এদেশের মানুষ ইসলাম যথাযথভাবে পালন না করলেও এখনও ইসলামকে খুব ভালবাসে। ইসলামের কথায় তারা অনুপ্রাণিত হয়। ইসলামের বাস্তবায়ন, ইসলামী শক্তির উত্থান, ইসলামী শক্তির বিজয়, ইসলামী নেতৃত্বের অধিষ্ঠান এসবের স্বপ্ন দেখতে তারা ভালবাসে। কাজেই কেউ বা কোন মহল যদি এসব স্বপ্নের কথা শোনায় তখন তারা মোহাবিষ্ট হয়। বিগত নির্বাচনে তথাকথিত ইসলামীপন্থী দলগুলো এরূপ স্বপ্নই সাধারণ মানুষকে দেখিয়েছিলো। তাতে সাধারণ মুসলমান আশা করেছিলে যে, দেশে বিরাজমান অনৈসলামিক আইন পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে, ইসলামী আবহ তৈরী হবে, মানুষের মধ্যে ঈমানী জজ্বা তৈরী হবে। কিন্তু তথাকথিত ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের সংঘাতে সাধারণ মুসলমানের সে স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। সাধারণ মুসলমান আজ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে যে, তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির তল্পীবাহকরা দেশের বিরাজমান কোন অনৈসালামিক আইনের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র নাক গলায়নি, সরকারের প্রতি কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি, ঘৃণাও করেনি। বরং দেশে দিন দিন নগ্ন সংস্কৃতির ছয়লাব হচ্ছে, ব্যাণ্ড শো, ফ্যাশন শো, অডিও, ভিডিও, হেন-তেন নাম দিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগীতা, অশ্লীল থেকে অশ্লীলতার সিনেমা ইত্যাদি হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোন আওয়াজ তুলেনি। অথচ এতদিন যাবত তারা এসব কাজকে মহা অনৈসলামিক আখ্যা দিয়েছে এবং এসব অনৈসলামিক কাজের বিরুদ্ধেই তাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির কারণ বলেছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির পরিনাম হচ্ছে এই যে, এখন দেশের মুসলমানেরা খ্রীষ্টান হয়ে যাচ্ছে এবং এ সম্পর্কে তাদের মুখোশ উন্মোচনকারী পত্রিকা নয় বরং তাদেরই ঘরানার একটি সাপ্তাহিকে জোরালো রিপোর্ট পত্রস্থ হয়ঃ “উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ধর্মান্তরের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। মুসলমান, হিন্দু আর সাঁওতালদের মধ্যে ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুরের ৮টি জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে খ্রীষ্টান মিশনারী। ওই সব চার্চে গত ৫ বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রীষ্টান ধর্মগ্রহণ করেছে। শুধু রংপুরেই কয়েকশ’ যুবক ও দরিদ্র মানুষ অর্থের লোভে খ্রীষ্টান হয়েছে। বেকারত্ব আর দারিদ্রকে পুঁজি করে মিশনারীর লোকজন ধর্মান্তরের টোপ দিচ্ছে মানুষকে। শুধু যুবক-যুবতী আর অভাবী মানুষকেই নয়, কোমলমতি শিশুদেরও খ্রীষ্টান করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে পাদ্রীরা। তারা ৮টি জেলায় কমপক্ষে ৩০/৪০টি নার্সারী স্কুল খুলেছে। এসব স্কুলের ক্লাস রুমে যিশুর ছবিসহ খ্রীষ্টান ধর্মের বিভিন্ন ছবি ও অনুষঙ্গ টানিয়ে রাখা হয়। আর পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ওই সব ছবি দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের খ্রীষ্টান ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয়। পাদ্রীদের এই ধর্মান্তরের মিশন চলতে থাকলে আগামী ১০/১২ বছরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে লক্ষাধিক দরিদ্র ও বেকার যুবক খ্রীষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিশনারী স্কুলগুলোতে যারা সিস্টারের কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিস্টারদের সকলেই খ্রীষ্টান। তবে তাদের কারো কারো পূর্ব পুরুষ খ্রীষ্টান হলেও অনেকের বাবা-মা এক সময় ছিল মুসলমান। ধর্মান্তরের মাধ্যমে তারা যিশু খ্রীষ্টের ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কোমলমতি মুসলমান ছেলেমেয়েদের মিশনারী স্কুলে খ্রীষ্টান ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও স্কুলের সিস্টাররা স্বীকার করেছেন- ‘তারা শিশুদের ন্যায়ের শিক্ষা দেন। যিশু পৃথিবীতে যে শান্তির বারতা নিয়ে এসেছিলেন সেটা ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হয়। তারা জানালেন, খ্রীষ্টানদের মধ্যে ১৭টি গোত্র বাংলাদেশে কাজ করছে। এক প্রতিবাদী বধূর আত্মহত্যাঃ রংপুর জেলার পীরগাছা থানার কৈকুড়ি ইউনিয়মেরন মিলন নামের এক যুবক খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন ৫ বছর আগে। অভাবের সংসারে ধর্মান্তরিত হয়ে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে। কিন্তু মিশনারী থেকে তাকে চাপ দেয়া হয় তার পরিবারের সকলে না হোক অন্তত স্ত্রীকে খ্রীষ্টান করতে হবে। অর্থের লোভ আর মিশনের লোকজনের চাপে মিলন স্ত্রীকে খ্রীষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু তার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হতে রাজি হয়নি। অনেক চেষ্টা এবং প্রক্রিয়ার পরও কাজ না হওয়ায় ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে জানিয়ে দেন যেহেতু আমি খ্রীষ্টান হয়েছি সেহেতু তোমাকেও খ্রীষ্টান হতে হবে। তা না হলে তোমার সঙ্গে আমার সংসার করা চলবে না। তোমাকে আমি ডিভোর্স দেব। কারণ স্বামী এক ধর্ম আর স্ত্রী অন্য ধর্ম পালন করবে সেটা কোন ধর্মেই সমর্থন করে না। হয় তোমাকে খ্রীষ্টান হতে হবে নয়তো তুমি বাপের বাড়ি চলে যাও। ঘর-সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহিলা খ্রীষ্টান হওয়ার প্রস্তাব মেনে নেয়। মহিলাকে তার স্বামী মিলন নিয়ে যায় খ্রীষ্টান মিশনারীতে। সেখানে প্রতি রবিবার (রংপুরে শুক্রবার) প্রার্থনা অনুষ্ঠান হয়। খ্রীষ্টান হওয়ার সকল রীতিনীতি পালন করার পর মহিলাকে বুকের কাপড় খুলতে বলা হয় সীল মারার জন্য (এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নতুন খ্রীষ্টান যারা হয় তাদের পরিচিতি হিসেবে একটা সীল মারা হয়। এই সীল পুরুষদের পশ্চাদাংশে এবং মহিলাদের বুকের নিচে মারা হয়)। মহিলা কাপড় খুলে সীল নিতে রাজি না হওয়ায় জোর করে তার বুকের নিচে খ্রীষ্টান ধর্মের সীল দেয়া হয়। অপমান আর লজ্জা সহ্য করতে পারেনি মহিলা। বাসায় গিয়ে সে রাতেই আত্মহত্যা করে। পরের দিন মহিলার বাবা-ভাই তথা পরিবারের সদস্যরা মুসলিম রীতি অনুযায়ী লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে। তখন মিশনে খবর যায় মহিলা আত্মহত্যা করেছে। সেখান থেকে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন এসে মহিলা খ্রীষ্টান হয়েছিল বলে সকলকে জানায়। তাদের কথা মতো মৃত মহিলার স্তনের নিচে খ্রীষ্টান ধর্মের সীল দেখায়। কিন্তু গ্রামবাসী তাদের কোন কথাই বিশ্বাস করেনি। তবে খ্রীষ্টান মিশনারীর লোকজন গ্রামের প্রভাবশালী ও বখাটে যুবকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে লাশ নিয়ে চলে যায়। খ্রীষ্টানদের রীতি অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হয়। এ গল্প এখন রংপুরের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। জানা যায়, পোপ জন পল (দ্বিতীয়)-এর অনুসারীদের সবচেয়ে বড় মিশন দিনাজপুরে। কসবার ওই মিশনে কাজ করেন বিশপ মরদেস কস্তা। তিনি উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার কমিউিনিটির ইনচার্জ। এরকম আছেন আলবেনুর টপ্পো। পঞ্চগড় জেলার রোহিয়া মিশনে তিনি এখন কর্মরত। এই আল বেনুর টপ্পো আরবীতে পড়াশোনা করেছেন। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আরবী বিষয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। রংপুরের মিঠাপুকুরের বলদি পুকুরে রয়েছে বড় মিশন। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীতেও রয়েছে কয়েকটি মিশন। …..” (সূত্রঃ সাপ্তাহিক পুর্ণিমা, ১৬ই জুন/২০০৪) উল্লেখ্য, ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, হুদাইবিয়ার সন্ধির পর থেকে দলে দলে বিধর্মীরা মুসলমান হতে থাকেন। কারণ, সন্ধির শর্তানুযায়ী যুদ্ধ বন্ধ থাকায় তারা মুসলমানদের নিকট সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ পান। ফলতঃ তারা মুসলমানদের তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের চারিত্রিক মাধুর্য, আদর্শিক আচরণ, নির্লোভ ব্যক্তিত্ব আর অপূর্ব ইসলামী আমল দেখে অভিভূত হয়ে দলে দলে ইসলাম কবুল করেন। পক্ষান্তরে আজকের তথাকথিত আলিম সমাজ তথা তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুহাদ্দিছ, খতীব গংদের স্ববিরোধী আমল তথা আমলহীনতা তাদের ইসলাম বিক্রি প্রবণতা, তাদের হানাহানি, ছলনা, লোভ, ক্ষমতা লিস্পা আজকের সচেতনতার যুগে সাধারণ মানুষকে ইসলাম ও আলিমদের সম্পর্কে বতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। আর এ সুযোগটাই লুফে নিচ্ছে খ্রীষ্টান মিশনারীরা। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত পার্বত্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে তারা আজ তাদের ছলনা দ্বারা দলে দলে অবুঝ মুসলমানদের খ্রীষ্টান বানাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও চুপ জোট সরকার তথা ইসলামী শক্তির সহায়ক সরকারের শরীকদার তথাকথিত ইসলামী দলগুলো অর্থাৎ তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিক তথা নামধারী মাওলানাদের দু’দিক থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে মহা গুণাহ্গার হচ্ছে।
একেতো তারা তাদের আদর্শচ্যুতি ও আমলশূণ্যতার কারণে খ্রীষ্টান মিশনারীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ খ্রীষ্টান মিশনারীরা এরূপ অবাধে খ্রীষ্টান বানানোর পরও তারা ক্ষমতায় থেকেও চুপ মেরে রইছে। যার দ্বারা আবারও প্রতিভাত হয়, তারা ইসলামের সেবক নয়, তারা ইসলাম চায়না। চায় ইসলামের খোলসে ক্ষমতা।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ