বাহরাইনে দশ বাংলাদেশীর মৃত্যু, সিলেট গোয়াইঘাট ওসির কাণ্ড সাধারণের অর্থ লুটপাট এবং প্রসঙ্গ কথা

সংখ্যা: ২১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমুন্নত, সুমহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সকল প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই সকল ছানা-ছিফত।

বাহরাইনের রাজধানী মানামা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রিফা সড়কের পশ্চিম পাশে ৩টি কক্ষের একটি একতলা ভবনে থাকতেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার হানিফ, তার শ্যালক সোলেমান ও মেয়ের জামাতা মনির। আরও থাকতেন একই উপজেলার কাউছার, তাহের, ছিদ্দিক, লাকসাম উপজেলার নুরু, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার হাসেম ও চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ আহমেদ। কাজ শেষে গত ২৬শে মে ২০১২ তারিখ শনিবার রাতে বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন সবাই। পরে বাহরাইন সময় রাত ৩টায় ও বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় বাসায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে বাসায় আগুন ও গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হলে সবাই মারা যান। নিহতের মধ্যে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ৬ জন, লাকসামের ১ জন, চৌদ্দগ্রামের ১ জন, চাঁদপুর হাজীগঞ্জের ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১ জনসহ ৯ শ্রমিকের গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকের মাতম পরিবারকে ছাড়িয়ে নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে স্বামী, অন্যদিকে বাবা ও মামার করুণ মৃত্যু শাহিনুর আক্তারকে হতভম্ভ করে দিয়েছে। বাড়ির আঙিনায় সন্তানদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহীনুর।

১০ বছর ধরে বাহরাইনে রাজমিস্ত্রির শ্রমিক কনট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের হানিফ। হানিফের স্ত্রী আয়াতের নেছা একমাত্র ছেলে রাসেলকে জড়িয়ে কাঁদছেন আর হানিফ ও তার পরিবারের অসচ্ছলতার কাহিনী বর্ণনা করছেন।

লাকী আক্তারকে রোববার দেখতে আসার কথা ছিল পাত্রপক্ষের। সে জন্য সকাল থেকে প্রস্তুতি পরিবারের। কিন্তু এমন সময় বাহরাইন থেকে ফোন এলো সবাই মারা গেছেন। পুরো পরিবার তখন শোকে আচ্ছন্ন। আর নিজের ভাগ্য, বাবার মৃত্যু আর পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে লাকী কিছুক্ষণ পরপরই বিলাপ করে উঠেন আবার জ্ঞান হারান।

সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ভুশ্চি পূর্বপাড়া আনোয়ার উল্লাহর জ্যেষ্ঠ ছেলে ছিদ্দিকুর রহমান (২৫)। ২০০৩ সালে স্থানীয় ছোট শরীফপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাকে বাহরাইনে পাঠান তার বাবা। ৪-৫ বছর বাহরাইনে থাকার পর কোনও ভালো সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন। বছর দুয়েক দেশে থাকার পর আবার পারিবারিক উদ্যোগে ঋণ করে ৪ মাস আগে বাহরাইনে যান। সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রি ও গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন। ২ ভাইবোনের মধ্যে ছিদ্দিক ছিলেন পরিবারের সবার বড় ও একমাত্র রোজগেরে। রোববার সকাল ৭টায় বাহরাইন থেকে ছিদ্দিকের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের দোশারী চোঁ গ্রামের খোরশেদ আলম সোলেমান (৪০) প্রায় ১০ বছর সউদী আরবে থাকার পর ভগ্নিপতির প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে পুনরায় কর্মের খোঁজে পাড়ি জমান বাহরাইনে। স্ত্রী বিলকিছ আক্তার ছাড়াও প্রথম ছেলে রাকিব হোসেন ও দ্বিতীয় ছেলে সাব্বির হোসেন রয়েছেন। দুই ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। বাহরাইনে নিজ কক্ষে সোলেমান মারা যাওয়ার সংবাদে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। নিজ স্বামী ছাড়াও আরও ২ স্বজনের মৃত্যু যেন তাকে স্বামীর পথে টানছে।

স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া বাবা শামসুল হক ও মা নূরজাহান বাড়ির আঙিনায় বিছানায় বসে কাঁদছেন। ছেলে নুরুর বাঁধাই করা ছবি বুকে নিয়ে শোকে পাথর হয়ে রয়েছেন নূরজাহান। লাকসাম উপজেলার নরপাটি ইউনিয়নের মধ্য চাঁনপুর গ্রামের শামসুল হক সামুর ছেলে শাহ আলম নুরু (২৮) জীবিকার জন্য ২০০৬ সালে বাহরাইনে যান। পরিবারের অসচ্ছলতাকে দূর করতে একটানা ৬ বছর পর এ মাসে বাড়ি আসার কথা ছিল তার।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বজন হারানো পরিবারগুলো শোকার্ত থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মর্মন্তুদ বিষয় হলো- শোকার্ত পরিবারগুলোর শোক দ্বিগুণ বহুগুণ বেশি হচ্ছে এজন্য যে, সমাজে বিরাজমান বাস্তবতার নিরীখে তাদের মধ্যে উপলব্ধি কাজ করছে যে তারা অকূল পাথারে ভাসছেন। কারণ সমাজ এমন সব মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করেনি যারা দয়াবোধ অথবা মমত্ববোধ প্রদর্শন করে এসব শোকার্ত অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে। তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। জীবন-যাপনের চাহিদার যোগান দিবে।

বলাবাহুল্য, রাষ্ট্রযন্ত্র এক্ষেত্রে নিষ্ঠুর ও নির্মম। রাষ্ট্রযন্ত্র এমন কাঠামো বহন করছেনা যার প্রেক্ষিতে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষগুলো শুধু স্বজন হারানোর বেদনায়ই শোকার্ত থাকে। বরং তাদের এ শোক আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পায় যখন ক্ষতিগ্রস্তরা দেখেন তাদের এতদিনের রোজগেরে ব্যক্তির সাথে সাথে তার রোজগারটাও বিদায় নিয়েছে। আর তাদের জন্য উপস্থিত হয়েছে অভাব-অনটন-আর্তনাদ, অসহায়ত্ব, অক্ষমতা ইত্যাদি সব কিছু। অথচ রোজগেরে ব্যক্তিরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে যোগান দিয়েছেন। বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

প্রচলিত গণতন্ত্রের পরিভাষায় রাষ্ট্রযন্ত্র একটি নির্বোধ প্রতিষ্ঠান। এই নির্বোধ রাষ্ট্রযন্ত্র এরকম নির্বুদ্ধিতা করে যাবে, নিষ্ক্রিয়তা প্রদর্শন করবে, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও নির্দয়া জাহির করবে- এটাই ঠিক।

কিন্তু কথা হচ্ছে সংবেদনশীল মানুষের জন্য নির্বোধ রাষ্ট্রযন্ত্র প্রযোজ্য হয় কী করে?

আবেগ, অনুভূতি বিশ্বাসের প্রতিভূ মানুষ, নির্বোধ রাষ্ট্রযন্ত্র গ্রহণ করে কীভাবে?

বলাবাহুল্য, রাষ্টযন্ত্র নির্বোধ বলেই এক দিনে হাজার হাজার বস্তি উচ্ছেদ করে। রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু দেখে অবকাঠামো। কিন্তু যাদের জন্য অবকাঠামো ‘সেই মানুষ সত্য’ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বড় কিছু নয়। (নাঊযুবিল্লাহ)

অপরদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র এমন কাঠামো পোষণ করছে যার আবহে অবলীলাক্রমে বাস করছে দুর্নীতিবাজ, লম্পট, প্রতারক, চরিত্রহীন ইত্যাদি সব কিছু। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, ‘ইউনিপে টু ইউ’  নামক এমএলএম কোম্পানি ছয় লাখ গ্রাহককে প্রতারিত করে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে। জনগণের সাথে প্রতারণা করা অর্থে এর পরিচালক পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিদিনই ফাইভস্টার হোটেলে লাখো লাখো টাকা ব্যয়ে নিত্যনতুন নারীসঙ্গ ভোগ করতো, শরাব পানে বুঁদ থাকতো। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে ফাঁক-ফোকর আছে বলেই এরা এভাবে গরীবের টাকা শুষে নিতে পারছে। গত ২৮শে মে ২০১২ তারিখে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে সিলেট থেকে ছয়শো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী।

এদিকে গত ২৯শে মে ২০১২ তারিখে পত্রিকায় পত্রস্থ হয়েছে সিলেট গোয়াইনঘাটের ওসি তার স্ত্রী ও জনতার সামনে বিবস্ত্র অবস্থায় ধরা পড়েছে রাতে নিজ বাসভবনে কলগার্ল নিয়ে মত্ত থাকা অবস্থায়। দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোতে খোদ প্রশাসনেও চরিত্রহীন, দুর্নীতিবাজ ব্যাপকহারে বিরাজ করছে।

প্রতিভাত হয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্র আসলেই নির্বোধ। এই নির্বোধ প্রতিষ্ঠানটি দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালনের জন্য নয়। তাই রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে দুঃখী অসহায় মানুষের আর্তনাদ পৌঁছেনা। দুর্নীতিবাজ, প্রতারক লম্পটরা প্রকৃত বাধাগ্রস্ত হয়না। দু/একটি বিচ্ছিন্ন বাধা যাও আসে তা ঘটনা ঘটার অনেক পরে। তাও শেষ পর্যন্ত সত্যিকার ও সুষ্ঠু বিচারের আলো দেখতে পায়না।

আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রযন্ত্র মূলত এভাবে বাস্তুহারা থেকে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত পর্যন্ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অথচ তাদের সংখ্যাই দেশের পাঁচভাগের চারভাগ। অর্থাৎ তারাই বৃহৎ জনশক্তি। কাজেই এই বৃহৎ জনশক্তির নিজের স্বার্থেই আর নিষ্ক্রিয় না থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা তথা বোধহীনতা উপলব্ধি করে জেগে উঠা উচিত।

মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৩

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩১