মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী সপ্তম মাসের নাম রজব। এ মাসটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের মধ্যে একটি। উল্লেখ্য, রজবের পহেলা রাতটি দুয়া কবুলের খাছ রাত। পহেলা জুমুয়ার রাতটি রাগায়িবের রাত। এবং সাতাশ তারিখ রাতটি মি’রাজ শরীফ-এর রাত। কাজেই মাসটির মর্যাদা-মর্তবা যে কত রয়েছে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রজব আল্লাহ তায়ালার মাস, শা’বান আমার মাস এবং রমযান আমার উম্মতের মাস।”

আল্লাহ তায়ালার মাস কথার মর্মার্থ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মাস আল্লাহ তায়ালার রহমতের জন্য নির্দিষ্ট। এই মাসে যুদ্ধ-বিদ্রোহ হারাম। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের দুয়া কবুল করেন। নিজের মাহবুব বান্দাগণকে শত্রুর অনিষ্ট হতে হিফাযত রাখেন।

যে এই মাসে রোযা রাখে তার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তিনটি বিষয় আবশ্যক হয়ে যায়। তা হলো- তার পিছনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ভবিষ্যতের জন্য তাকে গুনাহ হতে রক্ষা করা হয়। কিয়ামতের দিন তাকে পিপাসা হতে মুক্ত রাখা হয়।

এ কথা শুনে এক দুর্বল ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সমগ্র রজব মাস রোযা রাখতে অক্ষম। তিনি ইরশাদ করেন, তাহলে তুমি রজবের প্রথম দিন রোযা রাখ অতঃপর মাঝখানে এবং শেষে একটি করে রোযা রাখো। এতে তুমি সেই ছওয়াবই লাভ করবে যেই ছওয়াব অন্যেরা সারা মাস রোযা রেখে লাভ করে। সুবহানাল্লাহ। কেননা এক নেকী দশ নেকীর সমান।

তবে স্মরণ রেখো, রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতে ইবাদতে অলস-উদাসীন থাকবে না। কেননা, ফেরেশতাগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই রাতের নাম ‘লাইতুর রগায়িব’ রেখেছেন। ‘লাইলাতুর রগায়িব’ নাম রাখার কারণ হলো, এই রাতের তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আসমান-যমীনের সব ফেরেশ্তা কা’বা শরীফ-এর আশে পাশে একত্রিত হন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা সমবেত ফেরেশ্তাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, “হে আমার ফেরেশ্তাগণ! তোমাদের যা ইচ্ছা প্রার্থনা করো। তাঁরা বলেন, আয় বারে ইলাহী! আমাদের নিবেদন হলো, রজব মাসে যারা রোযা রাখে তাদেরকে ক্ষমা করুন। জাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন)

উল্লেখ্য, শাওওয়াল ও যিলহজ্জ ব্যতীত অন্যান্য মাসগুলিতে তিনটি রোযা রাখা খাছ সুন্নত। হাদীছ শরীফ-এর উক্ত বর্ণনায় সেই তিনটি রোযার কথাই বলা হয়েছে। আর এ মাসে তিনটি রোযা রাখতে হলে উত্তম হলো প্রথম দিন, মধ্যবর্তী কোন এক সোমবার দিন এবং সাতাশ তারিখ মি’রাজ শরীফ-এর দিন রোযা রাখা।

হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “রজব মাস মন্দ কর্মসমূহ পরিহারের জন্য, শা’বান মাস নেক কাজ এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার পূরণের জন্য আর রমযান মাস সত্য সঙ্কল্প এবং বাতিনী পরিচ্ছন্নতার জন্য। রজব মাস তওবা করার জন্য, শা’বান মাস মুহব্বতের জন্য, রমযান মাস নৈকট্য অর্জনের জন্য। রজব মাস সম্মানের জন্য, শা’বান মাস ইবাদতের জন্য এবং রমযান মাস নিয়ামত অর্জনের জন্য।”

আল্লাহ তায়ালার বিশিষ্ট ওলী হযরত যুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘রজব মাস মন্দ কর্ম পরিহার এবং শা’বান মাস ইবাদত আর রমযান মাস অলৌকিকতা দেখার জন্য। অতএব, যে মন্দ কর্ম পরিহার করে না, আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বা আনুগত্য গ্রহণ করে না, মাহে রমযানের অলৌকিকতা দেখার অপেক্ষা করে না, সে নিরর্থক কর্ম সম্পাদনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’

জনৈক বুযূর্গ বলেন, ‘বৎসর এক বৃক্ষ সদৃশ আর রজব মাস বৎসররূপী বৃক্ষের পাতা গজানোর মাস। শা’বান মাসে গাছে ফল আসে আর রমযান ফল আহরণের মাস।’

আল্লাহ তায়ালা রজব মাসকে ক্ষমার জন্য এবং শা’বান মাসকে শাফায়াতের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। আর রমযান মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে নেক কাজের বিনিময় বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।

হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রজব মাসে রোযা রাখো। এই মাসের রোযা আল্লাহ তায়ালার দরবারে তওবা স্বরূপ।”

হযরত সালমান ফারেসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে রজব মাসে একটি মাত্র রোযা রাখে, সে যেন এক হাজার বছর রোযা রেখেছে। রজব মাসে এক দীনার ছদ্কা করা অন্য মাসে হাজার দীনার ছদকা করার সমান।”

বর্ণিত রয়েছে, হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি বছরার শাসককে একটি চিঠি লিখলেন। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল- ‘সারা বৎসরে চারি রাতের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখা তোমাদের উপর ওয়াজিব। এইসব রাতে আল্লাহ পাক রহমত নাযিল করেন। রাতগুলো হলো- রজবের প্রথম রাত, শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। রমযানের সাতাশ তারিখ রাত এবং ঈদুল ফিতরের রাত।’

মাহে রবীউছ্ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা