মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৯৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী মাসসমূহের ষষ্ঠ মাস জুমাদাল উখরা। এ মাসটিও অনেক কারণে ফযীলতপূর্ণ। তন্মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, এ মাসেই আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল ব্যক্তিত্ব মুসলিম জাহানের রমণীকুল শিরমণি, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম-উনার বিলাদত শরীফ হয়।

বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দুনিয়াবী ৩৭ বছর বয়স মুবারকে এবং উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের প্রায় তিন বৎসর পূর্বে ২০শে জুমাদাল উখরা জুমুআর দিন ছুবহি ছাদিকের সময় তিনি যমীনে আগমন করেন। উনার বিলাদত শরীফকালে উনার সম্মানিতা আম্মা উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার কাছে কোন মহিলাই উপস্থিত ছিলেন না- যিনি উনার খিদমতের আঞ্জাম দিবেন। ফলে তিনি কিছুটা চিন্তিত হতে না হতেই হঠাৎ উনার হুজরা শরীফ-এ চারজন মহিলার উপস্থিতি লক্ষ্য করলেন। উক্ত মহিলাদের আগমনে নূরানী ঘর আরো নূরানী বা আলোকিত হয়ে গেলো। তিনি উনাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করে জানলেন উনারা হলেন- হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম, হযরত আসিয়াহ আলাইহাস সালাম, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-উনার বোন হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম এবং হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

এ চার সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম নিজেদের পরিচয় দিয়ে বললেন, স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে আপনার খিদমতের জন্য পাঠিয়েছেন। কাজেই আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। অতঃপর এ সকল সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম-উনাদের মুবারক খিদমতে কুদরতিভাবে যমীনে তাশরীফ আনেন সারা জাহানের রমণীকুলের সাইয়্যিদাহ, খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম-উনার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ছূরত-সীরতের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার নিদর্শনসমূহই ফুটে উঠতো। এ কারণে উনার অনন্য একটি উপাধি মুবারক হচ্ছে শাবীহাতু রসূল। জ্ঞানে-গুণে, কাজে-কর্মে, ত্যাগ-সাধনায়, কষ্ট-সহিষ্ণুতায় এবং মাধুর্যময় চরিত্র মহিমায় তিনি ছিলেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনারই আদর্শের উজ্জ্বল প্রতীক। তিনি পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মাতা উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনাদের নিকট থেকেই শিক্ষা লাভ করেন।

হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চারজন কন্যা সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠা। কিন্তু মর্যাদার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্যা। সুবহানাল্লাহ!

বদর জিহাদের পর ২য় হিজরী সনে যিলহজ্জ মাসে খুলাফায়ে রাশিদার চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে উনার বিবাহ মুবারক অত্যন্ত গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে সুসম্পন্ন হয়। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিবাহ মুবারকে মোহর ধার্য করেন পাঁচশত দিরহাম অর্থাৎ একশ সোয়া একত্রিশ তোলার রূপার মূল্য। যা মহরে ফাতিমী বা সুন্নতী মোহর হিসেবে মশহূর।

উনার তিনজন ছেলে সন্তান এবং তিনজন মেয়ে সন্তান ছিলেন। বর্ণিত রয়েছে, ১৫ই শা’বান ৩য় হিজরীতে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম বিলাদত শরীফ লাভ করেন। ৪র্থ হিজরী শা’বান মাসে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম বিলাদত শরীফ লাভ করেন। সম্ভবত ৫ম হিজরীতে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম, ৬ষ্ঠ হিজরীতে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম, ৭ম হিজরী সনে হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম এবং ৯ম হিজরী সনে হযরত মুহসিন আলাইহিস সালাম বিলাদত শরীফ লাভ করেন। প্রত্যেক সন্তানই আছর নামায পড়ার পরই বিলাদত শরীফ লাভ করেন। অতঃপর মাগরিব থেকে তিনি যথারীতি নামায আদায় করেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনার এক ওয়াক্ত নামাযও তরক করতে হয়নি। এজন্য উনার একটি উপাধি হলো ত্বাহিরাহ। সুবহানাল্লাহ!

হিজরী ১১ সনে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ  করেন। উনার বিছাল শরীফ-এর পরে হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম মাত্র ছয় মাস যমীনে ছিলেন। অতঃপর উক্ত ১১ হিজরী ৩রা রমাদ্বান শরীফ পবিত্র সোমবার দিনে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। উনার জানাযা নামায পড়ান হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ।

হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম-উনার বহু বুযুর্গীর কথা বর্ণিত রয়েছে। একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিশেষ মজলিসে জিজ্ঞেস করলেন, একজন মেয়ের নিকট সবচেয়ে প্রিয় কোন বিষয়টি? জবাবে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, একজন মহিলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় হলো, æসে কোনো বেগানা পুরুষকে দেখবেনা এবং কোনো বেগানা পুরুষও যেনো তাকে না দেখে।” এ জাওয়াব শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ জাওয়াব আপনি কোথা থেকে পেলেন? তিনি বললেন, হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম-উনার কাছ থেকে। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তিনি তো আমারই দেহ মুবারকের টুকরো বা অংশ। সুবহানাল্লাহ!

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, কিয়ামতের দিন জনৈক ঘোষক এই বলে ঘোষণা দিবেন যে, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের মস্তক নিচু করে দৃষ্টি অবনমিত করো। কেননা, এখন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম এই পথ অতিক্রম করবেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম সত্তরজন ডাগর নয়না হুরসহ বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত অতিক্রম করবেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম তিনি উনার বিছাল শরীফ-এর পূর্বে ওসীয়ত করেছিলেন যে, উনার জানাযা যেনো নিশি রাতে দেয়া হয়। এই হলো খাতুনে জান্নাত হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার তাক্বওয়া ও পরহিযগারীর নমুনা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের মা-বোনদের সকলকে হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম-উনার পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করুন।

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে রবীউছ্ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা