সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আলাউদ্দীন সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সেপ্টেম্বর, জুন, জুলাই-২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির তৈরী প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব বক্তব্য ও যুক্তি দিয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।

৪। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।

৫। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবাক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।

মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উল্লিখিত বক্তব্যসমূহের সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: মাটির তৈরী সম্পর্কে মাহিউদ্দীনের  চতুর্থ বক্তব্য হচ্ছে-

৪। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, মাটির তৈরী সম্পর্কিত মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ। কারণ “কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।”এ ধারণা সম্পুর্ণই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্্ শরীফ-এর খিলাফ। কেননা কুরআন শরীফ-এর যে আয়াত শরীফ-এ নূর শব্দ উল্লেখ আছে, সে আয়াত শরীফ-এ উল্লিখিত নূর শব্দ দ্বারা রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে নয়।

যেমন, কুরআন শরীফ-এ্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين

অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে এক মহান নূর এবং একখানা সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।” (সূরা মায়িদা: আয়াত শরীফ- ১৫)

উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘নূর’ শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক নূর বা নূরের তৈরী। বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অভিমতও এটাই। নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরসমূহ হতে আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘নূর’ শব্দের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য তাফসীর বা ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-

যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ছাহাবী রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত ইবনে আববাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

قد جاءكم من الله نور يعنى محمد صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট ‘নূর’ অর্থাৎ নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ্্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন।”

ক্বাজিউল কুজাত ইমাম আবূ সাউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মাশহুর তাফসীর “তাফসীরে আবী সাউদ” কিতাবের ৩য় খন্ডের ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

(قدجاءكم من الله نور)…..الـمراد بالاول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثانى القران

অর্থ: “বর্ণিত আয়াত শরীফ-এর প্রথম শব্দ অর্থাৎ নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর দ্বিতীয় শব্দ অর্থাৎ কিতাবে মুবীন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কুরআন শরীফ।”

ইমামুল মুফাস্সিরীন আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ও মাদ্রাসা সমূহে পঠিত বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে জালালাইন শরীফ” কিতাবের ৯৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(من الله نور) هو النبى صلى الله عليه وسلم وكتاب قران

অর্থ: “এ আয়াত শরীফ-এ “নূর” অর্থ হলো  উদ্দেশ্য হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর কিতাব অর্থ হলো, কুরআন শরীফ।”

প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা আবু মুহম্মদ হুসাইন ইবনে মাসউদ ফাররাউল বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর, “তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল” কিতাবের ২য় খ-ের ২৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(قد جاءكم من الله نور) يعنى محمد صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট ‘নুর’ অর্থাৎ নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ্্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন।”

আল্লামাতুল হিব্র, বাহরুল ফাহ্হামাহ, হামিলুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, বায়হাক্বিউল ওয়াক্বত, আলামুল হুদা আল্লামা কাজী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ্ ওছমানী হানাফী পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘‘তাফসীরে মাযহারী’’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

قد جاءكم من الله نور يعنى محمد صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: “তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে ‘নুর’ অর্থাৎ নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ্্,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন।”

আর হাদীছ শরীফেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূর’ বলা হয়েছে এবং অনুসরণীয় অনেকেই উনাদের নিজ নিজ কিতাবসমূহে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূর’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال ……. ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك ……

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ….. নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী উনার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। …..।” (মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, আফযালুল ক্বোরা, মুতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহিব, শরহে যুরক্বানী, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ, নশরুততীব)

ইমামুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহূর কিতাব “মাদারিজুন নুবুওওয়াত” কিতাবের ২য় খ-ের ২ পৃষ্ঠায় লিখেন-

در حديث صحيح وارد شد كه اول ما خلق الله نورى.

অর্থ: ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।

বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল মায়ানীর” লেখক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘নূর মুবারক’ প্রথম সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে লিখেন-

ولذا كان نوره صلى الله عليه وسلم اول الـمخلوقات ففى الخبر اول ما خلق الله تعالى نور نبيك يا جابر رضى الله تعالى عنه.

অর্থ: কেননা সকল মাখলূক্বাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলেন ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেমন- আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আপনার নবী উনার ‘নূর মুবারককে সৃষ্টি করেন।

আল্লামা আবুল হাসান বিন আব্দিল্লাহ আল বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন নাবিইয়িল মুহম্মদ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিতাবের ৫ম পৃষ্ঠায় লিখেন-

قال حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام كان الله ولا شىء معه فاول ما خلق الله نور حبيبه قبل ان يخلق الـماء  والعرش والكرسى واللوح والقلم والجنة والنار والحجاب

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শুধুমাত্র আল্লাহ পাক তিনিই ছিলেন, তখন অন্য কোন অস্তিত্বই উনার সাথে ছিল না। অতঃপর তিনি পানি, আরশ, কুরসী, লওহো, ক্বলম, জান্নাত, জাহান্নাম ও পর্দাসমূহ ইত্যাদি সৃষ্টি করার পূর্বে উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ এর অনেক আয়াত শরীফ-এ ও হাদীছ শরীফ-এ উল্লিখিত নূর শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক নূর বা নূরের তৈরী।

কাজেই, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।” তার এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও তাফসীর বির রায় হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত হলো। (চলবে)

 

মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম

আশাশুনী, সাতক্ষীরা।

সুওয়াল: পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে জশনে জুলুছ তথা রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করা সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কোনো বর্ণনা আছে কী?

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা কায়িনাতবাসীর জন্য বিশেষ করে সমস্ত জ্বিন ও ইনসানের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিভাষাটি আম বা সাধারণভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ বা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার চেয়ে বেশি ও বড় কোনো খুশি প্রকাশের বিষয় আর নেই। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশের বিষয়টিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম, সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসানের জন্য যে সমস্ত খুশির দিন বা খুশি প্রকাশের উপলক্ষ রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বড়, মহান ও শ্রেষ্ঠতম খুশি প্রকাশের উপলক্ষ হচ্ছে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। সুবহানাল্লাহ! কেননা উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সকলেই আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করেছিলেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

ولد من لولاه ما خلق الوجود ولا يصور والد ولا مولود ولد يوم الاثنين لاثنى عشر ليلة خلون من الربيع الاول فاصبحت بطحاء مكة ترقص طربا واهتز الـحرم فرحا عجبا واستبشرت اهل السموت بولادته وفازت امنة بسعادته وخرت الاصنام على رئوسها وايقنت الكهنة بـخزيها وبؤسها ونطق الضب برسالته واقر الذئب بنبوته وجلالته فله النسب الرفيع الـمشرف فهو محمد بن عبدالله ابن عبد الـمطلب ابن هاشم سيد بنى عدنان وخير ال حين ربى عند جده يتيما ورضع ثدى حليمة فصارا حليما فمن عظم ليلة مولده بـما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفا ئزين بدار السلام.

অর্থ: “বিলাদত শরীফ-এর দিনে এমন এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটেছে, যিনি না হলে কায়িনাতের কিছুই সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টি হতো না কোনো পিতার, না কোনো সন্তানের। সেই মহান নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন বা বিলাদত শরীফ-এর শুভক্ষণে খুশিতে আলোড়িত হয়েছিলো পবিত্র মক্কা শরীফ-এর কঙ্করময় মরুভূমি। মহা উল্লাস আর আনন্দ প্রকাশ করেছিল হারাম শরীফও। উনার বিলাদত শরীফ-এ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন আসমানের ফেরেশতাকুল। উনার সৌভাগ্যে ধন্য হন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম। উনার আগমনে খান খান হয়ে ভেঙে পড়েছিলো প্রতিমাগুলো। জ্যোতিষীরা বুঝতে পেরেছিলো তাদের লাঞ্ছনা ও দুর্ভাগ্য অনিবার্য। উনার রিসালাতের রহস্য জানিয়ে দিয়েছিলো গুঁইসাপ। উনার নুবুওওয়াত ও মহত্ত্বের কথা স্বীকার করেছিলো জঙ্গলের বাঘ। উনার বংশ অতি অভিজাত ও সম্মানিত। তিনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম বিন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম বিন হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম; যিনি ছিলেন আদনান গোত্রের সাইয়্যিদ। তিনি ইয়াতীম অবস্থায় স্বীয় দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কাছে সসম্মানে লালিত-পালিত হন। উনাকে দুধ মুবারক পান করান হযরত হালিমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম-তাকরীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে, সে চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (খুতবাতু ইবনু নুবাতা)

বিশ্ব সমাদৃত ‘আননি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পবিত্র দিনটি  আগমন করলো। শরীয়তে সূর্যাস্তের পর থেকে দিন শুরু হয় অর্থাৎ আগে রাত পরে দিন এসে থাকে। সে পবিত্র রাতটির অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ‘এটা ছিলো চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাত। চারপাশে কোন প্রকার অন্ধকার ছিলো না। সে সময় হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তান-সন্তুতিদের নিয়ে হারাম শরীফ-এর দিকে যান বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ভাঙা দেয়াল মেরামত করার জন্য। ফলে সে সময় আমার নিকট কোন নারী বা পুরুষ কেউই ছিলেন না। আমার নিঃসঙ্গতার জন্য কান্না পাচ্ছিলো। হায়! কোন মহিলাই আমার খিদমতে নেই। আমার জন্য কোন একান্ত সাথীও নেই, যিনি আমাকে সান্ত¡না দিবেন। কোন দাসীও নেই, যে আমার মনোবল অটুট রাখবে।’ অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমি তাকালাম বসত বাড়ির এক কোণায়। সহসাই তা উন্মোচিত হলো এবং চারজন সুউচ্চ মহিলা বের হয়ে এলেন।’

উক্ত চারজন মহীয়ষী এমন উজ্জ্বল ছিলেন যেনো উনারা চন্দ্র। উনাদের চারদিকে আলো আর আলো। আবদে মানাফ বংশের সহিত সাদৃশ্য রাখেন উনারা। অতঃপর উনাদের প্রথমজন এগিয়ে এলেন এবং তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছেন? আপনি যে রবীয়া ও মুদ্বার গোত্রের সাইয়্যিদ উনাকে রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন। অতঃপর তিনি আমার ডান দিকে বসলেন। তখন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম। মানবজাতির মাতা।’ অতঃপর দ্বিতীয়জন এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছেন? আপনিতো রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন পূতঃপবিত্র জ্ঞান-ভা-ারের রহস্য উনাকে, রত্মরাজির সাগর উনাকে, নূরের ঝলক উনাকে, সুস্পষ্ট তত্ত্বজ্ঞানী উনাকে। অতঃপর তিনি বাম দিকে উপবেশন করলেন। তখন আমি উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া হযরত সাররাহ আলাইহাস সালাম। অতঃপর তৃতীয়জন এগিয়ে এলেন এবং বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনারতো কোন তুলনাই হয় না। আপনি যে চিরপ্রত্যাশার হাবীব, হাবীবে খোদা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন, যিনি প্রশংসা ও ছানা-ছিফতের লক্ষ্যস্থল। অতঃপর তিনি আমার পিঠের দিকে বসলেন। আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত আছিয়াহ বিনতে মুসাহিম আলাইহাস সালাম।’ এরপর চতুর্থজন এগিয়ে এলেন। তিনি অন্যদের তুলনায় বেশি উজ্জ্বলতার অধিকারিণী ছিলেন। তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার সমকক্ষ কেউই নেই। আপনি রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন অকাট্য দলীলের অধিকারী সত্ত্বা উনাকে, যিনি মু’জিযা, আয়াত ও দালায়িলের অধিকারী। যিনি যমীন ও আসমানবাসীদের সাইয়্যিদ। উনার উপর আল্লাহ পাক উনার সর্বোত্তম ছলাত এবং পরিপূর্ণ সালাম। তারপর তিনি আমার নিকটে বসলেন আর আমাকে বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনি আমার উপর হেলান দিন। আমার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত র্মাইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। আমরা আপনার সেবিকা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণকারিণী।’

হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, উনাদের উপস্থিতিতে আমার একাকীত্ব দূর হলো। আর আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট দলে দলে আসছেন। আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, এখানে নানান ভাষায় বৈচিত্রপূর্ণ দুর্বোধ্য কথা আমি শুনতে পেলাম। আমি সে সময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার ডানে-বামে উড়ছেন। তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করলেন, হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! রূহসমূহকে ‘শারাবান তহূরা’ পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ করুন। হে হযরত রিদ্বওয়ান আালাইহিস সালাম! জান্নাতের নবোদ্ভিন্না যুবতীগণ উনাদেরকে নতুন সাজে সজ্জিত করুন। আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিন। সারা মাখলূক্বাতের যিনি শ্রেষ্ঠতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন উপলক্ষে।” হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! বিছিয়ে দিন নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহানতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, যিনি অধিকারী নূরের, উচ্চ মর্যাদার এবং মহা মিলনের। হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! দোযখের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশ্তা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করুন তিনি যেনো দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করেন। জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশ্তা হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেনো জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করেন। হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনার অনুরূপ পোশাক পরিধান করুন এবং যমীনের বুকে গমন করুন সুসজ্জিত হয়ে কাছের ও দূরের সকল ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহকারে। অতঃপর আসমান-যমীনের চারপাশে ঘোষণা দিন, সময় ঘনিয়ে এসেছে, মুহিব ও মাহবূব উনাদের মিলনের, ত্বালিব ও মাত্বলূব উনাদের সাক্ষাতের। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে মি’রাজ হবে তার সময় নিকটবর্তী হলো উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বাস্তবায়ন করলেন, যেমনটি আল্লাহ পাক জাল্লা শানূহূ তিনি হুকুম করলেন। এক জামায়াত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মক্কা শরীফ-এর পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা হারাম শরীফ-এর দিকে নজর রাখলেন। উনাদের পাখাসমূহ যেনো সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলো এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগলো। এ সবকিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুতাবিক হলো।

হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি আমার চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম, শাম দেশের বছরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আমি দেখলাম, তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফ-এর ছাদে। আমি আরো দেখলাম, পাখিদের একটি দল, যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্র্যময় রঙ-বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো মণিমুক্তার মতো। এরপর উক্ত পাখিগুলো আমার চারপাশে আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত করতে লাগলো। আমি উম্মীলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিলো ‘আগরদান’ স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর উনারা সুগন্ধি ধূম্র ছড়াচ্ছিলেন। সেইসাথে উনারা উচ্চকণ্ঠে মহাসম্মানিত ও মর্যাদাবান নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলেন। উনাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিলো।

হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো, তাঁবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সদৃশ্য মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিলো দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়, যা ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠা-া। তখন আমার খুব পিপাসা লাগছিল। আমি তা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোন সুপেয় পানীয় আগে কখনো পান করিনি। অতঃপর আমা হতে প্রকাশিত হলো এক মহিমান্বিত নূর। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালে স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি খুশি প্রকাশ করেন এবং উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশ্তাকুল আলাইহিমুস সালাম, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিলো বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাম ও তাসবীহ তাহলীল। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, বান্দা ও উম্মতের প্রতিও আল্লাহ পাক উনার সে একই নির্দেশ হলো যে, তারা যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।

যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান-

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون .

অর্র্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি যে স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত নেক আমল থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য জমা বা সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)

অতএব ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ বা প্রধান সেহেতু এই ঈদে সবচেয়ে বেশি খুশি প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ খুশি প্রকাশের শরয়ী যত রকম পদ্ধতি, তর্জ-তরীক্বা রয়েছে সে অনুযায়ী খুশি প্রকাশ করতে হবে। অত্যন্ত জওক-শওক, বিপুল-ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে এই মহানতম ঈদ উদযাপন করতে হবে বা খুশি প্রকাশ করতে হবে। এজন্য লোকজনকে একত্রিত করা, মজলিস-মাহফিলের আয়োজন করা, সামর্থ অনুযায়ী তবারুকের ব্যবস্থা করা এবং দেশ তথা বিশ্বব্যাপী মানুষকে জানানোর জন্য শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এমনকি পথঘাট, হাটবাজার, শহর, নগর, গ্রাম, মহল্লা সর্বত্র প্রচার প্রসার করা যেতে পারে। খুশি প্রকাশার্থে লোকজন দলবেঁধে রাস্তায় বের হয়ে তাকবীর ধ্বনি দেয়া, ছলাত-সালাম, হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, কাছীদা শরীফ পাঠ করা এসব অবশ্যই জায়িয তথা শরীয়তসম্মত। তবে খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে শরীয়তের খিলাফ কোন বিষয় যুক্ত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। যেমন- ছবি তোলা, ভিডিও করা, বেপর্দা হওয়া, ফটকা ফোটানো, রং ছিটানো, বাজনা বাজানো ইত্যাদি শরীয়ত বিরোধী কাজ। এসব শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

ولا تلبسوا الـحق بالباطل .

অর্থ: ‘তোমরা হককে নাহকের সাথে মিশ্রিত করো না।’ (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-৪২)

কাজেই, শরীয়ত বা ইসলামসম্মত কোনো কাজের সাথে অনৈসলামিক তথা বাতিল ধর্ম ও মতবাদের কোনো বিষয় মিশ্রণ করা সম্পূর্ণরূপে কবীরাহ ও কুফরী গুণাহ। এ থেকে বিরত থাকতে হবে।

মূলকথা হলো, শরীয়তসম্মত বিষয়গুলি শরীয়ত সম্মত নিয়ম বা পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করতে হবে। যদি দেখা যায়, শরীয়তসম্মত কোন বিষয় পালন করতে গিয়ে হারাম ও কুফরী বিষয়ের সম্মুখীন বা বাধ্য হতে হয় তাহলে সে পদ্ধতি ও তর্জ-তরীক্বা বাদ দিয়ে যে নিয়মে বা পদ্ধতিতে পালন করলে হারাম ও কুফরী বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় না বা বাধ্য হতে হয় না সে পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন অবস্থাতেই হারাম ও কুফরীর চর্চা বা আমল করা যাবে না। শুধু সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপনের ক্ষেত্রেই নয় সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব আমল করার ক্ষেত্রে একই হুকুম।

উদাহরণস্বরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা ফরয। বিপরীত পক্ষে বাদ্য-বাজনা, ঢোল-তবলা বাজানো, বিধর্মী-বিজাতীয়দের রসম-রেওয়াজ; যা হারাম ও কুফরী। সুতরাং, বাদ্য বাজনা বা ঢোল-তবলা বাজিয়ে যিকির করা যেরূপ জায়িয নেই; বরং জায়িয মনে করা কুফরী। ঠিক ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের নামে জসনে জুলুছ করে রাস্তায় মিছিল বের করে ছবি তোলা, ভিডিও করা, বেপর্দা হওয়া সেটা শুধু নাজায়িয ও হারামই নয় বরং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ শরীয়তবিরোধী কঠিন হারাম ও কুফরী কাজ থেকে বেঁচে থাকা মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

 

মুহম্মদ

রাশেদুল ইসলাম, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: জনৈক মৌলভী ছাহেবের লিখিত এক ফতওয়ায় দেখতে পেলাম, জানাযা নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করা নাকি শরীয়ত পরিপন্থী। আর মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার নামাযই নাকি একমাত্র সম্মিলিতভাবে দোয়া, এছাড়া মৃত ব্যক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে কোন দোয়া নেই।

এ ব্যাপারে সঠিক জাওয়াব জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। কোন মুসলমান কোন আমল করতে চাইলে তাকে এ চারটি দলীল মুতাবিক আমল করতে হবে। মনগড়া আমল করার সুযোগ মুসলমানের নেই। এখন আমল করতে হলে মুসলমানকে জানতে হবে। যদি না জানে তাহলে কিভাবে আমল করবে? সেজন্য যারা সাধারণ মুসলমান তারা জানার জন্য মুফতী, মাওলানা, মসজিদের ইমাম-খতীব, মাদরাসার মুহতামিম, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়ে থাকে। আর এসব ব্যক্তিবর্গ নিজেদের মান-মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার জন্য জিজ্ঞাসিত অনেক বিষয়েই মনগড়াভাবে উত্তর বা ফতওয়া দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ এ ব্যাপারে শরীয়তে কঠোর নিষেধ রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

من افتى بغير علم كان اثـمه على من افتاه

অর্থ: যাকে ইলিম ব্যতীত (মনগড়া) ফতওয়া দেয়া হলো (সে ব্যক্তি মনগড়া ফতওয়া অনুযায়ী আমল করার কারণে যত গুনাহ হবে) তার সমুদয় গুনাহ ফতওয়া দানকারীর উপর বর্তাবে। (মিশকাত শরীফ)

কাজেই, যারা মাসয়ালা বা ফতওয়া দিবে তাদেরকে ফতওয়ার স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে দলীল পেশ করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন-

هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে দলীল পেশ করো।

অর্থাৎ ফতওয়াদাতার জন্য করণীয় হচ্ছে, শরীয়তের উক্ত দলীল চতুষ্ঠয়ের ভিত্তিতে মাসয়ালা বা ফতওয়া প্রদান করা। অন্যথায় তা আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না।

একইভাবে যারা কোন বিষয়ে মাসয়ালা বা ফতওয়া জানতে চাইবে তাদের জন্যও করণীয় রয়েছে। যার তার কাছে জানতে চাওয়া জায়িয নেই। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون

অর্থ: তোমরা যদি না জান তাহলে যারা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকট জিজ্ঞেস করো।

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم

অর্থ: নিশ্চয়ই এই (কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর) ইলিমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং তোমরা কার নিকট থেকে ইলিম গ্রহণ করছো তাকে দেখে নাও অর্থাৎ তার আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ কি-না তা যাচাই বাছাই করো। (মিশকাত শরীফ)

বুঝা গেল, মাওলানা, মুফতী, ইমাম-খতীব, মুহতামিম, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ ইত্যাদি হলেই তাদেরকে মাসয়ালা-মাসায়িল বা ফতওয়া জিজ্ঞেস করা যাবে না। জিজ্ঞেস করতে হবে শুধু এমন ব্যক্তিগণকে যাঁদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ রয়েছে। কারণ যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নেই তারা শুদ্ধ ফতওয়া দিতে পারে না। তার উদাহরণ হচ্ছে অত্র সুওয়ালে উল্লিখিত মৌলভী ছাহেব এবং তার প্রদত্ব ফতওয়া।

কেননা, যেখানে জানাযা নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করা শরীয়তসম্মত সেখানে সুওয়ালে উল্লেখিত মৌলভী ছাহেব দোয়া করাকে শরীয়তপরিপন্থী বলে ফতওয়া দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

স্মরণীয় যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা কেবল জায়িযই নয়; সুন্নতও বটে। যার স্বপক্ষে শত শত দলীল রয়েছে। যা বর্তমান যামানায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১০১ থেকে ১১১ পর্যন্ত মোট ১১টি সংখ্যায় প্রকাশিত ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে কতিপয় নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহর কিতাবের নাম ও ইবারতের অর্থ উল্লেখ করা হলো-

যেমন ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা ও নূরুল হিদায়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ‘মাঊনা’ নামক স্থানে মিলিত হলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে বসলেন। তখন উনাার কাছে শাম দেশের (মুতার যুদ্ধের) অবস্থা স্পষ্ট প্রকাশিত হচ্ছিল। তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যুদ্ধের অবস্থা দেখতে ছিলেন। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, (যুদ্ধে) হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন, অতঃপর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। তাই তিনি উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, আপনারাও উনার জন ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি জান্নাতে চলে গেছেন, আর তা খুবই দ্রুত। হযরত জা’ফর ইবনে আবু ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন অতঃপর তিনিও শহীদ হয়ে গেলেন। তাই, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, আপনারাও উনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি তাড়াতাড়ি জান্নাতে চলে গেছেন এবং সেখানে দু’টি ডানা নিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়বেন।”

আল্ মাবসূত লিস্ সারাখসী ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত। উনাদের দু’জনের একদা জানাযা নামায ফউত হলো। যখন উনারা (নামাযের পর মাইয়্যিতের কাছে) উপস্থিত হলেন তখন মাইয়িতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।”

মীযানুল্ কুবরা লিশ্ শা’রানী কিতাবে উল্লেখ আছে, “হযরত আবূ হানীফা আছ ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, দাফনের পরে নয় বরং দাফনের আগে সমবেদনা জ্ঞাপন করা সুন্নত। কেননা, দাফনের আগে বিরহ-বেদনা অনেক বেশি থাকে। তাই, (দাফনের পূর্বে) শোক প্রকাশ করবে এবং মাইয়িতের জন্য দোয়া করবে।”

আল বাহরুর রায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব ২য় জিঃ ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত ফযলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, জানাযা নামাযের সালামের পর দোয়া করতে কোন অসুবিধা নেই।”

ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব ত্বহত্বাবীতে উল্লেখ আছে, “যখন হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন, তখন দাফন মুবারক-এর আগে উনার জন্য সত্তর হাজার বার কুরআন শরীফ খতম করা হয়।”

নাহরুল ফায়িক্ব শরহে কান্যুদ্ দাকায়িক্ব কিতাবে উল্লেখ আছে, “জানাযা নামাযের পর পড়বে, “আয় আল্লাহ পাক! ইন্তিকাল জনিত কারণে ধৈর্য্য ধারণের ছওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। আর ইন্তিকালের পর  আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। আর আমাদের ও তার (মৃত ব্যক্তির) গুণাহ্খতা ক্ষমা করুন।”

কাশফুল হাক্বায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক ১ম জিঃ ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কতক হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম জানাযা নামাযের সালামের পর এ দোয়া পড়ার কথা লিখেছেন, “আয় আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে এবং আখিরাতের মধ্যে কল্যাণ দান করুন। আর আপনার রহমতের দ্বারা আমাদেরকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”

যাদুল আখিরাহ ৯ম বাব ১১২ পৃষ্ঠা এবং হাদিয়াতুল মুছাল্লীন ১১২ ও ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কোন কোন রিওয়ায়েতে রয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানাযা নামায পড়ে এ দোয়া করেছেন, “আয় আল্লাহ পাক! অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে। আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী। অতএব, আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব শরহে বরযখে উল্লেখ আছে, “জানাযা উঠিয়ে নেয়া ও দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযা নামাযের পরে মাইয়িতের জন্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও মুনাজাত করা আখিরাতের কঠিন অবস্থা এবং কবর আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়ার বিশেষ কারণ।”

তুহফাতুল গাফিলীন ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “মাইয়িতের জন্য দোয়া করার উত্তম পদ্ধতি হলো, দাফন করার পূর্বে যতটুকু সম্ভব হয় দোয়া, দুরূদ, তাসবীহ, সূরা, ক্বিরায়াত পাঠ করে বখশিয়ে দেয়া।”

জাওয়াহিরুন্ নাফীস শরহে দুররুল ক্বায়িস ১৩২ পৃষ্ঠা ও নাফিউল মুসলিমীন কিতাবে উল্লেখ আছে, “নাফিউল মুসলিমীন” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মাইয়িতের জন্য দাফনের পূর্বে (অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর) উভয় হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয।”

কাশফ্লু গিত্বা, খুলাছাতুল্ ফাত্হ্ কিতাবে উল্লেখ আছে, “দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযার পর মাইয়িতের জন্য ফাতিহা পাঠ ও দোয়া করা জায়িয। এ রিওয়ায়েত অনুযায়ী আমল করা হয়েছে। ‘খুলাছাতুল ফাত্হ’ নামক কিতাবে অনুরূপ আছে।

ফাতাওয়ায়ে নায়ীমিয়াহ্ ১২৫,১২৬ পৃষ্ঠা কিতাবে উল্লেখ আছে, “প্রশ্নঃ আমাদের জালালপুরে এক মুহাজির মৌলভী ছাহেব বলেন যে, …. “জানাযা নামাযের পর দোয়া করা হারাম।”- এ ব্যাপারে উলামায়ে দ্বীন কি বলেন? জবাবঃ উল্লিখিত মৌলভী ছাহেবের উক্ত বক্তব্য ভুল এবং ভিত্তিহীন। জানাযা নামাযের পর খতম, ফাতিহা ও দোয়া পাঠ ইত্যাদি করা উত্তম কাজ। এরূপ আমলকারী ছাওয়াবের উপযুক্ত।”

খাইরুল ফতওয়া ৩য় জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “নামাযে জানাযা-এর কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয আছে। তবে ফরয, ওয়াজিব নয়। হাদীছ শরীফে আছে, অর্থাৎ যখন তোমরা মাইয়িতের উদ্দেশ্যে নামায পড় তখন তার জন্য ইখলাছের সাথে দোয়া করো।”

আল্লামা সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাবসূত’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “আপনারা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছেন, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হবেন না।”

নিশ্চয়ই জানাযার পর দোয়া তরককারীকে তিরস্কার বা নিন্দা করা যাবেনা। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াকে বিদয়াত কিংবা খিলাফে শরা’ বলবে, সে ব্যক্তি তিরস্কার বা নিন্দার পাত্র হবে।”

ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৫ম জিঃ ৪৩৪, ৪৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযা নামাযের পর ঈছালে ছওয়াব প্রসঙ্গেঃ সুওয়াল (৩১৩৪)ঃ জানাযা নামাযের পর দাফনের পূর্বে কতক মুছল্লী (মৃতের প্রতি) ছওয়াব রেসানী করার জন্য অল্প আওয়াজে একবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাছ পড়া এবং জানাযা নামাযের ইমাম অথবা কোন নেক লোকের জন্যে (জানাযা নামাযের পরে) উভয় হাত উঠিয়ে সংক্ষিপ্ত  মুনাজাত করা শরীয়তে জায়িয কিনা?  জাওয়াবঃ এরূপ পদ্ধতিতে মুনাজাত করাতে কোন দোষ নেই।…।”

নাফউল মুফতী ওয়াসায়িল ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  “হযরত মুহম্মদ ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি জানাযা নামাযের পর দোয়া করে তাতে কোন অসুবিধা নেই।”

কিফায়াতুল মুফতী ৪র্থ জিঃ ৭৪, ৭৫ ও ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযা নামায পড়ার পর যদি লোকেরা পৃথক পৃথকভাবে মুনাজাত করে তবে কোন ক্ষতি নেই এবং তা জায়িয।”

উল্লেখ্য, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ ছাহেব যদিও অজ্ঞতার কারণে ইজতিমায়ী দোয়াকে ও হাত উঠানোকে অস্বীকার করেছে, কিন্তু জানাযার পর দোয়া করাকে ঠিকই জায়িয বলেছে।

ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযার পর দোয়া করতে হলে কাতার ভেঙ্গে করবে”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, নির্ভরযোগ্য বহু ফিক্বাহর কিতাবেই “জানাযার পর দোয়া করাকে জায়িয বলা হয়েছে।” শুধু তাই নয় মুনাজাত বিরোধী দেওবন্দীদের কিতাবেও “জানাযার পর দোয়াকে জায়িয” বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোন কোন ফিক্বাহর কিতাবে জানাযা নামাযের সালামের পর দোয়া করাকে মাকরূহ লিখা হয়েছে এটা সত্য কথাই, তবে তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা যেখানে হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানাযার পর দোয়া করেছেন” সেখানে ইমামগণ সেটাকে মাকরূহ বলতে পারেন না, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, ইমামগণ হাদীছ শরীফ-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ। ইহা চিন্তাও করা যায়না। প্রকৃতপক্ষে ফিক্বাহর যেসকল কিতাবে জানাযার পর দোয়াকে মাকরূহ বলা হয়েছে তার ব্যাখ্যামূলক জাওয়াব হলো- “সালামের পর নামাযের কাতারে থেকে দোয়া করা মাকরূহ। কেননা যদি কাতারে থেকে দোয়া করা হয়, তবে সাধারণ লোক মনে করতে পারে যে, দোয়াটি নামাযেরই একটি অংশ। সাধারণ লোক যেনো বিভ্রান্তিতে না পড়ে সেজন্য ফক্বীহগণ সালামের পর পরই কাতারে থেকে দোয়া করাকে মাকরূহ বলেছেন। যা ফিক্বাহর কিতাবের ইবারত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। যেমন ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িক”-এর ২য় জিঃ ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযা নামাযের সালাম ফিরানোর পর দোয়া করবে না।

ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “কিনইয়াহ”-এর ১ম জিঃ ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, জানাযা নামাযের পর কোন লোক (কাতারে) দাঁড়িয়ে থেকে দোয়া করবেনা।

মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মিরকাত শরীফ”-এর ২য় জিঃ ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযা নামায শেষ করার পর পরই মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করবেনা। কেননা এতে (সাধারণ লোক মনে করতে পারে যে) জানাযার নামাযে অতিরিক্ত করা হয়েছে।”

উল্লিখিত কিতাবের ইবারত দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, সালামের পর পরই কাতারে থেকে দোয়া করলে সাধারণ লোক এটাকে জানাযার অতিরিক্ত একটি অংশ মনে করতে পারে; যার কারণে ফক্বীহগণ এটাকে মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু সালামের পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা ফক্বীহগণের মতে মাকরূহ নয়। কেননা এতে সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ার কোন অবকাশ নেই।

এর প্রমাণ বা উদাহরণ আমরা ফিক্বাহর কিতাবসমূহে অন্যান্য মাসয়ালার ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। যেমন ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ আছে, “জামায়াতে নামায আদায় করার পর ইমাম ছাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয পড়েছেন, সে স্থানে দাঁড়িয়ে সুন্নত আদায় করা মাকরূহ। কেননা এতে সাধারণ লোক মনে করতে পারে যে, জামায়াত তখনও চলছে বা শেষ হয় নাই। তাই ইমাম ছাহেব সামনে বা পিছনে, একটু ডানে-বামে সরে সুন্নত আদায় করবেন। তাহলে সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ার অবকাশ থাকবে না।

ফক্বীহগণ এর উপর ক্বিয়াস করেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে এবং মাইয়িত থেকে একটু সরে গিয়ে দোয়া করা জায়িয, মাকরূহ নয়। কেননা এতে বিভ্রান্তিতে পড়ার কোনই অবকাশ নেই।

ফক্বীহগণ জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করাকে যে জায়িয বলেছেন নিম্নে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-

হিজরী চৌদ্দশত শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম, ফক্বীহুল উম্মত, মুজাহিদে আ’যম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতেন এবং উনার বিখ্যাত “মত-পথ” নামক কিতাবে তা জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

খাইরুল ফাতাওয়া ৩য় জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “নামাযে জানাযা-এর কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয আছে।

ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “জানাযার পর দোয়া করতে হলে কাতার ভেঙ্গে করবে।”

ফক্বীহগণের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, কাতার ভঙ্গ করে জানাযার পর মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয। এটাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় ফক্বীহ ও ইমামগণের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।

আরো উল্লেখ্য, “মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার নামাযই একমাত্র সম্মিলিত দোয়া” সুওয়ালে উল্লিখিত মৌলভী ছাহেবের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ। কারণ শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ বা ফতওয়ার কিতাবসমূহে জানাযাকে ছলাত বা নামায বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই জানাযাকে দোয়া বলা চরম অজ্ঞতা ও গোমরাহী বৈ কিছু নয়।

মূলত: ছলাতুল জানাযা বা জানাযা নামায হচ্ছে ঐ নামায যা মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পড়া হয়। কাজেই, মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত বা দোয়ার উদ্দেশ্যে পড়া হয় বলে ইহাকে দোয়া বলার কোনই সুযোগ নেই। কেননা স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম কুরআন শরীফ-এ জানাযাকে ছলাত বা নামায বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন-

صل عليهم ان صلوتك سكن لـهم

অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাঁদের (মু’মিনগণের) উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়ুন। নিশ্চয়ই আপনার “ছলাত বা নামায” তাদের জন্য শান্তির কারণ।” (সূরা তাওবা: আয়াত শরীফ ১০৩)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

ولا تصل على احد منهم مات ابدا ولاتقم على قبره.

অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদের (মুনাফিকদের) মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনো “ছলাত বা নামায”(জানাযা) পড়বেন না এবং তাদের কবরের পার্শ্বে দাঁড়াবেন না।” (সূরা তাওবা: আয়াত শরীফ ৮৪)

অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে জানাযাকে ছলাত বা নামায বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন-

صلوا على صاحبكم

অর্থ: তোমরা তোমাদের সাথীগণের (মু’মিন-মুসলমান ভাইদের) উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

اذا صليتم على الـميت فاخلصوا له الدعاء

যখন তোমরা মাইয়িতের উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” পড়বে তখন তার জন্য ইখলাছের সাথে দোয়া করবে।” (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ১০০ পৃষ্ঠা)

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ যেহেতু জানাযাকে “ছলাত বা নামায” বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাই অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারাও উনাদের স্ব-স্ব কিতাবে জানাযাকে “ছলাত বা নামায” বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন উল্লেখ রয়েছে-

الصلاة على الجنازة فرض الكفاية

অর্থ: “জানাযা নামায ফরযে কিফায়াহ।” (আল ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ ১ম জিঃ ১৬২ পৃষ্ঠা, আত্ তাতারখানিয়াহ্, শরহু বিকায়াহ ১ম জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, শরহুন্ নিকায়াহ ১ম জিঃ ৩১৫ পৃষ্ঠা, আল্ মিছবাহুন্ নূরী ৫৩ পৃষ্ঠা, আল্ বিনায়াহ ফী শরহিল্ হিদায়াহ ৩য় জিঃ ২৩৯ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ৮০ পৃষ্ঠা)

স্মরণীয় যে, কোন বিষয়ে সঠিক ফতওয়া দিতে হলে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে দলীল পেশ করতে হবে। তবে যার ফতওয়ার স্বপক্ষে দলীল বেশি থাকবে সে ফতওয়াই সঠিক বলে গণ্য হবে এবং  সে মুতাবিকই আমল করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر ذلك خير واحسن تأويلا

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে (উলিল আমরগণের মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেশি অনুগত বা যার মতের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল-আদিল্লাহ বেশি রয়েছে উনাকে বা উনার মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বীল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৫৯)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে কিতাবের ইবারতসহ বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১০১ থেকে ১১১তম সংখ্যা পর্যন্ত সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহর ভিত্তিতে ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।

 

কাজী মুহম্মদ গোলাম হাক্কানী

কোড্ডা, বি-বাড়িয়া

 

সুওয়াল: মিহরাব কাকে বলে? মসজিদের মিহরাব কোন যুগে আরম্ভ হয়েছে? বর্তমানে কি মিহরাবের প্রয়োজন রয়েছে?

সুওয়াল: মিহরাব (محراب) শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ হলো যুদ্ধাস্ত্র রাখার স্থান। পারিভাষিক অর্থ হলো, মসজিদের সামনের বা প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর যে স্থানে দাঁড়িয়ে ইমাম ছাহেব ইমামতি করেন, সে স্থানটিকে মিহরাব বলা হয়। মিহরাবের বিষয়টি মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

খলীফা হযরত উমর ইবনুল আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতের সময় অর্থাৎ ১০০ হিজরী সনে মিহরাবের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাটুকু আলাদাভাবে নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়। তখন থেকে সাধারণভাবে উক্ত নিয়মে অর্থাৎ মিহরাবসহ মসজিদ নির্মিত হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, মসজিদের আরম্ভ যখন থেকে মিহরাবের আরম্ভও তখন থেকেই।

স্মরণীয় যে, ঘরের সাথে যেরূপ দরজা-জানালার সম্পর্ক তদ্রƒপ মসজিদের সাথে সম্পর্ক হচ্ছে মিহরাব ও মিম্বরের। অর্থাৎ মসজিদের সাথে মিহরাব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

কাজেই, মিহরাবের প্রয়োজন থাকার অর্থ হচ্ছে মসজিদের প্রয়োজন থাকা। আর তা যেমন অতীতে ছিল, বর্তমানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

দলীল: আলমগীরী, শামী, দুররুল  মুখতার, আইনুল হিদায়া, আহকামুল কুরআন, কুরতুবী, তাওয়ারিখে মাদীনাতুন নবী, মাদারিজুন নুবুওয়াত, সীরাতে হালবিয়া ইত্যাদি।

মুহম্মদ ফারুকুর রহমান

সদর, বরিশাল

সুওয়াল: (১) শবে বরাত কি? (২) এ সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কোন বর্ণনা আছে কি? (৩) অনেকে শ’বে বরাত উদযাপনকে বিদয়াত  ও নাজায়িয বলে থাকে। তারা কারণ স্বরূপ বলে থাকে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও শবে বরাতের উল্লেখ নেই। আসলে কি তাই? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (১) শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’

(২) ‘শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরাত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক।

স্মর্তব্য যে, কুরআন শরীফ-এর ভাষায় ‘শবে বরাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم. امرا من عندنا انا كنا مرسلين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজ গুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান-৩, ৪, ৫)

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينـزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক-উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফে বরাতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।

অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখান-এর উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ….” আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরায়ে ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে।

মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক যে ‘সূরা দুখান’-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”

আর ‘সূরা ক্বদরে’ যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।”

এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।”

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরাতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন।

এজন্যে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ليلة التجويز  অর্থাৎ ‘ফায়সালার  রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ليلة التنفيذ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।”

হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فيها ان يكتب كل مولود  من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالـهم وفيها تنزل ارزاقهم.

অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)

কাজেই, আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “সূরা দুখান-এর” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে।

(৩) বরাতের রাত উদযাপন বা উক্ত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া-ইস্তিগফার ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে রয়েছে।

যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সারাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

কাজেই শবে বরাত উদ্যাপন করা বা উক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এরই নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত। এটা মোটেও বিদয়াত ও নাজায়িয নয়। বরং সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

বি: দ্র: পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ১৯৫ থেকে ২১৩তম সংখ্যায় অর্থাৎ মোট ১৯টি সংখ্যায় ৩৮৬টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে উল্লিখিত ফতওয়া পাঠ করুন।

{দলীলসমূহ: (১) সূরা দুখান (২) তাফসীরে দুররে মনছূর, (৩) কুরতুবী, (৪) মাযহারী, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাজাহ, (৭) বায়হাক্বী, (৮) মিশকাত, (৯) মিরকাত, (১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত, (১২) ত্বীবী, (১৩) তালীক্ব, (১৪) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ আব্দুল কাদির

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  শবে বরাতকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষেরা আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা জায়িয আছে কি-না?

জাওয়াব: শবে বরাতে আলোকসজ্জা ও আতশবাজি করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রীক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে রূপ লাভ করে, যা শেষ পর্যন্ত দেয়ালী পূজা নামে মশহূর হয়। আলোকসজ্জা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে যা প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামের শেয়ার বা তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আতশবাজিও দ্বীন ইসলামের কোন শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজিও হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত। তাই মুসলমানের জন্য এসব করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (আহমদ, আবূ দাউদ)

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো হিন্দুস্তানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-উনার ওলী ছিলেন। যিনি ইনতিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন?” আল্লাহ পাক-উনার ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইনতিকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা উনাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন”? হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমরা উনাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শুনে আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “উনাকে এখান থেকে নিয়ে যান, উনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ। কেননা তিনি পুজা করেছেন। আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বলেন, এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তখন আমি আল্লাহ পাক-উনার নিকট আরজু পেশ করলাম, “আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সবসময় আপনার এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনো ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “আপনি সেই দিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন হিন্দুস্তানে হোলি পুজা হচ্ছিলো। আপনার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিলো যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন আপনি পান চিবাচ্ছিলেন, আপনি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, “হে গর্দভ! তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি এই হোলি পুজার দিনে, আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি আপনার পুজা করা হয়নি? আপনি কি জানেন না?”

من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” কাজেই, “আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ।”

যখন আল্লাহ পাক এ কথা বললেন তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি, আমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ আপনাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।”

কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু শবে বরাতকেই কেন্দ্র করে নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজি ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি বিধর্মী বিজাতীয়দের কোন  আমল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। {দলীলসমূহ ঃ- (১) আহমদ, (২) আবূ দাউদ, (৩) বযলুল মাজহূদ, (৪) আউনুল মা’বূদ, (৫) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (৬) গ্রীক জাতির ইতিহাস, (৭) হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ মিজানুর রহমান

ফরিদগঞ্জ

 

সুওয়াল:  শবে বরাতে কি আমল করতে হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য।

শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে।

যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لـمشرك او مشاحن

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ, আহমদ, মিশকাত)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক বান্দাকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।

বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-

বরাতের নামায

শবে বরাতে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।

ছলাতুত তাসবীহ নামায

অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ-এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।

তাহাজ্জুদ নামায

অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য হাছিল হয়।

কুরআন শরীফ তিলাওয়াত

কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।

মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ

মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

যিকির-আযকার

যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

কবর যিয়ারত

কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।

দান-ছদকা

গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।

হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো

উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।

এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الـجنة بسلام.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী)

তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

দোয়া-ইস্তিগফার

মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শ’বে বরাতের বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।

স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ েছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حتى يطلع الفجر

অর্থ: “ফজর বা ছুবহ্ িছাদিক পর্যন্ত আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।”

অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা। {দলীলসমূহ ঃ- (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক,  (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ জাহিদুর রহমান

সদর, রংপুর

সুওয়াল:  “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের ফযীলত ও নিয়ম জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব:  “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের বহু ফযীলত হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد الـمطلب يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذلك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديـمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات … ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لـم تفعل ففى كل جمعة مرة فان لـم تفعل ففى كل سنة مرة فان لـم تفعل ففى عمرك مرة.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার পিতা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, ‘হে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ-এর) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। …. যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর, তিরমিযী, মিশকাত)

আর ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ নামাযের নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।

এখানে আমাদের হানাফী মাযহাব-এর নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-

প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ-এর চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”

অতঃপর তাকবীরে তাহ্রীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে-

سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر

উচ্চারণ: “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”

অতঃপর সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০বার, রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০বার, রুকু থেকে উঠে (ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০বার, অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০বার, সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে (জলসায়) বসে ১০বার, অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ  পাঠ করবে।

অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।

জরুরী মাসয়ালা

ছলাতুত তাসবীহ নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলী টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে।

কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমায় ও জলসায় উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমন, সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।

{দলীলসমূহ ঃ- (১) আবূ দাউদ, (২) ইবনে মাজাহ্, (৩) বায়হাক্বী, (৪) তিরমিযী, (৫) মিশকাত, (৬) বযলুল মাজহুদ, (৭) আওনুল মা’বুদ, (৮) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, (৯) মা’য়ারিফুস্ সুনান, (১০) মিরকাত, (১১) লুময়াত, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তা’লীকুছ ছবীহ্, (১৫) মুজাহিরে হক্ব, (১৬) ফতহুল ক্বাদীর, (১৭) বাহরুর রায়েক, (১৮) মারাকিউল ফালাহ্, (১৯) আলমগীরী, (২০) শরহে বিক্বায়া, (২১) হিদায়া, (২২) আইনুল হিদায়া ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম

কাজলা, ঢাকা।

সুওয়াল:  শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করা শরীয়ত সম্মত কি-না?

জাওয়াব: শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্রি। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত্র বা নাজাতের রাত্র।

এ রাতে ওয়াজ-নছীহত করার আদেশও নেই। আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দোয়া কবুল করার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন আখিরী রসূল, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر الـمباركة وليلتا العيدين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন যে-

ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريم.

অর্থ: “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র।”

কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের রাতের ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয ও প্রয়োজন। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দোয়া মুনাজাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ।

আর সুন্নতের খিলাফ কাজ করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।

মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘœ ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণরূপেই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

{দলীলসমূহ ঃ- (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মাআনী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, (৭) ইবনে মাজাহ, (৮) মিশকাত, (৯) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিকুছ ছবীহ, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ তারেক

স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সুওয়াল: মাসিক  রাহমানী পয়গাম পত্রিকার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, শবে বরাআতে ভাল খানার ইন্তিজামের কথা কোন ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ পাওয়া যায়না। সুতরাং এটাকে শরী’য়াতের নির্দেশ মনে করে করা যাবে না। তবে যে কোনসময় যেহেতু ভাল খানা খাওয়া জায়িয, সে হিসাবে ঐ রাতেও খেতে পারে। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ এলাকায় শবে বারাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে এবং সেটাকে সওয়াবের কাজ মনে করে। অথচ এটা শরী’আতের নির্দেশ নয়। সুতরাং তা পরিত্যাজ্য।

এখন আমার সুওয়াল হলো- শ’বে বরাতের হালুয়া-রুটি সম্পর্কে রাহমানী পয়গাম পত্রিকার উক্ত জবাব সঠিক হয়েছে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মাসিক রাহমানী পয়গামের  উক্ত জিজ্ঞাসার জবাব শুদ্ধ নয়। তা অজ্ঞতাসূচক হয়েছে।  তাদের জবাবের মধ্যে স্ববিরোধী বক্তব্য রয়েছে। তারা বলেছে- “শবে বরাতে ভাল খানার ইন্তিজামের কথা ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ পাওয়া যায় না। সুতরাং এটাকে শরীয়তের নির্দেশ মনে করা যাবে না।”

হ্যাঁ, খাছ করে শ’বে বরাতে খাদ্য খাওয়ানোর নির্দেশ শরীয়তে নেই। যদি থাকতো তাহলে সেটা ফরজ-ওয়াজিব হয়ে যেত। তবে আমভাবে সারা বৎসরের যে কোন সময়ই মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো জায়িয রয়েছে। শুধু জায়িযই নয় বরং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশও রয়েছে। যা তাদের জবাবে তারা লিখেছে “যে কোন সময় যেহেতু ভাল খানা খাওয়া জায়িয সেহেতু ঐ রাত্রেও খেতে পারে।”

অথচ এরপরেই তারা স্ববিরোধী বক্তব্য পেশ করেছে- “শবে বরাতে হালুয়া-রুটি তৈরী করে এবং সেটাকে ছওয়াবের কাজ মনে করে। অথচ এটা শরীয়তের নির্দেশ নয়। সুতরাং তা পরিতাজ্য।” উল্লেখ্য শরীয়তের ভাষায় পরিতাজ্য তাকেই বলে যা করা যাবে না অর্থাৎ তা জায়িয নয়। অথচ তারা পূর্বে বলেছে- “যে কোন সময় ভাল খানা খাওয়ানো জায়িয আছে।”

তাহলে শ’বে বরাতে কেন ভাল খানা খাওয়ানো জায়িয থাকবে না? তা অবশ্যই জায়িয রয়েছে। আর যে কাজ জায়িয রয়েছে তাতে কেন ছওয়াব হবে না? তাহলে কি মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো গুণাহর কাজ? নাঊযুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গতঃ একটি হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা যায়- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যদি কেউ তার স্ত্রীর কাছে যায় তবে তার ছওয়াব হবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, কেন ছওয়াব হবে ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কারণ সেতো তার নিজস্ব প্রয়োজনেই যায়।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সে যদি তার স্ত্রীর কাছে না গিয়ে অন্য কোন মহিলার কাছে যেত, তাহলে কি তার গুণাহ হত না? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বললেন, জি তাই।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে সেক্ষেত্রে গুণাহ হলে নিজ স্ত্রীর কাছে গেলে ছওয়াব হবে না কেন।

তদ্রুপ শ’বে বরাতে খাদ্য তৈরি সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আদেশ না থাকলেও যেহেতু নিষেধ নেই আর মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো যেহেতু ছওয়াবের কাজ তাহলে তা ছওয়াবের কাজ হবে না কেন?

প্রকৃতপক্ষে মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো গুণাহর কাজ তো নয়ই বরং অনেক ছওয়াবের কাজ।

তারা বলেছে- “এটা শরীয়তের নির্দেশ নয়।”

হ্যাঁ, এটা শরীয়তের নির্দেশ নয়। যদি শরীয়তের নির্দেশ থাকতো তাহলে এটা ফরজ-ওয়াজিব হয়ে যেত। তবে তা সম্পূর্ণ জায়িয ও ছওয়াবের কাজ। প্রকৃতপক্ষে তাদের বক্তব্য তাদের কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহাম বা  বা কম ইল্ম, কম বুঝেরই বহিঃপ্রকাশ।

কারণ হাদীছ শরীফে শ’বে বরাতে বা  বরাতের রাত্রিতে রাত্রি যাপন করে ইবাদত-বন্দেগী করার যেমন নির্দেশ রয়েছে অনুরূপ দিনে রোযা রাখারও নির্দেশ রয়েছে। উক্ত রোযা রাখাকে উপলক্ষ্য করেই বরাতের রাত্রিতে খাবারের প্রচলন শুরু হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

শ’বে  বরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি হালুয়ার ব্যপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হেটেল-রেস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলনা। তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুছাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতো। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের ছফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও শরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ শ’বে বরাতে যখন উল্লেখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লেখ স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগন খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।

এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধানখাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শ’বে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শ’বে বরাত উপলক্ষ্যে রছম-রেওয়াজ করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই বিদ্য়াত, বদ রছম ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয হবে।

আর যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই শরীয়তসম্মত হবে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,  হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সহিত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারিমী)

তিনি আরো ইরশাদ করেন,  হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, সালামের প্রচলন কর তাহলে শান্তির সহিত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)

তিনি আরো ইরশাদ করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইশাদ করেন, “যে মুসলমান অপর কোন মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় কাপড় পরিধান করাবে মহান আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন।

আর যে মুসলমান কোন মুসলমানকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য খাওয়াবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত থেকে ফল খাওয়াবেন। আর যে মুসলমান কোন মুসলমানকে পিপাসিত অবস্থায় পানি পান করাবে আল্লাহ পাক তাকে মহরাঙ্কিত বিশুদ্ধ পানীয় থেকে পানি পান করাবেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহে এবং অনুরূপ বর্ণিত আরো অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে যাতে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে পরস্পস্পরকে খাদ্য খাওয়ানের জন্য আদেশ করেছেন ও তার ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি দান-খয়রাতের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “যারা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আর মহান আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে আরো বৃদ্ধি করে দেন। মহান আল্লাহ পাক অতি প্রশস্ত, সর্বজ্ঞ।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ২৬১)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে উল্লেখিত সরাইখানা, লঙ্গরখানা ও মুসাফিরখানার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ খাদ্য খাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।

অতএব, রাহমানী পয়গামের উক্ত জবাব সম্পূর্ণরূপে পরিতাজ্য।

দলীলসমূহ ঃ আহ্কামুল কুরআন, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, ত্বীবী, তালীক্ব, মুজাহিরে হক্ব, তারীখে লাইলাতুল বরাত ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ আহসান উল্লাহ

নূরানীগঞ্জ

সুওয়াল: জাকির নায়েক উরফে কাফির নায়েক তার এক লেকচারে বলেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত রসূল ছিলেন এবং একইসাথে উনারা দুনিয়ার রাজা ছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ!

আমার সুওয়াল হলো, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে রাজা বলা কতটুকু শরীয়তসম্মত? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: ফার্সী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে-

تا مرد سخن نہ گفتہ باشد+  عیب و  ہنر ش  نہفتہ باشد

অর্থাৎ, “কোন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দোষ-গুণ কোনটিই প্রকাশ পায় না।” এ প্রবাদটির আলোকে বলতে হয়, উরফে কাফির নায়েক ব্যক্তিটি চরম জাহিল ও ধূর্ত পন্ডিত। সে তার সমমনা ফাসিক-ফাজির ও গোমরাহ ভক্তদের বাহবা পেতে ধূর্তামি পান্ডিত্য জাহির করে চলেছে। কিন্তু এতে ফল হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত। সে যে বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছে সে বিষয়েই তার কুফরী হাক্বীক্বত প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে হক্বপন্থীগণের জন্য তার প্রচারিত কুফরী ও জিহালতী  থেকে বেঁচে থাকা সহজ হচ্ছে।

অত্র সুওয়ালের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সে একদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত রসূল বলছে অপরদিকে আবার দুনিয়ার রাজা হিসেবে উল্লেখ করছে। নাঊযুবিল্লাহ!

স্মরণীয় যে, রাজা শব্দের ব্যবহার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহানতম শান বা মর্যাদার খিলাফ। কেননা রাজা বলতে কোন দেশ বা ভূখণ্ডের  শাসককে অথবা অধিপতিকে বুঝানো হয়ে থাকে। এছাড়া রাজা মুসলমানও হতে পারে আবার অমুসলিম বা বিধর্মীও হতে পারে।

কাজেই, যে শব্দ কাফির, মুশরিক, মুনাফিক নির্বিশেষে সকলের জন্য ব্যবহৃত হয় সে শব্দ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে ব্যবহার করা আদৌ শরীয়তসম্মত নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে তা শরীয়তের খিলাফ এবং কুফরীর শামিল। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضاء

অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকো সেভাবে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করো না। (সূরা নূর: আয়াত শরীফ- ৬৩)

প্রতিভাত হলো, উম্মত পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে বা যেসব শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে থাকে সেভাবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ যা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।

 

মুহম্মদ হামিদুর রহমান

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি যে, রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতে মি’রাজ শরীফ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে প্রচার করছে যে, মি’রাজ শরীফ-এর তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আরো প্রচার করছে যে, ২৭শে রজবের রাতেই মি’রাজ শরীফ হয়েছে এ কথা সঠিক নয়। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াব: মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতেই হয়েছে। এটাই মশহূর বা প্রসিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। এর বিপরীত মতগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

মি’রাজ শরীফ-এর মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। তাদের কোন কথাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, মুসলমানগণের ঈমান-আমল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের যারা চিহ্নিত শত্রু- ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী ইত্যাদি তাবৎ কাফির-মুশরিক তারা পরোক্ষভাবে কাজ করে আর তাদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। এই উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা কাফির-মুশরিকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলামনগণের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব ধ্বংস করার লক্ষ্যে হরাম টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, জায়িযকে নাজায়িয,সুন্নতকে বিদয়াত,বিদয়াতকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুসলমানদের ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের তারিখ নিয়েও সমাজে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি করছে; উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানগণ যেনো ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকে এবং সেই রাত ও দিনসমূহের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেমন তারা রবীউল আউয়াল শরীফ মাস আসলেই প্রচার করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাউযুবিল্লাহ!

তদ্রƒপ এখন তারা প্রচার করছে, মি’রাজ শরীফ-এর তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা বোঝাতে চাচ্ছে যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু শরীয়তের ফায়ছালা হলো, যে কোন বিষয়ে মতভেদ হতে পারে বা থাকতে পারে। কারণ হক্বপন্থীগণ যে বিষয়টিকে হক হিসেবে গ্রহণ করেন, যারা নাহক্ব বা বাতিলপন্থী তারা কি সে বিষয়টিকে হক্ব হিসেবে গ্রহণ করবে? কখনই না। তাহলে তো এমনিতেই মতভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল এবং তাই হচ্ছে।

এছাড়া হক্বের জন্য হক্বপন্থীগণও বিভিন্ন বিষয়ে ইখতিলাফ করেছেন, ইখতিলাফ করেছেন বলে সেসব বিষয় বাদ দিতে হবে তা নয়। বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট সামাধান রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر ذلك خير واحسن تأويلا

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে (উলিল আমরগণের মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেশি অনুগত বা যার মতের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল-আদিল্লাহ বেশি রয়েছে উনাকে বা উনার মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বীল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৫৯)

কাজেই, কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, সেটিই আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি ব্যতীত কিছু নয়। যা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।

স্মরণীয় যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতে হয়েছে এটাই মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম জিলদ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهى ليلة سبع وعشرين من رجب ليلة الاثنين وعليه عمل الناس قالوا انه عليه السلام ولد يوم الاثنين بعث يوم الاثنين واسرى به ليلة الاثنين وخرج من مكة يوم الاثنين ودخل الـمدينة يوم الاثنين ومات يوم الاثنين

অর্থ: “রাতটি ছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ, সোমবার শরীফ।” এর উপরই বিশ্বের সকল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের আমল। উনারা বলেন, “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন সোমবার শরীফ-এ, আনুষ্ঠানিকভাবে উনার নুবুওওয়াত প্রকাশ পেয়েছে সোমবার শরীফ-এ, ইসরা ও মিরাজ শরীফ হয়েছে সোমবার শরীফ-এ, হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ থেকে বের হয়েছেন সোমবার শরীফ-এ, মদীনা শরীফ-এ প্রবেশ করেছেন সোমবার শরীফ-এ এবং তিনি বিছাল শরীফও লাভ করেছেন সোমবার শরীফ-এ।”

পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফ-এর প্রচার-প্রসারকারী হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার’ কিতাবুছ ছলাত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে-

وجزم الحافظ عبد الغنى الـمقدسى فى سيرته بانه ليلة السابع والعشرين من رجب وعليه عمل اهل الامصار.

অর্থ: হযরত ইমাম হাফিয আব্দুল গণী মাক্বদিসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সীরাতগ্রন্থে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন যে, মি’রাজ শরীফ হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ এবং এর উপরই সমগ্র দেশবাসী উনাদের আমল।

এছাড়াও আরো নির্ভরযোগ্য অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে হয়েছে।

কাজেই, যারা টিভিসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মি’রাজ শরীফ-এর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونـها من امراء زمانـهم ربحا لانفسهم لا اربح الله تجارتـهم

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের উলামায়ে ‘সূ’দের জন্য জাহান্নাম; যারা ইলিমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের যামানার আমীর-উমরা বা রাজা-বাদশাহদের কাছে অর্থ ও পদ লাভের জন্য তা বিক্রি করে থাকে। তাদের এ ধর্মব্যবসায় আল্লাহ পাক তিনি কখনো বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بـما لـم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

শরীয়তের ফায়ছালা হলো উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শোনা, তাদের ফতওয়া মানা, তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম আর তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা কাহাফ’-এ ইরশাদ করেন-

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا

অর্থ: “তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা যার ক্বল্ব্ আমার যিকির থেকে গাফিল। সে নফসের পায়রবী করে আর তার কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ।” অর্থাৎ যারা শরীয়তের খিলাফ কাজ করে তথা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আর হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان هذا العلم دين فانطروا عمن تأخذون دينكم

অর্থ: “নিশ্চয়ই (কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর) ইলিমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো অর্থাৎ ইলিম হাছিল করছো তা লক্ষ্য করো।” (মিশকাত শরীফ) অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ তথা যারা টিভিতে প্রোগ্রাম করে তাদের থেকে ইলিম হাছিল করা যাবে না, তাদের ওয়াজ শুনা যাবে না, তাদের ফতওয়া মানা যাবে না, তাদের পিছনে নামায পড়া যাবে না।

অতএব, যারা টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মি’রাজ শরীফ-এর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের কোনো কথাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

আর ২৭শে রজব তারিখ মি’রাজ শরীফ এটা সঠিক নয় বলে তারা যে বক্তব্য প্রচার করছে তাদের সে প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও দলীলবিহীন। ইসলামে দলীলবিহীন কোন বিষয় আদৌ গ্রহনযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল পেশ করো।

কাজেই, যেসব উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সংঘটিত হওয়ার বিশুদ্ধ ও মশহূর বর্ণনাকে সঠিক নয় বলে প্রচার করছে; তাদেরকে প্রমান দিতে হবে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথায় বা কোন দলীলে উল্লেখ আছে যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ হয়েছে; তা সঠিক নয়। এরূপ প্রমাণ তারা কখনই দিতে পারবে না, যদি দিতে পারতো তাহলে তাদেরকে হাদীছ শরীফ-এ দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে কখনই উল্লেখ করা হতো না।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব