খালিক-মালিক আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জত কালাম পাকে ইরশাদ ফরমান-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
“নিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : আয়াত ২১) অর্থাৎ মানবজাতি তার প্রতিটি মুহূর্ত তথা কথন, চলন, বলন, আক্বায়িদ, মুয়ামেলাত, মুয়াশারাত অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করবে এটাই হলো ফিতরাত স্বাভাবিকতা তথা মানবতা। হাক্বীক্বী মনুষ্যত্বের জিন্দেগী একমাত্র এর মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব হবে। সেটাই ওলীকুল শিরোমনি আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো খোলামেলাভাবে বলেন, ‘মানুষের বাহ্যিক রূপ, লাবণ্য, অবয়ব, গঠনাকৃতি, অঙ্গ-প্রতঙ্গ, অস্থিমজ্জা কিংবা চামড়ার মাঝেই মনুষ্যত্ব নয়। বরং এগুলো মানুষের সতন্ত্র গুনপ্রকৃতিমাত্র। মূলত: হাক্বীক্বী মানবতা তথা মনুষ্যত্ব কামালতে লাতাফাত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
ঠিক একইভাবে মানুষের রোগ শোক, বালা-মুছীবত ইত্যাদি আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এর থেকে পরিত্রাণ তথা উত্তরণের জন্য হালাল পন্থায় চিকিৎসা তথা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়াও খাছ সুন্নতে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! এ প্রসঙ্গে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, একদা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম বারে ইলাহী উনার দরবারে আরজ করলেন হে আমার রব! রোগ কার পক্ষ হতে? আল্লাহ পাক বলেন- আমার পক্ষ হতেই। তিনি আবার আরজ করলেন- ঔষধ কার পক্ষ থেকে? ইরশাদ হলো- ঔষধও আমার তরফ থেকে। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম আবারো জানতে চাইলেন- তাহলে চিকিৎসকের কি প্রয়োজন হে বারে ইলাহী? আল্লাহ পাক তখন নাযিল করলেন- “চিকিৎসকের মাধ্যমেই রোগ থেকে শেফা লাভের ঔষধ প্রেরিত হয়।” সুবহানাল্লাহ!
অন্য হাদীছ শরীফ-এ হযরত জাফর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। সুতরাং যখন রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা তথা পথ্য গ্রহণ করা হয়। তখন আল্লাহ পাক-এর হুকুমেই রোগী আরোগ্য লাভ করে।” (মুসলিম শরীফ, যাদুল মাআদ)
অন্যত্র হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রোগ এবং দাওয়া (ঔষধ) দু’টিই পাঠিয়েছেন এবং প্রতিটি রোগেরই ঔষধ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করো না।” (মিশকাত শরীফ, সুনানে আবু দাঊদ শরীফ)
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, বর্তমানে অনেক নামধারী আলিম, জালিম, ফাসিক-ফুজ্জার ছূতানাতা ওসীলায় এবং বিনা তাহক্বীক্বেই বিভিন্ন হারাম পন্থায় চিকিৎসা পথ্য গ্রহণ করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সেগুলোর মাঝে সত্যিকার অর্থে কোন শেফা নেই। যা অন্য হাদীছ শরীফ-এ আরো সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জত ঐ জিনিসের মাঝে তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেন নাই যা তোমাদের জন্য হারাম বলে ঘোষিত হয়েছে।” (মুস্তাদারাক, যাদুল মাআদ)
মূলত: হারাম মিশ্রিত বস্তু যেমন মানুষের তথা রোগীর শেফা লাভের উসীলা হতে পারেনা তদ্রুপ হারামখোর, নামধারী আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ মানুষের জাহির-বাতিন, ছিরত-ছূরত, সুন্নতের রঙ্গে রঞ্জিত করা তথা কলবের ইছলাহীর উসীলা হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহ উনার নিছবত ছোহবত তায়াল্লুকের উসীলা। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দয়া ইহসানে আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে শারীরীক রোগ শোকের ওসীলা চিকিৎসা পথ্য গ্রহণের সুন্নত আদায়ের সাথে সাথে কলবের যাবতীয় রোগ থেকে পরিত্রানের ফরজিয়াত আদায়ের প্রধান উসীলা বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী, হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার মুবারক ছোহবত নসীব করুন। আমীন।
আল্লামা গোলাম মুনযির মুহম্মদ