মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৯২তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী বছরের বারতম মাস যিলহজ্জ। আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস এটি। বিভিন্ন দিক থেকে এ মাসের বুযুর্গী ও সম্মান।  এ মাসেই আল্লাহ পাক হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

এ মাসের ফযীলত সম্পর্কে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক উনার নিকট যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেই। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। সুবহানাল্লাহ!

যিলহজ্জের দশম তারিখ দিনটি ঈদুল আযহার দিন। এ মহান দিনে সূর্যোদয়ের পর দু’রাকায়াত ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। অতঃপর যারা সামর্থ্যবান তথা মালিকে নিছাব তাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

কুরবানীর ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আদম সন্তান কুরবানীর দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তš§ধ্যে আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নেকীর কাজ বা আমল হলো কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দান করবে। কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে আল্লাহ পাক কুরবানীদাতার আমলনামায় অসংখ্য নেকী দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরো ইরশাদ করেন, æঈদুল আযহার দিনে কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ পাক কুরবানীদাতার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, æযে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশ্তে পৌঁছিয়ে দিবে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত লাভ করবে। কিন্তু যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি বা নয় তারাও ইচ্ছে করলে একাধিকজন মিলে কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারে। সে মাসয়ালা যিনি বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা যিল্লুহুল আলী উনার প্রকাশিত তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারে। তবে কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবে না। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবে না।

যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ২০০ টাকা করে ৮০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশ্ত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। তদ্রুপ একটা খাসি তিনজন বা তার থেকে বেশিজন মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে, যদি এক নামে কুরবানী করে গোশ্ত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে কুরবানী করবে? এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না।

অতএব, কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে যেমন- হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম, হযরত হাজিরা আলাইহাস্ সালাম উনাদের নামে কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত আহ্লে বাইত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর নামেও কুরবানী করা যেতে পারে।

আরো উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো নিজেদের নামে কুরবানী করবে। এরপর তাদের যদি একাধিক কুরবানী দেয়ার মতো সামর্থ্য থাকে তাহলে উম্মত হিসেবে তাদের উপর হক্ব হলো স্বীয় নবী ও রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নামে কুরবানী করা। এটা তাদের কুরবানী কবুল হওয়ার কারণও বটে।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা