জারাহ করার বিষয়ে পূর্ণ ইলিম ছাড়া নফসানিয়াত প্রকাশ পেলে বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফসহ অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবেও জারাহ হয়ে যাবে
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমরান ইবনে হিত্তান সূত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। অথচ ইমরান ইবনে হিত্তান ছিলো খারিজী সম্প্রদায়ের লোক। শুধু তাই না এ ব্যক্তি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের প্রশংসা করে বেড়াতো। নাউযুবিল্লাহ (ইখতেসারু উলূমিল হাদীছ ৯৯ পৃষ্ঠা)
এছাড়াও ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ ২০ জন মরজিয়া, ২৩ জন ক্বদরিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফিজী, ৯ জন খারেজী, ৭ জন নাসিবী ও ১ জন জহমিয়া কর্তৃক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (সায়িকাতুল মসলিমীন, মিযানুল ইতেদাল, তাহযীবুত তাহযীব, জারাহ ওয়াত তা’দীল, তাহযীবুল কামাল)
একজন ছিক্বাহ রাবী হযরত ইমাম হিশাম দাস্তাওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পকে বলা হয়েছে-
قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ سَعْدٍ كَانَ ثِقَةٌ حُجَّةٌ، اِلَّا اَنَّهٗ يَرَى الْقَدْرَ
পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি বিশস্ত ও দলীল স্বরূপ হলেও তিনি ক্বাদরিয়া ফের্কার ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪, তারিখুল ইসলাম লি ইমাম যাহাবী ৯/৬ ৫৬)
অপরদিকে হযরত আবু দাউদ তায়লাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্ম্পকে বলেন-
هِشَامٌ اَلدَّسْتَوَائِىُّ اَمِيْرُ الْـمُؤْمِنِيْنَ فِى الْـحَدِيْثِ
অর্থ: হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রে আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪)
ইয়াহিয়া ইবনে মঈন ও নাসায়ী উনারা উনাকে বিশ্বস্ত মনে করতেন।
হাফিয হযরত আবু নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আটশ মুহাদ্দিছ থেকে হাদীছ শরীফ অর্জন করেছি। কিন্তু হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে ছালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের চাইতে ভালো ও শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি। অথচ যাহাবী রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, তিনি আক্বীদার ক্ষেত্রে খারিজী ছিলেন (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১৯৫)
ইমাম আবূ সাহল ওয়াসিত্বী শিয়া ছিলো। এ অপরাধে খলীফা হযরত হারুনুর রশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে গ্রেফতারও করেন। উনার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ বর্ণনায় তিনি দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই একমত। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/২৩৮)
হযরত আবী আব্দুল্লাহ নিশাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন ইমাম সম্পর্কে বলেন-
ثِقَةٌ فِـى الْـحَدِيْثِ رَافِضِىٌّ خَبِيْثٌ
পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত কিন্তু খবীস রাফিজী। (মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ১/১০, তাযকিরাতুল হুফফাজ ৩/১৬৫, সিয়ারু আলাম আন নুবালা ১৭/১৭৪)
আমরা সবাই জানি রাফিযী, শিয়া, খারিজী, ক্বদরিয়া, জহমিয়া, মুশাব্বিয়া এসব বাতিল ফির্কার লোকেরা বদ আক্বীদার, এবং বিদয়াতি। তাহলে এসব বর্ণনাকারী কেন ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে?
বদ আক্বীদার রাবী সম্পর্কেও একেক ইমাম উনাদের একেক দৃষ্টি ভঙ্গি রয়েছে। যেমন, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুতাজিলা ফের্কার লোকদের বর্ণিত হাদীছ শরীফ গ্রহন করতেন না। (আল ফারকু বাইনাল ফিরকি ৩৫৮ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তাদের (শিয়া) নিকট পবিত্র হাদীছ বর্ণনা করো না, তাদের কাছ থেকে গ্রহণও করা যাবে না। (আল মুনত্বাকা ২১ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রাফিযী শিয়াদের চাইতে অধিক মিথ্যা রচণাকারী সম্প্রদায় আমি দেখিনি। (আল কিফায়া ২০২ পৃষ্ঠা)
তাহলে বর্তমানে ওহাবী সম্প্রদায় কি বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে দিবে? তারাইতো জোর গলায় প্রচার করে থাকে-
اَصَحُّ الْكِتَابِ بَعْدَ كِتَابِ اللهِ اَلصَّحِيْحُ الْبُخَارِيُّ.
অর্থ: “পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পর সর্বাধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হলো ছহীহ বুখারী।” (আল হিত্তাহ ফি যিকরিল ছিহাহুস সিত্তাহ ১/২১৯)
ওহাবী সালাফীরা কি জানে বুখারী শরীফেই দ্বয়ীফ সনদের বর্ণনা আছে:
বর্ণনাকারী যদি তার উস্তাদকে বাদ দিয়ে সরাসরি পরবর্তী ব্যাক্তি থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সেক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উছুল অনুযায়ী মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ হয়। উছূলের কিতাবে মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ উনাকে বর্জনীয় বলা হয়েছে। অথচ মজার বিষয় হলো ছহীহ বুখারী শরীফেও মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন-
قَالَ مَالِكٌ : أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ أَخْبَرَهٗ اَنَّ أَبَا سَعِيْدٍ الْـخُدْرِىَّ اَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيَهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ
উক্ত সনদখানা বুখারী শরীফ উনার “কিতাবুল ঈমান” অধ্যায়ে ৪১ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ (যারা বাংলায় দেখতে চান তারা ইসলামী ফাউন্ডেশনের অনুবাদে ৪০ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ দেখতে পারেন)। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি তিনি সরাসরি ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। অথচ হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার (৯৩-১৭৯ হিজরী) বিছাল শরীফের প্রায় ১৫ বছর পর ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৯৪-২৫৬ হিজরী) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ গ্রহন করেন। তার মানে হচ্ছে ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত পাননি। সাক্ষাত না পাওয়ার পরও মাঝখানে বর্ণনাকারী বাদ দিয়ে সরাসরি ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক ব্যবহার করেছেন।
শুধু তাই নয় ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে এমন মুয়াল্লাক হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা ১৩৪১ টি। তারমধ্যে ১১৭১/১১৮১ টি হাদীছ শরীফ উক্ত বুখারী শরীফেই অন্যস্থানে সনদ সহ বর্ণিত আছে। আর বাকি ১৬০/১৭০ টি হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফে কোথাও সনদ সহ বর্ণিত হয়নি। (তাদরীবুর রাবী ১/৭৭)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وَاَمَّا مَا لَـمْ يُوْرِدْهُ فِىْ مَوْضَعٍ اخَرٍ مِمَّا أَوْرَدَهٗ بـِهذِهِ الصِّيْغَةِ فَمِنْهُ مَا هُوَ صَحِيْحٌ اِلَّا أَنَّهٗ لَيْسَ عَلى شَرْطِهٖ وَمِنْهُ مَا هُوَ حَسَنٌ وَمِنْهُ مَا هُوَ ضَعِيْفٌ فَرْدٌ اِلَّا اَنَّ الْعَمَلَ عَلى مُوَافِقَتِه وَمِنْهُ مَا هُوَ ضَعِيْفٍ فَرْدٌ لَا جَابِرَ لَهٗ
আর যে পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো সনদ সহ বুখারী শরীফ উনার অন্যস্থানে নেই এবং মজহুল শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো কিছু ছহীহ হলেও বুখারী শরীফ উনার শর্ত অনুযায়ী ছহীহ নয়। বাকিগুলো কিছু হাসান কিছু দ্বয়ীফ। যার কোন কোনটার স্বপক্ষে উম্মত উনাদের আমল রয়েছে। অবশিষ্টগুলো এমন দ্বয়ীফ যার সমর্থনে কোন কিছু নেই। (ফতহুল বারী ১ খন্ড ১৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা : দারুল মা’রিফা, বইরুত, লেবানন)
وَاَمَّا مَا لَـمْ يُخْرِجْهُ فَيَحْتَمِلُ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ عِلَّةٌ خُفْيَةٌ مِنْ اِنْقِطَاعٍ اَوْ اِضْطِرَابٍ اَوْ ضُعْفٍ رَاوٍ
অর্থ: আর যেই পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো অন্যস্থানে সনদসহ নেই সেগুলোর মধ্যে সুক্ষ্ম দুর্বলতা থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। যেমন- ইনকেতা, ইসতিরাব, রাবী দুর্বল ইত্যাদি। (তাগলীকুত তালীক আলা ছহীহ বুখারী ২ খন্ড ১১ পৃষ্ঠা)
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত “তাগলীকুত তালীক আলা ছহীহ বুখারী” দেখা যেতে পারে। সুতরাং বুখারী শরীফ হলেই এক ঢোক পানি বেশি খাওয়ার সুযোগ নাই।
-মুহম্মদ নূরুদ্দীন পলাশ।
পবিত্র ১৯ শে রমাদ্বান শরীফ বাংলা ভাষার আজাদী দিবস পালন করা কেন জরুরী