বাংলাদেশ ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানের মনে আঘাত হানে এমন বক্তব্য-বিবৃতি কেন?

সংখ্যা: ২২০তম সংখ্যা | বিভাগ:

বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের অন্তরে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য-বিবৃতি সরকারদলীয় মহাজোটের নেতা-নেত্রীরা প্রায়শই দিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটা পুরাতন অভিযোগ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর আঘাত আসে। আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মী এর বিপরীত হলেও আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা গুটিকতক ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি তথা মহলের জন্য এ অভিযোগ প্রায়শই সত্য হয়ে উঠে। অন্তত নিম্নে বর্ণিত বক্তৃতা-বিবৃতিগুলি তাই প্রমাণ করে।

* ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ ‘সন্ত্রাস নিরসনে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেছে-

“পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।”

* ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল এদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ওয়ার্কশপে বক্তৃতায় বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছে-

“৭৫-এর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাৎ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।”

“২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র‌্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব সাংবাদিকদের কাছে তাদের অভিযানের সংবাদ জানালে তা ফলাও করে ছাপা হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোন তথ্য না পেয়ে ২১ পর্দানশীন নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২ মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেয়।”

“২০০৯ সালের ১৯ জুন রাজশাহীতে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন বিকালেই মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত ঘোষণার পর আবার ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে ব্যাপক তদন্ত করেও জঙ্গি সংশ্লি¬ষ্টতার কোন তথ্য পায়নি। শেষ পর্যন্ত আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিলে জুলাই মাসের ১ তারিখে ১১ দিন কারাবাস শেষে ১৫ জন নিরপরাধ নাগরিক মুক্তি পায়।”

“বোরকা পরার অপরাধে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও কোন জঙ্গি সংযোগের কাহিনী বানাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাইনাল রিপোর্ট দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থেকে অবশেষে তিন অসহায়, নিরপরাধ তরুণী মুক্তি পায়।”

“২০১০ সালের ১ আগস্ট বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট পরিচয়দানকারী জনৈক দেবনারায়ণ মহেশ্বর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। রিট আবেদনে সে দাবি করে-

‘হযরত ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) উনার বড় ছেলে হযরত ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) উনাকে পবিত্র কুরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কুরআন শরীফ-এ রয়েছে, তা সঠিক নয়। হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) উনার ছোট ছেলে হযরত ইসহাক (আলাইহিস সালাম) উনাকে পবিত্র কুরবানি করতে নিয়ে যান।’

এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করে। আদালত রিট খারিজ করে দেয়ার পর দেবনারায়ণের এ চরম হঠকারী ও উস্কানিমূলক কর্মকা-ে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ দেবনারায়ণ মহেশ্বরকে কর্ডন সহকারে এজলাস থেকে বের করে তাদের ভ্যানে প্রটেকশন দিয়ে আদালত এলাকার বাইরে নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায়।”

“বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের দ্বৈত বেঞ্চ ২০১০ সালের ২২ আগস্ট স্বপ্রণোদিত (স্যুয়োমোটো) আদেশ প্রদান করে যে, দেশের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। ‘নাটোরের সরকারী রাণী ভবানী মহিলা কলেজে বোরকা না পরলে আসতে মানা’ শিরোনামে ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় বোরকা পরিধানের বিরুদ্ধে স্যুয়োমোটো এ রায় দেয়।”

“২০১১ সালের ২ জুন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের অন্যতম নেতা মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ দাবি করে-

‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিÑ এ তিনটির বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে।’ ওইদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের মতবিনিময় সভা থেকে ঘোষণা করা হয় যে, ‘সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম থাকলে হরতাল দেয়া হবে।”

“২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে আমাদের সংবিধানের মূলনীতি থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করা হয়।”

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে গত সাড়ে তিন বছরে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গণরোষের মুখে আটক করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা ন্যূনতম শাস্তির কথাও শোনা যায়নি। পত্রিকার পাতা থেকে নেয়া সরকারদলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীর ধর্ম সম্পর্কিত আরও কিছু মন্তব্য উদ্ধৃত করছি :

গত ১০ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দুদিনব্যাপী বার্ষিক সভা ও কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেছিল, “রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিন্দুদের পূজার জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন।” (নাঊযুবিল্লাহ) (আমার দেশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১১)

১৩ জুলাই, ২০১১ তারিখে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে মতবিনিময়কালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম বলেছিল, “রাষ্ট্রধর্ম, ইসলাম ও বিসমিল্লাহ সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান সংশোধনে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তাই সবার মতামত নিয়েই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (আমার দেশ : ১৪ জুলাই ২০১১)

ওই অনুষ্ঠানে সে আরও বলেছিল, “আমি মুসলমানও নই, হিন্দুও নই।” (আমার দেশ : ১৪ জুলাই ২০১১)    আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মুসলমান। গত ৫ অক্টোবর ২০১১ সালে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজাম-প পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিল, “আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোন না কোন বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসে। এবার আমাদের দেবী এসেছে গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (আমার দেশ : ৬ অক্টোবর ২০১১)

১০ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক ২০০৯ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিল, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতিমালা চালু ও বাবা-মায়ের সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা আছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (প্রথম আলো : ১১ ডিসেম্বর ২০০৯)

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে ‘পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোন আইন পাস হবেনা’- মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সে আওয়ামী লীগের মুখে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী এমন কট্টর কথা শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী বরদাশত করতে পারেনা। কাজেই আওয়ামী লীগ যে ইসলাম বিরোধী নয়’ তা আওয়ামী লীগকেই প্রমাণ করতে হবে।  (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।