উন্নয়নের মহাসড়ক এবং অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়ন- কাদের জন্য? উন্নয়নের যানে যাত্রী কারা? ভেজাল খাবার এবং পরিবেশ দূষণে জনগণ যখন জীবন্মৃত হচ্ছে তখন তথাকথিত উন্নয়ন দিয়ে হবেটা কী?

সংখ্যা: ২৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

দাবী করা হচ্ছে- বর্তমান সরকার সামগ্রিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পার করে পঞ্চম ও শেষ বছরে পদার্পন করেছে। দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পার করে শেষ বর্ষে পদার্পণ করে সরকার প্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নয়নে বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বর্ণনায় অর্থনীতি অবকাঠামো, কূটনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে নতুন উচ্চতার কথা বলা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত এতসব কথিত উন্নয়নের সাথে কোন দ্বিমত পোষণা না করেই আমরা শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই। এসব উন্নয়ন কাদের জন্য? এসব উন্নয়নের বেনিফিসিয়ারী কারা? উত্তর একটাই দেশের জনগণ। কারণ কোন ভৌত জিনিস উন্নয়নের সুবিধাভোগী হতে পারেনা। রাষ্ট্রের চারটি উপাদান মূল হলেও তার মধ্যে মূল অর্থাৎ মূলের মূল হলো জনগণ।

এখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেতু আর ফ্লাইওভার দৃশ্যমান হলেও জনগণ, জনগণের স্বাস্থ্য তথা জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি কী উন্নয়নের সরকার একবারও চিন্তা করেছে? সরকার ভিশন ২০২০ ঘোষণা করেছে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ দেশের কথাও প্রচার করেছে। কিন্তু ২০৪১ সাল নাগাদ কথিত উন্নত দেশের বাসিন্দাদের কথা কি সরকার এ মুহুর্তে একটুও ফিকির করেছে?

দেশের জনস্বাস্থ্য আজকে কী মারাত্মক অবনতিতে আছে এবং অতি দ্রুত কী ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে সেদিকে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের আদৌ কোন খেয়াল আছে কী?

দৈনিক আল ইহসান শরীফের তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। কারণ অনেক রোগী একাধারে কয়েকটি রোগে আক্রান্ত।

স্বীকৃত হিসাব অনুযায়ীই বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। ডায়াবেটিস এখন মহামারীরূপে দেখা দিয়েছে। অপরদিকে স্বীকৃত হিসাব মতে- কিডনী রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের কিডনী স্থায়ীভাবে বিকল হচ্ছে। দেশের কিডনী রোগীদের মাঝে ২০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পেলেও ৮০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে মারা যায়।

এদিকে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে আক্রান্তদের অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেনা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, একজন লোক হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তির পরই তিনি জানতে পারে তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল।

অনেকে না জানলেও বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড়কোটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশের ১ কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং বাকীরা হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। বছরে প্রায় ৫০ হাজার লোক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

পাশাপাশি, দেশে হৃদরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমান অন্যান্য দেশের তুলনায় হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশেই বেশি। এমনকি এ রোগের কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছে, দেশের প্রায় ত্রিশ শতাংশ লোকই হৃদরোগে আক্রান্ত।

ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদী ও মারাত্মক রোগের নাম হচ্ছে ক্রোনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি (সিওপিডি)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। পাশাপাশি দেশে হাঁপানী রোগীর সংখ্যাও ১ কোটিরও বেশি এবং প্রতিবছর আরো ৫০ হাজার লোক হাঁপানী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

অপরদিকে বাংলাদেশে থাইরয়েড সেন্টারের হিসেব মতে, ২ কোটিরও বেশি লোক থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ব্লাইন্ডনেস এবং লো ভিশন সার্ভের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫ শতাংশ লোক কমদৃষ্টি সম্পন্ন রোগী। আর শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগী অনেক। এছাড়া বর্তমান অস্থির সামাজিক পরিবেশেও শিশুদের মধ্যে ১৮.৪ ভাগ মানসিক রোগী। অটিজমে আক্রান্ত শিশু এক লাখেরও বেশি। আর পূর্ণ বয়স্কদের মধ্যে আড়াই কোটিরও বেশি মানসিক রোগী; যাদের জন্য ডাক্তার মাত্র ২২০ জন। এদিকে দেশে শিশু কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। কয়েকটি জেলায় কুষ্ঠ রোগীর হার ১০ হাজারে ১ এর বেশি। আর বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর ১০ শতাংশই বাংলাদেশী।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ ও ডেনস্ট্রিস্টি অ্যান্ড এন্ডোডনটিকস বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে শুধু নাক-কান-গলা-দাত ও মুখের রোগীই ২০ কোটিরও বেশি।

এখন কথা হলো- সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রচারণা চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। সেক্ষেত্রে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রী হবে কারা? প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ রকম বিশালেকায় অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, দুর্বল ও নির্জীব তথা জীবন্মৃত জনসাধারণ? তারা কী উন্নয়নের মহাসড়কে চলতে পারবে? চলার শক্তি কি তাদের থাকবে? এখনই যদি তারা এরকম রোগাক্রান্ত তথা মৃতবৎ হয় এবং প্রতিবছর এ হার আরো বাড়তে থাকে তাহলে সে উন্নয়নের যানে যাত্রী পাওয়া যাবে কী?

এরকমভাবে সব রোগ হিসেব করলে রোগীর সংখ্যা ৩৫ কোটি দাঁড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যারও বেশি। যেহেতু কেউ কেউ একসাথে কয়েকটি রোগে আক্রান্ত।

পাশাপাশি আরো উল্লেখ্য যে, এসব রোগের হার কিন্তু দিন দিন বাড়ছেই এবং নিত্য নতুন রোগেরও প্রাদুর্ভাব হচ্ছে।

বলাবাহুল্য, এসব রোগ-বালাইয়ের পেছনে যে ভেজাল খাদ্য এবং বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণসহ গোটা পরিবেশ দূষণই মূল কারণ তাও কিন্তু সরকারের অজানা নয়। কিন্তু সরকার ভেজাল দূরীকরণে ও পরিবেশ শুদ্ধকরণে বা সংরক্ষণে আন্তরিক নয়। এ সম্পর্কে সরকারের মনিটরিং নেই। নিয়ন্ত্রণ নেই। গবেষণা নেই। প্রক্রিয়া নেই। প্রকল্প নেই। চিন্তা নেই। ফিকির নেই। বাজেট বরাদ্দ নেই। কারণ এসব ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ দিলে তা রাতারাতি দৃশ্যমান হবেনা। কিন্তু নিস্ফল ফ্লাইওভারে বাজেট দিলে তা দৃশ্যমান হয়। উন্নয়ন বলে প্রচারণা চালানো যায়। রাজনৈতিক প্রচারণা তথা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যায়।

সরকারের কাছে জনগণের চেয়ে নির্বাচন তথা ক্ষমতায় আরোহন অনেক বড়। দুই টার্মের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে গত ২৩শে জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী বলেছে, কেমিক্যাল মেট্রোলজির অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো হবে। সব পণ্য পরীক্ষা আন্তর্জাতিক মানের হবে। প্রতিভাত হচ্ছে- বিষয়টি সরকারের জানার মধ্যে ঠিকই ছিল, কিন্তু ইচ্ছার মধ্যে ছিলনা। এখন দেরীতে হলেও সরকার উচ্চারণে বাধ্য হয়েছে। তবে শুধু উচ্চারণই নয় বাস্তবায়নেও সরকারকে বাধ্য করতে হবে। আর এজন্য উদ্যোগী হতে হবে জনগণকেই। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা যালিমও হয়োনা মযলুমও হয়োনা।”

মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ, ঢাকা

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।