ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার ভারতে ৪০ কোটিরও বেশী মুসসলমানেরা কত নিষ্পেষিত, দলিত-মথিত তা এদেশের হিন্দু তোষণবাদীরা খবর রাখে কী? ভারতে অবিলম্বে মুসলিম অবদমন বন্ধ করতে হবে

সংখ্যা: ২২২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তেরতম শতকের গোড়ার দিকে মুসলমানেরা অধিক হারে প্রথম পশ্চিমবঙ্গে আসেন। ক্রমান্বয়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রসারিত হয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৮৭২ সালের আদমশুমারি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে ৪৮ শতাংশ জনগণ ছিল মুসলমান।

পশ্চিমবঙ্গের মোট ১৭টি জেলার মুর্শিদাবাদ জেলায় বর্তমানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৮.৬৬%)। উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ জেলায় মুসলিম-অমুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান সমান। অন্যান্য জেলায় মুসলমানের সংখ্যা কম হলেও ৪০% এর কম নয়।

পশ্চিম বাংলাসহ গোটা ভারতেই মুসলমানদের অবস্থা খুবই করুণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা পশ্চাৎপদ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও অবহেলিত। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণভাবে ৭০ শতাংশ অধিবাসী শিক্ষিত। সেখানে মুসলমানদের শিক্ষার হার মাত্র ৩০ শতাংশ। মাধ্যমিকপর্যায়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩ শতাংশ। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অতিনগণ্য। মুসলমানদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্কুল মাত্র ১২টি। কলেজ নেই একটিও। সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম।

ভারত একটি দাবিকৃত গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতীয়দের দাবি অনুসারে ভারতে অসাম্প্রদায়িক ও সেক্যুলার সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। তাই যদি হয় তাহলে পশ্চিম বাংলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর এ করুণ অবস্থা কেন? বা গোটা ভারতেই মুসলমানদের অবস্থা এত দলিত-মথিত কেন? উনিশ ও বিশ শতকে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারে শিক্ষার হার বাড়েনি।

পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর মেধা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৮০০ ছাত্রছাত্রী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। এর মধ্যে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১০ জন। অপর দিকে প্রতি বছর প্রকৌশল বিভাগে ১০০০ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয় যেখানে মুসলমান মাত্র ১২-১৫ জন, যার হার ১ শতাংশ।

মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ইসলামিয়া কলেজ ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় বিভাগ পূর্বকালে ব্রিটিশ আমলে। তখন এ কলেজ দুটি শুধু মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানে ইসলামিয়া কলেজ, (মাওলানা আযাদ কলেজ) ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। এ নগণ্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে অন্যান্য বিষয় থেকে বঞ্চিত করে শুধু উর্দু, ফার্সি ও আরবি বিভাগে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হয়।

গোটা ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে শহরাঞ্চলে গরিব মুসলমানের আনুপাতিক হার সবচেয়ে বেশি, ৩৩.৯ শতাংশ।

হিন্দু প্রধান ভারতে কমবেশি প্রায় ৪৮ কোটি মুসলমানের বাস। তারা বারবার অভিযোগ করছেন, ভারতের সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশ মুসলিমদের নির্দিষ্ট করে অশোভনভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। অর্থাৎ তাদের অকারণে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলমানদের আরও অভিযোগ, তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে গৎবাঁধা কতকগুলো বুলি আউড়ানো হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় মুসলমানরা অভিযোগ করে আসছেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা অবহেলিত। সমাজের সকল স্তরে তারা বৈষম্যের শিকার এবং তাদের উপর চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংখ্যাগুরু হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘু খিস্টান ও শিখদের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানরা অনেক পিছিয়ে এবং বেকারত্বের হারও তাদের মধ্যে বেশি।

ভারতীয় মোট জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও শিখরা ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর অফিসার পদের শতকরা ১৯ ভাগ দখল করে আছে। পক্ষান্তরে সেখানে মুসলিম অফিসারের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম।

ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলমানরা সরকারি চাকরিতে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। সংঘাতকবলিত এ রাজ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যা মাত্র ৩ শতাংশেরও কম। অথচ ভারতে সব মিলিয়ে সংখ্যালঘুদের চাকরির হার ৪ শতাংশেরও বেশি।

গোটা ভারতে সরকারি আমলাদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা আরো অনেক কম। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কোন মুসলিম কর্মকর্তা নেই বললেই চলে।

কতিপয় ভারতীয় বিশ্লেষক প্রায়শ বলে থাকেন, সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের পারসেন্টেজের হার কম হওয়ার কারণ উচ্চ শিক্ষায় মুসলমানদের অনুপস্থিতি। তবে তাদের এ যুক্তি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভারতের মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত অবস্থার সর্বশেষ অবস্থা জানার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে রাজেন্দার সাচার কমিটি নিয়োগ করে। দিল্লী সুপ্রীম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রাজেন্দার সাচারের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ৪০৩ পৃষ্ঠার একটি বিশাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর মাধ্যমে জানা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলমানরা মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এতে জানা যায়, সরকারি চাকরি, সাক্ষরতা, শিক্ষা আয় এবং সামাজিক সক্ষমতার বিষয়ে মুসলমানরা অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের লোকদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি পেয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৫ জন। এর মধ্যে মুসলমান খুঁজতে হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে, মাত্র ৭১৭ জন। আধা-সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুসলিমপ্রার্থী নিয়োগের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, তবে অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যায় তার হারও অনুরূপভাবে কম।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, পুলিশে শতকরা ৯ জন মুসলিম চাকরি করছেন। কিন্তু বাস্তবে তা মেলে না।

সরকারি চাকরিতে মুসলিমরা শতকরা ৭ ভাগের কম, রেলওয়ে কর্মী হিসেবে শতকরা মাত্র ৫ ভাগ, ব্যাংকিং-এ শতকরা ৪ ভাগ এবং ভারতের ১৩ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীতে মুসলিমদের সংখ্যা মাত্র ২৯ হাজার।

ধর্মনিরপক্ষে দাবিদার দেশ ভারতে মুসলমানদের শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ বহু পুরনো। এবার সরকারি ব্যাংকগুলোতে মুসলমানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। আর এ অভিযোগ এনেছে খোদ ভারতের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন!

কমিশন বলেছে, মুসলমানদের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে দেয়া হচ্ছে না বলে তারা অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছে। সরকারী ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এই অভিযোগ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে। ওই রাজ্যের ৯০ হাজারেরও বেশি মুসলিম ছাত্রকে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে দেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আমাদের দেশের অতি-উৎসাহীরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সব জায়গায়ই পারলে পায়ে ধরে হিন্দুদের অধিষ্ঠিত করে। কিন্তু ওপারে ধর্মনিরপেক্ষতা দাবিদার ভারত কীভাবে মুসলমানদের বঞ্চিত, দলিত-মথিত, নিষ্পেষিত, নির্যাতিত করে রেখেছে সে খবর তারা দেখেও না দেখার, শুনেও না শোনার ভান করে। এরা মুসলমান নামের কলঙ্ক। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একটি দেহের ন্যায়। দেহের একপ্রান্তে আঘাত লাগলে যেমন তা গোটা দেহে সংক্রমিত হয় তেমনি কোনো দেশের মুসলিম আক্রান্ত হলে তা গোটা মুসলিম বিশ্বেই সঞ্চালিত হবে।” (সুবহানাল্লাহ)

সঙ্গতকারণেই ভারতে মুসলিম অবদমনের বিপরীতে বাংলাদেশকে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রতিবাদ জানাতে হবে। মুসলিম বিশ্ব জনমত গড়তে হবে। মুসলিম নির্যাতনের অবসান ঘটাতে হবে।

মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে  পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫৮

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-২৬

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-৮

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৯ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

আশ্চর্য হলেও সত্য যে সব যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাই মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম বিরোধী । ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না’ এ প্রতিশ্রুতির সরকারের কাছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ দাবি- অবিলম্বে দেশ থেকে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম বিরোধী সব মাওলানা নামধারীদের বহিষ্কার করা হোক ।