বাংলাদেশের ‘যুদ্ধাপরাধী’ বনাম আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির ‘যুদ্ধাপরাধ’। মইজ্জা রাজাকার তার দলের সবাইকে শহীদ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে- এটা কীসের ইঙ্গিত? এটা কী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিহিংসায় জামাত শিবিরের দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ লাগানোর আলামত? বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা তথা সরকার আমলে নিবে কী?

সংখ্যা: ১৯৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত ০২.০৪.২০১০ ঈসায়ী তারিখ শুক্রবার বেলা ১২টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির টলমল মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারিভাবে যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলে তালিকা করা হয়েছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই তাদের মুক্তি দিয়েছিলো, যুদ্ধাপরাধীর বিচার আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। অথচ তারা এখন এটাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যুদ্ধাপরাধী অথবা মানবতার বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে সরকার যদি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের চেষ্টা করে তাহলে বিএনপি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে না।”

উল্লেখ্য, বিএনপির টলমল মহাসচিব দেলোয়ারের একথা এতদিন যাবৎ তাদের উচ্চারিত আওয়াজের উল্টো সুর। এতদিন যাবৎ তারা বলে এসেছিলেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারা চান। কিন্তু গত ০২.০৪.২০১০ ঈসায়ী তারিখ শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব দেলোয়ার যে মন্তব্য করেছে তার চুম্বক কথা হলো-

* আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছিলো।

* তদন্ত কর্মকর্তা, বিচারক আইনজীবীরা বিশেষ দলের সদস্য।

* ফৌজদারী কার্যবিধিতেই বিচার সম্ভব।

* মন্ত্রীদের বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।

* দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতেই এই অস্ত্র ব্যবহার করছে।

অর্থাৎ দেলোয়ারের বক্তব্যে স্পষ্টই ধ্বনিত হয় যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে তিনিই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখছেন না। বরং দলীয় দৃষ্টিতে দেখছেন। এবং তারেক জিয়া কথিত- æবিএনপি ও জামাত একই মায়ের পেটের দু’ভাই” শীর্ষক বক্তব্যের সহোদর ভাইয়ের ভূমিকা পালনে জোরদারভাবে এগিয়ে আসছেন। নাঊযুবিল্লাহ!

এদিকে যুদ্ধাপরাধীরা খুব জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছে যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে প্রক্রিয়া হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না।

জামাতী মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় শীর্ষ মন্তব্য করা হয়-

æযুদ্ধাপরাধের কথিত বিচার নিয়ে সরকার লেজে-গোবরে দশায় পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীদের উল্টা-পাল্টা কথা, উল্টা-পাল্টা সিদ্ধান্ত, ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত কমিটি ও প্রসিকিউশনের জন্য মনোনীত লোকদের নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।………..

তাছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার আইন নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। ১৯৭৩ সালের এই আইনটি গত বছর একদফা সংশোধনের পরও আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই বিষয়টিকে সরকার মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। এই মানসিকতা অব্যাহত থাকলে গোটা বিচারই প্রহসনে পরিণত হবে কিংবা গোটা বিচার আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কথিত যুদ্ধাপরাধীরা সাধারণ যুদ্ধাপরাধী নয়।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যুদ্ধাপরাধের যে মাত্রা রয়েছে-

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ তার চেয়েও লক্ষ কোটি গুণে বেশি।

কারণ, তারা ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ করেছে।

স্বাধীনতা উত্তর বিপর্যস্ত অবস্থায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী সরকার করেনি; এটা তাদের অক্ষমতা অথবা ভুল।

কিন্তু তাই বলে জনগণ কখনও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেনি এবং কোন সরকারকে ক্ষমা করার অধিকার দেয়নি।

বরং জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীরভাবে চায় বলেই

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে’- তাতে নজিরবিহীনভাবে সায় ও সাড়া দিয়েছে।

অতীতে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে আওয়ামী সরকার ভুল করে থাকে

তবে বর্তমানে কী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তার সংশোধন করতে পারবে না?

কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে আওয়ামী সরকার অতীত ভুলের কাফফারা আদায় করতে পারলেও যুদ্ধাপরাধী জামাত সামগ্রিকভাবে তা পারবে না।

কারণ, তারা এখনও প্রকাশ্য ক্ষমা চায়নি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে মরে গেছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব নয়।

পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী জামাতীরা যে তাদের অপরাধ প্রবণতা থেকে সরে এসেছে তাও বলা যাচ্ছে না।

গত ০২.০৪.২০১০ ঈসায়ী তারিখে বগুড়ায় মইজ্জা রাজাকার দলীয় সবাইকে শহীদ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিষয়টি অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও আসলে তা গভীর আপত্তিকর।

কারণ, যুদ্ধাপরাধী জামাতীরা যদি নিজেদের শহীদ দাবি করে তাদেরকে যারা শহীদ করবে তারা তো তাদের ভাষায় কাফির হবে।

কিন্তু মইজ্জা রাজাকাররা কাকে কাফির বলতে চায়?

তাহলে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা মৃত্যুদ- পাবে; তাদেরই কী মইজ্জা রাজাকাররা এখন থেকেই শহীদ হিসেবে আখ্যা দিতে চায়?

প্রশ্ন হলো- তারপরও বা সবাইকেই শহীদ হওয়ার জন্য আহ্বান করা হবে কেন?

তাহলে কী যুদ্ধাপরাধী জামাতীরা ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপরীতে দেশে আরেকটা কল্পিত যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করতে চায়?

তার মাধ্যমে আবারো দেশবাসীর উপর হামলে পড়তে চায়?

এবং তখন দেশবাসীর প্রতিরোধে যারা মৃত্যুবরণ করবে তাদেরকে শহীদ বলে এখনই সান্ত¡না দিতে চায়?

বলাবাহুল্য, সরকারের শীর্ষমহল থেকে সচেতন দেশবাসীর-

যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের এসব দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য ও গভীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা দরকার।

উল্লেখ্য, গত কিছুদিন আগে জামাত শিবির প্রকাশ্যেই বলেছিলো যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে এক লাখ আওয়ামী কর্মীকে শহীদ করা হবে।

মূলত এটাই তাদের হাক্বীক্বত বক্তব্য।

তবে সংখ্যা শুধু এক লাখ আওয়ামী কর্মী নয়-

মূলত ধর্মব্যবসায়ী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বিরোধী সবাই তাদের টার্গেট।

কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, এত প্রকাশ্য হুমকি দেয়ার পরও সরকার বা খোদ আওয়ামী মহলেও তার বিপরীতে উপযুক্ত ও যথার্থ কোন প্রতিবাদ উঠেনি। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়নি।

কিন্তু রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বিরোধী ‘আল ইহসান’ই কেবল গর্জে উঠেছিলো। ‘আল ইহসান’-এ প্রকাশিত তিনটি মন্তব্য কলামে হেডিং হয়েছিলো-

(১)

æএক লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়ার পর-

রহস্যজনক কারণে জামাতকে এখনো জঙ্গি বলা হচ্ছে না কেন?

বলাবাহুল্য, বহুদিন বহু পত্রিকায় উদঘাটিত হয়েছে জঙ্গি-জামাত, ওহাবী-খারিজী, লা-মাযহাবী ঐক্যজোট-চর্মনাই তথা তাবৎ ধর্মব্যবসায়ী কানেকশন ॥

যে কোন নরহত্যার গুনাহ যদি কাবিলের আমলনামায় লেখা হয় তবে আজকের জঙ্গি হামলার দায়- হাত পায়ের রগকাটা দল জামাত শিবিরের উপরই বর্তায়।” (দৈনিক আল ইহসান-১৬.০৩.১০ মঙ্গলবার)

 (২)

æমাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানগণ!

দয়া করে বলবেন কী?

০২.০৪.২০১০ ঈসায়ী এক লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করার প্রকাশ্য হুমকিই কী ভয়ঙ্কর ও মহা জঙ্গি জামাত শিবিরের জঙ্গিপনার একমাত্র নজির?

হুমকির নেপথ্য শক্তি ও ভিত্তিটা কী?

শুধু আগ্রাবাদেই সম্প্রতি উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র নয়- চট্টগ্রামের আরো অনেক স্থানে যেমন রয়েছে জামাত-শিবিরের বহু অস্ত্রশস্ত্র

তেমনি গোটা দেশের আনাচে-কানাচেও রয়েছে জামাত শিবিরের বিশাল অস্ত্রভান্ডার।

যে অস্ত্রের ব্যবহারে ওরা জঙ্গিদের সিরিজ বোমা হামলাকেও হার মানাতে পারে।

জঙ্গিদের চেয়েও জামাত শিবির যে কত মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর জঙ্গি হতে পারে

২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার বৈঠকে বৃষ্টির মত গুলি ছোড়া কী তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ নয়?

এদিকে দশ ট্রাক অস্ত্রের নেপথ্য হোতা মইত্যা রাজাকারে নির্দেশ পেলে দেশ তছতছ করে দেয়ার হুঙ্কার দিয়েছে শিবির।

ওদের ঐ রণহুঙ্কারের পিছনে কী বিশাল অস্ত্রের মজুদই আসল কথা নয়?

সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন তাই ঘনীভূত হয়-

কোন্ রহস্যজনক কারণে ’৭১-এর ঘৃণিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী,

হাত-পায়ের রগ কাটা দল, অস্ত্রভা-ার গড়ে তোলার দল

বৃষ্টির মত গুলি করার দল

জঙ্গিদের ষাটভাগ কর্মী বিতরণসহ

নেপথ্য মদদদানকারী গভীর ও সম্পৃক্ত দল- জামাতকে, শিবিরকে

এখনও জঙ্গি বলা হবে না?

কেন তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে না?

কেন জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারজনক মইত্যা-মইজ্জা এখনও গ্রেফতার হচ্ছে না?” (দৈনিক আল ইহসান-১৭.০৩.১০ বুধবার)

(৩)

২০মে-২০০৯ পল্টন ময়দানে জামাতীরা লাউড স্পিকারে বার বার বলেছে, ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রক্ষা করব’।

২০০৭ সালে ‘প্রোব’-এর সাথে সাক্ষাৎকালে মইত্যা রাজাকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ওদের অপকর্মের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।

যদি তাই হয়ে থাকে তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে জামাতীদের

এত গাত্রদাহ কেন,

এত ভয়ভীতি কেন,

এত বাধা-বিপত্তি কেন, এত হুমকি-ধামকি কেন?

তবে কী জামাতীরা নিজেরাও জানে যে, তারা শুধু যুদ্ধাপরাধীই নয়; তারাই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ‘মিথ্যাবাদী দাজ্জাল’।

কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত, ‘মুনাফিক তথা জাহান্নামের অতল গহ্বরের কয়েদী’।

যারা কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ!  (দৈনিক আল ইহসান- ২৫.৪.২০১০ রোববার)

-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫৮

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-২৬

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-৮

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৯ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

আশ্চর্য হলেও সত্য যে সব যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাই মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম বিরোধী । ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না’ এ প্রতিশ্রুতির সরকারের কাছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ দাবি- অবিলম্বে দেশ থেকে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম বিরোধী সব মাওলানা নামধারীদের বহিষ্কার করা হোক ।