প্রসঙ্গঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছের লিখিত ‘আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ শীর্ষক বই এবং তদানুযায়ী তার কর্মকাণ্ড   

সংখ্যা: ১৩২তম সংখ্যা | বিভাগ:

 একই অঙ্গে বহুরূপ” বলে বাংলায় যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে- কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর সন্দেহ ছাড়াই আজ তা প্রযোজ্য হচ্ছে আজকের নামধারী শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুহাদ্দিছের ক্ষেত্রে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয় যে, তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক ১৯৯৯ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ শীর্ষক বইয়ে নারীদের রাজনীতি করা সম্পর্কে, ‘নারী নেতৃত্ব’ সম্পর্কে অতি জোড়ালোভাবে, কঠোর ভাষায় বক্তব্য দেন। নিম্নে তার  উদ্বৃতি দেয়া হলোঃ ড “………. এখানে আগেই বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে, নারী দেহের প্রতিটি অংশ ও তার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই একথা প্রমাণ করেছে যে, তাকে পুরুষের কর্মক্ষেত্রে হতে পৃথক থেকে অপর কোন বিশেষ স্বভাবগত বৃত্তি পালনের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। ……….” (আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৪৬ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক) ড “….. এখন বলুন তো, একজন পার্লামেন্ট সদস্য রাজনীতিক মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করলেন এবং এক পর্যায়ে সদস্যদের পারস্পরিক বাক বিতণ্ডা, মল্লযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তখন বেচারী মহিলা সদস্যের কি অবস্থা দাঁড়াবে অথবা ধরুন, মহিলা কোন আইন রহিত করলেন অথবা কোন ধারা উপধারার সংশোধনী সম্পর্কে আলোচনা করতে উঠলেন এবং অতঃপর একজন ভাগ্নী সদস্য দাঁড়িয়ে অসংখ্য অকাট্য যুক্তি দ্বারা তার শ্রাদ্ধ করে ছাড়লেন। এখন বলুন দেখি এমতাবস্থায় লজ্জা ও অপমানে মহিলা সদস্যটি ও তার গর্ভে ধারণ করা সন্তানের কি অবস্থা হতে পারে? বস্তুত এর ফল মহিলাটির গর্ভ অথবা দুধের ক্ষেত্রে মারাত্মক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। …”(আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৪৭ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক) ড “…. বং বেরংয়ের পোশাক, লিপিস্টিক লাগানো, পুরুষের সাথে অবৈধ মেলামেশা, থিয়েটার নাটক করা, সভা সমিতি করা, রাজনৈতিক আসরে নামা, প্রকাশ্যে সভা সমিতিতে বক্তৃতা দেয়া আর বেশ্যাবৃত্তি করা। শুধু পেশাদারী বেশ্যানয় অপেশাদার বেশ্যাবৃত্তি করা। …..” (আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৩৪ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক)

পাঠক! উপরের উদ্বৃতিগুলো পাঠ সাপেক্ষে প্রতিয়মান হয় যে, নারীদের সভা-সমিতি করা, রাজনৈতিক আসরে নামা, ইলেক্শন করা, পার্লামেন্ট মেম্বর হওয়া ইত্যাদি কাজের প্রতি লেখকের তথা তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হকের কি তীব্র ঘৃণা, শ্লেষ, ক্ষোভ এবং নাজায়িয ফতওয়া ও হারাম চেতনা বিদ্যমান।    কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ১৯৯৯ সালের সেই মূল্যবোধ থেকে তিনি বর্তমানে বিস্ময়করভাবে সরে আসছেন। বর্তমানে তারা সবাই নারী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন, নিজেরাই নারী ব্যক্তিত্বের পাশে উপবেশন করছেন, একই গাড়ীতে, একই সিটে পাশাপাশি অবস্থান করছেন, মঞ্চে, ঘরে পাশাপাশি বসে আলাপচারিতা করছেন, একসাথে ইফতার করেছেন, অহরহ সাক্ষাৎ করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

  কিন্তু নারী-পুরুষ পরস্পর সাক্ষাত সম্পর্কে তার উক্ত বইয়ে তিনি আরো লিখেন, “….. ধন ও ঋণ (পজেটিভ ও নেগেটিভ) ব্যতীত কোন বস্তুর কল্পনা করা যায়না, ধন ঋণ যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, পদার্থের পরমাণু (এটম) পজিটিভ ইলেকট্রন ও নেগেটিভ প্রোটনের সমষ্টি। এ থেকে ইলেকট্রন বিচ্যুত করলে আর পরমাণুর অস্তিত্বই থাকে না। মানবও তাই।

স্বাভাবিকভাবে নর ও নারী (ধন ও ঋণ) পরস্পর দর্শনে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়না একথা মানুষ অস্বীকার করলেও যুক্তিবাদী বিজ্ঞান তা মানতে প্রস্তুত নয়। দৈহিক মিলনের ফাঁক থাকুক আর না থাকুন, আর থাকলে তো কথাই নেই, আকর্ষণ এতো প্রবল ও তীব্র হয় যে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, মুনি মোহন্ত, দরবেশ, কেউ আত্মসংবরণ করতে পারে না। ….” (আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৩৫ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক) অতএব, লেখক তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হকের নিজস্ব লেখা অনুযায়ী বলতে হয় যে, তিনি বা তারা যতবড় শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুহাদ্দিছ, খতীবই হয়ে থাকুন না কেন যখন তারা নারী নেতৃত্ব নারী ব্যক্তিত্বের সাথে পরস্পর দর্শন দেন, কথা বলেন, জোট সরকার সম্পৃক্ত আলাপচারিতা করেন তখন তারা কেউ আত্মসংবরণ করতে পারেন না। বরং তাদের মাঝে পরস্পর অবৈধ আকর্ষণ বিনিময় হয়।  (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)

উল্লেখ্য, চারদলীয় জোটে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ নিজেকে সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ, বিজ্ঞ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দাবী করেন। বিভিন্ন সভায় তিনি জোট সরকারের ছানা-ছিফত বর্ণনা করেন। অতএব, ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি অবশ্যই জোট সরকারের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়বদ্ধ হন। এবং এ প্রসঙ্গে তার বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, “….. হাদীছ শরীফে আছে, “তোমরা সকলেই রক্ষক, তোমাদের সকলকেই অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। …… ” (আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৫৪ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক)        এতদ্বপ্রেক্ষিতে শুধু জোট সরকারের প্রধানকে নারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমর্থন নয় পাশাপাশি বর্তমানে সরকারে সব কর্মকাণ্ডে বেপর্দাজনিত এবং নারী রাজনীতি সম্পর্কিত সবকিছুর দায়-দায়িত্বও নির্বিঘেœ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ গং এর উপর বর্তায়। এ সম্পর্কে তার জোট সরকারের বর্তমান অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট ঘোষণায় বলেন, “…….. মাননীয় স্পীকার, বাংলাদেশে এখন আর্থ সামাজিক কর্মকাণ্ডের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক কোটি বিশ লাখেরও বেশী মহিলা ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন। শ্রম বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে নারীদের প্রবেশ ঘটছে। আঠার লক্ষাধিক নারী কেবল পোশাক শিল্পে কর্মরত রয়েছেন। রাজনীতিতেও মহিলাদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশী মহিলা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সম্প্রতি আমরা জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে আইন পাশ করেছি। নারী উন্নয়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। …….”

পাঠক! সাধারণ মুসলমান ইসলাম পালন না করলেও ঈমানদার। তাই তারা ঈমানের আলোকে এতটুকু হলেও বুঝে যে, এক কোটি বিশ লাখেরও বেশী মহিলা যে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছে তারা তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হকের ‘আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ বইয়ে যে পর্দার কথা বলা হয়েছে তা আদৌ করছেন না। অর্থাৎ রাষ্ট্রিয়ভাবেই এখানে তাদের পর্দা না করার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে।    বিশেষতঃ রাজনীতির আসরে মহিলাদের নামা প্রসঙ্গে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক বলেন, “….শুধু পেশাদারী বেশ্যা নয় অপেশাদার বেশ্যাবৃত্তি করা। …..”

যদি তাই হয়ে থাকে তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, শাইখুল হাদীছ হক গং শুধু বর্তমান জোট সরকারের প্রধানকেই মহিলা নেত্রী হিসেবে সমর্থন দেননি পাশাপাশি তারা বর্তমান সময়ে দেশে ১৪ হাজার নির্বাচিত দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলাদের সমর্থনের এবং তাদের কর্মকণ্ড চালানোর দায়-দয়িত্বও নিয়েছেন। এবং জোট সরকারের ধর্মীয় অভিভাবক তথা রক্ষক হবার সুবাধে এসবের গুনাহ্র দায়-দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে গ্রহণ করেছেন।       অথচ এক্ষেত্রে যা করা উচিত ছিল সে সম্পর্কে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ লিখতে কার্পণ্য করেননি। হাদীছ শরীফের বরাতে তিনি উল্লেখ করেন, “….. তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন অন্যায় দেখবে তবে তা হাতের দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি এর শক্তি না থাকে তবে মুখের দ্বারা বলবে, যদি এরও শক্তি না থাকে, তবে অন্তর দ্বারা তা ঘৃণা করবে, আর এটা হচ্ছে দূর্বল ঈমানের পরিচয়।……” (আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা ১৫৪ পৃষ্ঠা, লেখকঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক)   অথচ বাস্তব সত্য যে আলোচ্য শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুফাস্সিরে কুরআন তথা খতীব গংকে সে দুর্বল ঈমানদারের তবকায়ও ফেলা যায়না। বরং অনিবার্যভাবে ইসলামের মানদণ্ডে এরা মুনাফিকের মাপকাঠিতে মূল্যায়িত হয়। এরা বলে এক, লেখে এক, আর স্বার্থবাদী, ভোগবাদী কারণে আমল করে আর এক। ধর্ম এদের খোলশ মাত্র। ধর্ম এদের জন্য পণ্য। এরা ধর্মব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই ধর্মব্যবসায়ীরা নিকৃষ্ট।”

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।

রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী নায়িব ও ওয়ারিছ। তাঁর বিরোধিতাকারীরা মুনাফিক, কাফির ও শয়তানের অনুসারী- ৬

‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ

ইমাম সম্মেলনে অর্ধনগ্ন খ্রীষ্টান মহিলা মেরীর পর এবার খোলামেলা হিন্দু মহিলা সুনিতা মুখার্জী তথাকথিত ইমামদের প্রতি নিস্প্রোয়জন ছিল প্রধানমন্ত্রীর নছীহত

ইতিহাসের নিরীখে, বর্তমান সংবিধান প্রণেতা গণপরিষদেরই কোন আইনী ভিত্তি বা বৈধতা ছিল না। গত ৫৪ বৎসর দেশবাসীকে যে অবৈধ সংবিধানের অধীনে বাধ্যগত করে রাখা হয়েছিলো এর প্রতিকার দিবে কে? ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দ্বীন ইসলামের প্রতিফলন ব্যাতীত কোন সংবিধানই বৈধ হতে পারে না কারণ দেশের মালিক ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান

প্রসঙ্গঃ ‘ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিবাদ’ প্রতিবাদের ভাষা ও ধরণ; বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ এবং সহীহ সমঝ