-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ এই ধারণাটি সঠিক নয় যে, অমাবস্যায় নতুন চাঁদের জন্ম হয় এবং জন্মের পরেই চাঁদ দৃশ্যমান হবে।
ইংরেজিতে অমাবস্যাকে বলে New Moon। নিউমুনের অভিধানিক অর্থ অমাবস্যা হলেও সাধারণ মানুষ এর অর্থ করে নতুন চাঁদ। বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থেও নিউমুনের অর্থ নতুন চাঁদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘নিউমুন’ শব্দটির পরিবর্তন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। অনেক মহাকাশ বিজ্ঞানী কখনো কখনো New Moon -এর পরিবর্তে No Moon, Black moon ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রকৃতভাবে এ শব্দগুলোও সঠিক অর্থ বহন করে না। যেমন No Moon-এর অর্থ ‘চাঁদ নেই, প্রকৃতপক্ষে অমাবস্যায় চাঁদের উপস্থিতিতো অবশ্যই থাকে শুধু তা দৃশ্যমান হয় না। আবার Black Moon-এর অর্থ যদি হয় ‘কালো চাঁদ’ তাও সঠিক নয় কেননা পৃথিবীর দিকে চাঁদের যে অংশটুকু থাকে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে বলে দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু সূর্যের দিকের অংশটুকু আলোকিতই থাকে।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী New Moon-এর পরিবর্তে Zero moon ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মুবারক নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই রুইয়াতে হিলাল মজলিস নিউ মুন-এর পরিবর্তে ‘জিরো মুন’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। ‘জিরো মুন’ শব্দটি ব্যবহারের পেছনে যে কারণ রয়েছে তা হচ্ছে এরকম-
অমাবস্যার সময় চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে অবস্থান করে এবং সে সময় চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। সে সময় চাঁদের বয়স ধরা হয় শূন্য ঘণ্টা, শূন্য মিনিট। অমাবস্যার পর, চাঁদ একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছলে (সাধারণত তা ১৮-২১ ঘণ্টা) এবং চাঁদের বয়সের পাশাপাশি আরও কিছু শর্ত পূরণ হলে চাঁদ পৃথিবী থেকে দেখা যায়। মহাকাশ বিজ্ঞানীগণ অমাবস্যার সময় চাঁদের বয়স শূন্য ধরেই তাদের সকল গণনার কাজ করেন। ফলে অমাবস্যার পর যখন চাঁদ দৃশ্যমান হয় তখন উল্লেখ করা হয় এভাবে যে ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টার চাঁদ বা ৩৬ ঘণ্টার চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে। সুতরাং গণনার সময় চাঁদের বয়স যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঁদের উপস্থিতি যেহেতু সবসময়ই থাকে এবং থাকবে তাই New Moon, balck moon- না বলে Zero moon বলাই যুক্তিসঙ্গত।
অমাবস্যার চাঁদকে New Moon- বলার পেছনে কারণ হচ্ছে অমাবস্যার পর থেকেই চাঁদ আবার ধীরে ধীরে পৃথিবীর চারপার্শ্বে ঘুরে বিভিন্ন দশায় পৌঁছে এবং শেষে আবার পৃথিবীর আড়ালে চলে যায়। সে সময় পৃথিবীর চারপার্শ্বে চাঁদের একবার প্রদক্ষিণ শেষ হয়। এছাড়াও ইহুদীরা অমাবস্যার চাঁদকেই নতুন চাঁদ হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের ক্যালেন্ডার রচনা করে থাকে। ফলে অমাবস্যার চাঁদ তাদের কাছে নতুন মাসের নতুন চাঁদ। মুসলমানদের কাছে গণনার দিক থেকে এই অমাবস্যার চাঁদের কোন গুরুত্ব নেই। কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে বাঁকা চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলুন- এটি মানুষের (আরবী মাস ও ইবাদতের) সময় এবং হজ্জের সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম।” আবার হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে ঈদ কর।” কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এ যে চাঁদের বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে হিলাল বা বাঁকা চাঁদ যা অমাবস্যার পরে পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়। এই বাকা চাঁদ বা হিলালকে বলা হয় Crecent moon- যা কিনা শরীয়তের নতুন চাঁদ। আর অমাবস্যার চাঁদ হচ্ছে GERO MOON-যার বয়স শূন্য ঘণ্টা, শূন্য মিনিট এবং তা কখনো দৃশ্যমান হয় না। এবারে আমরা আমাদের আলোচনায় ফিরে আসি। যারা মনে করেন অমাবস্যায় নতুন চাঁদের জন্ম হয় ফলে জন্মে পরেই চাঁদ দৃশ্যমান হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। অমাবস্যার সময় নতুন চাঁদের জন্ম হয় সত্য তবে তা দেখতে পাবার জন্য কমপক্ষে ১৮-২১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে বিষয়টিকে এভাবে অপব্যাখ্যা করেন যে, অমাবস্যার পর নতুন মনজিলে চাঁদ যাত্রা শুরু করে ফলে এই নতুন যাত্রার চাঁদই হচ্ছে শরীয়তের নতুন চাঁদ। তাদের কাছে চাঁদ দেখতে পওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং নতুন মনজিলে চলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরকম ব্যাখ্যা শরীয়ত সমর্থিত নয়।
সুতরাং মনে রাখতে হবে নিউমুন শব্দটি বিভ্রান্তিকর বলে তা পরিত্যাজ্য। নিউমুন শব্দের পরিবর্তে জিরো মুন শব্দটির বহুল প্রচার প্রয়োজন। ইহুদী-মুশরিকদের কাছে অমাবস্যার চাঁদের গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু মুসলমানদের কাছে নয়। মুসলমানদের কাছে New Moon- হচ্ছে অমাবস্যার চাঁদ। আর অমাবস্যার পর পরই চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। অমাবস্যা অনুযায়ী আরবী মাস গণনা করা কখনোই শরীয়ত সমর্থিত নয় বলে তা সর্বদাই পরিত্যাজ্য।
বিশ্বের জন্য ১৪৩০ হিজরীর পবিত্র রবীউল
আউয়াল শরীফ মাসের চাঁদের রিপোর্টঃ
জিরো মুন (অমাবস্যা) সংঘটিত হবে ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯, বুধবার, ১টা ৩৫ মিনিটে (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)।
সউদী আরবে বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, চাঁদ দেখতে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তারিখের পূর্বে সউদী আরবে চাঁদ দৃশ্যমান হবে না।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী জিরো মুন (অমাবস্যা) সংঘটিত হবে বুধবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে।
বাংলাদেশে পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ-এর চাঁদ খুঁজতে হবে বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায়। এই দিন ঢাকায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টায় এবং চন্দ্রাস্ত ৭টা ১২ মিনিটে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার প্রায় ১৬ ডিগ্রির উপর অবস্থান করবে। আকাশ মেঘলা না থাকলে চাঁদ দেখতে পাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী চাঁদ দেখতে পেলে, শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী হবে পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ-এর পহেলা তারিখ এবং সে অনুযায়ী মঙ্গলবার, ১০ মার্চ হবে পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১