পাকিস্তানের তথাকথিত স্রষ্টা ‘জিন্নাহ’-‘পূর্ব-পুরুষে হিন্দু, ধর্মে কাফির, কর্মে ইংরেজ চর, দর্শনে হিন্দুর বন্ধু’ । ভারত উপমহাদেশে অনেকগুলো স্বাধীন মুসলিম দেশের বিপরীতে পাকিস্তান নামক অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্য দায়ী জিন্নাহর একক ক্ষমতা লোভ। একইভাবে এদেশের ক্ষমতালোভী ধর্মব্যবসায়ী জামাতী-ওহাবী-খারিজী, রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা ‘জিন্নাহ’ নামের সে নালায়েককে ‘কায়েদে আযম’ (মহান নেতা) উপাধি দিয়ে প্রমাণ করেছে- তারাই  সৃষ্টির মাঝে নিকৃষ্ট জীব। (নাঊযুবিল্লাহ)

সংখ্যা: ১৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

ঝিনাভাই পুঞ্জার প্রথম সন্তান মুহম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর, করাচি শহরে। সিন্ধু প্রদেশে ভূমিষ্ঠ হলেও তারা গুজরাটের বাসিন্দা (কাঠিয়াবাড়ী) শিয়াপন্থী খোজা বংশে নামধারী মুসলমান এবং তার পদবি ছিল ঝিনাভাই। এ পদবী গুজরাটের হিন্দুদের মধ্যেও থাকে। এখনো আছে। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাহ লন্ডনে থাকাকালীন আধুনিক হবার উদ্দেশ্যে পদবির ‘ভাই’ অংশ বর্জন করে তদানীন্তন ইংরেজ সমাজের রীতি অনুসারে নিজের নাম এম.এ জিন্নাহ রূপে লেখা আরম্ভ করেন। তবে জিন্নাহ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত।

তবে একটি বিষয় অনেকে অনবগত থাকলেও সত্য যে, জিন্নাহর পূর্ব-পুরুষ এবং গান্ধীর পুর্ব-পুরুষ একই বংশের লোক। এবং গান্ধীর সাথে জিন্নাহর এত বেশি দহরম-মহরম ছিলো যে, একবার এক আশ্রমে যখন গান্ধী খবর পেলেন যে, জিন্নাহ তার সাথে দেখা করতে আসবে তখন গান্ধী তার লোক দিয়ে বহু কষ্ট করায়ে জিন্নাহর প্রিয় মদ ‘স্কচ’ জিন্নাহ সামনে পেশ করেছিলেন এবং তাতে জিন্নাহ অভিভূত হয়ে গান্ধীকে মহাত্মারূপে মেনে নিয়েছিলো। (নাঊযুবিল্লাহ)

তবে জিন্নাহর পূর্ব-পুরুষ যে হিন্দু ছিলো সে মর্মে অনেক হিন্দু ঐতিহাসিকও খোলামেলা স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্নদা শঙ্কর রায় নিজে লিখেছেন,  …. গুজরাটি প্রথা অনুসারে পুত্রের নামের সঙ্গে পিতার নাম যুক্ত করে পরিশেষে যোগ করতে হয় বংশের পদবি। যেমন গান্ধী বংশের করমচাঁদের পুত্র মোহনদাস। যেমন তাতা বংশের নাসরবানজীন পুত্র জামশেটজী। তেমনি খোজানী বংশের ঝিনাভাইয়ের পুত্র মুহম্মদালী। বড়ো হয়ে মুহম্মদালী তার নামটাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন- মুহম্মদ আলী। তার পিতার নামকেও দুই ভাগে বিভক্ত করে প্রথম ভাগটাকেই করেন তার পদবি। দ্বিতীয় ভাগটা বর্জন করেন। বাদ যায় বংশপদবিও। বিলেতী কায়দায় বানান করতে গিয়ে ঝিনা হয়ে যায় এমন একটা শব্দ যার উচ্চারণ

সাহেবদের মুখে জিনা, ভারতীয়দের মুখে জিন্না, আরবদের মুখে জিন্নাহ। যেমন আল্লাহ। ইংরেজদের বানানে মহারাজা শব্দটির অন্তেও এইচ জুড়ে দেয়া হতো। বার্মার অন্তেও। হাওড়ার অন্তে এখনো হয়।

জিন্নাহ যে সম্প্রদায়ের লোক তার নাম ইসমাইলিয়া খোজা।

(উল্লেখ্য, ইসলামের দৃষ্টিতে শিয়ারা সম্পূর্ণরূপে কাফির। সে হিসেবে জিন্নাহকে পুরোই কাফির না বলাটাও অনেক কুফরী। নাঊযুবিল্লাহ)

একবার এক আইনের কেতাবে দেখেছিলাম, The term ‘Hindu’ includes Ismailia Khoja. আইনটা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত। তাই যদি হয়, তবে জিন্নাহ  উত্তরাধিকারসূত্রে হিন্দু।”

উল্লেখ্য, জিন্নাহর বংশ, শৈশব, পড়ালেখা, পদচারণা সবই ছিলো আজš§ ইসলাম বিরোধী। তা কখনই ইসলাম অনুরাগী ছিলো না।

বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় লিঙ্কনস ইন থেকে সময়

করতে পারলেই জিন্নাহ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে দর্শকের আসনে বসে মুগ্ধচিত্তে আইরিশ হোমরুল এবং নারীমুক্তি সম্বন্ধে সদস্যদের আলোচনা অথবা দাদাভাই নৌরজীর (তিনি তখন পার্লামেন্টের সদস্য) বক্তৃতা শুনতেন। জিন্নাহর অপর দুটি অবসর-বিনোদনের কেন্দ্র ছিলো ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পাঠাগার এবং রবিবারের হাইড পার্ক যেখানে নানা বক্তা বিচিত্র সব বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে অন্যতম তরুণ ভারতীয় ছাত্ররূপে জিন্নাহ ব্যারিস্টারি পাস করলেন। তবে ইতোমধ্যে তিনি ভারতবর্ষের ‘গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ দাদাভাইকে মনে মনে গুরুরূপে বরণ করে নিয়েছেন। তার ইচ্ছা ছিলো ভারতে ফিরে গিয়ে তিনি গুরুর মতোই লিবারাল এবং সংবিধান অনুসারী পার্লামেন্টারিয়ান হবেন।

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে জিন্নাহ বোম্বের হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি আরম্ভ করলেন। ইতোমধ্যে দাদাভাই-এর সঙ্গে বিলাতের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেয়া ছাড়া তিনি তদানীন্তন কংগ্রেসের অপর প্রথম সারির নেতা গোখলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসেছেন। কিন্তু (গান্ধীরই মত) প্রথম দিকে পেশার না জমায় ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি নেন। মাত্র তেসরা নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি চাকরি করলেও ঐ অল্প সময়ের মধ্যে তার ফৌজদারী আইনের জ্ঞানের খ্যাতি রটে যায়। ছয় মাসের মধ্যে চাকরি ছেড়ে আবার তিনি স্বাধীন আইন ব্যবসায়ে ফিরে এলেন। দুই বছরের ভিতর তার মাসিক আয় দুই হাজার টাকার উপর দাঁড়ায়। সেকালের হিসাবে সেটা প্রভূত আয়। আর্থিক দিক থেকে নিশ্চিত হয়ে এবারে তিনি রাজনীতিতে মন দিলেন।

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে অসুস্থ স্যার ফিরোজ শাহ মেটারে স্থলাভিষিক্ত হয়ে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরূপে তিনি গোখলের সঙ্গে বিলাত যাত্রা করেন। উদ্দেশ্যে নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবির সপক্ষে ব্রিটেনের জনমত সৃষ্টি। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬-২৯শে ডিসেম্বর কংগ্রেসের সে বছরের সভাপতি দাদাভাই নৌরজীর একান্ত সচিব হিসেবে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে যোগদান শুরু করেন এবং দুই দিন দুটি প্রস্তাবের উপর বক্তৃতা দেন।

পাকিস্তানে তার বিশ্বাস ছিলো না। খেলায় বাজি ধরে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। সেটা কংগ্রেসেরই কৌশলে। কংগ্রেস চেয়েছিলো পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ। নইলে দিল্লি নিরাপদ হতো না, কলকাতা লাভ করা যেত না। কংগ্রেস চেয়েছিলো দিল্লির এককাধিপত্য। সংবিধান সভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন পদ্ধতি তথা ওয়েটেজ প্রথা বিলোপ। সরকারি

চাকরিতে স্বতন্ত্র কোটা তথা ওয়েটেজ বর্জন। মুসলিম লীগকে দেশের ও প্রদেশের একাংশ ছেড়ে না দিলে তো লীগ এসব ছেড়ে দিত না। ইংরেজ ভাগ করে দিয়ে গেল এটা পূর্ণ সত্য নয়। কংগ্রেস ভাগ করিয়ে নিল এটাও অনেকটা সত্য।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দেও মাহমুদাবাদের রাজা যিনি নিজেকে প্রথমে মুসলমান মনে করতেন, তাকে জিন্নাহ কঠোরভাবে বলেছিলেন যে, না- তিনি প্রথমে ভারতবাসী পরে নিজেকে মুসলমান। (মাহমুদাবাদের রাজা; Some Memories স্ট্যানলি উলপার্ট কর্তৃক Jinnah of Pakistan; {অতঃপর Jinnah} অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউইয়র্ক ১৯৮৪ গ্রন্থের ৭৯ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত।)

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে (বসন্ত টি কৃপালনী, Jinnah’s Last Legal Battle; ২৭.৩.১৯৮৩) লেখক লিখেছেন যে, জিন্নাহ তার অত্যন্ত ব্যস্ত কার্যক্রমের ভিতর থেকেও সময় বার করে আগ্রায় গিয়ে এক নগর ম্যাজিস্ট্রেটে আদালতে একটি হিন্দু যুবকের পক্ষ সমর্থন করে তাকে বিপদমুক্ত করেছিলেন। এই ঘটনার পাঁচ বৎসর পূর্বে আইনের পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করলেও একটি হিন্দু যুবকের ভবিষ্যৎ উপলব্ধি করে জিন্নাহ অস্বাভাবিক ঐ কার্য করেছিলেন।

পাকিস্তান হওয়ার পর জিন্নাহ তার ভাষণে বলেন, আপনারা স্বাধীন। এই পাকিস্তান রাষ্ট্রে আপনাদের ইচ্ছামত মন্দির মসজিদ অথবা অপর যে কোন উপসনাস্থলে যাবার অধিকার আপনাদের আছে। আপনাদের ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায় যাই হোক না কেন, তার সঙ্গে এই মূলনীতির কোন সম্পর্ক নেই যে, আমরা একই রাষ্ট্রের অধিবাসী। আমার মতে এই নীতিকে আমাদের আদর্শরূপে সদা  জাগরূক রাখা কর্তব্য। তাহলে আপনারা দেখবেন যে, কালক্রমে হিন্দুরা আর হিন্দু এবং মুসলমানরা আর মুসলমান থাকবে না- ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে নয়, কারণ সেটা হলো প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রশ্ন- এ হলো রাজনৈতিক অর্থে, রাষ্ট্রে নাগরিক হিসাবে। [হেক্টর বলিথো কর্তৃক Jinnah: Creator of Pakistan (অতঃপরJinnah রূপে উল্লিখিত হবে) জন মারি, লন্ডন (১৯৫৪), গ্রন্থের ১৯৭ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত।]

এমনকি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দেও জিন্নাহ কট্টর ইসলাম অনুসারীদের কী পরিমাণ বিরোধী ছিলো তার বিবরণ এক সাম্প্রতিক গ্রন্থে ডঃ আফজল ইকবাল; Islamisation of Pakistan ইদারাহ-ই-অদাবিয়ৎ-ই-দিল্লি; দিল্লি (১৯৮৪), ২৫ পৃষ্ঠায় পাওয়া গেছে।

প্রবীণ লীগনেতা ও ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসনের মন্ত্রী এম এ হারুন জানান যে, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে একবার জিন্নাহকে যখন বলা হয় যে, তিনি ইসলাম সম্বন্ধে বলার সময় শরীয়তের উল্লেখ করেন না বলে উলামারা তার সমালোচক, তখন জিন্নাহ তার মন্তব্য করেন, কার শরীয়ত- হানাফীদের? হাম্বলীদের? শাফেয়ীদের? মালিকীদের? জাফরীদের? আমি নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চাই না। এই ক্ষেত্রে পদার্পণ মাত্র উলামারা নিজেদের বিশেষরূপে দাবি করে অগ্রণীর ভূমিকা নেবেন এবং আমি আদৌ চাই না যে, ব্যাপারটা উলামাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক। তাদের সমালোচনার কথা আমি জানি। কিন্তু আমি তাদের ফাঁদে পা দিতে চাই না।

জিন্নাহর এককালের ঘনিষ্ঠ অনুগামী এবং সহকর্মী মুহম্মদ করীম চাগলার বক্তব্য, ভারতীয়দের বিদ্যাভবন, বোম্বাই (১৯৭৩) নিম্নরুপ:

গান্ধী, নেহেরু ও অন্যান্যদের প্রতি তিনি কঠোর এবং রূঢ় উক্তি প্রয়োগ করতেন। কিন্তু গোখলে, তিলক ও তাদের অভিমতের প্রতি জিন্নাহর মনে ছিল গভীর প্রশংসা ও শ্রদ্ধার ভাব।

তিলকের প্রতি জিন্নার শ্রদ্ধার ব্যাপারে চাগলা অপর একটি ঘটনারও উল্লেখ করেছেন।

তিলকের প্রতি ছয় বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দানকারী বিচারপতি ডাভরকে সরকার ‘নাইট’ উপাধি দিলে বোম্বাই হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন তাকে সম্বর্ধনা জানাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাবৎ ব্যবহারজীবীদের কাছে এ সম্বন্ধে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তাদের ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানায়-

জিন্নাহ ঐ বিজ্ঞপ্তির উপর তীব্র ভাষায় এই মন্তব্য লিখে উদ্যোক্তাদের কাছে তা ফেরত পাঠান যে, তিলককে দণ্ডাদেশ বিচারককে সম্মান করার প্রস্তাব করার জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া

উচিত। বিচারপতি স্বয়ং তার সঙ্গে এ সম্বন্ধে কথা বলার পরও জিন্নাহ নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃত হন। এ ঘটনা তার তিলকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার দ্যোতক।

জিন্নাহ সেকালের মুসলমান সমাজের পর্দা প্রথাকে অগ্রাহ্য করে পর্দাবিহীন নিজ পত্নীকে সভা-সমিতি এবং এমনকি লাটভবনেও নিয়ে যেতেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ১৯শে এপ্রিল জিন্নাহ তার মক্কেল ধনাঢ্য পার্শি স্যার দীনশা পেটিটের কন্যা রত্তনাবাই বা রত্তিকে বিবাহ করেন। স্যার দীনশা এই বিবাহের তীব্র বিরোধী ছিলেন এবং আদরনী কন্যাকে সমস্ত জীবনে ক্ষমা করেনি। ভিন্ন ধর্মের তরুণীর

সঙ্গে এই প্রেমঘটিত বিবাহ জিন্নাহর ইসলামের প্রতি বৈরী মনোভাবই প্রকাশ করে।

ব্যারিস্টারি পাস করার পরও তার ইংল্যান্ডে পেশাদার অভিনেতা হবার শখ ছিলো, যা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পিতৃপ্রভাবে। আইনজীবী এবং রাজনৈতিক নেতা হিসাবে সমস্ত দিন গলদঘর্ম হয়ে পরিশ্রম করার পরও তিনি শেক্সপীয়রের রচনা আবৃত্তি করে আত্মমনোরঞ্জন করতেন।

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে একদিন জিন্নাহ ‘বোম্বে কনিকাল’ দৈনিক পত্রিকার তদা নীন্তন সম্পাদক হর্নিম্যানকে বলেছিলেন, মুসলমানদের যে সম্প্রদায়ে তার জন্ম তারা দশঅবতারে বিশ্বাসী এবং উত্তরাধিকার আইন ও সামাজিক প্রথার দিক থেকেও হিন্দুদের সঙ্গে তাদের বহুল সামঞ্জস্য আছে। (সমগ্রন্থ, ১২৫ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, দাদাভাই নৌরজী ও ফিরোজ শা মেটার শিষ্য জিন্নাহ কেবল বিলাত ফেরত বিখ্যাত ব্যারিস্টার ছিলো না, চলন-বলন, পোশাক-পরিচ্ছেদ, আহার-বিহার এবং মানসিকতার দিক থেকেও ছিলেন সেকালের প্রথা অনুযায়ী পাক্কা তথাকথিত সাহেব।

নিয়মিত নামায পড়া অথবা দাড়ি রাখা ইত্যাদি ভারতীয় মুসলমানদের নিদর্শনের তিনি ধার ধারতেন না।

পাঞ্জাবী মুসলমানদের সেলোয়ার, কোর্তা তিনি আদৌ পরতেন না।

বরং কোর্ট-প্যান্টেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। জিন্নাহ গোখলে সম্বন্ধে এবং তিলকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন।

এবং তিলকের বিরুদ্ধে সরকার যখন রাজদ্রোহের অভিযোগ আনে তখন আদালতে জিন্নাহ অত্যন্ত প্রবলভাবে তার পক্ষ সমর্থন করেছিলেন। জিন্নাহর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকের কার্যকলাপ দেখে সরোজিনী নাইডুও অনুরূপ মন্তব্য করেন।

এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক শৈলেশকুমার লিখেন, অধিকাংশ ভারতীয় মুসলমান হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত বলে হিন্দুসমাজের চালচলন ও প্রথার রেশ তাদের মধ্যে থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। জিন্নাহ এই পরিমাণ ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন যে, ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে একবার দিল্লিতে স্যার তেজবাহাদুর সপ্রুকে জিন্নাহ হালকা মেজাজে বলেছিলেন, আমার মনে হয় আমি হিন্দু-মুসলমান সমস্যার একটা সমাধান বাতলাতে পারি। আপনারা আপনাদের গোঁড়া পুরোহিত শ্রেণীকে উৎসাহদান করুন এবং আমরাও আমাদের মোল্লাদের ধ্বংস করি। তাহলে সাম্প্রদায়িক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। (নাঊযুবিল্লাহ) (সমগ্রন্থ, পৃষ্ঠা- ১২৬ )

জিন্নাহর হিন্দুপ্রীতি সম্পর্কে অন্নদা শঙ্কর রায় লিখেন,  জিন্নাহর জীবনের দ্বিতীয় পর্বে তিনি কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে সেতুবন্ধন করেন। লোকমান্য টিলকের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তিনি লখনউতে ১৯১৬ সালে কংগ্রেস লীগ চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী হন। তখন তার উপর আস্থা জাগে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের।

সরোজিনী নাইডু বলেন, তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের রাজদূত।

কংগ্রেসের চেয়ে আরো এক পা এগিয়ে তিনি হোম রুল লীগের সভাপতি হন, যার জন্যে অ্যানী বেসান্ট অন্তরীণ হন।

জিন্নাহর প্রতিপত্তি তখন তুঙ্গে। মডারেটদের চেয়ে  উচ্চে। এই পর্বে ছেদ পড়ে কংগ্রেস যখন গান্ধীজীর নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ নীতি গ্রহণ করে। জিন্নার নীতি নন  কো-অপারেশন নয়, রেসিপ্রোকাল কো-অপারেশন। ননভায়োলেন্ট নয়, কনস্টিটিউশনাল। গান্ধী নেতৃত্ব তিনি গ্রহণ করতে পারেন না নীতিগত পার্থক্যের দরুন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।

গান্ধী যখন গণসত্যাগ্রহ আরম্ভ করতে উদ্যত তখন তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বারদোলি গিয়ে রাত্রিবেলা গান্ধীর শিবিরে উপস্থিত হন। বলেন, গভর্নমেন্ট সৈন্য আনিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করছে, আন্দোলন শুরু হলেই গুলি চালাবে।

সুতরাং আন্দালনে ঝাঁপ দেবার আগে বড়লাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাই শ্রেয়। তাকে নিয়ে জিন্নাহ ও মালবীয় লর্ড রেডিঙের সঙ্গে বসবেন। যদি তিনি রাজী হন। গান্ধী রাজী হন না। কিন্তু গণসত্যাগ্রহের প্রোগ্রাম পরিত্যাগ করেন। যেহেতু মুক্তপ্রদেশে চৌরী চৌর থানা আক্রমণ করে ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে পুড়িয়ে মেরেছে সেহেতু দেশ গণসত্যাগ্রহের জন্যে প্রস্তুত নয়। সিদ্ধান্তটা জিন্নাহর। এবং গান্ধী জিন্নাহর সাথে তার সম্পর্কের জন্যই তা মেনে নেয়।

জিন্নাহর হিন্দুপ্রীতি সম্পর্কে

যাই হোক কিছু কিছু পুরাতন নেতা কলকাতা (এই তথ্য ভ্রান্ত। জিন্নাহ তার পরবর্তী নাগপুর কংগ্রেসের পর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন।) কংগ্রেসের পর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন এবং তাদের মধ্যে জিন্নাহ ছিলেন এক জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তি। সরোজিনী নাইডু তাকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের রাজদূত আখ্যা দিয়েছিলেন। অতীতে মুসলিম লীগকে কংগ্রেসের কাছাকাছি আনার কৃতিত্ব বহুলাংশে ছিল তারই। (An Autobiography দ্য বডলি হেড, লন্ডন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা- ৬৭)

জিন্নাহর মুসলমান বিদ্বেষ সম্পর্কে

বিশের দশকের জিন্নাহর সঙ্গে আলাপচারির উল্লেখ করে শিব রাও জানাচ্ছেন, æশ্রীমতি বেসান্ত এবং অন্যান্য লিবারালরা যে কারণে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকে বিপজ্জনক মনে করতেন জিন্নাহও সেই কারণে তার বিরোধী ছিলেন।

বিশেষ করে ভারতবর্ষের মুসলমানদের উপর খিলাফত আন্দোলনের সম্ভাব্য পরিণাম নিয়ে তার মনে দুশ্চিন্তার অবধি ছিল না। মাওলানা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আন্দোলনের সহকর্মী করাকে তিনি একান্তভাবে অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করতেন।” (সমগ্রন্থ: ১২৫ পৃষ্ঠা)

গান্ধীও স্বয়ং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর লর্ড কেসির কাছে একথা স্বীকার করেন। এন মানসের্গ The Transfer of powar অতঃপর টি.পি রূপে উল্লেখিত, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৬১৭। এইচ এম সীরভি রচিত Partion of India: Legend and Reality (বোম্বাই, ১৯৮৮) পৃষ্ঠা ১৩-১৪ দ্রষ্টব্য।

-মুহম্মদ আলম মৃধা

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৩

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩১