সংখ্যা: ২৫৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুহম্মদ আলমগীর

উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

 

সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে আমাদের ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত এক মাহফিলে ক্বওমী মাদরাসার মুফতী নামধারী এক ব্যক্তি বলেছে যে, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি স্বপ্নে খিলাফত পেয়েছেন। উনার অতীত কোন পীর ছাহেব নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী তিনিই উনাকে স্বপ্নে খিলাফত দিয়েছেন। তাই তিনি বাইয়াত করান। উনার কোন পীর ছাহেব নেই। নাঊযুবিল্লাহ! তার উক্ত বক্তব্য কতুটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: আলোচ্য সুওয়ালে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। প্রথমত বলতে হয় যে, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পীর ছাহিব তথা মুর্শিদ ক্বিবলা না থাকা সম্পর্কে মুফতী নামধারী ব্যক্তির বক্তব্য আদৌ সঠিক নয়। বরং চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া।

রাজারবাগ শরীফ হতে প্রকাশিত শাজরা শরীফসহ বিভিন্ন প্রকাশনায় সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং রাজারবাগ শরীফ সিলসিলার অসংখ্য মাহফিলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে যে, গত শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মা’রূফ মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুযোগ্য আওলাদ কুতুবুল আলম হযরত মাওলানা আবু নজম মুহম্মদ নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং কুতুবুল আলম, হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের প্রধান খলীফা ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মুফাস্সিরে কুরআন এবং ঢাকা যাত্রাবাড়ীর সম্মানিত পীর ছাহিব, কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহইয়ে সুন্নাহ, মাহিয়ে বিদয়াত, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর উনারই প্রধান খলীফা হচ্ছেন ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, সাইয়্যিদুনা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম। কাজেই উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা নিয়ে কোন ধরণের সন্দেহ বা সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।

দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, যদি ধরেও নেয়া হয় যে, তিনি এ কথা বলেছেন, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? তারা কি প্রমাণ করতে পারবে যে, এ ধরনের কথা বলা পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ? কস্মিনকালেও তারা তা পারবেনা। বরং উক্ত কথার পক্ষেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে বহু দলীল পেশ করা সম্ভব। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই খাছ খিলাফত দিয়ে থাকেন। আর মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উনার মুরীদকে যে খিলাফত দিয়ে থাকেন, সেটাও মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশেই দিয়ে থাকেন। যেমন, এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউওয়াল, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় মাকতূবাত শরীফ উনার মধ্যে ১০৫ নম্বর মকতূবে বলেন, “আমি স্বপ্নে দেখলাম, মাশায়িখ ও বুযূর্গগণ যেরূপ উনাদের খলীফাদেরকে ইজাযতনামা লিখে দেন, তদ্রুপ আমাকে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইজাযতনামা লিখে দিলেন। অতঃপর তা স্বীয় মহরে নুবুওওয়াত মুবারক দ্বারা পরিশোভিত করলেন।” তাতে লিখা ছিল, “পার্থিব ইজাযতনামার পরিবর্তে পারলৌকিক ইযাযতনামা প্রদত্ত হলো।

তা দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে শাফায়াতের মাক্বামের অংশ প্রদান করলেন।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, ওলীআল্লাহ উনাদের খিলাফত হাক্বীক্বীভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই প্রদান করে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وعد الله الذين امنوا منكم وعملوا الصلحت ليستخلفنهم فى الارض كما استخلف الذين من قبلهم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা করেছেন যে, যারা ঈমান আনবে ও আমলে ছালিহ করবে (হাক্বীক্বী ওলীআল্লাহ হবে) উনাদের জন্য অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি জমীনে খিলাফত প্রদান করবেন, যেমন উনাদের পূর্ববর্তীদেরকে প্রদান করা হয়েছিল।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, যারা হাক্বীক্বীভাবে ঈমান এনে আমলে ছালেহ করবেন অর্থাৎ যারা খালিছ ওলীআল্লাহ হবেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মতে ও পথে চলবেন, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই উনাদেরকে খিলাফত প্রদান করবেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, খিলাফত দুই প্রকার (১) জাহিরী খিলাফত বা ইসলামী হুকুমত কায়িম করা, (২) বাতিনী খিলাফত যা বাতিনীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে যাঁকে পছন্দ করেন উনাকেই প্রদান করেন। তখন তিনি রূহানীভাবে স্বীয় খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।

যাঁরা গউছ, কুতুব, আবদাল, ইমাম, ক্বইয়্যূম, মুজাদ্দিদ ইত্যাদি হন উনাদেরকে বাতিনী খিলাফত প্রদান করা হয়। উনারা রূহানীভাবে জগত পরিচালনা করেন। যা পূর্বের বড় বড় সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে প্রদান করা হয়েছিল এবং বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, গউছুল আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মাহ, রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে এবং অন্যান্য যত কুতুব ও আবদাল উনারা পৃথিবীতে রয়েছেন উনাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং, রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খিলাফত দিয়েছেন, এ চিরসত্য কথাকে যারা অস্বীকার করবে তারা উপরোক্ত আয়াতে কারীমা অস্বীকারকারী। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াতে কারীমা ও তার হুকুম অস্বীকার করা কুফরী।

এ সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হায়াতে তইয়্যিবাতে উনার দরবার শরীফ উনার মধ্যে একাধিকবার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদা থেকে বিপথগামী ওহাবী মতবাদ গ্রহণকারী বাপ-দাদার আদর্শ বাদ দিয়ে শিয়া, রাফিযী ও বিধর্মীদের মত গ্রহণকারী, হক্ব সিলসিলার কলঙ্ক, কাবিল ও কিনানের ক্বায়িম-মক্বামসহ কয়েকজন নামধারী ওহাবী ব্যক্তি যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে কতগুলো ডাহা মিথ্যা কথা বলে খিলাফত কেটে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।

কিন্তু কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “খিলাফত কেটে দেয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। কারণ খিলাফত তো আমি দেইনি বরং উনাকে (রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে) স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই খিলাফত দিয়েছেন এবং খিলাফত দিতে আমাকে নির্দেশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!

আর উনার প্রদত্ত খিলাফত মুবারক উনার সুবাদে উনার থেকে শুরু করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত ক্বাদরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া ইত্যাদি প্রসিদ্ধ ত্বরীকাসমূহের সিলসিলা বা শাজরা শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাহিরী ও বাতিনী খলীফা ছিলেন, তদ্রুপ পরবর্তী সকল ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা সকলেই মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনাদের খলীফা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই উনাদেরকে খিলাফত প্রদান করেন। তাছাড়া আমভাবে যারা হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ও সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করেন তারাও “খলীফাতুল্লাহ ও খলীফাতু রসূলিল্লাহ”। যেমন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم ارحم خلفائى الذين ياتون بعدى يراؤن احاديث وسنن يعلمونـها الناس.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান, আয় আল্লাহ পাক! আমার ঐ সমস্ত খলীফা উনাদের প্রতি আপনি রহম (দয়া) করুন, যারা আমার পরে যমীনে আগমন করে আমার পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সুন্নাহ সমূহ মানুষকে শিক্ষা দিবেন তথা মানুষের মাঝে সুন্নত জারী করবেন।” (মিথ্যাচারিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রথম খণ্ড)

আলোচ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একথাই সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে যে, যিনি পরিপূর্ণরূপে সম্মানিত সুন্নত উনার পাবন্দ ও মানুষের মাঝে সুন্নত জারী করেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই উনাকে خليفة رسول الله (খলীফাতু রসূলিল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা লক্বব দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من امر بالـمعروف ونـهى عن الـمنكر فهو خليفة الله فى الارض وخليفة كتابه وخليفة رسوله.

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি সৎ কাজে আদেশ করেন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করেন সে ব্যক্তি খলীফাতুল্লাহি ফিল আরদ্, খলীফাতু কিতাবিল্লাহ এবং খলীফাতু রসূলিল্লাহ লক্ববের অধিকারী হন।” (মুকাশাফাতুল কুলূব/৪৮)

আর একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ফরয-ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তো অবশ্যই পালন করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নতে যায়িদাহ উনার খিলাফও কোন আমল করেন না। বরং তিনি মাথার তালু মুবারক থেকে পায়ের তলা মুবারক পর্যন্ত পরিপূর্ণরূপে সম্মানিত সুন্নত উনার অনুসরণ করেন। যে কারণে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘোষিত সেই خليفة الله (খলীফাতুল্লাহ) خليفة رسول الله (খলীফাতু রসূলিল্লাহ্) خليفة كتاب الله (খলীফাতু কিতাবিল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে বর্ণিত খলীফা বা প্রতিনিধি লক্ববের পরিপূর্ণ মিছদাক। কাজেই যামানার মুজাদ্দিদ, গউছুল আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই খিলাফত দিয়েছেন ও দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, খাছ খিলাফত মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই দিয়ে থাকেন। আর মুর্শিদ ক্বিবলা বা পীর ছাহেব যে খিলাফত দেন সেটাও মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশেই দিয়ে থাকেন। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন কথা নয়, বরং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত কথা।

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফ” কিতাবের ১ম  খণ্ডের ৮৬  পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ حضرت عَائِشَةَ  عليها السلام، قَالَتْ : لَمَّا مَرِضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَرَضَهُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، وَقَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ : لَمَّا ثَقُلَ، جَاءَ بِلاَلٌ يُؤْذِنُهُ بِالصلوة، فَقَالَ : مُرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصل بِالنَّاسِ فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ، إِنَّ أَبَا بَكْرٍ عليه السلام رَجُلٌ أَسِيفٌ، تَعْنِي رَقِيقٌ، وَمَتَى مَا يَقُومُ مَقَامَكَ  يَبْكِي فَلاَ يَسْتَطِيعُ، فَلَوْ أَمَرْتَ عُمَرَ عليه السلام فَصلي بِالنَّاسِ، فَقَالَ : مُرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصل بِالنَّاسِ، فَإِنَّكُنَّ صَوَاحِبَاتُ يُوسُفَ عليه السلام، قَالَتْ : فَأَرْسَلْنَا إِلَى أَبِي بَكْرٍ عليه السلام فَصلي بِالنَّاسِ، فَوَجَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً، فَخَرَجَ إِلَى الصلوة يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، وَرِجْلاَهُ تَخُطَّانِ فِي الأَرْضِ، فَلَمَّا أَحَسَّ بِهِ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام، ذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ، فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَنْ مَكَانَكَ، قَالَ : فَجَاءَ حَتَّى أَجْلَسَاهُ إِلَى جَنْبِ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام يَأْتَمُّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ، وَالنَّاسُ يَأْتَمُّونَ بِأَبِي بَكْرٍ عليه السلام.

অর্থ:  “উম্মুলমু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে,  তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, যে মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত আবু মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন উনার মারীদ্বি শান মুবারক বৃদ্ধি পেলন তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি এসে উনাকে ছলাত সম্পর্কে অবহিত করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন তিনি যেন লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় করেন। অতঃপর আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তো অত্যন্ত নরম হৃদয়ের মানুষ। অর্থাৎ তিনি তো অত্যন্ত নম্র স্বভাবের অধিকারী। যখন তিনি আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন এবং তিনি ছলাত আদায়ে সক্ষম হবেন না। কাজেই আপনি যদি হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিতেন, তবে তিনি লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় করতে পারতেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন তিনি যেন লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় করেন।

তিনি আরো বললেন যে, আপনারা কি (পীড়া-পীড়ি করার ব্যাপারে) হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতে আগমনকারী মহিলার মতো? অবশ্যই না। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, তখন আমরা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠালাম। তিনি লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় শুরু করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছুটা ছিহহাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে ছলাত আদায়ের জন্য বের হয়ে আসলেন। তবে মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কারণে উনার দু’পা মুবারক মাটিতে লেগে যাচ্ছিল।  (অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন,) তখন উনার আগমনের শব্দ অনুভব করে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহি সালাম তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে স্বস্থানে  থাকার জন্য ইঙ্গিত মুবারক করলেন। রাবী (হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) তিনি বলেন, তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন, এমনকি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনারা উভয়েই উনাকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসিয়ে দিলেন।(অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  যমীনে বসে লোকদেরকে নিয়ে পবিত্র নামাযের ইমামতি করলেন।) আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইকতিদা করেন। আর লোকেরা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ইকতিদা করেন।”

যেমন, “সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

عَنْ حضرت عَائِشَةَ عليها السلام، قَالَتْ : أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَبَا بَكْرٍ عليه السلام أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي مَرَضِهِ ، فَكَانَ يُصَلِّي بِهِمْ فَوَجَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ خِفَّةً، فَخَرَجَ ، وَإِذَا أَبُو بَكْرٍ  عليه السلام يَؤُمُّ النَّاسَ فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام اسْتَأْخَرَ فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : أَيْ كَمَا أَنْتَ ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ حِذَاءَ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام، إِلَى جَنْبِهِ، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام يُصَلِّي بِصَلوَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। তিনি লোকদের নিয়ে ছলাত আদায় শুরু করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ করলেন। অর্থাৎ ছিহহাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন তিনি (দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে ছলাত আদায়ের জন্য) বের হয়ে যখন মসজিদে  আসলেন। এ সময় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকদের নিয়ে ছলাতের ইমামতি করছিলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন, তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহি সালাম তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে স্বস্থানে  থাকার জন্য ইশারা মুবারক করলেন। অর্থাৎ আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বরাবর পাশে যমীনের উপর বসে পড়লেন। (অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে বসে লোকদেরকে নিয়ে পবিত্র নামাযের ইমামতি করলেন।) আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছলাতের ইকতিদা করে ছলাত আদায় করলেন।। আর লোকেরা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ছলাতের  ইকতিদা করে ছলাত আদায় করলেন।”

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩৩)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম:

পাঁচ. আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে যে-

فَيَكُوْنُ اِعْطَاؤُهُ الْمَالَ حَثْيًا

“(মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম) তিনি উনার দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!

সেটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে উনার দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি এই প্রথম কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সারা বছর বা অনন্তকালব্যাপী সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিযাম করেছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘এই সম্মানিত মাহফিল মুবারক অনন্তকালব্যাপী চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর কখনও বন্ধ হবে না।’ সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক-এ, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক-এ এবং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের এবং বিশেষ বিশেষ সকল হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক-এ কুরবানী করে যাচ্ছেন এবং কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান মুবারক ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে দৈনিক আল ইহসান শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং আরো অন্যান্য পত্র-পত্রিকা ও কিতাবাদি মুবারক প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

আর এটা তো উনার যাহিরীভাবে খলীফা হিসেবে প্রকাশ পেয়ে খিলাফত মুবারক পরিচালনা করার পূর্বের কথা। তাহলে তিনি যখন যাহিরীভাবে খলীফা হিসেবে প্রকাশ পেয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বছর যাবৎ সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন, তখন তিনি উনার দু’হাত মুবারক ভরে কি পরিমাণ অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেনÑ সেটা সমস্ত জিন-ইনসান এবং তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

আর উনারই সম্মানি শান মুবারক-এ সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَلَكَ الْاَرْضَ اَرْبَعَةٌ مُّؤْمِنَانِ وَكَافِرَانِ فَالْــمُؤْمِنَانِ حَضْـَرتْ ذُو الْقَرْنَيْنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْـَرتْ سُلَيْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْكَافِرَانِ نَـمْرُوْدُ وَبـُخْتُ نَصَّرَ وَسَيَمْلِكُهَا خَامِسٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْتِـىْ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সারা পৃথিবী শাসন করেছেন চারজন। দুজন হচ্ছেন মু’মিন আর দুজন হচ্ছে কাফির। মু’মিন দুজন হচ্ছেন- হযরত সিকান্দার যুলক্বরনাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম। আর কাফির দুজন হচ্ছে- নমরূদ এবং বখতে নছর। আর অতিশীঘ্রই পঞ্চম একজন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। তিনি হবেন আমার পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে জাওযী, মাকতূবাত শরীফ, শরহু ছহীহ বুখারী শরীফ ৮/৮৬, ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ শরীফ লিলহাইতামী ১/৮১, আল হাওই শরীফ লিসসুয়ূত্বী ২/৭৬ ইত্যাদী )

আর সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনিই হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান নয়, ভারত নয়; বরং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবী তো অবশ্যই; এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু ক্বায়িম-মাক্বাম হয়ে সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে সারা কায়িনাতব্যাপী সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বছর যাবৎ সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ!

 

আহমদুল্লাহ

উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

 

সুওয়াল: উলিপুর উপজেলাধীন বজরা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত এক ওয়াজ মাহফিলে কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিছ নামধারী এক ব্যক্তি বলে যে, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে ‘ক্বিবলা’ বলে সম্বোধন করা হয়। অথচ ক্বিবলা হচ্ছে কা’বা শরীফ। ক্বিবলা সম্পর্কে উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: ক্বিবলা সম্পর্কে মুহাদ্দিছ নামধারী ব্যক্তির বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া এবং সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিপূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ولكل وجهة هو موليها

অর্থ: প্রত্যেকেরই একটি ক্বিবলা রয়েছে, যেদিকে সে মুখ ফিরায়।(পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৮)

অর্থাৎ স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ক্বিবলা বিভিন্ন রকম রয়েছে। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী ক্বিবলা উনার প্রকারভেদ অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।

উল্লেখ্য, ওলী-আউলিয়া, পীর-মাশায়িখ বিদ্বেষী উক্ত ব্যক্তির পক্ষে একটা দলীলও পেশ করা সম্ভব হবে না যে, পীর-মাশায়িখ উনাদেরকে ক্বিবলা বলা যাবে না। বরং পীর-মাশায়িখ উনাদেরকে ক্বিবলা বলার ব্যাপারে অনেক নির্ভরযোগ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে।

স্মরণীয় যে, ‘ক্বিবলা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জিহাত বা দিক ইত্যাদি। অনুরূপ কা’বা শব্দের আভিধানিক অর্থ মুরাব্বাউশ শাক্ল বা চতুস্কোণ বিশিষ্ট গৃহ। আর পারিভাষিক অর্থে ক্বিবলা ও কা’বা উভয় শব্দ মুবারক একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর তা হচ্ছে যার দিকে রুজু হয়। যেমন- সম্মানিত ব্যক্তি, বস্তু ও স্থান, মসজিদে হারাম বা বাইতুল্লাহ শরীফ ইত্যাদি।

হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাব ফতওয়ায়ে শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল ইয়াক্বীন, আল মাআরিফুল মুহম্মদিয়্যাহ, ক্বলাদাতুল জাওয়াহির, তাহযীবুর রিফাইয়্যাহ, মাওসূআতুর রদ ‘আলাছ ছূফিয়্যাহ ইত্যাদি কিতাবসমূহের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে-

الشيخ قبلة الـمريدين و قبلة القلوب

অর্থাৎ, শায়েখ তথা পীর ছাহিব হচ্ছেন মুরীদগণের ক্বিবলা এবং ক্বলবসমূহের ক্বিবলা।” সুবহানাল্লাহ!

উক্ত বর্ণনার পাশাপাশি আরো উল্লেখ রয়েছে যে, কা’বা বা ক্বিবলা পাঁচ প্রকার। যথা-

(১) নামাযের ক্বিবলা- “বাইতুল্লাহ শরীফ।” এজন্য বাইতুল্লাহ শরীফ উনার দিকে মুখ করে পবিত্র নামায আদায় করতে হয়।

(২) দোয়া বা মুনাজাতের ক্বিবলা- “আসমান।” এজন্য হাতের তালুদ্বয় আসমানের দিকে করে মুনাজাত করতে হয়।

(৩) মাখলূক্বাতের ক্বিবলা হচ্ছেন- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।” কেননা তিনি হলেন সৃষ্টির মূল, উনার উসীলায়ই সমস্ত মাখলূক্বাতের সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ!

(৪) সমস্ত ক্বিবলাকে বিলীনকারী ক্বিবলা হচ্ছেন- “স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।” সুবহানাল্লাহ!

(৫) ক্বিবলায়ে কুলূব বা ক্বলবের ক্বিবলা হচ্ছেন- “ শায়েখ বা মুরশিদ বা পীর ছাহিব তিনি।” উনার ফায়িযের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও মা’রিফাত উনাদের ফায়িযে মুরীদ ফয়যিয়াব বা ফয়েযপ্রাপ্ত হয়, ক্বলব ও অন্যান্য লতীফাসমূহে যিকির জারী হয়। অতঃপর ক্বলব (অন্তর)সহ সমস্ত লতীফা পরিশুদ্ধ হয় এবং ইখলাছ পয়দা হয়। আর তখনই মুরীদের পক্ষে গইরুল্লাহ মুক্ত হয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ইবাদত করা সহজ ও সম্ভব হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজারবাগ শরীফ বিরোধীরা যাকে মুরুব্বী হিসেবে মেনে থাকে সেই দেওবন্দীদের গুরু আশরাফ আলী থানবীর বেহেশতী জেওরে পিতা-মাতা ও সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে ক্বিবলা ও কা’বা লক্বব দিয়ে সম্বোধন করতে বলেছে।

যেমন, বেহেশতী জেওর পুরাতন (মূল) ছাপার প্রথম খণ্ডের ১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে-

اور خط لکھنے کا طریقہ یہ ہے کہ مثلا اگر باپ کو خط لکھو تو اسطرح لکھو جناب والد صاحب قبلہ و کعبہ.

অর্থাৎ, চিঠি লিখার নিয়ম এই যে, উদাহরণ হচ্ছে, যদি পিতার নিকট চিঠি লিখতে চাও তবে এভাবে লিখবে যে, “সম্মানিত আব্বাজান “ক্বিবলা ও কা’বা।”

শুধু তাই নয়, উক্ত বেহেশতী জেওরের ২৪ পৃষ্ঠায়- قبله وكعبه শব্দ দু’টি উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সম্মানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার নিয়মও দেখানো হয়েছে।

স্মরণীয় যে, বেহেশতী জেওরের নতুন সংস্করণগুলো থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উল্লিখিত ইবারতে বর্ণিত ‘ক্বিবলা ও কা’বা’ শব্দদ্বয় বাদ দেয়া হয়েছে।

সুতরাং, আশরাফ আলী থানবীর মতে পিতা বা যে কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে ক্বিবলা ও কা’বা বলে সম্বোধন করা যদি জায়িয হয়, তাহলে হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব বা মুর্শিদ উনাকে ‘ক্বিবলা ও কা’বা’ বলে সম্বোধন করা জায়িয হবে না কেন?

মূল কথা হলো, কামিল শায়েখ, মুর্শিদ বা পীর ছাহেব উনার নামের সাথে ‘ক্বিবলা’ শব্দ ব্যবহার করা অবশ্যই জায়িয রয়েছে। (দলীলসমূহ : ফতওয়ায়ে শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল ইয়াক্বীন, আল মাআরিফুল মুহম্মদিয়্যাহ, ক্বলাদাতুল জাওয়াহির, তাহযীবুর রিফাইয়্যাহ, মাওসূআতুর রদ ‘আলাছ ছূফিয়্যাহ, বেহেশতী জেওর- পুরাতন ছাপা ইত্যাদি)

শাইখুল মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি কামিল পীর ছাহিব উনার সন্ধান পায় তখন তার উচিত খানায়ে কা’বা শরীফ উনার ন্যায় উনাকে তা’যীম-তাকরীম করা।” (সিরাতুল মুস্তাকিম)

সুতরাং, নামাযের ক্বিবলা বা কা’বা শরীফ উনার ন্যায় ক্বিবলায়ে কুলূব বা ক্বলবের ক্বিবলার হুরমত রক্ষা করা তথা তা’যীম-তাকরীম করা সর্বাবস্থায় মুরীদের জন্য ফরয উনার অন্তর্ভুক্ত। সেটা উনার উপস্থিতিতে হোক কিংবা অনুপস্থিতিতে হোক। জীবিত অবস্থায় হোক কিংবা ইন্তিকালে হোক।

কেননা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

بـجلوا الـمشائخ فان تبجيل الـمشائيخ من اجلال الله عزو جل فمن لـم يبجلهم فليس منا.

অর্থ : তোমরা পীর-মাশায়িখগণ উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করো। কেননা, পীর-মাশায়িখগণ উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনাকেই তা’যীম-তাকরীম করার শামিল। সুতরাং যারা উনাদের তা’যীম-তাকরীম করেনা বা উনাদের প্রতি আদব রক্ষা করেনা তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আত্ তাযকিরাতু ফী আহাদিছীল মুনতাশিরাহ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الشيخ فى قومه كالنبى فى امته.

অর্থ: শায়েখ অর্থাৎ পীর-মাশায়িখগণ উনারা উনাদের ক্বওম বা অনুসারীদের নিকট তদ্রƒপ সম্মানিত ও অনুসরণীয় যেরূপ হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনারা স্বীয় উম্মতের নিকট সম্মানিত ও অনুসরণীয়। সুবহানাল্লাহ! (আল ফিরদাউদ্ লিদ দাইলামী, মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানজিহুশ্ শরীয়াহ্, মিজান, জামিউস্ সগীর লিস্ সুয়ূতী, দুরারুল মুন্তাশিরাহ্ লিস্ সুয়ূতী, মাকতুবাত শরীফ)

পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম-পরম সন্তুষ্টি-রেযামন্দী, মা’রিফত-মুহব্বত হাছিল করেছেন উনাদের আমল-আক্বীদা সেরূপই ছিলো।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, কোন এক কারণে কুদ্ওয়াতুল আরিফীন শায়েখ হযরত আযল তাবরিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কতল (হত্যা) করার জন্য জল্লাদের হাতে অর্পণ করা হয়। জল্লাদ উনাকে কতলের স্থানে নিয়ে ক্বিবলামূখী করে দাঁড় করালো। তখন শায়েখ আযল রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখলেন যে, উনার পীর ছাহিবের মাযার শরীফ পিছনে পড়ে। তাই তিনি কা’বা শরীফের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে স্বীয় পীর ছাহিব উনার মাযার শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। তখন জল্লাদ বললো, ‘আপনি এখন যে অবস্থার সম্মূখীন হয়েছেন তাতে আপনার কা’বা শরীফ উনার দিকেই মুখ করা কর্তব্য।’ শায়েখ আযল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ‘তাতে তোমার মাথা ব্যথা কেন? তোমার কাজ তুমি কর। আমি আমার মুখ নিজ ক্বিবলার দিকেই করে রেখেছি।’ এতে জল্লাদের সাথে তর্ক বেঁধে যায়। আর এরইমধ্যে শাহী দরবার হতে ফরমান (বাদশাহর নির্দেশ) আসে যে, বাদশাহ নিজের ভুল বুঝতে পেরে দরবেশকেকতল করার যে হুকুম দিয়েছিলো তা প্রত্যাহার করেছে। অতএব উনাকে মুক্তি দাও।” (ফাওয়ায়িদুস্ সালিকীন)

হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের অভিমত হচ্ছে যে, স্বীয় পীর ছাহিব ক্বিবলা উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা বা বিশ্বাস এবং আদব প্রদর্শনের উসীলায় তিনি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

আরো বর্ণিত আছে যে, একদা কুতুবুদ্দীন হায়দার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ অতি ক্ষুধার্ত অবস্থায় ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত শায়েখ শাহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খানকা শরীফে হাযির হয়ে স্বীয় পীর ছাহিবের আবাস স্থলের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করতে লাগলেন যে-

يا قطب الدين حيدر شيأ لله.

অর্থ: “হে কুতুবুদ্দীন হায়দার রহমতুল্লাহি আলাইহি! মহান আল্লাহ পাক উনার উসীলায় আমাকে সাহায্য করুন।” তখন শায়েখ শাহাবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ডাক শুনে নিজ খাদিমকে বললেন, আগন্তুককে আহার করিয়ে উনাকে যেন সংবাদ দেয়া হয়। খাদিম উনাকে আহার করালো। মুরীদ আহার অন্তে পুনরায় স্বীয় পীর ছাহিব উনার আবাস স্থলের দিকে ফিরে উনার শোকর আদায় করে বলতে লাগলেন, “হে কুতুবুদ্দীন হায়দার রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমার খুবই উপকার করলেন। আমি এখন পরিতৃপ্ত।” সুবহানাল্লাহ! খাদিম শায়েখ উনাকে এ সংবাদ দিয়ে বললেন যে, এমন অকৃতজ্ঞ লোক আমি কখনও দেখিনি যে, হুযূরের দেয়া খাবার খেয়ে নিজ পীর ছাহিবের কৃতজ্ঞতা জানায়। তখন শায়েখ শাহাবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি ছিলেন রিজালুল গায়েব উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তোমাদেরকে আদব শিক্ষা দিতে এসেছেন।” সুবহানাল্লাহ! এরূপ অসংখ্য, অগণিত আউলিয়ায়ে কিরাম বিগত হয়েছেন যারা কোন সময় স্বীয় পীর ছাহিবের অবস্থান স্থলের দিকে পা দেয়া তো দূরের কথা পিঠ পর্যন্ত দেননি। এমনকি ইন্তিকালের পরেও উনাদের মাথা মুবারক স্বীয় পীর ছাহিবের অবস্থান স্থলের দিকেই নিবদ্ধ ছিলো। সুবহানাল্লাহ!

কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ, ফক্বীহুল উম্মত, শাইখুল মিল্লাত, হযরত মাওলানা রূহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার পীর ছাহিব ক্বিবলা মুজাদ্দিদুয্ যামান, কুতুবুল আলম, আমিরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ অনেক মুরীদ-মু’তাক্বিদ আজমীর শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গেলাম। তারাগড় পাহাড়ে উঠে শহীদগণের মাযার শরীফ যিয়ারত করলাম। সেখানে একটি মাযার শরীফ দেখতে পেলাম যে, উনার মাথা মুবারক স্বীয় পীর ছাহিবের পা মুবারকের দিকে ছিল। বাদশাহ্ আওরঙ্গজেব ২/৩বার মাযার শরীফটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা করে দিয়েছিলেন আর প্রত্যেকবার মাযার শরীফ হতে আওয়াজ আসত, হে বাদশাহ! হাশরের ময়দানে আমার জাওয়াব আমিই দিব। আপনি কেন আমাকে বিরক্ত করছেন? সুবহানাল্লাহ!

কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযুল হাদীছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, মাহবুবে ইলাহী, সুলত্বানুল আরিফীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফের পূর্ব দিকে একজন আউলিয়া উনার মাযার শরীফ দেখতে পেলাম, উনার মাথা মুবারকও স্বীয় পীর ছাহিবের পা মুবারকের দিকে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ফুরফুরা শরীফের হযরত পীর ছাহিব ক্বিবলা উনার বিস্তারিত জীবনী ৮২, ৮৩)

এমনকি আমাদের দেশেও এরূপ অনেক ঘটনার অভাব নেই। সিলেটের অদূরে মুরারবন্দ এলাকায় সাইয়্যিদ নাসিরুদ্দীন সিপাহ্সালার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ অবস্থিত। যিনি কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আল্লামাতুল আইয়াম হযরত শাহ্জালাল ইয়ামেনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান খলীফা। উনার মাযার শরীফ পূর্ব-পশ্চিম অবস্থায় আজও বিরাজমান। উল্লেখ্য যে, উনাকেও উত্তর-দক্ষিণ করে কবরে নামানো হলো। কিন্তু রাখার সাথে সাথে পূর্ব-পশ্চিম দিকে হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও উত্তর দক্ষিণ দিকে করা সম্ভব হয়নি। অগত্যা উনাকে সেভাবেই রাখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হচ্ছেন ক্বিবলায়ে ক্বল্ব্ তথা অন্তরের ক্বিবলা। নামাযের ক্বিবলার ন্যায় যিনি অন্তরের ক্বিবলা উনার প্রতিও তায’ীম-তাকরীম, আদব বজায় রাখা ফরয। সালিক বা মুরীদ স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দিকে মুখ করেই যিকির-ফিকির, তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ শরীফ, খানা-পিনা ইত্যাদি সকল কাজ সম্পাদন করবে। মোটকথা, মুরীদের চাওয়া-পাওয়া আপন শায়েখ তিনি। উনার দিকেই অন্তরের রোখকে সবসময় নিবিষ্ট রাখতে হবে।

কিতাবে উল্লেখ আছে, ক্বিল্লতে ইলিম ও ক্বিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল। ফার্সীতে একটি প্রবাদ আছে, “নীম হেকীম খতরে জান, নীম মোল্লা খতরে ঈমান।” অর্থাৎ আধা কবিরাজ বা ডাক্তার মানুষের জীবন নাশ করে আর আধা মোল্লা অর্থাৎ মালানা-মুফতী মানুষের ঈমান নষ্ট করে। যার কারণে নামধারী মালানা, মুফতী, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িজ, মুফাসসিরে কুরআন, শায়খুল হাদীছ ইত্যাদি খেতাবধারী হলেই তাকে অনুসরণ করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত খিতাবধারী ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ অনুসারী না হবে অর্থাৎ তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী না হবে, পবিত্র সুন্নত উনার পাবন্দ না হবে, সর্বপ্রকার হারাম কাজ যেমন ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, খেলাধুলা করা, খেলাধুলা দেখা, গান-বাজনা শোনা, ভোট দেয়া, নির্বাচন করা, গণতন্ত্র করা, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ইত্যাদি থেকে বেঁচে না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না।

এদের প্রসঙ্গেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ اُفْتِىَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ اِثْـمُه عَلى مَنْ اَفْتَاهُ

অর্থ: যাকে ইলিম ব্যতীত (মিথ্যা বা মনগড়াভাবে) ফতওয়া প্রদান করা হলো, উক্ত ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ ফতওয়াদাতার উপরই বর্তাবে। নাঊযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

কাজেই, কেউ যদি তার বক্তব্যকে সঠিক বলে প্রমাণ করাতে চায় তাহলে তাকে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার উছূল বা মূলনীতি- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে দলীল পেশ করতে হবে। অন্যথায় বিনা দলীল-প্রমাণে কারো কোন বক্তব্য, লিখনী, ফতওয়া, মাসয়ালা, আক্বীদা, আমল সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও সম্মানিত মুসলমান উনাদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هاتوا برهانكم ا ن كنتم صادقين

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

বলাবাহুল্য যে, যারা উলামায়ে হক্ব উনারাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ওলী, আউলিয়া, আহলে যিকির, ছদিক্বীন, ছলিহীন, মুহসিনীন ইত্যাদি নামে পরিচিত। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় ‘ওরাছাতুল আম্বিয়া’ ফক্বীহ, ওলী, আউলিয়া, শায়েখ, মাশায়িখ ইত্যাদি নামে পরিচিত। ফার্সী ভাষায় উনাদেরকেই পীর ছাহিব বলা হয়।

অতএব, কোন বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা বা মাসয়ালা জানতে হলে শুধুমাত্র উলামায়ে হক্ব যারা, উনাদের নিকট থেকে জানতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون

অর্থ: যদি তোমরা না জান তাহলে যাঁরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করো। (সূরা নহল শরীফ: আয়াত শরীফ ৪৩)

আর যারা উলামায়ে হক্ব বা আল্লাহওয়ালা নয় তারা বিনা দলীলে, মিথ্যা ও মনগড়াভাবে বক্তব্য দিয়ে থাকে এবং মাসয়ালা বর্ণনা করে থাকে ও ফতওয়া দিয়ে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার প্রতিটি বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল অনুযায়ী করতে হবে। প্রতিটি কথার দলীল বলতে হবে। মনগড়া কোন কথা গ্রহনযোগ্য নয়।

কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ফায়ছালা, মাসয়ালা বা ফতওয়া জানার জন্য কেবলমাত্র উলামায়ে হক্ব উনাদের নিকট থেকে জানতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে।

কারণ যাঁরা উলামায়ে হক্ব উনারা মনগড়াভাবে আমল করেন না এবং মাসয়ালা বা ফতওয়া প্রদান করেন না। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার উছূল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস অনুযায়ী নিজেরা আমল করেন এবং অন্যদেরকে আমল করতে বলেন।

আর যারা সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম নাজায়িয কাজ করে এবং কাফির-মুশরিকদের প্রবর্তিত হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি করে তারা উলামায়ে হক্ব উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’ অর্থাৎ নিকৃষ্ট আলিমদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় দাজ্জালে কাযযাব, উলামায়ে সূ, মুনাফিক এবং জাহান্নামী বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিযোগ্য স্থান জুব্বল হুযনের অধিবাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

পরিশেষে মূল কথা হলো, রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে ক্বিবলা বলে সম্বোধন করা জায়িয ও শরীয়তসম্মত তো বটেই, এমনকি তা পুর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর এ বিষয়ে চু-চেরা ক্বীল-ক্বালকারীরা একদিকে ইলমে তাছাওউফ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। অপরদিকে এরা ইলমে ফিক্বাহর সাধারণ মাসয়ালা-মাসায়িল সম্পর্কে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল। এদের নূন্যতম ফিক্বহী জ্ঞান নেই। এরাই মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফিতনা সৃষ্টিকারী। এদের থেকে দূরে থাকা সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।

সুওয়াল: ৫ সন্তানের মা ৪২ বছর বয়স্ক জনৈক মহিলা স্বামীর মৃত্যুর দিন কয়েক পরই ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী সকল আত্মীয় স্বজন ছেড়ে প্রয়াত স্বামীর বাড়ীর পাশের ৫০ ঊর্ধ্ব এমন এক লোকের সাথে বের হয়ে যায় যার সাথে স্বামী জীবিত থাকাকাল থেকেই পরিচয় ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে এই দুইজন বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই বিভিন্ন মাজার ইত্যাদিতে ঘুরে বেড়ায় এবং পরস্পরের মধ্যে মাজারকে সাক্ষী রেখে কুরআন শরীফ শপথ করে সম্পর্ক বজায় রাখে। এভাবে প্রায় ৪ বৎসর কেটে যায়। পরিশেষে ২০১২ সালের মার্চ মাসে ঢাকার কোন এক বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) এর কাছে গিয়ে পরস্পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

উল্লেখ্য, কাবিননামায় এই ৪২ বৎসর ঊর্ধ্ব মহিলার বয়স ২৪ বৎসর এবং কুমারী বলে ঘোষণা করা হয়। যা একেবারেই মিথ্যা। এই মহিলার ১ম সন্তান (ছেলে) যার বয়স ২০১২ সালে প্রায় ২৪ বৎসর ছিল। মহিলার ২য় ও ৩য় সন্তান মেয়ে, স্বামী জীবিত থাকাকালেই যাদেরকে বিবাহ দেয়া হয়। তাদের ২টি করে সন্তানও আছে।  এই মহিলার সর্ব কণিষ্ঠ অর্থাৎ ৫ম সন্তান কন্যা, যার বর্তমান বয়স ১৪ বৎসর। অপর পক্ষে ৫০ ঊর্ধ্ব পুরুষ লোকটির বয়স ঘোষণা করা হয় ৩০ বৎসর বলে। কাবিননামায় দেনমোহর উল্লেখ করা হয় ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা। যার মধ্যে উসুল দেখানো হয় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। বাস্তবে ৩/৪ শত টাকার একটা নাকের ফুল ছাড়া আর কিছুই দেনমোহরের উসুল হিসাবে আজও পরিশোধ করেনি।

আরো উল্লেখ্য, কাবিননামায় সাক্ষী ও বিবাহের প্রস্তাবক এবং উকিল হিসাবে কাজী অফিসের পাশে অবস্থানকারী কিছু ব্যক্তি মাত্র। অর্থাৎ ফাসেক শ্রেণীর লোক যারা ভদ্র সমাজের কেউ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।

-উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদের জিজ্ঞাসা-

১। এই ব্যক্তিদ্বয় বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া দীর্ঘ প্রায় ৪ বৎসর কাল যে জীবন যাপন করেছে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তার কি ফায়ছালা?

২। উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে অনুষ্ঠিত বিবাহ ইসলামী শরীয়া মুতাবিক হয়েছে কি?

৩। আর যদি ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিবাহ না হয়ে থাকে তবে তার ফলাফলকি হতে পারে? ছহীহ বিবাহের শর্তাবলী জানাবেন এবং শর্ত ভঙ্গের কারণে দাম্পত্য জীবনে এর প্রভাব কি?

এই সাথে মাসনুন তরীকার বিবাহ সম্পর্কে জানতে চাই। মেহেরবানী করে সঠিক জাওয়াব দিয়ে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব: প্রেরিত সুওয়ালের বিবরণ অনুযায়ী প্রথমত বলতে হয় যে, উক্ত বিধবা মহিলা ও পুরুষ লোকটি বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া যে দীর্ঘ ৪ বৎসর কাল জীবন যাপন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও অবৈধ হয়েছে। অর্থাৎ এই ৪ বৎসরের অবৈধ সম্পর্কের জন্য তাদের উভয়ের প্রতি কঠিন গুনাহ আরোপিত হবে। এ অবস্থায় উক্ত মহিলা ও পুরুষ লোকটি বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া যে সময়গুলি একসাথে অতিবাহিত করেছে তার জন্য তাদেরকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, বিবাহের জন্য বয়সের তারতম্য ধর্তব্য নয়। যে কোন বয়সের পুরুষ ও মহিলা, ছেলে কিংবা মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে ২ জন পুরুষ সাক্ষী অথবা ২ জন পুরুষ সাক্ষীর অবর্তমানে ১ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পন্ন হতে হবে।

কাজেই, সুওয়ালে উল্লিখিত পুরুষ ও মহিলা বিবাহ রেজিষ্ট্রার অর্থাৎ কাজী ও তার পাশে অবস্থানকারী কতক ব্যক্তির সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করেছে তাই এখন তাদের মধ্যে বৈবাহিক ও বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বিবাহের জন্য কাবিননামা শর্ত নয়। তাই কাবিননামায় উক্ত মহিলাকে ৪২ বছরের স্থলে ২৪ বছর এবং বিধবার পরিবর্তে কুমারী এবং পুরুষ লোকটিকে ৫০ বছরের পরিবর্তে ৩০ বৎসর উল্লেখ করা বিবাহ কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। কারণ এসব কোনটাই বিবাহ পড়ানোর মধ্যে উল্লেখ করা হয় না। তবে তাদের বয়স ও পরিচয়ের ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার কারণে অবশ্যই কবীরাহ গুনাহ হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কোন বান্দা মিথ্যা বলে, তখন তার দুর্গন্ধে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যান। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অতএব, সর্বপ্রকার মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা সকল মু’মিন-মুসলমানের জন্যেই ফরয।

আর ২ লক্ষ টাকার দেনমোহর ধার্য করে কেবল ৩/৪ শত টাকার একটা নাক ফুল দিয়ে ৫০ হাজার টাকা উসুল করার ঘোষণা করাটাও চরম মিথ্যার শামিল। দেনমোহর নিয়ে এরকম মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।

উক্ত সমস্ত মিথ্যা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

স্মরণীয় যে, আহলিয়া বা স্ত্রীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে মোহর দেয়ার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। আর মোহর নির্দিষ্ট করার পর কোন স্বামী যদি মোহর পরিশোধ না করে এই মোহর আহলিয়ার পক্ষ থেকে তার আহল বা স্বামীর প্রতি ঋণ হিসেবে গণ্য হবে।

অতএব, স্বামীর উপর দায়িত্ব ও ফরয হলো মোহর পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়া। হায়াতের মধ্যে আদায় না করলে বা আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর পর স্বামীর সম্পত্তি থেকে মোহরের টাকা আদায় করা ফরয।

তৃতীয় বলতে হয় যে, বিবাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজী এবং তার পাশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ কার্যকর হওয়া নিঃসন্দেহে ইসলামী শরীয়তে স্বীকৃত।

তবে সুন্নত হচ্ছে পারিবারিকভাবে অভিভাবকের সম্মতি ও ব্যবস্থাপনায় শরয়ী পর্দার সাথে সুন্নতী তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা। বিবাহ অনুষ্ঠানকে সর্বপ্রকার হারাম-নাজায়িয শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে মুক্ত রাখা। বিবাহ অনুষ্ঠানে হারাম কাজ করলে কবীরা গুনাহ হবে। যারা গুনাহতে জড়িত সবাইকে খালিছ ইস্তিগফার তওবা করতে হবে।

চতুর্থত বলতে হয় যে, পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত বিবাহ শরীয়তসম্মত হয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের জীবন যাপন সম্পর্কে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই।

মাসনূন বা সুন্নত তরীক্বার বিবাহ সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক লম্বা বিষয়; তবে সংক্ষেপে হচ্ছে, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের কুফূ বা সমতার বিষয়টি দেখতে হবে। পুরুষ-মহিলা বা ছেলে-মেয়ে উভয়কে দ্বীনদারীর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিবাহ মজলিসে বিবাহ সম্পাদনের পূর্বে আহল ও আহলিয়া একে অপরের প্রতি যে হক্ব ও সম্মান রয়েছে জানতে হবে এবং পালন করতে হবে। উপস্থিত লোকজন ও সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে ইজাব ও কবূলের মাধ্যমে সুন্নতী মোহরের শর্তে (১৩১.২৫ তোলা রুপার বর্তমান বাজার মূল্য) এবং আহলের সাধ্য-সামর্থ অনুযায়ী খোর-পোষের ভিত্তিতে বিবাহ সম্পাদন করতঃ আরবী ভাষায় খুতবা প্রদান করতে হবে। অতঃপর খুতবাহ শেষে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করে অথবা পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করে দুআ-মুনাজাত করবে এবং মুনাজাতে খাছভাবে বর ও কনে উভয়ের জন্য এবং আমভাবে সকলেই তাদের আগত সন্তানের জন্য যাতে আল্লাহওয়ালা আল্লাহওয়ালী হয় সেজন্য দুআ করতে হবে। সর্বশেষে বিবাহ মজলিসে খুরমা খেজুর ছিটানো সুন্নত। এছাড়া ওলীমার ব্যবস্থা করে মেহমানদের খাওয়ানোও সুন্নত।

স্মরণীয় যে, বিবাহ অনুষ্ঠানে হোক অথবা অন্য সময়েই হোক কখনোই কোন বেগানা পুরুষ নব বধুকে দেখতে পারবে না। কারণ পর্দা করা মহিলা পুরুষ সকলের প্রতিই ফরয।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-

لعن الله الناظر والـمنظور اليه

অর্থ: যে (পুরুষ) দেখে এবং যে (মহিলা) দেখায় উভয়ের প্রতিই মহান আল্লাহ পাক তিনি লা’নত বর্ষণ করেন। নাউযুবিল্লাহ! (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

দলীলসমূহ: তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছুর, তাফসীরে মাদারেক, তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে আবী সাউদ, তাফসীরে যাদুল মাছীর, তাফসীরে জালালাইন, মুসনাদে আহমদ শরীফ, সীরাতে আয়িশা আলাইহাস সালাম, বায়হাক্বী শরীফ, দায়লামী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফাতহুল বারী শরহে বুখারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী শরীফ, ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত তীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া, জামিউল ফতওয়া, মুহীত, মুগনী, হিদায়া, শরহে বিক্বায়া, তাতারখানিয়া, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে আযীযী, হুকূকুয যাওজাইন ইত্যাদি।

 

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৭

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৬

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩৫

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২৫ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা’, ‘মৌলিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’ এবং ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ শীর্ষক অনুচ্ছেদের সাথে- থার্টি ফার্স্ট নাইট তথা ভ্যালেন্টাইন ডে পালন সরাসরি সাংঘর্ষিক ও সংঘাতপূর্ণ’। পাশাপাশি মোঘল সংস্কৃতির দান পহেলা বৈশাখ পালনও প্রশ্নবিদ্ধ।সংবিধানের বহু গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ স্পর্শকাতর অনুচ্ছেদের প্রেক্ষিতে ৯৫ ভাগ মুসলমানের এদেশে কোনভাবেই থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হতে পারে না।পারেনা গরিবের রক্ত চোষক ব্র্যাকের ফজলে আবেদও ‘নাইট’ খেতাব গ্রহণ করতে। পারেনা তার  নামের সাথে ‘স্যার’ যুক্ত হতে। পাশাপাশি মোঘল সংস্কৃতির দান পহেলা বৈশাখ পালনও প্রশ্নবিদ্ধ।