সুওয়াল জওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সুওয়ালঃ  ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিল খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ  মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছিল পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-

(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না।

(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।

আইন করা হবে-

(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।

(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না। (সমূহ জাতীয় দৈনিক)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লেখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিলকে’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা প-িত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই প-িত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা প-িত’ নিজ স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিলের লক্ষে ইসলামকে হক، বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।

রহমতুল্লাহি আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা প-িত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।

উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হকে،র সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হদছ’ ।

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?

অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয় আলোচনা করবো যাতে করে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।

(ধারাবাহিক)

তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে ‘শাইখুল হদছ‘ বলার কারণ-৪

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عـن عبد الله بن عمر رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله عليه وسلم من تشـبه بقوم فهو منهم

অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি ব লেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পকা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরণ করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর নাশর তাদের সাত্ েহিবে (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাঊদ)

এ হাদীছ শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদসের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে শাইখুল হদস বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-

৪. পেপার পত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা

তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হক্বের অসংখ্য হদছবা নাপাক অর্থাৎ হারাম নাজায়িয বিরোধী আমলে একটি অন্যতম আমল হচ্ছে পেপার প ত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে  তা সুস্পষ্ট হারাম। এটাকে হালাল মনে করা কুফরী।

কারণ সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহে “ছবি তোলা শক্ত হারাম ওকবীরাহ গুনাহ” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মেযন হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে,

قال حدثنا الا عمش عن مسلم قال کنا مع مسروق فی دار يسار بن نمير فرای فی صفته تما ثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبی صلی الله علیه وسلم یقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়ের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহর নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। ( বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃ ৮৮০)

عن عائشة رضی الله تعالی عنها حدثته ان النبی صلی الله علیه وسلم لم یکن یترک فی بیته شیئا تصالیب الا نقضه

          অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবি  যুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী ২য় জিঃ পৃ: ৮৮০ মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

عن ابی زرعة قال دخلت مع ابی هریرة دلر بالمد ینة فایها اعلاها مصورا یصور قال سمعت رسول الله صلی الله علیه وسلم یقول ومن اظلم مـمن ذهب یخلق کخلقی فیخلقوا حبة ولیخلقوا ذرة

অর্থঃ হযরত আবূ যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে মদীনার এক ঘরে প্রবেশ করলাম,  অতঃপর তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অঙ্কণকারীকে ছবি অঙ্কণ করতে দেখতে পেলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত সৃষ্টি করে। তাকে বলা হবে, একটি দানা সৃষ্টি কর অথবা একটি কণা সৃষ্টি কর। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

عن عائشة رضی الله تعالی عنها قالت قدم رسول الله صلی الله علیه وسلم من سفر وقد سترت بقرام لی علی سهوة لی فیه تما ثیل فلما راه رسول الله صلی الله علیه وسلم هتکه وقال اشد الناس عذابا یوم القیا مة الذین یصاهون بخلق الله قالت فجعلناه وسادة او وسادتین. وفی روایة اخری قالت قدم النبی صلی الله علیه وسلم من سفر وعلقث درنوکا فیه تماثیل فامرنی ان انز عه فنز عته

অর্থঃ  হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে তাশরীফ আনলেন, আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, “ক্বিয়ামতে দিন ঐ সমস্ত মানুষের কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে।” অতঃপর আমি ওটা দ্বারা একটা অথবা দুইটা বালিশ বানালাম। অন্যা বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে ঘরে ফিরলেন আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ২০১) (চলবে)

 

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল: “মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

…. ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাউজুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন)

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

স্মর্তব্য যে হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তবকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

(১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি।

(২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।

(৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউজুবিল্লাহ)

উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবে না। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো-

(১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউজুবিল্লাহ)

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্য স্বয়ং আখিরী, রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের অন্তর্ভূক্ত। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফরজ নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন তা হাদীছ শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

যেমন এ প্রসঙ্গে “নুজহাতুল মাজালিস লি আবদিল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহ্্লভী” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,

کان فی زمن النبی صلی الله علیه وسلم رجل یقل له ابو دجانة فاذا صلی الصبح خرج من المسجد سریعا ولم یحضر الدعاء فسأله النبی صلی الله علیه وسلم من ذلک فقال ان جاری له تخلة یسقط رطبها فی داری لیلا من الهواء فاسبق اولادی قبل ان یستیقظوا فاطرحه فی داره فقال النبی صلی الله علیه وسلم لصاحیها یعنی تجلنگ بعشر تخلات فی الجنة عروقها من ذهب احمر وزبرجد اخضر واغصا نها من اللؤلؤ الابیض فقال لا ابیع حساضر الغائب فقال ابو بکرن الصدیق رضی الله تعالی عنه قد اشتریتها منه بعشر نخلات فی مکان کذا …… الخ

          অর্থ:- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামক এক ব্যক্তি ছিল। তিনিএকদিন ফজরের নামায (জামায়াতে) আদায় করে, মুনাজাতে শরীক না হয়ে দ্রুতবেগে মসজিদ হতে বের হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু দানাজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, (তুমি কেন মুনাজাতে হাজির না থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেলে?) হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তর দিলেন- আমার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ রয়েছে, রাত্রিবেলায় ঝড়ে উক্ত গাছের খেজুর আমার সীমানায় পড়ে, আমার সন্তানগণ ঘুম হতে উঠার পূর্বেই আমি সেখানে পৌঁছে যাই এবং উক্ত খেজুরগুলো কুড়ায়ে তার সীমানায় পৌঁছে দেই। (যেন আমার সন্তানগণ উক্ত খেজুর খেয়ে পরের হক্ব নষ্ট না করে)

অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উত্তর শুনে, উক্ত খেজুর গাছের মালিককে বললেন- তোমার খেজুর গাছটি বেহেশ্্তী লাল, সোনালী ও সবুজ, হলুদ শিকড় ও সাদা মুতি-জহরতের ঢালা বিশিষ্ট দশটি খেজুর গাছের বিণিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও। সে ব্যক্তি বললো- আমার বিদ্যমান গাছটিকে অদৃশ্য গাছের বিনিময়ে বিক্রি করবোনা। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়অল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তাহলে আমি আমার অমুক স্থানের দশটি খেজুর গাছের বিনিময়ে এই খেজুর গাছটি (হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্যে) কিনে নিলাম…. ।” (সুবহানাল্লাহ)

উক্ত ঘটনার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, বলা হয়েছে-

ولم یحضر فی الدعاء অর্থাৎ- “হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুনাজাতে উপস্থিত না হয়ে দ্রوতবেগে চলে গেলেন।”

একথা বলা হয়নি যে, ولم یدع অর্থাৎ- “মুনাজাত করলেন না।”

সুতরাং এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তখন আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করছিলেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে “ফতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقال الحافظ وما ادعاه من النفی مطلقا مردود فقد ثبت عن معاذ بن جبل ان النبی صلی الله علیه وسلم قال له یا معاد انی والله احبک ……..  کان النبی صلی الله علیه وسلم یدعو بهن دبر کل صلوة

                   অর্থঃ- “হাফিজুল হাদীছ, ইবনে হাজর আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফরজ নামাযের পর দোয়া করা যাবে না বলে যে দাবী করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মুয়াজ! আল্লাহ পাক-এর কসম! আমি তোমাকে ভালবাসি…… তুমি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর এ দোয়া করতে ছাড়বেনা। হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর এই বলে দোয়া করতেন- আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা…….. ।” (চলবে)

 

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব

গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল:- “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃঃ ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কী? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম” এর ফতওয়া শুদ্ধ নয়। বরং ভুল অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাত! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح (আততানাহনা) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ও মুস্তাহ্্সান। তার আরো কিছু প্রমাণ নিয়ে পেশ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

যেমন, “মা’দানুল হাক্বায়িক্ব” কিতাবের ১ম খ-ের ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

…………………………….

অর্থঃ- “তাছবীব বলা হয় আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয় দেয়। ……. উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ অন্যান্য সকল নামাযের সময়ও এই তাছবীব করাকে-মুস্তাহ্্সান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।”

“শরহুল ইনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ومعناه أی معنی التثویب فی الاصطلاح العود الی الاعلام یعد الاعلام …… وهو أی التثویب علی حسب ما تعارفه أهل کل بلدة من التنحنح أو قوله الصلاة الصلاة أو قوله قامت قامت لانه للمبا لغة فی الاعلام وانما یحصل ذلک بما تعارفوه.

          অর্থঃ- “তাছবীবের পারিভাষিক অর্থ হলো আযানের  মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। ……. আর এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। যেমন, التنحنح (আততানাহনা) গলা খাকড়ানো অথবা  الصلاة الصلاة  (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হবে। কেননা মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়ার জন্যই তাছবীব করা হয়। আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।”

“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال أبو یوسف رحمه الله لا أری باسا أن یقول المؤذن للامبر فی الصلوات کلها السلام علیک أیها الامیر ورحمة الله وبرکاته حی علی الصلاه حی علی الفلاح الصلاة یرحمک لله واستبعده رحمه الله لان الناس سواسیة فی أمر الجماعة.

          অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে

السلام علیک ایها الامیر حی علی الصلاة وحی علی الفلاح

(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যূহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) الصلاة  (আছ্ ছলাহ) رحمک الله (রহিমাকাল্লাহু) বলে তাছবীব করে তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, কাজী ছাহেবানদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।”)

“কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

التویب العود الاعلام بعد الاعلام ………. بین الاذان والافامة حی علی الصلاة حی علی الفلاح  مرتین وتثویب کل بلد علی ما تعارفوه اما بالتنحنح أو بالصلاة الصلاة أو قامت قامت لانه للمبالغة فی الاعلام واتما یحصل ذلک بما تعار فواه.

          অর্থঃ- “তাছবীব হলো আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। আর আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার حی علی الصلاة حی علی الفلاح (হাইয়া আলাছ্্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা।” তবে এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ যে ধরণের শব্দ দিয়ে তাছবীব করলে শহরবাসী বুঝতে পারে, সে ধরণের শব্দ দিয়েই তাছবীব করতে হবে। যেমন, التنحنح  (আত্তানাহনাহ) বা গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে অথবা الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হয়। কেননা তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়। আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।”

“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ومعناه العود الی الاعلام بعد الاعلام وهو علی حسب ما تعارفوه……. والمتأ خرون استحسنوه فی الصلوات کلها لظهور التوانی فی الامور الدینیة

          অর্থঃ- “তাছবীবের অর্থ হলো আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়। আর এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। আর দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের গাফলতি প্রকাশের কারণেই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই এই তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্্সান বলেছেন।”

“কিফায়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

وما استحسنه المنأخرون وهو التثویب فی سائر الصلوات لزیادة غفلة الناس.

          অর্থঃ- “দ্বীনী কাজে তথা নামাযে গাফলতি বৃদ্ধি পাওয়ায় উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই এই তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান বলেছেন।”

“হাশিয়ায়ে চলপী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

والمتأخرون استحسنوه أی التثویب المحدث.

          অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই প্রচলিত তাছবীবকে মুস্তাহ্্সান বলেছেন।”

“শরহুল ইনায়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

واحدث المنأ خرون التثویب بین الاذان والاقامة علی حسب ما تعارفوه فی جمیع الصلوات سوی المغرب …….. وماراه المؤمنون حسنا فهو عند الله حـسن.

          অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযেই এই তাছবীবের প্রচলন করেছেন। কারণ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি বলেছেন, মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্্সান বা উত্তম। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনগণ যেটাকে হাসান বা উত্তম মনে করেছেন সেটা আল্লাহ পাক-এর নিকটেও হাসান বা উত্তম। (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়ালঃ- চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ালী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযহিবিল আরবায়া, আাল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ ও রদ্দুল মুহতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব” ……

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াবঃ- আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীত্্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।

নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক গ্রহণযোগ্য ফতওয়া  উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

যেমন, “বদরুল মুত্তাক্বা ফী মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اجا بة المؤذن باللسان قیل واجبة ……. فاله المصنف لکن رجح فی البحر والنهر القول بالوجوب.

          অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব বলা হয়েছে, …………. মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে “বাহরুর রায়িক” ও “নাহরুল ফায়িক” কিতাবের ترجیح (তারজীহ্্প্রাপ্ত) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাব দেয়া ওয়াজিব।”

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

…………………………………….

অর্থঃ- “আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব নেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবেই দিবে যে, আযানে যা বলা হয় তাই বলবে। ….. আর ইহাই صحیح বা বিশুদ্ধমত।

“হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলা দুররুল মুখতার’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعلی المعتمد یجیب باللسان

          অর্থঃ- “ وعلی المعتمد নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খ-ের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ینبغی لمن سمع الاذان ان یقول کما یقول المؤذن حتی یفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهرایضا وقال الثوری وابو حنیفة وابو یوسف ومحمد واحمد فی الاصح

          অর্থঃ- ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি মুয়াজ্জিন যতক্ষণ পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আযান শ্রোতা মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর ওয়াজিব। আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আযম আবূ হানীফা  রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আবূ ইউসুফ  রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ  রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান ছাওরী  রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর الاصح অধিক ছহ্ীহ মতে আযান শ্রতাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব  দেয়া ওয়াজিব।

আর মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব এটাই ترجیح (তারজীহ্্) বা প্রাদান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। সুতারাং রেযাখানী ফিরকার মৌলভী সাহেবরা সে নাজায়িয ও হারাম কাজ করে শক্ত গুণাহ্্র কাজ করেছে।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুফতী” কিতাবের ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

ابن حجر المکی قال لایحل لهما الحکم والافتء بغیر الراجع لا نه اتباع للهواء وهو حرام اجماعا

          অথঃ- “মুহাক্কিক ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালার প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা ইজমা বা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এই নফসের অনুসরণ”। এটা ‘ফতওয়ায়ে কুবরা’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটা যে, ترجیح (তারজীহ) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণ কি?

এটার উত্তর হলো, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালার যেটা

وهو الصحیح- وعلیه الاعتماد وبه یفتی- وهو المختار- وعلیه الفتاوی

ইত্যাদি দ্বারা ফতওয়া দেয়া হবে, ওটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুহ্তী” কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় যে,

واما العلامات للافتاء فقوله وعلیه الفتاوی وبه یفنی وبه نأخذ وعلیه الاعتماد وعلیه عمل الیوم وهو الصحیح وهو الاصح ……… لفظ الفتاوی اکد من لفظ الصحیع والاصع والاشبه وغیره (شرع عقود رسم المفتی صفه)

          অর্থঃ- ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার নিদর্শনগুলো হলো- وعلیه فتاوی  এটার উপরই ফতওয়া, وبه یفتی এটা দ্বারাই ফতওয়া সব্যস্ত হয়েছে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করি, وعلیه الاعتماد এটার উপরই নির্ভর, وعلیه عمل الیوم এটার উপরই যামানার আমল বা উম্মতের আমল, وهو الصحیح এটাই ছহীহ্, وهو الاصح এবং এটাই অধিকতর ছহীহ্। ……… তন্মধ্যে ফতওয়া  (فتوی) শব্দটি  الصحیح (ছহীহ্) (সঠিক),  والاصح (আছাহ্হ) (অধিক সঠিক) والاثبه (আশবাহু) (অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ) ইত্যাদি শব্দসমূহ হতে বেশী তাকীদপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য।”

সুতরাং মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটাকে যেহেতু

صحیح؛ الاصح؛ وعلی المعتمد؛ راجح

ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সেহেতু এটাই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া হলো, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। তবে শাফিয়ী মাযহাব মতে আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব।

অতএব, প্রমাণিত হলো, রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের জবাব মৌখিক দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। আমরা পর্যায়ক্রমে তা খ-ন করবো ইনশাআল্লাহ। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।

সুওয়ালঃ- হাটহাজারী মদরাসা সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ,রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?

জাওয়াবঃ- মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ,দলীলবিহীন ও সববিরোধী। প্রথমঃ তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়নো জাযিয়।”

এ বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।

তারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফগুলো সঠিকই রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইনশাআল্লাহ।

মূলতঃ মীলাদ শলীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচন তুলে ধরা হলো।

২. সুন্নত ক্বিয়াম

শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ক্বিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-

ধারাবাহিক

বিধর্মীদের কোন নেতা বা সর্দার যদি ইসলাম গ্রহণের জন্য আসে তবে তাঁর আগমনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়াও সুন্নত।

যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত উতর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হাযির হলেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে যান এবং তাকে স্বাগত জানিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন।

তাই ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ৫ম খ-ের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় ফতওয়া দেয়া হয়েছে,

اذا دخل ذمی علی مسلم فقام له طمعا فی اسلا مه فلا باس.

          অর্থঃ- “যখন কোন (বিধর্মী) জিম্মি কোন মুসলমানের নিকট আসে, তখন তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।

মূল কথা হলো, উপরোল্লিখিত ক্ষেত্রে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে খাছ সুন্নত।

৩. মুস্তাহাব ক্বিয়াম

মুস্তাহাব বা নফল নামাযের ক্বিয়ামও মুস্তাহাব। অর্থাৎ নফল নামায (হালক্বী নফল ব্যতীত নফল নামায বসে পড়াই খাছ সুন্নতক) দাঁড়িয়ে আদায় করা মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ।

তাছাড়া শ্রদ্ধেয় বা সম্মানিত ব্যক্তিদের আলোচনা শুনে “ক্বিয়াম করা দাঁড়ানো মুস্তাহাব। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

وقد اجتمع عند الا مام تقی الدین السبکی رحمة الله علیه جمع کثیر من علماء عصره فانشد منشد قول الصر صری رحمة الله علیه فی مدحه علیه فعند ذالک قاماالامام السبکی وجمیع من بالمجلس فحصل انس عظیم بذالک المجلس وکفی ذالک فی الا قتداء.

          অর্থঃ- ইমাম তাকীউদ্দীন সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে একবার সে যামানার অধিকাংশ আলিম-উলামা উপস্থিত ছিলেন। তন্মধ্য হতে একজন হযরত ছারছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা ‘না’ত শরীফের দুটি লাইন পাঠ করলেন। ( তা শুনে) হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি “ক্বিয়াম করলেন বা দাঁড়িয়ে গেলেন।” এবং তাঁর সাথে সাথে উপস্থিত সকল উলামায়ে কিরামও ক্বিয়াম করলেন বা দাঁড়িয়ে গেলে। যার ফলে মাহফিলটি এক বিশাল প্রশান্তিতে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। আ অনুকরণের জন্য বা মুহব্বতের ক্বিয়াম মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হওয়ার জন্য এ ঘটনাটিই যথেষ্ট।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তিদের আলোচনা শনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। মীলাদ শরীফে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র বিলাদত শরীফের আলোচনা শুনেই মূলতঃ ক্বিয়াম করা হয়।

অতএব, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয় তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্্ নাবিয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ বা আগমনের সুসংবাদ শ্রবণ করত এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে তা’যীমার্থে করা হয়। কাজেই মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম খাছ সুন্নত ও মুস্তাহাবদ অনতর্ভূক্ত। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ-  অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …………. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীত স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিীখত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

ুজাওয়াবঃ- প্রলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতিবা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-২৪

(ধারাবাহিক)

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আচে যে, “থানবী সাহেব তরীকায়ে মীলাদ কিতাবে উল্লেক করেছে, মীলাদ অনুষ্ঠান শরীয়তে একবারেই নাজাযিয় ও পাপের কাজ।” আবার তাদের মধ্যে কারো কারো আক্বীদা হলো এই যে, “আল্লাহ পাক শেরেকের গুণাহ মাফ করবেন কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ্ কখনো মাফ করবেন না।” তাই দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মীলাদ শরীফ পাঠ করেনা বা মীলাদ মজলিসে বসেনা।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের মীলাদ শরীফ সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ জেহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও কল্পনাপ্রসুত। আর জায়িযকে নাজায়িয ও নেক কাজকে পাপের কাজ বলার কারণে সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ সহীহ্্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো- বর্তমান তরতীবে মীলাদ-ক্বিয়াম বা মীলাদ অনুষ্ঠান করা সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহ্্সান। অশেষ ফযীলত ও বরকত লাভের মাধ্যম। নাজায়িয বা বিদ্য়াত মোটেও নয়।

(চতুর্থ অংশ)

কারণ, মীলাদ (میلاد), মাওলিদ(مولد) , ও মাওলূদ(مولود)  এ তিনটি শব্দের সমষ্টি হচ্ছে মীলাদ শরীফ, যার অর্থ দাঁড়ায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আ’ামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করা ও তাঁর প্রতি সালাত-সালাম পাঠ করা। যা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত।

অতএব মীলাদ শব্দের অর্থ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সানা-ছিফত করা ও তাঁর প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করা হয়ে থাকে, তবে তো তা আল্লাহ পাক ও তাঁর সূলসহ সকলেরই সুন্নতে অন্তর্ভূক্ত।

কেননা আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন,স্বয়ং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের প্রায় সর্বত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সানা-ছিফত করেছেন এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর ফেরেশতাগণ সকলেই সর্বদা সাইয়্যিদুল মুরষালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করেন এবং আমাদেরকেও পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আর তাই দেখা যায়, পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজ্্তাহিদগণ মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন ও সুন্নাত আদায় করার লক্ষ্যে নিজে মীলাদ-ক্বিয়ামের মজলিস করতেন। যেমন- বিশিষ্ট মুজ্তাহিদ, ইমাম তকীউদ্দীন সাবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং এটা জায়েয বলেন। শায়খ আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হাফেজ ইবনে হাজর মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয হওয়া সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তাছাড়া যিনি সর্ব প্রথম পাক-ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফের প্রচার-প্রসার করেন অর্থাৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহ্্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবের পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আযম, হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ্্ মোহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজে আঞ্জাম দানকারী, হযরত মাওলাান কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফেজে হাদীছ, আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ন্যায় সর্বজন স্বীকৃত, অনুসরণীয় আলেম ও বুযুর্গগণের প্রত্যেকেই মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন ও তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে লিখেছেন যে, বর্তমান তারতীবে মীলাদ-ক্বিয়াম করা সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহ্্সান, জায়িয তো বটেই।

উল্লেখিত বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজ্্তাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের কিতাবসমূহ হতে নিম্নে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়িয হওয়ার কতিপয় দলীল পেশ করা হলো-

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহ্্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কারামাতে আযীযিয়াহ্্” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,

در تمام سال دو مجلس در خانه منعقد شوند اول که مردم روز عاشوره یا دویک روز …….

………………………………..

অর্থঃ- “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘর দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহ্ফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহ্ফিলে ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জীবনী হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। …..

দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহ্ফিল। এতে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।

মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবে সহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম, আল্লামা হাজীএমদাদুল্লাহ্্ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি তার هفت مسائل (হাফতে মাসায়েল) কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

…………………………………..

অর্থঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলকে বরকত লাভের উছীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহ্্ফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাধ উপভোগ করি।” (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়ালঃ-  হানাফী মাযহাবে-

          ১। নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

২। ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

৩। জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

৪। ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

৫। রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

৬। ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উত্তোলন করেনা।

৭। তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

৮। ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্্য বা শব্দগুলো জোড় জোড় এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ ছলাহ বলে।

৯। তারাবীহ্্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

১০। ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

১১। জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

১২। উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে।

ইত্যাদি কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ আনীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

৫। রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেন।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্্ম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা” সে বর্ণনা বা প্রমাণ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই ছাবিত রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله رضی الله تعالی عنه قال الا اخبر کم بصلوة رسول الله صلی الله علیه وسلم فقام فرقع یدیه اول مرة ثم لم یعد

          অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিবনা যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিরূপে নামায আদায় করতেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে দাঁড়িয়ে প্রথমবার হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। অর্থাৎ নামাযের মধ্যে তাকবীরে উলা ছাড়া অন্য কোথাও হাত উঠাতেন না। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن مسعود رضی الله تعالی عنه قال صلیت مع رسول الله صلی الله علیه وسلم وابی بکر وعمر فلم یر فعوا ایدیهم الا عند افتتاح الصلوة

          অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করেছি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথেও নামায আদায় করেছি। তাঁরা সকলেই তাকবীরে উলা ছাড়া আর অন্য কোথাও হাত উঠাতেন না। (বায়হাক্বী শরীফ)

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হতেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে। ফলে হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ শুধুমাত্র প্রথম তাকবীরের সময় হাত উঠাতেন। পরে আর হাত উঠাতেন না। (চলবে)

ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ- কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মুতাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলিগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্্ নাবিয়্যীন হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো-

১। ইমামগণের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ক্বছীদায়ে নূ’মানে’ ইরশাদ করেন,

انا طامع بالجود منک + ولم یکن لابی حنیفة فی الا نام سواک.

          অর্থঃ- “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার দানের আশা রাখি এবং সৃষ্টির মধ্যে আবূ হানীফার জন্যে আপনি ব্যতীত কেউ নেই।”

অর্থাৎ, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের ওসীলা মানেন ও স্বীকার করেন

২। গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া,  জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বরচিত ‘ক্বছীদায়ে গাওছিয়া’ কিতাবের মধ্যে খোদাপ্রদত্ব ক্ষমতাসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,

وکل ولی له قدم وانی +

علی قدم النبی بدر الکمالی.

          অথঃ- “প্রত্যেক ওলী কোন না কোন নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর পদাঙ্কের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন এবং তাঁর প্রকাশক হয়ে থাকেন। আর আমি নবীগণের চন্দ্র, রসূলগণের সূর্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বদম মুবারকের উপর আছি।”

অর্থাৎ গওছূল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দৃষ্টিতে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অস্তিত্ব মুবারক এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁর সমস্ত মহান মাক্বাম ঐ সরকারের দো আলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় অর্জিত হয়েছে।

৩। হযরত ইমাম বুসিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি  “ক্বছীদায়ে বুরদা’-এর মধ্যে উল্লেক করেন,

ومن تکن برسول الله مصرته +

ان تلقه الاسد فی اجامها بجم.

          অর্থাঃ- ‘যার সাহায্য রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করবেন সে বাঘের কবল হতেও বেঁচে যায়।”

অর্থাৎ এ মহান বুযর্গও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সকল মুছীবত দূরীকরণের ওসীলা মানেন।

৪। সাইয়্যিদুশ শুয়ারা হযরত শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

 

অর্থঃ- “হে সা’দী! ধারণা পোষণ করোনা যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য ছাড়া তুমি হিদায়েতের রাস্তা পেতে সক্ষম হবে।”

অর্থাৎ ঈমান গ্রহণ ও আমল করার পরও প্রত্যেক স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলার প্রয়োজন রয়েছে।

৫। আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শায়খ ফরিদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘পান্দে নামাহ’ কিতাবে বলেন,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ- “নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন মহান শানের অধিকারী যে, নয়টা আসমানে মি’রাজ করেছেন এবং সকল নবী আলাইহিমুস্্ সালামগণ এবং ওলীগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহতাজ ও মুখাপেক্ষী।

অর্থাৎ হযরত শায়খ ফরিদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরামের ওসীলা মানেন।

৬। “দুরূদে তাজ” যা হযরত আওলিয়ায়ে কিরামের দুরূদ, ওযীফা! এতে বর্ণিত রয়েছে,

وسیلتنا فی الدارین.

অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া-আখিরাতে আমাদের ওসীলা। (চলবে)

মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম) সোনাইমুরি, নোয়াখালী

সুওয়ালঃ- পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-

১। মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?

২। কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?

৩। নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?

৪। “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভূক্ত করেননি। কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)

৫। খারেজী মাদ্্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?

৬। যদি ফিৎনার কোন আশঙ্কা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?

৭। “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?

উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ-পটিয়া খারেজী মাদরাসার মৌলবী ছাহেবরা মূলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই হারা নিজেদের বথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত তবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

৪। “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” পটিয়া খারিজী মাদ্্রাসার মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাউযবিল্লাহ)

(প্রথম অংশ)

এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি” তাদের একথা যে ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে তা বিগত কয়েকটি সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা ও বুঝার সুবিধার্থে এখানেও সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো। অর্থাৎ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো মহান আল্লাহ পাক সরাসরী কুরআন শরীফের আয়াতে শরীফ দ্বারাই মহিলাদের চেহারাকে সতর বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আযহাবের’ ৫৯নং   আয়ত শরীফে ইরশাদ করেন,

یایها النبی قل لازواجک وبنتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلا بیبهن ذلک ادنی ان یعرفن فلایؤذین وکان الله غفورا رحیما

          অর্থঃ- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহ্লিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখম-লের উপর ঝলিয়ে রাখে। এতে তাঁদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)

উল্লিখিত আয়াত শরীফের মূল বিষয় হলো-

ید نین علیهن من جلا بیبهن

          “তারা যেন তাদের মুখম-লের উপর “জিলবাব’ جلباب চাদর বা পর্দা ঝুলিয়ে রাখে। جلباب ‘জিলবাব’ আরবী শব্দ, যা বড় চাদরকে বলা হয়। আর ادناء ‘ইদনা’ অর্থ নিকটবর্তী ও পেঁচিয়ে রাখা। কিন্তু এরপর عل ‘আলা শব্দ আসলে এর অর্থ হবে ارخاء ‘ইরখা’ অর্থাৎ উপর দিক হতে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া। তাই আয়াত শরীফের স্পষ্ট অর্থ হবে, ‘মহিলাগণ যেন তাদের শরীরে পরিহিত চাদরটিকে ভালভাবে পরিধান করে এর একটি অংশ নিজের মুখম-লের উপর ঝুলিয়ে দেয়। ’ যাতে চেহারা বা মুখম-ল অন্য পুরুষের দৃষ্টি গোচর না হয়। কারণ বিশেষ প্রযোজনে বাইরে বের হতে হলে, সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার সাথে সাথে চেহারা বা মুখম-লও ঢেকে রাখা প্রত্যেক মু’মিনা ও মুসলিমা মহিলার জন্য ফরযে আইন।

নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে আত্্ তাফসীরুল মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৮৩, ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

….. (یایها النبی قل لازواجک وبنتک ونساء المؤمنین یدنین) امر بتقدیر اللام ای لید نین ( علیهن من جلا بیبهن) جمح جلباب وهی الملحفة التی تشتمل بها المرءة فوق الدرع والخمار ……. قلت یعنی اذن لکن ان تخرجن متجلببات قال ابن عباس وابو عبیدة امر نساء المؤمنین ان یغطین رؤسهن ووجوههن باجلابیب الا عینا واحدا لیعلم انهن الحرائر.

          অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাহণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) এখনে ید نین শব্দটি উহা لام এর সাথে امر  ‘আমর’ এর শব্দ। অর্থাৎ لید نین ‘তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে’। (তাদের মুখম-লের উপর নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ) جلابیب  ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের جمع বা বহুবচন। ‘জিলবাব’ এমন চাদরকে বলে, যা মহিলারা কামিছ ও ওড়নার উপর সংযুক্ত করে পরিধান করে।

আমি বলি- বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তোমাদেরকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে বের হতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন তাদের মাথা, মুখম-ল, সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যায়। তবে শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। যাতে পরিচয় করা যায় যে, তারা স্বাধীন। অনুরূপ তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ২৭৬, ২৭৭ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারীতে উল্লেখ আছে।

তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল ৩য় জিঃ ৪৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(یایها النبی قل لازواجک وبناتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلابیبهن) الجلباب ما یستر الکل مثل الملحفة عن المبرد ومعنی ید نین علیهن من جلابیبهن یرخینها علیهن ویغطین بها وجوههن واعطافهن یقال اذا زال الثوب عن وجه المر أة ادن ثوبک علی وجهک

          অর্থঃ- ‘(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন চাদরের কিয়াদাংশ নিজেদের মুখম-লের উপর ঝলিয়ে।) ‘জিলবাব’ হচ্ছে, যা সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়। যা বড় ধরনের চাদরের অনুরূপ।

ید نین علیهن من جلابیبهن

এর অর্থ হলো- তারা যেন তাদের উপর থেকে চাদর ঝুলিয়ে রাখে, তাদের চেহারা সমূহকে চাদর দ্বারা আবৃত করে রাখে। বলা হয়, যখন মহিলাদের চেহারা থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমরা কাপড় দ্বারা তার চেহারা ঢেকে দিবে।”

عن ابن عباس قول یایها النبی قل لازواجک وبناتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلابین امر الله نساء امؤمنین اذا خرجن من بیوتهن فی حاجة ان یغطین وجوههن من فوق رؤسهن بالجلابیب ویبدین عینا واحدة ……….. سألت عبیدة عن فوله قل لازواجک وبناتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلابیبهن قال فقال بثوبه فغطی رأسه ووجهه وابرز ثوبه عن واحدی عینیه.

          অর্থ- “….. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু

یایها النبی قل لازواجک وبناتک ونساء المؤمنین نین علیهن من جلابیبن

          এর তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ পাক মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তারা বিশেষ কোন প্রয়োজনে তাদের ঘর থেকে বাইরে যাবে, তখন তারা যেন বড় ধরণের চাদর দিয়ে তাদের মাথার উপর দিক থেকে তাদের চেহারা ঢেকে রাখে। তবে একটি চোখ খোলা রাখতে পারবে। …… আমি হযরত উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে

قل لازواجک وبناتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلابیبهن

          এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জবাবে এমনভাবে কাছে পরিণত করে দেখিয়ে দিলেন যে, নিজের গায়ের চাদর এমনভাবে পরলেন যাতে সমস্ত মাথা, কপাল ও চেহারা ঢেকে গের। শুধু একটি চোখ খোলা থেকে গেল। (চলবে)

 

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব