-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী ১২টি মাসের মধ্যে মাহে জুমাদাল উখরা ৬ষ্ঠতম মাস। এ মাসটিও উম্মাহর জন্য স্মরণীয়। কারণ এ মাসটিতে সংঘটিত হয়েছে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর বিলাদত ও বিছাল শরীফ। বিশেষ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যিনি প্রধান, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ এ মাসেরই ২২ তারিখ সংঘটিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘ছাহাবী’ বা ‘ছাহাবা’ শব্দটির উৎপত্তি ছোহবত (সঙ্গলাভ) থেকে। অর্থাৎ যারা ঈমানের সাথে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত লাভ করেছেন এবং ঈমানের সাথে ইন্তিকাল করেছেন তাঁরাই ছাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন।
প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের জন্য আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যেমনিভাবে ইল্ম্ রাখা ফরয ঠিক তেমনি যারা ছাহবায়ে কিরাম উনাদের সম্পর্কেও ইল্ম্ রাখা ফরয।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা, বুযুর্গী-সম্মান-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- ‘ঈমান ও আমলে অগ্রগামী, সর্বপ্রথম স্থান অধিকারী মুহাজির ও আনছার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। এবং যারা উনাদেরকে অর্থাৎ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উত্তমভাবে ইত্তিবা বা অনুসরণ করবে আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতিও সন্তুষ্ট।’ (সূরা তওবা-১০০)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায় তার উচিত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর অনুসরণ করা। উনারা হলেন উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম। আত্মার দিক থেকে অধিক পবিত্র। ইলমের দিক থেকে অত্যন্ত গভীর। উনারা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত। আল্লাহ পাক উনাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী বা ছাহাবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য উনাদের আখলাক্ব ও আদর্শকে গ্রহণ করো। কারণ উনারা হিদায়েত ও ছিরাতুল মুস্তাক্বীম-এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।’ (মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার বিছাল শরীফ-এর পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি।’ আল্লাহ পাক আমাকে বললেন, “হে হাবীব! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশি। তবে প্রত্যেকেরই আলো আছে। সুতরাং, উনাদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসেবে গণ্য।” অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রত্যেকেই তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)
প্রতিভাত হলো, প্রত্যেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতিই আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তুষ্ট এবং প্রত্যেকেই জান্নাতী বলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ বড়ই দুঃখজনক যে, সেই ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর আজ সমালোচনা করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! বলা হয়, উনারা নাকি সত্যের মাপকাঠি নন। নাঊযুবিল্লাহ! উনারা নাকি অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! উনারা নাকি গণীমতের মাল লুটপাট করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! উনারা নাকি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন নাঊযুবিল্লাহ! উনারা নাকি গণতন্ত্রও করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
বস্তুতঃ ছাহাবীগণের প্রতি এসব কটূক্তিকারী কেউই মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ-এর স্পষ্ট ফায়ছালা ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘একমাত্র কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাগণের প্রতি সমালোচনা বা বিদ্বেষ পোষণ করে।’ (সূরা ফাত্হ-২৯)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।’(নাসীমুর রিয়াদ্ব)
তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবীগণকে গালি দিবে বা সমালোচনা করবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা এরূপ লোকদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করবে না, তাদের পেছনে নামায পড়বে না এবং তাদের জন্য দুয়াও করবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা যখন কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরামগণকে দোষারোপ করতে দেখবে তখন তোমরা বলবে, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হোক।’ (তিরমিযী শরীফ)
মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে রবীউছ্ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা