মুহব্বত, ইতায়াত ও সন্তুষ্টি মুবারকের মূলেই হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُنْتُ كَنْزًا مَـخْفِيًّا فَأَحْبَبْتُ اَنْ اُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْـخَلْقَ لِاُعْرَفَ
অর্থ: আমি গুপ্তখনি ছিলাম। অতঃপর আমার মুহব্বত বা ইচ্ছা হলো যে, আমি পরিচিত হই তখন পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে আমি সৃষ্টির যিনি মূল (আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে সৃষ্টি করলাম। (মাক্বাছিদুল হাসানাহ, কাশফুল খিফা, আত তাযকিরাহ ফী আহাদীছিল মুশতাহিরাহ ইত্যাদি)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহব্বতের আতিশয্যে উনার পেয়ারা হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনার সম্মানিত ওজূদ পাক উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন এবং উনার সম্মানিত ওজূদ পাক হতে সমস্ত কায়িনাত বা সমস্ত মাখলূক্বাত সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই বলা হয় যে, খ্বালিক্ব হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনি একক। আর মাখলূক্বাতের মধ্যে বা মাখলূক্ব হিসেবে নূরে মুজসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একক। মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ যেমন কেউই নেই তদ্রƒপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমকক্ষও কেউই নেই। সুবহানাল্লাহ!
এ বিষয়টি পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি এভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا حَبِيْبِـيْ أَنَا وَأَنْتَ وَمَا سِوَاكَ خَلَقْتُ لِأَجْلِكَ فَقَالَ يَا رَبـِّىْ اَنْتَ وَمَا اَنَا وَمَا سِوَاكَ تَرَكْتُ لِاَجْلِكَ
অর্থ: আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুধু আমি ও আপনি। আপনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই আপনার সম্মানার্থে আমি সৃষ্টি করেছি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বারে ইলাহী! শুধু আপনিই, আমিও নই। কেননা আমি তো আপনর মধ্যেই বিলীন। আর আপনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই আপনার সম্মানার্থে আমি তরক করেছি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, সমস্ত সৃষ্টি, সমস্ত কায়িনাত, সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত জিন-ইনসান, সমস্ত বান্দা-বান্দী, সমস্ত উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে খ্বলিক্ব মালিক রব হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করা। আর রসূলুন ইলা কাফফাতিল খলক্বি আজমাঈন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হিসেবে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
النَّبِيُّ أَوْلٰـى بِالْمُؤْمِنِيْـنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনদের নিকট তাদের জীবন থেকে অধিক প্রিয় অর্থাৎ জীবনের চেয়েও উনাকে বেশি মুহব্বত করতে হবে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰـى أَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ مِنْ مَّالِهٖ وَنَفْسِهٖ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত না করবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার ধন-সম্পদ ও তার জীবন অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
اَحِبُّوْنِـىْ لـِحُبِّ اللهِ
মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিলের লক্ষ্যে আমাকে মুহব্বত করো। (মিশকাত শরীফ)
প্রতিভাত হলো, খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে হলে বা পেতে হলে উনার মনোনীত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করতে হবে। আর উনাকে মুহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার বা মু’মিন হওয়াও সম্ভব নয়।
কাজেই, মুহব্বতের মূলেই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে ইতায়াত অর্থাৎ আনুগত্য বা অনুসরণের মূলেই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে সে অবশ্যই মহা সফলতা বা কামিয়াবী হাছিল করবে। অর্থাৎ সে সম্মানিত জান্নাত এবং উনার নিয়ামতসমূহ লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
مَّنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করলো, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করলো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ اَطَاعَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصٰى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ عَصَى اللهَ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে আনুগত্য করলো সেই মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করলো। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে নাফরমানী করলো, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করলো।
প্রতিভাত হলো, ইতায়াতের মূলেই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। কারণ মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেনি, পায়নি, উনার নিকট থেকে জানেনি, শুনেনি। বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তারা পেয়েছে, উনাকে দেখেছে, উনার নিকট থেকে জেনেছে, বুঝেছে এবং উনাকে অনুসরণ অনুকরণ করেছে। তাই তিনিই হচ্ছেন ইতায়াতের মূল। সুবহানাল্লাহ!
একইভাবে সন্তুষ্টি মুবারক উনার মূলেই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَاللهُ وَرَسُوْلُه أَحَقُّ أَنْ يُّرْضُوْهُ اِنْ كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে। উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমধিক হক্বদার। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)
মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضٰى
অর্থ: “আর অতিসত্বর আপনার মহান রব তিনি আপনাকে সন্তুষ্ট করবেন।” (পবিত্র সূরা দ্বুহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে পেশ করেছিলেন, আমার সমস্ত উম্মত সম্মানিত জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না। তখন উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত, ইত্বায়াত ও গোলামীর মাধ্যমে উনাকে যারা সন্তুষ্ট করতে পারবে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত এবং উনার সমস্ত নিয়ামত দান করবেন সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক দিয়ে সন্তুষ্ট করবেন। সুবহানাল্লাহ!
অতএব প্রতিভাত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের মূলেই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
-শুয়াইব আহমদ
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পরিচিতি মুবারক