো, কুম্ফু-কারাত, মহিলা বিচ ভলিবল, ইত্যাদি যা প্রায় পোশাক বিহীনভাবেই হচ্ছে এবং তা প্রদর্শিতও হচ্ছে। এছাড়া সিনেমা, টিভি, ভিসিআর, রাস্তায় অশ্লীল পোস্টার ইত্যাদিও অবাধে চলছে। এতসব যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা তার মধ্যে খতীব ও মাহিউদ্দিন গং শুধু মহিলা কুস্তিকেই উল্লেখ করলো কি কারণে? এর দ্বারা কি তারা এই প্রতীয়মান করতে চায় যে, মহিলা কুস্তি ছাড়া দেশে অন্য কোন অশ্লীলতা নেই? প্রসঙ্গত আরো একটি উদাহরণ দেয়া যায়। আন্তর্জাতিক ইহুদী চক্রের প্রভাবে বিশ্বের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা এদেশে এক শর্তে অনুদান দেয়, তাহলো- ‘মহিলাদের ফুটবলে এগিয়ে আনতে হবে। তাদের নিয়ে জাতীয় দল গড়ে তুলতে হবে।’ আর সেই শর্ত মেনেই এগুচ্ছে বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) এই শর্ত না মানলে অনুদানের পুরো অর্থই তারা ফেরত নেবে। এতদ্বপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এখন যথারীতি মহিলা ফুটবল লীগ চলছে। এমনকি বছর দেড়েক আগে ভারত থেকে এদেশে প্রমীলা দল খেলেও গেছে। কিন্তু এ সম্পর্কেও মাহিউদ্দীন ও খতীব গং এর কোন আওয়াজ ছিলনা। এমনকি জাতীয় পর্যায়ের আগে জেলা পর্যায়ে যে মহিলা কুস্তি প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে ৫৪ জনকে বাছাই করা হয়েছে তখনও খতীব ও মাহিউদ্দিন গং বিষয়টি আমলে দেয়নি। তবে হুট করে শুধুমাত্র মহিলা কুস্তির বিরুদ্ধে কেন তাদের এই হঠাৎ লম্ফঝম্প? আর তার সাথে সাথে মাত্র কয়েকদিনের তফাতে বিস্ময়করভাবে অনুমোদনের পেছনে রহস্যই বা কি? অন্য সব অশ্লীলতা আগে থেকেই চলে আসছে বলে সেগুলোর চাইতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় মহিলা কুস্তির বিরোধিতা করলে সহজেই মিডিয়ার দৃষ্টি পাওয়া যাবে, বিবিসি তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত হওয়া যাবে এবং দর কষাকষি তুঙ্গে উঠবে?
মূলতঃ এধরনের অসৎ ইচ্ছা তথা হালুয়া-রুটির ভাগ পাওয়ার মানসিকতা আজকের তাবৎ তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীদের মাঝেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা মৌসুমী আন্দোলনকারীদের মত ইসলামের নামে হঠাৎ হঠাৎ কোন কোন ইস্যু তুলছে আবার কিছু মিললেই চুপ মেরে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে বিরাজমান নারী নেতৃত্ব বেপর্দা-বেহায়া, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিসহ যাবতীয় অনৈসলামিক প্রথা বা রেওয়াজের বিরুদ্ধে তাদের লাগাতার কোন কর্মকা- নেই। তারা ইসলামী খিলাফত, ইসলামী শাসনতন্ত্র, আল্লাহ্র আইন, সৎ লোকের শাসন ইত্যাদির কথা বলছে কিন্তু নারী নেতৃত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকারের সব আইন মেনে নিচ্ছে, সমর্থন জানাচ্ছে। অবস্থাটা দাঁড়াচ্ছে তারা কিতাবের কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছে আবার কিছু চুপিয়ে রাখছে। এ প্রসঙ্গে এ লিখার প্রথমেই আয়াত শরীফ উদ্ধৃত হয়েছে, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস কর এবং কিছু অবিশ্বাস কর। এদের প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ ফরমান, “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা যে, আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়সালা করেছেন তার মধ্যে স্বীয় মত পেশ করা। (যে স্বীয় মত পেশ করলো, সে নাফরমানী করলো) আর যে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানী করে, সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে গোমরাহ বা বিভ্রান্ত।” (সুরা আহ্যাব/৩৬) অতএব, এতক্ষণের আলোচনার প্রেক্ষিতে পাঠক মহলের নিকট প্রশ্ন পাঠক আপনারাই বলুন- (১) খতীব, মাহিউদ্দীন এবং তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানা এবং কিছু অংশ না মান্যকারীদের মধ্যে পড়েনা? (২) সে প্রেক্ষিতে তারা কি পরকালে কঠিন আযাবে গ্রেফতার হওয়ার যোগ্য নয়? (৩) সূরা নূর, সূরা আহযাব সহ বিবৃত আরো অনেক আয়াত শরীফ অস্বীকারের পর তারা কি ঈমানদারের পর্যায়ে পড়ে? (৪) দেশের স্বঘোষিত নাস্তিক, মুরতাদের মত তারাও কি কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ অস্বীকারকারী ও অবমাননাকারী নয়? (৫) যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথ ভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আহযাব/৩৬) ‘সূরা আহযাবে’ বর্ণিত এ আয়াত শরীফের ভিত্তিতে তারা কি প্রকাশ্য গোমরাহ নয়? -মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ