পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে অবাধ খ্রিস্টান ধর্মান্তরিতকরণ। বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতে গভীর শঙ্কার। রহস্যজনক কারণে নীরব সরকার

সংখ্যা: ২৫২তম সংখ্যা | বিভাগ:

বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাকে ঘিরে এনজিও এবং আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান লবি খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে সুদীর্ঘ কালব্যাপী নানামুখী চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। মুঘল আমলেই এদেশের প্রতি এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের শ্যেন দৃষ্টি পতিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে মিশনারীরা খ্রিস্টীয় অপসংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মান্তরের যে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে, পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তার ক্রমবিকাশ সাফল্যের সাথে অব্যাহত থাকে। স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, হাসপাতাল স্থাপন, ঋণ প্রদান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দারিদ্র্যবিমোচন, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি মুখরোচক কর্মসূচির আড়ালে রয়েছে এদেশে ইউরোপীয় অপসংস্কৃতি ও খ্রিস্টধর্ম প্রচার করার নীলনকশার বাস্তবায়ন।

উইলিয়াম কেরি, টমাস, রিচার্ড হলওয়ে, পাদ্রী ক্লাউজ বার্লার, পিটারসন, রবিন মন্ডল ও অলসন-এর মতো লোকেরা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিকৃত বাইবেলের ভ্রান্ত শিক্ষা, কৃষ্টি ও মতাদর্শ প্রচারের জন্য বাংলা ভাষা রপ্ত করে। উইলিয়াম কেরি নতুন আঙ্গিকে বাংলা ব্যাকরণ সংশোধন করে এবং ১৮০০ সালে ইংল্যান্ড থেকে বাংলা বর্ণমালার ছক এনে কলকাতার শ্রীরামপুর মিশন থেকে বাংলায় বাইবেল মুদ্রণ ও প্রচারের ব্যবস্থা করে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় কেরি ‘কথোপকথন’ ও ‘ইতিহাসমালা’ নামক বাংলায় দুটি গ্রন্থ রচনা করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে ৯০টি প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থা কর্মরত ছিল। রোমান ক্যাথলিক চার্চের সংখ্যা এর বাইরে। এদেশে প্রতিকূল পরিবেশে খ্র্রিস্টধর্ম-সংস্কৃতির প্রচার ও বিকাশে তারা যে ত্যাগ ও সাধনা করে তা রীতিমত বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

আর এই ধারাবাহিকতায় বিদেশী অর্থে পরিপুষ্ট বহু এনজিও পার্বত্যাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয়। এদের বেশির ভাগই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০/২৫ বছরে পাবর্ত্যাঞ্চলে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবার খ্রিস্টান হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ১৯৪টি গির্জা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। খাগড়াছড়ি জেলায় ৭৩টি গির্জা। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় চার হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান হয়ে গেছে। বান্দরবান জেলায় গির্জা ১১৭টি। একই সময়ে খ্রিস্টান হয়েছে ৬ হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবার। রাঙ্গামাটিতে চারটি গির্জা খ্রিস্টান বানিয়েছে ১ হাজার ৬৯০টি পরিবারকে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাজেক ইউনিয়নটি সীমান্তবর্তী ও দুর্গম; যা বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলার সমান। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই উপত্যকায় পৌঁছতে খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি শহর থেকে দু’দিন লাগে। এই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে খেয়াং, বম, পাংখু, লুসাই উপজাতির ১০ হাজার মানুষের বাস। ২০/২৫ বছর আগেও এখানে খ্রিস্টধর্মের নামগন্ধ ছিল না। উপজাতীয়দের ভাষা, সংস্কৃতি সবই ছিল। আজ কিছুই নেই। শুধু ইংরেজিতে কথা বলাই নয়; সেখানকার অধিবাসীরা গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গান গায়; মেয়েরা পরে প্যান্ট, শার্ট ও স্কার্ট। তাদের দেখে মনে হয়- যেন বাংলার বুকে ‘একখ- ইউরোপ’। কারণ এখন তারা প্রায় সবাই খ্রিস্টান। দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় খ্রিস্টানরা দালাল মিডিয়ার সহায়তায় অনেক সূক্ষকৌশল ও টাকা ব্যয়ে ধর্মান্তরিত করে চলেছে। পাংখু উপজাতি পুরোপুরি খ্রিস্টান হয়ে গেছে; বদলে গেছে তাদের ভাষা; এমনকি হরফও ইংরেজি। এনজিও’র নাম ধারণ করে খ্রিস্টানেরা এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র, গির্জা ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। এতে সহায়তা করছে মিডিয়া। কিন্তু কেউ মুসলমান হলেই দালাল মিডিয়া নেতিবাচক খবর প্রকাশ করে হৈচৈ ফেলে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের উত্তর, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য গির্জা। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহের অরণ্যে বসবাসরত চাকমা, মারমা, মুরুং, টিপরা, খাসিয়া, মনিপুরী, লুসাই, গারো প্রভৃতি উপজাতির মধ্যে খ্রিস্টধর্মীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বাস  তথা খ্রিস্টধর্মের অনুপ্রবেশ জীবনধারায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। ‘প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বাইবেল এবং প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি গির্জা’। এলক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা উদ্দিষ্ট গন্তব্য পানে ছুটে চলেছে।

১৯৩৯ সালে বাংলাদেশে খ্রিস্টান ছিল মাত্র ৫০ হাজার। ১৯৯২ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আশঙ্কা করা হচ্ছে- এভাবে ধর্মান্তকরণ করতে দিলে অচিরেই খ্রীস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যা পরবর্তীতে রষ্ট্রীয় হাঙ্গামা ও ফিতনা সৃষ্টি কারণ হবে। এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের অব্যাহত অপতৎপরতার ফলে ১৯৯১ সালে শুধুমাত্র গারো পাহাড় এলাকায় তালিকাভুক্ত ১৬ হাজার ভোটারের মধ্যে খ্রিস্টান ৫ হাজারে দাঁড়ায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় কর্মরত এনজিও’র কার্যক্রম নজরদারিতে রাখার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একাধিকবার নির্দেশ দেয়। পাহাড়ের গহীন অরণ্যে সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো প্রশিক্ষণ চালাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যও কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এনজিও’র দেশবিরোধী কাজের জন্য জবাবদিহিতা নেই।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো ক্ষতিকর অপতৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। ইউরোপকেন্দ্রিক একটি এনজিও ধর্মান্তরিতদের সঙ্গে কাজ করছে। পার্বত্য তিন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিও’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অপতৎপরতায় অর্থ যোগানের অভিযোগ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

অধিকার আদায়ের নামে ধর্মান্তরিতদেরকে উস্কে দেয়া ও সহযোগিতা, আরো ধর্মান্তরিতকরণে সহযোগিতা এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্র গ্রুপের সাথে যোগাযোগের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন থাকলেও রহস্যজনকভাবে তা করা হচ্ছে না।

বলাবাহুল্য, সুদান থেকে যেমন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্যের কথা বলে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করা হয়েছে এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব-তিমুরকে আলাদা করা হয়েছে, তেমনি পার্বত্যাঞ্চলে আলাদা স্বাধীন খ্রিস্টান রাজ্যের কথা শোনা যাচ্ছে বহু আগ থেকেই।

অথচ এখনো সতর্ক নয় সরকার। সক্রিয় নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূলত, তাদের অথর্বতার বিপরীতে স্বাধীনতাকে অক্ষত রাখতে হলে গোটা দেশবাসীর জেগে উঠার বিকল্প নেই।

ভারতের তিস্তা প্রকল্পের মুখে পানির উপস্থিতি থাকলেও বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পের তলায় পানির বদলে ঘটে চলেছে চরের বিস্তার।

ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের সেচ প্রকল্পগুলো।

শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের তিস্তায় পানির হাহাকার থাকলেও বিপরীতে ভারত রয়েছে নির্বিকার।

বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্নে ভারতের কোনো মাথাব্যথাই নেই

প্রমত্তা তিস্তা এখন মৃতপ্রায়। ভারত পানি প্রত্যাহার করায় এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর বুকে এখন ধু-ধু বালুচর। ফলে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার ৭ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি ভারতের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণেই তিস্তাপাড়ের মানুষের এ মরণ দশা। মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল; ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

উল্লেখ্য, তিস্তা নদী ৩৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ভারতে প্রবাহিত হয় ২৪৯ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ১১৭ কিলোমিটার। তিস্তার আওতায় মোট সেচ এলাকার পরিমাণ ১৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমি (বাংলাদেশে ৭ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর এবং ভারতে ১২ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর)। বাঁধ দিয়ে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন করে ভারত তার অংশের ১২ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ঠিকই সেচ দিচ্ছে; অথচ পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এ কারণে হুমকিতে রয়েছে ৭ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমির সেচ সুবিধা। তিস্তায় পানি না থাকায় করুণ দশার কথা বারবার কথিত বন্ধুপ্রতীম ভারতকে জানিয়েছে বাংলাদেশ; কিন্তু তারা কর্ণপাত করছে না। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষকের জীবন-মরণ। ভারত শুধু বন্যা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়। তখন এদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। অথচ খরা মৌসুমে যখন তিস্তার পানির উপর ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির সেচ নির্ভরশীল, তখন ভারত পানি আটকে দেয়। অভিন্ন নদীর পানির গতিপথ বাঁধ দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে নাÑ এটাই নিয়ম। অথচ আন্তর্জাতিক এ নিয়ম মানছে না নয়াদিল্লি।

যদিও ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক। অথচ এসব বুলি ভারতের স্রেফ ‘প্রতিশ্রুতি’ হিসেবেই দেখছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় দ্রুত চুক্তি করার তাগিদ দিয়ে ভারতকে ডিসেম্বরেও চিঠি দেয়া হয়েছে। চুক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য পানি ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। তবে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।

ত্রি-স্রোত বা তিন প্রবাহ থেকে উৎপত্তি হওয়ায় নদীটির নাম তিস্তা। এ নদী এখন মরা খালে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি না থাকায় সেচকাজ প্রায় বন্ধ। এক সময়ের স্রোতস্বিনী তিস্তা এখন দেশের কোটি মানুষের দুঃখ। উজানে তিস্তার উপর বাঁধ দিয়ে বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রোধ করছে ভারত। ফলে বর্ষায় তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে লাখো পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে নেই সেচের পানি। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে ডালিয়া পয়েন্টে যে পানি আসছে, তা আসলে তিস্তার পানি নয়। কারণ গজলডোবার সøুইসগেট চুয়ানো পানি ছাড়া আর কোনো পানি তিস্তা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কৃষকরা বলছে। ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন যে পানি আসছে, তা ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে। এ কারণে প্রবহমান তিস্তার বুকে এখন শুধুই বালুচর।

নাব্য সঙ্কটে ফুলছড়ি, সাঘাটা, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এখন ধু-ধু বালুচর। ফলে ১০৫টি আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ নৌরুটসহ বন্ধ হয়ে গেছে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রেলওয়ে ফেরিপথ। বিকল্প না থাকায় চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে। বর্ষাকালে ওইসব নদীর থৈ-থৈ পানিতে এলাকার মানুষের কাছে ভাঙন আর ভাসিয়ে দেয়ার আতঙ্ক। আর খরা মৌসুমে এখন সেসব নদীর বুকে কেবল দিগন্তজোড়া ধু-ধু বালুর চর।

উজান থেকে পানি কম আসায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষকের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ ২০০৮ সাল থেকে ক্রমাগত কমছে। প্রায় ৮ বছরে কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। শুষ্ক মৌসুমে কোনো কোনো সময় পানিপ্রবাহ ১ হাজার কিউসেকের নিচে নেমে আসে। ১৯৯০ সালে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা সেচ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ফলে এর ব্যারাজের সেচের উপর নির্ভরশীল উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি প্রায় অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।

তিস্তা সেচ প্রকল্পকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের চোখে-মুখে ছিল রঙিন স্বপ্ন। অভাব-অনটনে নিষ্পেষিত মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত আর মোটা বস্ত্র পেয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিল। এক সময় এ অঞ্চলের অনুর্বর মাটিতে আবাদ হতো তিল-তিসি ও মাঝে মধ্যে আউশ ধান। তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানিতে অনুর্বর জমি হয়ে উঠে উর্বর। প্রতি শতক জমিতে ফলত ফসল। কিন্তু কৃষকের সেই সোনালি স্বপ্ন হয়ে গেছে ধুসর। গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার সব পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় নদীর বুক এখন প্রায় ধু-ধু বালুচর। ক্যানেলের পাশে সেচ পাম্প বসিয়ে কৃষক ফসল বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

চলতি মৌসুমে চোয়ানো পানি দিয়ে তিস্তা পাড়ে মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পানি দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু তাও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিস্তা পানি চুক্তি না হলে আগামীতে প্রকল্পটিই বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান ভারতবান্ধব সরকারের আমলে আর তিস্তা নদীর পানির আশা করা যায় না। এটা বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। এ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন জনগণ আশা করেছিল, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এই সুসম্পর্কের মাধ্যমে আমরা উভয় দেশ লাভবান হবো। তবে বাস্তবে জনগণের আশা আর সরকারের অর্জনের মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি। আর এই ব্যবধান দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর হয়েছে। সরকার ভারতকে একপাক্ষিক প্রতিদান দিয়েছে। অথচ কূটনীতির নিয়ম হচ্ছে, কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো কিছু দেয়া। সরকার জাতীয় স¦ার্থকে উপেক্ষা করে ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছে। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে একপাক্ষিকভাবে নিতে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে দক্ষ হওয়া উচিত ছিল। তবে সরকার সেই দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। এবারও পারবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সরকারের অতিরিক্ত ভারতপ্রীতি, ভারত নির্ভরতা, ভারত আস্থা তথা নতজানু পররাষ্ট্রনীতিই এর পেছনে মূল কারণ। এক্ষেত্রে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও সক্রিয়তা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৯

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৮ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩৭ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২৭ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

দুর্নীতি দমনে এককালের মহাদাম্ভিক দৈত্য দুদকের দুর্দান্ত দুর্নীতি এটাই প্রমাণ করে যে অন্য কোন নীতি বা ব্যুরো নয়-আত্মিক পরিশুদ্ধতা তথা ইলমে মারিফাতের অনুশীলন অর্জনেই সবধরনের দুর্নীতি প্রবণতা রোধ সম্ভব।