মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৯৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম মাস এটি। এ মাসের দশ তারিখ  দিনটি হচ্ছে ইয়াওমে আশূরা। যে দিনটি স্মরণীয় ও মার্যাদামণ্ডিত দিন। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এদিনেই সংঘটিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আশূরা উপলক্ষে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-এর ওয়াকিয়া বর্ণনা করতে গিয়ে অধিকাংশ খতীব-ইমাম ও ওয়ায়িযগণকে দেখা যায় তারা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের খিলাফ বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছেন বা একটা গুনাহ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ শরীয়তের মাসয়ালা তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন  নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কখনো কোন ভুল বা ত্রুটি করেননি এবং উনারা কোন গুনাহখতাও করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই অনিচ্ছাকৃতও নয়। কারণ উনারাদেরকে আল্লাহ পাক নবী-রসূল হিসেবে খাছভাবে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের প্রতিটি বিষয়ই ছিল ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

যেমন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর গন্ধম খাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ কিতাব মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর বিছাল শরীফ-এর পর হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর যথাযথ প্রশংসা করে বললেন, আল্লাহ পাক আপনাকে সৃষ্টি করে জান্নাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অতঃপর আপনিই মানব জাতিকে যমীনে নিয়ে আসার কারণ ঘটিয়েছেন। উত্তরে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, আপনি এটা কিভাবে জানলেন? বললেন, তাওরাত শরীফ-এ পেয়েছি। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, আল্লাহ পাক আমাকে সৃষ্টির কতকাল পূর্বে তাওরাত শরীফ লিপিবদ্ধ করেছেন বলে আপনি জানেন? হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম বললেন, চল্লিশ বৎসর পূর্বে। তখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, যে বিষয়টি আমাকে সৃষ্টির চল্লিশ বৎসর পূর্বে আল্লাহ পাক লিখে রেখেছেন সে বিষয়টি সম্পর্কে কেন আমার কাছে জানতে চাচ্ছেন? অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এর উপর জয়ী হলেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণযোগ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের স্বপ্নও যেখানে ওহীর অন্তর্ভুক্ত সেখানে উনাদের জাগ্রত অবস্থার বিষয়গুলো কি ওহীর বাইরে ছিল? কখনই নয়। যদি তাই হয় তাহলে ওহীর ফায়সালাকৃত বিষয়ের জন্য উনাদেরকে দোষারোপ করা কি করে শুদ্ধ হতে পারে?

কাজেই, উনাদের সাথে যদি ভুল বা গুনাহর বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয় তাহলে একইসাথে এটাও সম্পৃক্ত হয়ে যায় যে, আল্লাহ পাকই ওহী নাযিলে ভুল করেছেন এবং তিনিই উনাদেরকে গুনাহ করিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যা চিন্তা-কল্পনা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

একইভাবে মুর্হরম উপলক্ষে শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুশ্ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাতের বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াযীদকে দোষারোপ করার পাশাপাশি বিশিষ্ট ছাহাবী, কাতিবে ওহী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও দোষারোপ করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! মনে রাখতে হবে, কারবালার মর্মান্তিক শাহাদাতের জন্য ইয়াযীদ অবশ্যই দায়ী। কিন্তু ইয়াযীদের অপরাধের জন্য তার যিনি পিতা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওহী, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করা বা উনার সমালোচনা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সমালোচনাকারীদেরকে সরাসরি কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শরীয়তে ১০ই মুর্হরম ভাল খাদ্য খাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশূরার দিন অর্থাৎ ১০ই মুহররম তারিখে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য স্বচ্ছলতা দান করবেন।” (তবারানী শরীফ, মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ)

অথচ আজকে দেখা যায়, নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন- পহেলা মুর্হরম, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারী ভাল বা বিশেষ খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অথচ এর মধ্যে আলাদা কোন ফযীলত বা বরকত নিহিত নেই। আর এ দিনটি মুসলমানের জন্য কোন আনন্দ বা খুশি প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজুসী বা অগ্নিউপাসক কেবল তারাই নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।

নববর্ষ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যেহেতু মজুসীদের রসম-রেওয়াজ তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোন খুশি প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোন ভাল বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই।

অতএব, শরীয়তের মাসয়ালা মুতাবিক আক্বীদা ও আমল শুদ্ধ করে নেয়া প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলার জন্য ফরয। অন্যথায় ইনতিকালের পর হায়-হুতাশ করেও রেহাই পাওয়া যাবে না। বরং কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা