সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৩৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মনসুর

ফেনী

সুওয়াল: মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক মসজিদের খতীব ছাহেব বললেন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নাকি আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মহিলারা মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করতেন। উক্ত খতীব ছাহেবের বক্তব্য কতটুকুট সঠিক?

জাওয়াব: হ্যাঁ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় মহিলারা মসজিদে গিয়ে ও ঈদগাহে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করতেন। কিন্তু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই আবার রয়েছে, মহিলাদের জন্য শ্রেষ্ঠ বা উত্তম স্থান হচ্ছে বাড়ীর গোপন প্রকোষ্ঠ। শুধু তাই নয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো রয়েছে, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ার মধ্যে পঁচিশ গুণ ফযীলত বেশি।

স্মরণীয় যে, অনেক বিষয়ই রয়েছে এবং উক্ত বিষয় সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিপরীতমুখী বর্ণনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরবর্তী বা শেষোক্ত বর্ণনা মুবারকের উপর আমল করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ বুখারী শরীফ উনার বর্ণনায় দেখা যায় শুরুর যামানায় কোন মুছল্লী পরে এসে জামায়াত শুরু হয়েছে দেখে নামাযেরত মুছল্লীগণকে জিজ্ঞাসা করতেন কত রাকায়াত হয়েছে তখন নামাযে থাকা মুছল্লীগণ বলতেন যে, এত রাকায়াত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে নামাযের মধ্যে এরকম কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ হয়ে যায়।

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে কিছু সংখ্যক মহিলা মসজিদ ও ঈদগাহে গিয়ে নামায আদায় করলেও পরবর্তীতে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে মহিলাদেরকে মসজিদে ও ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। যার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, আমার পর যদি কেউ নবী হতেন তাহলে তিনি হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম।

তিনি যখন মহিলাদেরকে মসজিদে ও ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেন তখন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করেন, হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! আমরা তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় হতে অদ্যাবধি মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ে আসছি। কিন্তু এখন আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে মসজিদে যেয়ে জামায়াতে নামায পড়তে নিষেধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার কি অভিমত তা আমরা জানতে এসেছি, যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সম্পর্কে বলেছেন-

خذوا نصف دينكم من هذه الحميراء

অর্থ: তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বা সম্মানিত ইলম উনার অর্ধেক অর্থাৎ সম্মানিত ওহী মুবারক উনার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে তবে ইলহাম ও ইলক্বা মুবারক উনার দরজা খোলা থাকবে। অতএব তোমরা বরকতময় ইলহামী ইলম মুবারক উনার থেকে গ্রহন করবে। আর বিশেষভাবে মহিলা সংক্রান্ত ইলম উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে গ্রহণ করবে ।

মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের উক্ত আরযের পরিপ্রেক্ষিতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে তাছদীক্ব বা সত্যায়ন করে বললেন, তিনি যা করেছেন তা ঠিকই করেছেন এবং তিনি আরো বললেন-

لو ان رسول الله صلى الله عليه وسلم راى ما احدثت النساء لـمنعهن

অর্থ: যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই তিনিও নিষেধ করতেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে কিছু সংখ্যক মহিলারা ওয়াক্তিয়া নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হতেন। ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহেও যেতেন। কিন্তু সেটা ছিল উত্তম যুগ। কোন ধরনের ফিতনার আশঙ্কা ছিল না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সশরীর মুবারক-এ অর্থাৎ জাহেরীভাবে বিদ্যমান ছিলেন। সম্মানিত ওহী মুবারক অবতীর্ণ হচ্ছিল। নতুন নতুন আহকাম নাযিল হচ্ছিল। সকলেই নতুন মুসলমান ছিলেন। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদির হুকুম আহকাম জানার প্রয়োজন ছিল। তার চেয়েও বড় পাওয়া ছিল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক লাভ এবং উনার পিছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বপ্নের তাবির বলতেন, দ্বীনী আলোচনা করতেন। তাই মহিলাদেরও সেসব জায়গায় উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল। তবে পুরুষদের মতো উনাদের এই হাজির হওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল না।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতের যুগে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সর্বসম্মতিক্রমে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করার বা উনার হুকুমের খিলাফ করার কোন কল্পনাও করা যায় না। এতদসত্বেও উনারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এই জন্য যে, যেসব শর্তের সাথে মহিলা উনাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি ছিল এখন সেসব শর্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

বস্তুত কোন যুগেই মহিলাদের মসজিদে যাওয়া পছন্দনীয় ছিল না। সবসময় তাদেরকে বাড়িতে থাকতে এবং গৃহ কোণে নামায আদায় করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরয। বিনা জরুতে বাইরে বের হলে পর্দার লঙ্ঘন হবে, ফিতনা ছড়াবে, সেজন্য নামাযের জামায়াতে হাজির হওয়ার হুকুম তাদের জন্য মাফ করে দেয়া হয়েছে।

মহিলাদের জামায়াতে নামায আদায় সংক্রান্ত অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে যাতে তাদেরকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ঘরে নামায পড়তে বলা হয়েছে এবং মসজিদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ام حميد امرأة ابى حميد الساعدى انها جاءت النبى صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى احب الصلوة معك، قال علمت انك تحبين الصلاة معى، وصلاتك فى بيتك خيرلك من صلاتك فى حجرتك وصلاتك فى حجرتك خير من صلاتك فى دارك وصلاتك فى دارك خيرلك من صلاتك فى  مسجد قومك وصلاتك فى مسجد قومك خيرلك من صلاتك فى مسجدى، قال فأمرت فبنى لها مسجد، فى اقصى شىء من بيتها واظلم فكانت تصلى فيه حتى لقيت الله عزوجل

অর্থ : হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সাথে নামায পড়ার আমার খুবই ইচ্ছে হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি জানি, আপনি আমার সাথে নামায পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন, বদ্ধ ঘরে আপনার নামায পড়া খোলা ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা ঘরের নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদের নামায আমার মসজিদের (মসজিদে নববী শরীফ) নামাযের চেয়ে উত্তম। এই ইরশাদ শ্রবণের পর হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন কোণে বিশেষভাবে নামাযের জায়গা তৈরি করেন এবং ইনতিকাল পর্যন্ত সেখানেই নামায পড়তে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ, সূত্র: আত তারগীব- ১/১৩৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام عن رسول الله صلى الله عليه قال خير مساجد النساء قعر بيوتـهن.

অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের বাড়ির গোপন প্রকোষ্ঠ। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা, মুসতাদরাকে হাকিম, সূত্র: আত তারগীব)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال صلت امرأة من صلاة احب الى الله من اشد مكان فى بيتها ظلمة.

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহিলাদের ওই নামায সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় যা সে স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন জায়গায় আদায় করে। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা, তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনযিরী- ১/১৩৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى عمرو الشيبانى انه رأى عبد الله يخرج النساء من المسجد يوم الجمعة ويقول اخرجن الى بيوتكن خير لكن.

অর্থ : হযরত আবু আমর শায়বানী বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখেছি তিনি জুমুয়ার দিন মহিলা উনাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (তবারানী শরীফ, আত তারগীব- ১/১৩৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ليس على النساء غزو ولا جمعة ولا تشبيع جنازة.

অর্থ : মহিলাদের জন্য জিহাদও নেই জুমুয়ার নামাযও নেই এবং জানাযায় শরীক হওয়া নেই। (তবারানী ফিছছগীর শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ- ৮/২৬৪)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে বসা ছিলেন এমন সময় মুযাইনা গোত্রের জনৈকা মহিলা সুন্দর পোশাকে সজ্জিতা হয়ে অহঙ্কারী চালে মসজিদে এসে উপস্থিত হলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, হে লোক সকল! তোমরা স্বীয় মহিলাদেরকে উগ্র পোশাক পরিধান থেকে এবং মসজিদে অঙ্গভঙ্গি করা থেকে বিরত রাখো। বনী ইসরাইলরা ততক্ষণ পর্যন্ত অভিশপ্ত হয় নাই যতক্ষণ না তাদের মহিলারা উগ্র পোশাক পরা এবং মসজিদে অহঙ্কারী পদক্ষেপে চলা শুরু করেছে। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

উপরে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের দ্বারা যে বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ে গেল তা হলো-

এক. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে মহিলাদের জন্য জামায়াতে শরীক হওয়া অত্যাবশ্যকীয় ছিল না। শুধুমাত্র অনুমতি ছিল। তবে সেটাও এমন অপছন্দের সাথে এবং শর্ত সাপেক্ষে যে উনারা নিজেরাই মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তেন।

দুই. মহিলাদের মসজিদে যাওয়াটা ওয়াজিব, ফরয কিছুই ছিল না বরং মুবাহ ছিল।

তিন. হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক উনার উপর আমল করার জন্যেই মসজিদ ছেড়ে সারাজীবন বাড়ির নির্জন প্রকোষ্ঠে নামায আদায় করেছেন এবং সে যুগের মহিলারা সাধারণভাবে এটাই করতেন।

আজ শত আফসুস! ওইসব পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি যারা মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইচ্ছা এবং শিক্ষার বিরোধিতা করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো সেটাকে আবার সুন্নত বলে চালিয়ে দিতে কোশেশ করছে। মহিলাদের জন্য মসজিদে যেয়ে নামায পড়া যদি সত্যিই সুন্নত হতো এবং তাতে ছওয়াবও বেশি হতো তাহলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেন বললেন যে, মসজিদের নামাযের চেয়ে ঘরের নামাযই উত্তম। তাহলে কি সুন্নত তরক করার মধ্যে ছাওয়াবের কথা বলা হয়েছে? নাউযুবিল্লাহ! কখনোই নয়।

বিশিষ্ট ফকীহ ও মুহাদ্দিছ ইমাম হযরত তহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল যাতে করে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি দেখা যায় এবং দুশমনরা এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। কিন্তু আজ যেহেতু সেই পরিস্থিতি আর নেই তাই ওই হুকুমও মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে।

বুখারী শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বর্তমানে ফতওয়া এই কথার উপরে যে, মহিলাদের জন্য যে কোন নামাযে যাওয়া নিষেধ। চাই তা দিনে হোক বা রাতে হোক। উক্ত মহিলা চাই যুবতী হোক বা বৃদ্ধা হোক। এমনকি তাদের জন্য সাধারণভাবে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়াও নিষেধ।

ফতওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে, মহিলাদের জন্য জামায়াতে হাজির হওয়া নিষেধ। চাই তা জুমুয়া হোক বা ঈদ হোক। এমনকি সাধারণভাবে ওয়াজের মাহফিলে পর্যন্ত। দিনে হোক বা রাতে হোক, বৃদ্ধা হোক বা যুবতী হোক সকলের জন্য একই হুকুম প্রযোজ্য। ফিতনা ছড়িয়ে পড়ার কারণে বর্তমানে এটাই ফতওয়া।

ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, ফিতনা ফাসাদ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করার কারণে মহিলাদের যে কোন নামাযে অংশগ্রহণ করা মাকরূহ।

ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ যুগে মহিলাদের জন্য মসজিদের জামায়াতে হাজির হওয়া মাকরূহ। কেননা ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে দ্বীনী হুকুম-আহকাম শেখার জন্য তাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন আর সেই প্রয়োজন বাকি নেই। দ্বীনের হুকুম আহকাম সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। পর্দার মধ্যে থেকেও মহিলারা তা জানতে পারে। সুতরাং তাদের জন্য বাড়িতে পর্দার মধ্যে থাকাই শ্রেয়।

উল্লেখ্য যে, মসজিদে না যাওয়ার এই হুকুম হারাম শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, মসজিদে আকসাসহ সকল মসজিদের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। সর্বত্রই মহিলারা স্বীয় ঘরে নামায পড়বে। এমনকি যেসব মহিলারা হজ্জ বা উমরা করতে যান তারাও সেখানে বাইতুল্লাহ শরীফ বা মসজিদে নববী শরীফ উনাদের মধ্যে নামায না পড়ে স্বীয় রুমে নামায পড়বেন।

কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার তুলনায় নিজ প্রকোষ্ঠে নামায পড়াকে মহিলাদের জন্য উত্তম বলেছেন। এই হাদীছ শরীফ যেহেতু মদীনা শরীফ থাকাকালীন সময়ে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন তাই এতে মসজিদে নববী শরীফ উনার কথা উল্লেখ আছে। মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করার সময়ে যদি বলতেন তাহলে সেখানে অবশ্যই বলতেন যে, মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে নামায পড়ার চেয়ে স্বীয় বাড়িতে পড়া মহিলাদের জন্য উত্তম। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার যে, মসজিদে হারাম শরীফ-এ  এক রাকায়াতে এক লাখের ছওয়াব এবং মসজিদে নববী শরীফ-এ এক রাকায়াতে পঞ্চাশ হাজার রাকায়াতের ছওয়াব শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলারা স্বীয় ঘরে নামায পড়লে ওই ছওয়াবই পেয়ে যাবেন। এছাড়া মহিলারা স্বীয় ঘরে একা নামায পড়ার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم صلوة الـمرأة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة

অর্থ : হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ার মধ্যে পঁচিশগুণ ফযীলত বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ২য় খ-: ৩৮৯ পৃষ্ঠা)

সুতরাং মা-বোনেরা সাবধান! পবিত্র কুরআন শরীফ ও  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করে ধ্বংস ডেকে আনবেন না।

বর্তমানে অধিকাংশ মহিলারাই পর্দা করেনা। বাড়িতে গায়রে মাহরাম এবং দেবর-ভাসুরের সাথে পর্দা করছে না, যা কিনা ফরয। অথচ তারাই আবার অধিক ছওয়াবের আশায় উৎসাহে মসজিদে, ঈদগাহে উপস্থিত হচ্ছে। যা কিনা মুস্তাহাবও নয়। তাহলে এটা কি সম্মানিত শরীয়ত উনার সাথে পরিহাসের শামিল নয়? ফরয পর্দা বাদ দিয়ে হারামের প্রতি এত আগ্রহ কেন? হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না যাঁরা বেশি বেশি ছওয়াব অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা করতেন উনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মেনে নিয়ে মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে উনার পিছনে নামায পড়া বাদ দিয়ে নিজেদের বাড়িতে নামায পড়েছেন। তাহলে বলতে হয় এ যুগের মা বোনদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়ার প্রবণতাটা সত্যিই দুঃখজনক। যা শয়তানের চক্রান্তসমূহের মধ্যে একটা বড় চক্রান্ত।

ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব বাদায়িউস সানায়িতে মহিলাদের জুমুয়া এবং ঈদের জামায়াতে শরীক হওয়া সম্মন্ধে যা বলা হয়েছে তা প্রণিধানযোগ্য। সেখানে বলা হয়েছে, মহিলারা জুমুয়ায় শরীক হবে না। কেননা তারা পারিবারিক কাজে মশগুল থাকে, তাছাড়া পুরুষদের সমাবেশে মহিলাদের বের হওয়াও নিষেধ। তাদের এ বের হওয়াটা ফিতনার কারণ হয়, তাই এই হুকুম। এ কারণেই তাদের জুমুয়া এবং পাঁচ ওয়াক্তের জামায়াতে হাজির হওয়া মাফ। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং ক্বিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে তার জন্য জুমুয়া ওয়াজিব কিন্তু মুসাফির, গোলাম, শিশু এবং মহিলা ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত। (১/২৫৮) এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য জুমুয়ার নামায নেই। ঈদের জামায়াতে শরীক হওয়া সম্বন্ধে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মহিলাদের জুমুয়ার নামাযে, ঈদের নামাযে এবং অন্য যে কোন নামাযে জামায়াতে হাজির হওয়ার অনুমতি নেই। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি মহিলাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন-

وقرن فى بيوتكن

অর্থাৎ “তোমরা স্বীয় ঘরে অবস্থান কর।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)। এখানে অবস্থান করার হুকুম দিয়ে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাদের বাইরে বের হওয়াটা নিঃসন্দেহে ফিতনার কারণ। আর ফিতনা হলো হারাম, যে জিনিস হারাম পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় সেটাও হারাম।

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, মহিলাদের জামায়াতে নামায আদায়ের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী ও হারাম। আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। কেননা এর দ্বারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনারাসহ সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতা করা হয়। আর উনাদের বিরোধিতা করা স্পষ্ট কুফরী।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১ ও ২২৬তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম

তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড়

 

সুওয়াল: অনেক বলে থাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জানাযা পড়েছিলেন কে? সে কথাটি বলা যাবে কি যাবে না? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো কোন জ্বীন-ইনসানের মতো নন। কাজেই, উনার জানাযার তো প্রশ্নই উঠেনা। আর জানাযা না হলে জানাযা পড়ানোরও প্রশ্ন উঠেনা। প্রকৃতপক্ষে জানাযা হলো মাইয়্যেতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায়ই সকলে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। সেজন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর পর্যায়ক্রমে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে নিজেদের জন্য দুআ, মাগফিরাত, নাজাত ও সুপারিশ মুবারকের আরজি পেশ করেন।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবঞ্জ।

 

সুওয়াল: মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ১১)

বিগত কিস্তিগুলোতে অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ মুবারক উনাদের দ্বারা অত্যান্ত সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা এবং উনার সুমহান আওলাদ খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

যেহেতু মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাত ওয়াস সালাম এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব উনার অর্থ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে ‘খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ নামক কিতাব মুবারক-এ আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে এখন আমরা আলোচনা করবো- ‘মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উছীলায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।’ (সুবহানাল্লাহ)

সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অসংখ্য-অগণিত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য সম্মানিত দলীল-আদিল্লাহ মুবারক দ্বারা অত্যান্ত সুস্পষ্ট ও চির অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অতিশীঘ্রই বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশআল্লাহ। (সুবহানাল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের বেমেছাল দয়া, দান, ফযল, করম ও ইহসান মুবারক উনাদের বদৌলতে এই সম্পর্কে নি¤েœ কতিপয় চির অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

প্রথম প্রমাণ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব ‘কালামুল্লাহ শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَعَدَ اللهُ الَّذِينَ امَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِـحٰـتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওয়াদা মুবারক দিচ্ছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে যাহিরী খিলাফত হাদিয়া করবেন। যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে খিলাফত হাদিয়া করেছিলেন।” (সম্মানিত সূরা নূর শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ : ৫৫)

আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে যাহিরীভাবে খিলাফত হাদিয়া করবেন। যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে হাদিয়া করেছিলেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা।

এখানে কিন্তু বলা হয়নি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় খিলাফত হবে এবং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় খিলাফত হবে। এছাড়া আর অন্য কোনো সময় তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে অর্থাৎ উনার পূর্ববর্তী যামানায় খিলাফত কায়িম হবে না; বরং এখানে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে যে কোনো সময় খিলাফত কায়িম হতে পারে। আর সে সময়টা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বেও হতে পারে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার থেকে এই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে বর্তমান যামানায়ও অবশ্য অবশ্যই খিলাফত কায়িম হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই দিবেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা অবশ্যই সত্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক সত্য।” (পবিত্র সূরা ইউনূস আলাইহিস সালাম, আয়াত শরীফ : ৫৫)

সুতরাং আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে বর্তমান যামানায়ও অবশ্যই অবশ্যই খিলাফত কায়িম হবে। যেমন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় খিলাফত কায়িম হয়েছিলো। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা অবশ্যই সত্য।

আর বর্তমান যামানায় যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ খলীফা তথা ১০ম খলীফা তথা সাইয়্যিদুল খুলাফা, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি প্রকাশ পেয়েছেন। সুতরাং উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। (সুবহানাল্লাহ)

 

মুহম্মদ আব্দুল আলিম রাইহান

মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা, সুনামগঞ্জ।

 

সুওয়াল : আমাদের এলাকার অধিকাংশ মসজিদগুলোতে খতম তারাবীহ হোক অথবা সূরা তারাবীহ হোক ইমাম ছাহেব এতো দ্রুতগতিতে তিলাওয়াত করেন যা পিছনে ইক্তিদাকারীগণ কিছুই বুঝেন না। আবার রুকু, সিজদাও এতো দ্রুতগতিতে করেন যাতে মুছল্লীগণ কেউ রুকুতে, কেউ সিজদায়, কেউ কওমায় থাকেন।

এখন আমার সুওয়াল হলো- ওয়াক্তিয়া নামাযের যে নিয়ম অর্থাৎ যেভাবে নিয়ত করতে হয়, তাকবীরে তাহরীমা বাঁধতে হয়, ধীর গতিতে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে হয়, ক্বওমা-জলসা ঠিক-ঠিক মতো আদায় করতে হবে, তাশাহহুদ শরীফ, দুরূদ শরীফ ও দোয়ায়ে মা’ছূরা শরীফ পাঠ করতে হয়, তারপর সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামায শেষ করতে হয়- তারাবীহ নামাযেরও সেই একই নিয়ম, না-কি ভিন্ন? যদি একই নিয়ম হয়ে থাকে তাহলে এতো দ্রুতগতিতে নামায পড়লে বা পড়ালে তা শুদ্ধ হবে কিনা? জানতে চাই।

জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قوموا لله قانتين

অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে (নামাযে) বিনয়-বিনম্রসহকারে দ-ায়মান হও।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৮)

অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে নামাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবসমূহ যথাযথভাবে আদায় করার মধ্য দিয়ে এবং হুযূরী ক্বলবের সাথে নামায আদায় করতে হবে। অন্যথায় নামাযের হক্ব আদায় হবে না। তা কেবল উঠা-বসার নামান্তর হবে।

স্মরণীয় যে, নামাযের মধ্যে পবিত্র সূরা-ক্বিরায়াত শরীফ পাঠ করা হচ্ছে একটি ফরয।  সুতরাং ইমাম ছাহেবকে তারতীলের সাথে স্পষ্ট করে পবিত্র সূরা-ক্বিরায়াত শরীফ পড়তে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ورتل القران ترتيلا

অর্থ: “এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ছহীহ-শুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে তিলাওয়াত করুন।” (পবিত্র সূরা মুয্যাম্মিল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামাযে কিরূপভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন? জাওয়াবে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বিরায়াত অনুকরণ করে শোনান তাতে প্রতিটি হরফ স্পষ্ট ছিলো। (তাফসীরে মাযহারী শরীফ)

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما فى قوله تعالى ورتل القران ترتيلا قال بينه بيانا .

অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কালাম    ورتل القران ترتيلا উনার ব্যাখ্যায় বলেন, তুমি উহা সঠিক ও সুস্পষ্টরূপে পাঠ করবে।” (ফিক্বহুস সুনান ওয়াল আছার)

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال الترتيل تجويد الحروف ومعرفة الوقف .

অর্থঃ- “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ‘তারতীল’ হলো অক্ষরসমূহ যথাযথ উচ্চারণ ও সুন্দররূপে পাঠ করা এবং ওয়াকফ বা বিরতির স্থানসমূহ অবগত হওয়া অর্থাৎ তদানুযায়ী আমল করা।” (ফিক্বহুস সুনান ওয়াল আছার, আল ইতকান)

عن ام المؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يقطع قراءته اية اية.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময় প্রত্যেক পবিত্র আয়াত শরীফ পৃথকভাবে অর্থাৎ প্রত্যেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষে থেমে থেমে তিলাওয়াত করতেন।” (হাকিম, দারুকুতনি)

অর্থাৎ ইমাম ছাহেবের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের যাবতীয় নিয়ম অনুযায়ী স্পষ্টভাবে তিলাওয়াত করা। এটা ইমাম ছাহেবের জন্য ফরয-ওযাজিব।

আর মুক্তাদীর জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে, ইমাম ছাহেবের তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون .

অর্থ: “যখন পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থেকে তা শ্রবণ করো; তবেই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফখানাকে হানাফী মাযহাবে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে যে, ইমাম ছাহিব যখন নামাযে ক্বিরায়াত পাঠ করেন তখন মুক্তাদী বা মুছল্লীগণের জন্য চুপ থেকে উক্ত তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ওয়াজিব। কেননা,  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قراءة الامام قراءة الـمقتدى.

অর্থ: “ইমাম ছাহেবের ক্বিরায়াতই হচ্ছে মুক্তাদীর ক্বিরায়াত।”

একইভাবে রুকু ও সিজদা সঠিকভাবে আদায় করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت ابى مسعود الانصارى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تجزئى صلوة الرجل حتى يقيم ظهره فى الركوع والسجود .

অর্থঃ- “হযরত আবু মাসউদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কারো নামায যথাযথভাবে আদায় হয় না, যে পর্যন্ত না সে রুকু এবং সিজদাতে পিঠ স্থায়ীভাবে সোজা করে। (আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে হানাফী মাযহাবে নামাযের মধ্যে তা’দীলে আরকান অর্থাৎ নামাযের রুকু-সিজদা ধীর-স্থিরভাবে আদায় করাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت شقيق رحمة الله عليه قال ان حذيفة رضى الله تعالى عنه راى رجلا لايتم ركوعه ولا سجوده فلما قضى صلوته دعاه فقال له حذيفة رضى الله تعالى عنه ما صليت قال واحسبه قال ولو مت مت على غير الفطرة التى فطر الله محمدا صلى الله عليه وسلم .

অর্থ: “হযরত শাক্বীক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, তিনি উনার রুকূ ও সিজদা পূর্ণ করছেন না। যখন সে ব্যক্তি নামায শেষ করলেন তিনি উনাকে ডেকে বললেন, যদি আপনি এ অবস্থায় ইন্তিকাল করেন তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে ফিতরাতের উপর সৃষ্টি করেছেন তার বাইরে ইন্তিকাল করবেন।” (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চুরির দিক থেকে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মন্দ ঐ ব্যক্তি যে তার নামাযে চুরি করে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নামাযে সে কিভাবে চুরি করবে? তিনি বললেন, সে নামাযের রুকূ এবং নামাযের সিজদা পূর্ণ করবে না।” (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

অর্থাৎ ক্বিরায়াতের মতো রুকূ ও সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে নামায পড়াতে হবে এবং পড়তে হবে।

মোটকথা, নামাযের প্রত্যেকটি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব যথাযথভাবে পালন করে নামায আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ফরয নামায আদায়ের ক্ষেত্রে যে হুকুম, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামায আদায়ের ক্ষেত্রেও সে একই হুকুম।

উল্লেখ্য, তারাবীহ নামায হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আর এ নামাযের জামায়াত হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। এছাড়া তারাবীহ নামায হচ্ছে ফরয ছলাতুল ইশা উনার তাবি’ অর্থাৎ অধীন, অনুসারী ও পরবর্তী নামায।

কাজেই, ছলাতুল ইশা যেভাবে আদায় করতে হবে তারাবীহ নামাযও সেভাবে বা সে নিয়মেই আদায় করতে হবে। কেননা, নামাযের ফরয (আরকান-আহকাম), ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবসমূহ সকল নামাযের ক্ষেত্রেই একই হুকুম।

অতএব, ইমাম ছাহেব ওয়াক্তিয়া নামায যেভাবে বা যে নিয়মে পড়ান তারাবীহ নামাযও সেভাবেই পড়ানো ইমাম ছাহেব উনার উপর অপরিহার্য কর্তব্য।

এখন ইমাম ছাহেব যদি উনার দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেন, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী সকলের নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। এজন্য এরূপ ইমাম নিযুক্ত করা এবং তার পিছনে নামায আদায় করা জায়িয নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনেকে মনে করে ‘তারাবীহ’ অর্থ তাড়াতাড়ি; এটা ভুল ধারণা। সঠিক হচ্ছে تراويح ‘তারাবীহ’ শব্দটি ترويحة ‘তারবীহাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ বিশ্রাম নেয়া, আরাম করা। অর্থাৎ চার রাকায়াতের পর বসে দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিরতি বা বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে তারাবীহ নামায আদায় করা হয় বলেই এ নামাযকে তারাবীহ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

কাজেই, তারাবীহ নামায অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব নামাযের মতোই ধীরস্থিরভাবে আদায় করতে হবে। এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের হুকুম।

{দলীলসমূহ : তাফসীরে মাযহারী, বুখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফিক্বহুস সুনান ওয়াল আছার, আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ বিলাল হুসাইন

সুনামগঞ্জ

 

সুওয়াল : কিছু বাতিল আক্বীদার লোক বলে থাকে, তারাবীহ নামাযে প্রতি চার রাকায়াত পর হাত তুলে মুনাজাত করার কোনো দলীল নেই। তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব : তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। যেহেতু সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করার আদেশ হাদীছ শরীফে এসেছে, তাই ফক্বীহগণ ফরয নামাযের ন্যায় তারাবীহ নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া শরীয়তের কোথাও তারাবীহ নামাযের পর মুনাজাত করাকে নিষেধ করা হয়নি। আর যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো আদব ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত এবং হাদীছ শরীফে সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হয় বলে উল্লেখ আছে, সেহেতু তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠিয়ে, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব।

যারা বলে, “তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার কোন প্রমাণ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই।”

তাদের বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ সম্মানিত শরীয়ত উনার উছূল বা মূলনীতি হচ্ছে-পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ। আর ফিক্বাহ ও ফতওয়াই হচ্ছে ইজমা ও ক্বিয়াসের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে থাকার অর্থই হলো ইজমা ও ক্বিয়াসে থাকা। আর ইজমা ও ক্বিয়াসে থাকার অর্থ হলো সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে থাকা।

অতএব, সম্মানিত শরীয়ত তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত বা দোয়া করা জায়িয বা মুস্তাহাব বলা হয়েছে।

সাকাবুল আনহার, ১ম জিঃ ২৩৬ পৃঃ ও ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়া, ২য় জিঃ ৩৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

السوال:- تراویح کی چار رکعت کے بعد ھاتھ اٹھاکر دعا مانگنا کیسا ھے؟ الجواب:-  تراویح کی ھر چر رکعت کے بعد جلسہ استراحت مستحب ھے اور اس میں اختیار ھے خواہ تسبیح و درود پرھے- خواہ نوافل و تلاوت مین مشغول رھے- خواہ اسوقت کو دعا و مناجات میں گزریں- کذا فی سکب الانھر ج ۱ صفہ ۲۳۶ فتاوے محمودیہ ج۲ صفہ ۳۶۶)

অর্থ: প্রশ্ন- তারাবীহ্ নামাযের প্রত্যেক চার রাকায়াত পর পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা কিরূপ?

উত্তর: তারাবীহ্ নামাযের প্রত্যেক চার রাকায়াত পর পর বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব। ঐ সময় তাসবীহ, দরূদ শরীফ পাঠ করবে, চাই নফল নামায এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল থাকবে, অথবা ঐ সময়টুকু মুনাজাতে কাটিয়ে দিবে। (অর্থাৎ ঐ সময় মুনাজাত করা নাজায়িয নয় বরং জায়িয ও মুস্তাহাব)।

ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ৪র্থ জিঃ ২৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

السوال:- بعد نماز تراویح دعا مانگنا جائز  ھے یا نھیں؟

الجواب:- بعد ختم تراویح دعا مانگنا درست اور مستحب ھے- اور معمول سلف و خلف ھے-

অর্থ: প্রশ্ন- তারাবীহ নামাযের পর মুনাজাত করা জায়িয আছে কি?

উত্তর- তারাবীহ্ নামাযের পর মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব এবং সলফ ও খলফগণের আমলের অন্তর্ভুক্ত।

আহসানুল ফতওয়া, ৩য় জিঃ ৫১৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

السوال:- تراویح ختم ھونے پر وترسے پھلے اجتماعی دعا ھاتھ اطھاکر کیسا ھے؟

الجواب:- اس سے متعلق کوئی صریح جنریہ نھین البتہ دعا بعد الصلوۃ کے کلیہ مین یہ بھی داخل ھے- کیونکہ تراویح مستقل نماز ھے-

অর্থঃ- প্রশ্ন- তারাবীহ্ নামায শেষে বিতির নামাযের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা কিরূপ?

উত্তর- এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না, অবশ্য নামাযের পর মুনাজাত করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফের মধ্যে তারাবীহ নামাযও অন্তর্ভুক্ত, কেননা তারাবীহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পৃথক নামায। (সুতরাং তারাবীহ নামাযের পরও মুনাজাত করা জায়িয)।

ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়াহ্, ২য় জিঃ ৩৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

السوال:- تراویح کی بیس رکعت ختم ھونے پردعا مانگنا کیسا ھے؟

الجواب:- مستحب ھے-

অর্থ: প্রশ্ন- তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত শেষ করে মুনাজাত করা কিরূপ?

উত্তর- মুস্তাহাব।

ইমদাদুল আহকাম, ১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠায় রয়েছে-

تراویح کے بعد دعا کرنا احدیث سے صراحۃ  تو ثابت نھیں- ھان عام ظور پر نماز کے بعد دعاکو مستحب ھونا احادیث سے مفھوم ھوتا ھے اس عموم میں  تراویح بھی داخل ھے الخ-

অর্থ: তারাবীহ নামাযের পর মুনাজাত করা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নেই। হ্যাঁ, হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব। তারাবীহ নামাযও এটার অন্তর্ভুক্ত। (অতএব, অন্যান্য নামাযের ন্যায় তারাবীহ নামাযের পরও মুনাজাত করা মুস্তাহাব)

উল্লেখ্য, তারাবীহ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত বা দোয়া করা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে আছে যার কারণে ফিক্বাহ, ফতওয়ার কিতাবসমূহে তারাবীহ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত বা দোয়া করা জায়িয বা মুস্তাহাব বলা হয়েছে।

মোটকথা, “তারাবীহ্ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠিয়ে, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব।”

{বিঃ দ্রঃ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মোতাবেক যে কোন নামাযের (তারাবীহ্, জানাযা, দুই ঈদ) পর হাত তুলে মুনাজাত করা ক্বওলী ও ফে’লী উভয় প্রকার হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত যা ফতওয়ার প্রায় কিতাবেই উল্লেখ আছে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ও ২০তম সংখ্যা পাঠ করুন}

মুহম্মদ আব্দুল হাকিম লুকমান

সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: আমাদের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার চেচান গ্রামের হাফিয আব্দুস সালাম নামে একজন লোক তিনি তারাবীহ নামাযে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম সশব্দে পাঠ করেন এবং তার ছাত্র যারা তারাও সশব্দে পাঠ করে থাকে।

এখন আমার প্রশ্ন হলো- আমাদের হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ‘বিসমিল্লাহ’ সশব্দে উচ্চারণ করা জায়িয কিনা?

জাওয়াব: সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার অনুসারীদের জন্য পবিত্র নামায উনার  মধ্যে “বিসমিল্লিাহির রহমানীর রহীম” অনুচ্চ স্বরে পাঠ করতে হবে; অন্যথায় নামায শুদ্ধ হবে না এবং এ আমলটি বিদয়াত হবে। আর বিদয়াত হচ্ছে গুমরাহী, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।

স্মরণীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাবে নামাযের ভিতরে সূরা ফাতিহা অথবা অন্য কোন সূরার প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ সশব্দে উচ্চারণ করা জায়িয নেই। কেননা হানাফী মাযহাবের যিনি ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত হচ্ছে, সূরার প্রারম্ভে লিখিত “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” সূরা ফাতিহা শরীফ উনারও অংশ নয় এবং অন্য সূরারও অংশ নয়। বরং বরকতের জন্য এবং দুই সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য প্রতিটি সূরার প্রারম্ভে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” উনার অধিষ্ঠান। আর “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অংশ বলে যে অভিমত রয়েছে তাহচ্ছে সূরা নমল শরীফ উনার একখানা আয়াত শরীফ উনার অংশ হচ্ছে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।” যেমন সূরা নমল শরীফ উনার ৩০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

انه من سليمان وانه بسم الله الرحمن الرحيم

কাজেই, সূরা নমল শরীফ ব্যতীত আর কোন সূরার অংশ “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” নয়।

“বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” যে সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা অন্য কোন সূরা শরীফ উনাদের অংশ নয় সে বিষয়ে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وخلف حضرت ابى بكر الصديق عليه السلام وخلف حضرت عمر الفاروق عليه السلام فلم يجهر احد منهم ببسم الله الرحمن الرحيم.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার পিছনে অনেক নামায পড়েছি। উনারা কেউই উচ্চ স্বরে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” পড়েননি।

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى قسمت الصلاة بينى وبين عبدى نصفين فنصفها لى ونصفها سأل لعبدى ولعبدى ما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول العبد الحمد لله رب العالـمين يقول الله حمدنى عبدى. يقول العبد الرحمن الرحيم يقول الله اثنى على عبدى. يقول العبد مالك يوم الدين يقول الله تعالى مـجدنى عبدى. يقول العبد اياك نعبد واياك نستعين يقول الله تعالى هذه الاية بينى وبين عبدى ولعبدى ما سال. يقول العبد اهدنا الصراط الـمستقيم صراط الذين انعمت عليهم غير الـمغضوب عليهم ولا الضالين يقول فهؤلاء لعبدى ولعبدى ما سأل. (رواه مسلم).

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি আমার বান্দাগণের নামাযকে দুইভাগে ভাগ করেছি। অর্ধেক আমার আর অর্ধেক আমার বান্দাদের। বান্দারা যা চাইবে তাই পাবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন বান্দা আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য) বলে তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হামাদানি আবদী (আমার বান্দা আমার অনেক প্রশংস করেছে)। বান্দা যখন বলে, আররহমানির রহীম তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার খুব ছানা ছিফত করছে। বান্দা মালিকি ইয়াওমিদ্দীন বললে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করছে। যখন বান্দা বলে, ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, এটা হলো আমার ও আমার বান্দার মধ্যবর্তী সেতু স্বরূপ। আমার নিকট আমার বান্দার জন্য সেই বস্তুই প্রস্তুত রেখেছি যা আমার বান্দা চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাছ ছিরাত্বল মুসতাক্বীম; ছিরাত্বল্লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গইরিল মাগদূবী আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি বান্দার সকল প্রার্থনা কবুল করলাম। আরো প্রার্থনা করলেও কবুল করবো। (মুসলিম শরীফ)

এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, সূরা ফাতিহা শরীফ উনার শুরুর আয়াত শরীফ হচ্ছে “আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।” “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” নয়।

আরো বর্ণিত রয়েছে, সূরা মূল্ক সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, সূরা মূল্ক হচ্ছে তিরিশ আয়াত সম্বলিত কুরআন শরীফ উনার একটি সূরা। আর এ বিষয়ে আয়াত শরীফ গণনাকারীগণ একমত হয়েছেন যে, “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” ছাড়াই সূরা মূল্ক শরীফ উনার আয়াত শরীফ সংখ্যা তিরিশ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن مغفل رضى الله تعالى عنه قال سمعنى ابى وانا فى الصلاة اقرأ بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله رب العلمين فلما انصرف قال يا بنى اياك والحدث فى الاسلام فانى صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم و حضرت ابى بكرن الصديق عليه السلام و حضرت عمر الفاروق عليه السلام وحضرت عثمان ذو النورين عليه السلام فكانوا لا يفتحون القرأن ببسم الله الرحمن الرحيم ولم ار رجلا قط ابغض اليه الحدث منه. ورواه الترمذى فقال فيه صليت مع النبى صلى الله عليه وسلم و حضرت ابى بكرن الصديق عليه السلام و حضرت عمر الفاروق عليه السلام وحضرت عثمان ذو النورين عليه السلام ولم يسمع منهم احد يقولها.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমার পিতা আমাকে নামাযের মধ্যে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীমসহ আলহামদু সূরা উচ্চ স্বরে পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি আমাকে বললেন, বৎস! সম্মানিত দ্বীন ইসলামে নতুনত্ব (বিদয়াত) সংযোজন থেকে বিরত থেকো। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম এবং হযরত উছমান যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পিছনে নামায পড়েছি। কিন্তু উনাদেরকে কখনোই বিসমিল্লাহ থেকে ক্বিরাআত শুরু করতে শুনিনি। উনারা ছিলেন বিদয়াতের ঘোর শত্রু। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত হাদীছ শরীফেও এরকম উল্লেখ রয়েছে যে, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত উছমান যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পিছনে নামায পড়েছি, কিন্তু উনাদেরকে কখনো বিসমিল্লাহ (সশব্দে) পড়তে শুনিনি। (তাফসীরে মাযহারী)

এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى وايل رحمة الله عليه قال كان حضرت عمر و حضرت على عليهما السلام لا يجهران بسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ ولا بامين.

অর্থ: হযরত আবূ ওয়ায়িল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত- হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম, আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম ও আমীন চুপে চুপে পাঠ করতেন। (ত্বহাবী শরীফ)

عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام انه قال يخفى الامام اربعة اشياء التعوذ والبسملة وامين وسبحانك.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। ইমাম চারটি জিনিস চুপে পাঠ করবে। ১. আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম ২. বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ৩. আমীন ৪. সুবহানাকা অর্থাৎ সানা। (বাইহাক্বী শরীফ, তবারানী শরীফ)

عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال يخفى الامام ثلاثا التعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم و امين.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ইমাম তিনটি জিনিস চুপে পাঠ করবে। ১. আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম ২. বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ৩. আমীন। (আমানিউল আহবার ৩য় খ- ৫৫ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ৪র্থ খ- ২৪৯ পৃষ্ঠা, আয যাওয়ায়িদ ২য় খ- ১৮০ পৃষ্ঠা)

উপরে বর্ণিত দলীলসমৃদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সূরার প্রারম্ভে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” সূরা ফাতিহা শরীফ উনারও অংশ নয় এবং অন্য কোন সূরা শরীফ উনারও অংশ নয়।

কাজেই, যা সূরা শরীফ উনার অংশ বা আয়াত হিসেবে বর্ণিত হয়নি তা পবিত্র সূরা শরীফ উনার ন্যায় পাঠ করা হানাফী মাযহহাব মুতবাবিক নাজায়িয।

অতএব, সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার অনুসারীদের জন্য পবিত্র নামায উনার  মধ্যে “বিসমিল্লিাহির রহমানীর রহীম” অনুচ্চ স্বরে পাঠ করতে হবে; অন্যথায় নামায শুদ্ধ হবে না এবং এ আমলটি বিদয়াত হবে। আর বিদয়াত হচ্ছে গুমরাহী, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।

প্রকাশ থাকে যে, এক মাযহাব উনার অনুসারীদের জন্য অপর মাযহাব উনার অনুসরণ করা জায়িয নেই। যে যে মাযহাব উনার মুকাল্লিদ (অনুসারী) তাকে সে মাযহাব অনুযায়ীই প্রতিটি আমল করে যেতে হবে। এর বিপরীত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং গোমরাহী।

যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه ولا يؤل الى اخر.

অর্থ: যখন চার মাযহাব উনাদের প্রত্যেকটিই হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো, তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাব উনার ইমামকে অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাব উনার ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাব উনার অনুসরণ করবে না।

এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া” কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে-

واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.

অর্থ: দ্বিতীয়ত: কোনও মাযহাব উনাকে প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাব উনারই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। “কিমিয়ায়ে সায়াদাত”-এর ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

گو مخالف صاحب مذھب خود کردن ھیچ کس روا نبود

অর্থ: নিজ মাযহাবের ইমাম উনার খিলাফ করা কারো জন্যেই জায়িয নেই।

কিমিয়ায়ে সায়াদাত-এর ২৩৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

بخلاف اجتھاد صاحب مذھب خود کاری کند او عاص است فس بحقیقت حرام است

অর্থ: নিজ ইমাম উনার ইজতিহাদের খিলাফ কোন কাজ করলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে এবং প্রকৃতপক্ষে তা করা হারাম হবে।

ইকদুলজিদ-এর ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

المرجع عند الفقهاء ان العامى المنسب له مذهب لا يجوز مخالفته

অর্থ: ফক্বীহগণ উনাদের নিকট প্রধান্যপ্রাপ্ত মত এই যে, কোন মাযহাবপন্থী সাধারণ ব্যক্তির জন্যে নিজ মাযহাব উনার খিলাফ কোন আমল করা জায়িয নেই।

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ কিতাবে উল্লেখ করেন-

بل على المقلد اتباع مقلده فى كل تفصيل فان مخالفة للمقلد متفق على كونه منكرا بين الـمحققين.

অর্থ: প্রত্যেক মুকাল্লিদের প্রতিটি বিষয়েই একই ইমাম উনার অনুসরণ করা ওয়াজিব। কেননা বিজ্ঞ সকল ইমাম উনাদের এটাই মত যে, নিজ মাযহাব উনার খিলাফ করা নিষিদ্ধ।

প্রসিদ্ধ ‘তাহরীর’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-

وكذا للعامى الانتقال من مذهب الى مذهب لى زماننا لا يجوز لظهور الخيانة.

অর্থ: সর্বসাধারণের জন্য বর্তমান যুগে এক মাযহাব ছেড়ে অন্য মাযহাব উনার অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম। কারণ এতে সম্মানিত দ্বীন উনার খিয়ানত প্রকাশ পায়।

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘জাযীলুল মাযহাব’ কিতাবে উল্লেখ করেন-

اليوم من تحول من مذهبه فبئس ما صنع

অর্থ: বর্তমান যুগে যে ব্যক্তি নিজ মাযহাব হতে ফিরে অন্য মাযহাব উনার আমল করে সে অতি জঘন্য কাজ করলো।”

আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘আল মালূমা” কিতাবে উল্লেখ করেন-

قالوا الواجب على المقلد المطلق اتباع مجتهد فى جميع الـمسائل

অর্থ: “বিজ্ঞ আলিমগণ বলেন, কোন ইমামের অনুসরণকারীর প্রতি যাবতীয় বিষয়ে শুধু উনারই অনুসরণ করা ওযাজিব। নর্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قد وقع الاجماع على ان الاتباع انما يجوز للاربع فلا يجوز الاتباع لابى يوسف ومحمد وزفر وشمس الائمة اذا كان قولهم مخالفا لاربع وكذا لا يجوز الاتباع.

অর্থ: “ইজমা সাব্যস্ত হয়েছে যে, শুধুমাত্র মাযহাবের চার ইমাম উনাদের অনুসরণ করা জায়িয। তাছাড়া অন্যান্য ইমাম উনাদের অনুসরণ করা হারাম। যেমন- হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ইত্তিবা বা অনুসরণ করাও জায়িয নেই- যখন উনাদের কথা চার ইমামের উছূলের খিলাফ বা বিপরীত হবে।

‘তাফসীরে আহমদী’ কিতাবের ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

لا يجوز الانتقال من مذهب الى مذهب اخر كذلك لا يجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.

অর্থ: এক মাযহাব থেকে যেমন অন্য মাযহাবে প্রত্যাবর্তন করা জায়িয নেই অর্থাৎ নাজায়িয ও হারাম। ঠিক তেমনিভাবে যে কোন একটি মাসয়ালায় এক মাযহাব উনার অনুসরণ আবার অন্য একটি মাসয়ালায় অন্য এক মাযাহাব উনার অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম।

‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের ১ম খ-ের ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ان حكم الـملفق باطل بالاجماع

অর্থ: সর্বসম্মতিক্রমে সম্মানিত শরীয়তে মুলফিক বাতিল তথা ভ্রষ্ট ও পরিত্যাজ্য গুমরাহ।” (আর মুলফিক ঐ ব্যক্তিকে বলে, যে দুই মাযহাব উনাদের মাসয়ালাকে একত্র করে আমল করে)

‘দুররুল মুখতার’ কিতাবে তাযিরের অধ্যায়ে আরো উল্লেখ আছে-

من ارتحل الى مذهب الشافعى يعزر

অর্থ: যে ব্যক্তি নিজ মাযহাব উনার আমল পরিত্যাগ করে শাফিয়ী (কিংবা অন্যান্য) মাযহাব উনার অনুসরণ করে সে শাস্তির উপযুক্ত।

তাফসীরে আহমদী-এর ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

لا يجوز للحنفى العمل على مذهب الشافعى رحمة الله عليه.

অর্থ: হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাব উনার (মাসয়ালার উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাব কিংবা লা-মাযহাবীদের মাসয়ালা ও বক্তব্যের উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয।

অতএব, সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার অনুসারীদের জন্য পবিত্র নামায উনার  মধ্যে “বিসমিল্লিাহির রহমানীর রহীম” অনুচ্চ স্বরে পাঠ করতে হবে; অন্যথায় নামায শুদ্ধ হবে না এবং এ আমলটি বিদয়াত হবে। আর বিদয়াত হচ্ছে গুমরাহী, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব