সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৭৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম জয়পুরহাট

সুওয়াল:  সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়তে নববর্ষ উপলক্ষে ভালো খাওয়া-পরার কথা বলা হয়েছে, নাকি পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে ভালো খাওয়া-পরার কথা বলা হয়েছে?

জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নববর্ষ উপলক্ষে ভালো খাওয়া পরা নিষেধ করা হয়েছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে ভালো খাওয়া-পরার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন অর্থাৎ পবিত্র দশই মুহররম শরীফ তারিখে ভালো খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মা-ছাবাতা বিস্সুন্নাহ)

অতএব, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে ভালো খেতে ও পরতে হবে একথাটি সঠিক ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়তসম্মত।

আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে নওরোজ বা যে কোন নববর্ষ পালন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও বিদয়াত এবং কাট্টা কুফরী।”

কাজেই, নববর্ষ সেটা বাংলা হোক, ইংরেজি হোক, আরবী হোক ইত্যাদি সবই ইহুদী-নাছারা, বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিকদের তর্জ-তরীক্বা; যা পালন করা থেকে বিরত থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিব।

উল্লেখ্য, সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের শাসক জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনও পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান থেকেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।

তাছাড়া বাংলা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উপলক্ষে শহরে ও গ্রামে যে ভোজ, মেলা উৎসব হয় তাও ইরানের নওরোজ হতে পরোক্ষভাবে এদেশে এসেছে। মোঘল পূর্ববর্তী আমলে এদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিল না।

ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালনের সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। তবে কথিত বাংলা সন প্রকৃতপক্ষে ইলাহী সন ছিলো যা বাদশাহ আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত। পরবর্তীতে তা ফসলী সন বা বাংলা সন হিসেবে মশহুর হয়। যা বাঙালিদের দ্বারা প্রবর্তিত নয়। বাদশাহ আকবর ইলাহী সন হিসেবে এর প্রবর্তন করে। আর বাদশাহ আকবর ছিল মঙ্গলীয় এবং ফারসী ভাষী। তাহলে এটা কি করে বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে? কাজেই বাঙালিদের জন্য এটা অনুসরণীয় নয়। আর মুসলমানদের জন্য তো এটা অনুসরণ করার প্রশ্নই আসেনা।

হযরত ইমাম আবু হাফস্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলেও তা বরবাদ হয়ে যাবে।” অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

বিশেষত বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।

কাজেই, মুসলমানদের জন্য বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন নববর্ষ পালন করার অর্থ হচ্ছে বিজাতি ও বিধর্মীদের সাথেই মিল রাখা। তাদেরই অনুসরণ অনুকরণ করা। অর্থাৎ কাট্টা কুফরী করা। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْـمُنَافِقِيْنَ

অর্থ: কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ:  “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে স¤প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

অতএব, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারি, পহেলা মুর্হরম ইত্যাদি নববর্ষ পালন করার জন্য উৎসাহিত করা এবং সাথে সাথে ভাল খাওয়া-পড়ার জন্যও উৎসাহিত করা কাট্টা হারাম ও কুফরী যা থেকে বিরত থাকা ও বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: ১০ই মুহররম আশূরা শরীফ মুবারক দিনটির আমলসমূহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মোতাবেক পবিত্র আশূরা শরীফ উনার নি¤েœাক্ত আমলসমূহের বর্ণনা পাওয়া যায়।

১। পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা: পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ

অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযার পর উত্তম রোযা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররম শরীফ উনার রোযা।” (মুসলিম শরীফ)

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّـىْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهٗ

অর্থ : হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা পালনে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আশা করি যে, তিনি (উম্মতের) বিগত বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।” (মুসলিম শরীফ)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ  قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ وَخَالِفُوْا فِيْهِ الْيَهُوْدَ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররম শরীফ রোযা রেখে ইহুদীদের খিলাফ তথা বিপরীত আমল করো।” (তিরমিযী শরীফ)

২। রোযাদারদেরকে ইফতার করানো: রোযাদারদেরকে ইফতার করানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ فَطَّرَ فِيْهِ صَائِمًا فَكَاَنَّـمَا أَفْطَرَ عِنْدَهٗ جَمِيْعَ أُمَّةِ (سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا) مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তিনি যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত উম্মতকে ইফতার করালো।” সুবহানাল্লাহ!

৩। পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো : পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে-পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর ওই ব্যক্তিকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ, মুমিন কে মাহে ওয়া সাল ইত্যাদি)

৪ ও ৫। গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো :

গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ مَّسَحَ فِيْهِ عَلٰى رَأْسِ يَتِيْمَ وَاَطْعَمَ جَائِعًا وَسَقٰى شَرْبَةً مِّنْ مَّاءَ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ مَّوَائِدِ الْـجَنَّةِ وَسَقَاهُ اللهُ تَعَالٰى مِنَ الرَّحِيْقِ الْسَلْسَبِيْلِ

অর্থ:  “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে, কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন।” সুবহানাল্লাহ!

৬। চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়া :

চোখে সুরমা দেয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ اِكْتَحَلَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ بِكُحْلٍ فِيْهِ مِسْكٌ لَـمْ يَشْكُ عَيْنُهٗ إِلٰى قَبِيْلٍ مِّنْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ

অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মিশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে, সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবেনা।” সুবহানাল্লাহ! (মাক্বাছিদে হাসানাহ, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ্)

৭। গোসল করা : পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে গোসল করা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ اِغْتَسَلَ فِيْهِ عُفِىَ وَلَـمْ يَـمْرَضْ اِلَّا مَرَضَ الْـمَوْتِ وَاَمِنَ مِنَ الْكَسْلِ وَالتَّعْلِيْلِ

অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

অতএব, পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস এবং উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনের ফাযায়িল-ফযীলত ও আমল সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য।

 

আহমদ মিতু মাহমুদা, শেরপুর, বগুড়া।

 

সুওয়াল: কেউ কেউ পবিত্র ১০ই মুহররম আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে যেয়ে বলে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছেন কিংবা একটি গুনাহ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! এরূপ বক্তব্য প্রদানকারীর ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা কি?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো, সমস্ত হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছুম বা নিষ্পাপ অর্থাৎ সর্বপ্রকার গুনাহ এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও মাছুম বা পবিত্র। অর্থাৎ কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনো ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, এমনকি অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা অবশ্যই কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নছফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)

উল্লেখ্য, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ইরশাদ  মুবারক হয়েছে-

نُوْحِىْ اِلَيْهِمْ

অর্থ: “আমি উনাদের (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের) প্রতি পবিত্র ওহী মুবারক করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ উনার পবিত্র ১০৯ আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা নহল শরীফ উনার পবিত্র ৪৩ আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ৭ আয়াত শরীফ)

অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকল কার্যাবলীই পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুতাবিক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

اَلْأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مَعْصُوْمُوْنَ

অর্থ: “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ।” সুবহানাল্লাহ! (শরহে আক্বাইদে নছফী)

আরও উল্লেখ রয়েছে যে-

اَلْأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مُنَزَّهُوْنَ عَنِ الصَّغَائِرِ وَالْكَبَائِرِ وَالْكُفْرِ وَالْقَبَائِحِ

অর্থ : “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিক্বহুল আকবার লি ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)

অতএব, যারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে বলে থাকে যে, উনারা ভুল করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে এ সমস্ত লোকগুলি আক্বাইদ সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। তাই তারা এ ধরণের গুমরাহী ও বিভ্রান্তিমূলক কুফরী কথা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত তাদের একথা সঠিক নয় অর্থাৎ কাট্টা কুফরী। প্রকৃত ঘটনা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনাকে ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে আদেশ মুবারক করেছিলেন যে-

لَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ

অর্থ : “আপনারা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হবেন না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

তখন উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে ইবলিস শয়তান এসে হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, আপনারা যদি এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশতা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক, তখন হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম তিনি সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা অবশ্যই কখনই ভুল  হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)

এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস ছানী আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার ঘটনা। তিনি যে শাহাদাত মুবারক বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। উনাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেকবারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসি মুবারক, যে কলসি মুবারক উনার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড় মুবারক উনার উপর শত্রুরা মারাত্মক বিষ যা হিরক চূর্ণ তা উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি মুবারক থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ শাহাদাতাইন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম)

এখন প্রশ্ন উঠে, ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উনার শাহাদাতী শান মুবারককে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, তা বলতে হবে?

মূলত উপরোক্ত দুটির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুনাহে গুনাহগার হবে; যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রূপ হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও। যা উনার অজান্তে সংঘটিত হয়েছে।

অনুরূপ অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, হযরত নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের মুবারক শানে বেয়াদবিমূলক, কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।

পঞ্চম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার আল মুরশিদুল আমীন কিতাবে উল্লেখ করেন, “একবার মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ি মুবারক, কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গোছগাছ করে নিলেন। এমনকি পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?

তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, কিরূপ করি? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, এরূপ পরিপাটি। এর জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমানহারা হয়ে যাবে।”

অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ঘটনাই তার প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! বস্তুত এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণরূপেই কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

অনুরূপ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে ও উনাদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান-মান মুবারক সমুন্নত থাকে।

অতএব, কোন লোকের জন্যেই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক উনার বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা যাবেনা। কেউ যদি বলে থাকে, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী এবং সে কাট্টা জাহান্নামী হবে। এ ধরনের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের জন্য অবশ্যই ফরযে আঈন।

আহমদ আরিফা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

সুওয়াল: অনেকে পাপিষ্ঠ ইয়াযীদের অপরাধের জন্য তার পিতা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালাম উনাকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই। তদ্রƒপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।

এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰى

অর্থ: “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১৬৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِيَغِيْظَبِهِمُ الْكُفَّارَ

অর্থ: “কাফিররাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (পত্রি সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৯)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ مَالِكِ بْنِ اَنَسٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ مَنْ غَاظَهٗ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ كَافِرٌ

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ’র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِنِ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ لَا تَسُبُّوْا اَصْحَابِـىْ فَلَوْ اَنَّ اَحَدَكُمْ اَنْفَقَ مِثْلَ اُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ اَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهٗ.

অর্থ: “হযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ মহান আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عَنْ حَضْرَتْ عُوَيـْمِرِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ اِخْتَارَنِيْ وَاخْتَارَلِـىْ اَصْحَابًا فَجَعَلَ لِىْ مِنْهُمْ وُزَرَاءَ وَأَنْصَارًا وَأَصْهَارًا فَمَنْ سَبَّهُمْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلٰئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُمْ صَرْفًا وَّلَا عَدْلًا.

অর্থ: “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিন কবুল করবেন না।” (কানযুল উম্মাল)

স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে ‘উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ উনার রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইলমের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أُمُّ حَرَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّـهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ‏ اَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِىْ يَغْزُوْنَ الْبَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوْا

অর্থ: “হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্র পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন উনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র পথে জিহাদের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, উনার পর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।” সুবহানাল্লাহ!

এক ব্যক্তি হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি কোন প্রকার ক্বিয়াস করা যাবে না। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।”

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শ্রেষ্ঠ?” তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সেই ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)

সুতরাং, এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাক্বিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালি দেয়, নাকিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত উনাদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।

কেননা উনারা হলেন দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত ইমাম এবং হাবীবে খোদা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এই জন্য উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اٰمِنُوْا كَمَا اٰمَنَ النَّاسُ

অর্থ: “তোমরা ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈমান এনেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র  আয়াত শরীফ নং ১৩)

মহান আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ

“অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করেছেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِىَ اللهُ عَنْهُمْ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই সকল বান্দাদের প্রতিও সন্তুষ্ট যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমরূপে অনুসরণ করেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

প্রকৃতপক্ষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হচ্ছেন পবিত্র হিদায়েত উনার মাপকাঠি।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا

অর্থ: যদি তোমরা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদের মতো ঈমান আনতে পারো, তাহলে অবশ্যই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)

আর মহাসম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছেন-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرُ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَصْحَابِـىْ كَالنُّجُوْمِ فَبِأَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ.

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে অনুসরণ করলে তোমরা হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরাসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চাইলে এবং হাক্বীক্বী হিদায়েত হাছিল করতে চাইলে অবশ্যই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে, উনাদের মত ঈমান আনতে হবে এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাক্বিছ বলা হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। যা সকলের জন্যই অবশ্যই ফরযে আঈন। আর যারা ব্যতিক্রম করবে তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

মুহম্মদ ইবরাহীম খলীল, কাপাসিয়া, গাজীপুর

সুওয়াল: পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের পর

صَدَقَ اللهُ الْعَظِيْمُ وَصَدَقَ رَسُوْلُهُ النَّبِـىُّ الْـحَبِيْبُ الْكَرِيـْمُ

বাক্য মুবারকের পর

وَصَدَقَ مُرْشِدُنَا الْعَظِيْمُ وَاَهْلُ بَيْتِهِ الْكَرِيْـمُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَجْـمَعِيْنَ

বলাটা কি শরীয়ত সম্মত?

জাওয়াব: হ্যাঁ, অবশ্যই শরীয়তসম্মত। কেননা খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিষয়সমূহ উনার যিনি মহা সম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়সমূহের সাথে উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা ওতপ্রোতভাবে এবং অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

কাজেই, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত উনারা মহাসম্মানিত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিসবত বা সম্পর্কের বিষয়টি যে অভিন্ন সে ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যুক্ত করাটা শরীয়তসম্মত। মোটেও শরীয়ত বিরোধী নয়।

স্মরণীয় যে, খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার যিনি মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।

অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ কায়িম-মাক্বাম হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ ক্বায়িম-মাক্বাম হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।

শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, সন্তুষ্টি ও শাফায়াত মুবারক পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করার পর তিনি যখন বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশাহর কাছে পত্র মারফত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেয়ার ভূমিকা গ্রহণ করলেন তখন উনার মুবারক খিদমতে পেশ করা হলো যে, সীল মোহর ব্যতীত রাজা-বাদশাহরা কোন পত্র গ্রহণ করে না। তাই সীল মোহরের জন্য একটি আংটি মুবারক বানানোর দায়িত্ব দেয়া হলো আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে এবং সেই আংটি মুবারকের মধ্যে কি লিখা থাকবে সেটাও বলে দেয়া হলো যে, সেখানে লিখতে হবে

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ

যার অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।

কিন্তু হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি চিন্তা করলেন, আংটি মুবারকের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার সাথে উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক থাকবে না, এটা কখনোই হতে পারে না। তাই তিনি আংটি মুবারক তৈরীর কারীগরকে

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

এই মহাসম্মানিত কালিমা শরীফ খোদাই করে আংটি তৈরি করার জন্য বলে আসলেন। যথাসময়ে তিনি আংটি মুবারক নিয়ে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন। অতঃপর তিনি আংটি মুবারক বের করে দেখলেন, সেখানে লিখিত রয়েছে-

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرنِ الصِّدِّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! আপনি কেমন আংটি তৈরি করে আনলেন? জাওয়াবে তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বেয়াদবী ক্ষমা চাই, আমি এটা পছন্দ করিনি, তৈরিকৃত আংটি মুবারকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক থেকে উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পৃথক থাকুক। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার সাথে আপনার নাম মুবারক সংযুক্ত করে লেখার জন্য বলেছি। সেই অনুযায়ী সে ব্যক্তি আংটি মুবারক তৈরি করে দিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে এখানে আপনার নাম যুক্ত হলো কি করে? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়ে জানালেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যেমন পছন্দ করেননি মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক থেকে উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পৃথক থাকুক তদ্রƒপ মহান আল্লাহ পাক তিনিও পছন্দ করেননি যে, আপনার নাম মুবারক থেকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক পৃথক থাকুক। তাই তিনি নিজেই কুদরতীভাবে আংটি মুবারকে উনার নাম সংযুক্ত করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ঈমান উনার মত গুরুত্বপূর্ণ কালিমা শরীফ উনার মধ্যে যদি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক সংযুক্ত হতে পারে তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উল্লেখ করার পর উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ করা পবিত্র শরীয়ত সম্মত না হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে? তা কোথায় নিষেধ করা হয়েছে?

মোটকথা ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহম অর্থাৎ অল্প ইলম ও অল্প বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল কারণ। ফার্সী ভাষায় প্রবাদ রয়েছে-

“নীম হেকীম খতরে জান, নীম মোল্লা খতরে ঈমান।”

অর্থাৎ আধা কবিরাজ জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। আর আধা মুফতে, মালানা, উলামায়ে সূ ঈমান নষ্টের কারণ স্বরূপ।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪৫)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক: সর্বপ্রথম সৃষ্টি মুবারক:

মহান আল্লাহ পাক তিনি পুশীদাহ (গোপন) ছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না। তিনি যখন ইচ্ছা মুবারক করলেন যে, তিনি উনার মহাসম্মানিত রুবূবিয়্যাত মুবারক প্রকাশ করবেন, তখন তিনি সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করে সর্বপ্রথম উনার মাহবূব হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!

হাবীবুল্লাহ হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সৃষ্টি

যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাবীবুল্লাহ হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, পবিত্রতম এবং পবিত্রতাদানকারী হিসেবে, মুত্তলা’ ‘আলাল গয়িব হিসেবে, রহমতুল্লিল ‘আলামীন হিসেবে, সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র ছিফত মুবারক এবং সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৪০ বছর বয়স মুবারকে নবী ও রসূল হয়েছেন, এর আগে তিনি নবী ও রসূল ছিলেন না, এ কথা বলা কাট্টা কুফরী। বরং এ কথা বলতে হবে যে, তিনি সৃষ্টির শুরু থেকেই নবী ও রসূল ছিলেন। তবে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে বা হিসেবে ৪০ বছর বয়স মুবারক-এ উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াতী ও রিসালতী শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটেছে। সুবহানাল্লাহ! এ কথা বলাও সুস্পষ্ট কুফরী যে, তিনি কিছু জানতেন না, পরে উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে ইলম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে সম্মানিত ওহী মুবারক করে উনার সেই সম্মানিত ইলম মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

এ কথা বলাও কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ যে, সীনা মুবারক চাক করে উনাকে পবিত্রতা মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে এবং এর আগে উনার মধ্যে নাপাকী ছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! মূলত, উনাকে পবিত্রতম এবং পবিত্রতাদানকারী হিসেবেই সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে। তবে সম্মানিত ও পবিত্র সীনা মুবারক চাক করে উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রেজাউল করীম শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

সুওয়াল: মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পর কাফন পরিধান করার সময় যে সুগন্ধি বা আতর লাগানো হয়, সেই আতর দিয়ে মৃত ব্যক্তির কপালে আরবীতে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” লিখে আসছিল। সেই আমল বেগানা পুরুষ সীমা লঙ্ঘণের অজুহাত দেখিয়ে এবং শরীয়তের ভিত্তি নেই বলে নাজায়িয বলছে। এ সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মৃত ব্যক্তির গোসল কাফন-পরিধান করানোর পর কিংবা ছলাতুল জানাযার পর কপালে আরবীতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম অথবা কালিমাহ শরীফ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখা জায়িয রয়েছে। তবে তা আতর, কালি, তেল, পানি ইত্যাদি দিয়ে লিখতে হবে, তা নয়। বরং নিয়ম হচ্ছে, খালি হাতে শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়ে লেখা। আর লেখার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, কোন বেগানা পুরুষ বেগানা মৃত মহিলার কপালে লিখতে পারবে না। অনুরূপ কোন বেগানা মহিলা বেগানা মৃত পুরুষের কপালে লিখতে পারবে না। বরং মৃত পুরুষের কপালে কোন নেককার আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি লিখবেন। একইভাবে মৃত মহিলার কপালে কোন নেককার, আল্লাহওয়ালী মহিলা লিখবেন। এর ব্যতিক্রম করাটা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।

মুহম্মদ ইমদাদ হুসাইন, সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: আইয়্যামে তাশরীক এর তাসবীহ নাকি প্রতি ফরয ছলাতের পর ১ বার পড়তে হয়, ৩ বার পড়ার নাকি কোন ভিত্তি নেই। এ সম্পর্কে দলীলসহ সমাধান জানতে চাই।

জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে হোক বা একাকী হোক, মুসাফির হোক অথবা মুকীম হোক, শহর হোক অথবা গ্রামে হোক প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে-

وَقِيْلَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”

“গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব।{দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব