পাকিস্তানী বুলেট যে জাতিকে পরাস্ত করতে পারেনি; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছে! বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে জাতি রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ অর্জন করেছে; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি আওড়ায়। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে হিন্দু সংস্কৃতি ও চ্যানেলের আগ্রাসন এবং ভারতের চাপ প্রয়োগ। এর প্রতিরোধ হওয়া আবশ্যক; এবং প্রতিহত করা অনিবার্য  ৪ 

সংখ্যা: ২১১তম সংখ্যা | বিভাগ:

২০১১ সালের বইমেলার এক মাসের আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; যা আগে কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এভাবে হয়নি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ফসল বাংলা একাডেমির বইমেলার পুরো মাসের আলোচনা অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথকে বিষয় করায় নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেননা, ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কোনো সম্পর্ক নেই। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানানো হয় কলকাতার অনেক হিন্দুকে। একই বিষয়ে এদেশে বিশেষজ্ঞ থাকলেও তাদের মধ্যে অনেকে আমন্ত্রণ পাননি। একাডেমির দাবি, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ বিষয় নির্ধারিত হয়। বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান- ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে একইভাবে পুরো মাসের আলোচনা অনুষ্ঠান করবেন কি-না?’ প্রশ্নটার উত্তর দেননি তিনি। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে চলছে রবীন্দ্র বন্দনা। রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চায়নে, তাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানাতে আর্থিক সহায়তা দিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি এ প্রকল্প পরিচালনা করছে। অথচ জাতীয় কবি নজরুলকে নিয়ে এরকম প্রকল্প সরকারের নেই। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হয়েও নজরুল এখন চরম উপেক্ষিত। অভিযোগ আছে, ভারত সরকারের চাপে মহাজোট সরকার রবীন্দ্র বন্দনার এ প্রকল্প নেয়।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাত্র সাতদিন পর আর মর্মান্তিক বিডিআর বিদ্রোহের দ্বিতীয় বার্ষিকীর আগ মুহূর্তে ঢাকায় ‘ডেসটিনি গ্রুপ ট্রাইনেশন বিগ শো’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয় ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক কনসার্ট।

অন্যদিকে একাত্তর সালে স্বাধীনতা লাভের চল্লিশ বছর পূর্ণ হয় এ বছর ২০১১ সালে। এ উপলক্ষে সরকারি, বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে মার্চ মাসজুড়ে। এর মধ্যে প্রায় সব অনুষ্ঠানের তালিকায় ছিলো ভারতীয় শিল্পীরা। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমি ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার’ মিলেও ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করে। এ দু’প্রতিষ্ঠানের যৌথ আয়োজনে গত ৪ মার্চ (২০১১ ঈ:) শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী বিদ্যা শাহ, ১৮ মার্চ (২০১১ ঈ:) প-িত যশরাজের সঙ্গীত সন্ধ্যা। তারা ঢাকার বাইরেও অনুষ্ঠান করে। এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কামাল লোহানী বলেন, ‘ভারতীয় কোনো শিল্পীর সঙ্গে এ দেশের কাউকে মঞ্চে উঠিয়ে দেয়ার মানে হয় না। তাই এ দেশের কাউকে রাখা হয়নি। তাছাড়া ভারতীয় দূতাবাসও এ দেশের কোনো শিল্পীকে অনুষ্ঠানে চায়নি।’ অর্থাৎ ভারতের ইচ্ছায়ই এদেশের সংস্কৃতি চলছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দুই বছর তিন মাসে শতাধিক ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী, অভিনয়শিল্পী এ দেশে কনসার্ট করে। এ সময়ের মধ্যে কতজন এসেছে, এর ঠিক পরিসংখ্যান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েও নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে তথাকথিত অভিজাত ক্লাবগুলো ভারতীয় শিল্পীকে আনলেও তা গোপন রাখে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লুকোচুরি করে শিল্পীদের আনা হয়। ট্যাক্স ফাঁকি দিতে আয়োজকরা এ লুকোচুরি করে। কথিত অভিজাত ক্লাবগুলো ভারতীয় আইটেম গার্ল, ডিজিটাল জকিদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে অনুমতি ছাড়া। ভারতীয়দের কদর বাড়লেও এ দেশের কোনো কথিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভারতে যেতে পারছে না।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক বৈষম্যের মতো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, আজকে তরুণ সমাজের মধ্যে যে অবক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে একথা স্বীকার করতে হবে। এর কারণ হিসেবে অনিবার্যভাবে বলতে হয়, স্যাটেলাইট টেকনোলজির বদৌলতে মিডিয়াতে পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার করা হচ্ছে; অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে তাদের কালচার। আর পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের কারণে তরুণ সমাজের মধ্যে অবক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভের সাম্প্রতিক জরিপ মতে, দেশে টিভি দর্শকের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ১২ লাখ, যাদের বয়স ১৫ বছরের উপরে। তবে ১৫ বছরের নিচের দর্শকের সংখ্যাও কম নয়, তাদের জরিপের বাইরে রাখা হয়। তারাসহ দর্শক সংখ্যা আরও বেশি। এসব দর্শক প্রতি ১০০ মিনিটের মাত্র ৩০ মিনিট দেখে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল। বাকি ৭০ মিনিট দেখে বিদেশী চ্যানেল। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময় দেখে ভারতীয় চ্যানেল। তারা বেছে নিচ্ছে ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল, সিনেমা, গান আর রিয়েলিটি শোগুলো। তারা অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুর চেয়ে বাহ্যিক চাকচিক্যে মুগ্ধ।

তথ্য মতে, ক্যাবল সংযোগে বাংলাদেশে দেখা যায় ২৭২টির মতো টিভি চ্যানেল। এর মধ্যে বাংলাদেশী চ্যানেল ১২ থেকে ১৩টি। আরও কয়েকটির পরীক্ষামূলক প্রচার চলছে। সেগুলো অচিরেই সম্প্রচারিত টিভির তালিকায় যুক্ত হবে বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি। বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান বাংলাদেশের দর্শকরা প্রতি ১০০ মিনিটের মাত্র ২৯.২০ শতাংশ সময় দেখে। ভারতীয় হিন্দি চ্যানেল ১৮.৭৮ শতাংশ, ভারতীয় বাংলা ৭.৫২ শতাংশ, ইংরেজি ৪.৫ শতাংশ আর বাকি ৪০ শতাংশ সময় অন্যান্য চ্যানেল দেখে। ৪০ শতাংশের মধ্যে আছে আরবি, ফার্সি, উর্দু, তামিল, রুশ, জার্মান, চীনা, ফরাসি চ্যানেল। এর মধ্যে টিভি ডিভাইস দিয়ে অনুষ্ঠান মনিটর করার (চ্যানেল পাল্টানোর সময়) সময়টা ৪০ শতাংশ হিসেবে এসেছে। ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভের ওই জরিপ আরো বলছে, রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা সময়কালে হিন্দি চ্যানেলগুলোর দর্শক সংখ্যা বেশি থাকে। (নাঊযুবিল্লাহ) (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-মুহম্মদ আরিফুর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস