মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৮৮) অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় বস্তু কুরবান বা বিসর্জন না দেয়া পর্যন্ত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গভীর নিছবত, তায়াল্লুক, মুহব্বত, নৈকট্য হাছিল হয় না।

সংখ্যা: ২২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 হযরত আব্দুল্লাহ খাফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার মত অর্থ ছিল না। তবুও তিনি পবিত্র হজ্জ আদায়ের নিয়ত করলেন। একটি বালতি ও রশি সাথে নিয়ে সফরে বের হয়ে পড়লেন।

উল্লেখ্য যে, সেকালে আজকের মত পবিত্র হজ্জ আদায়ের প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ১৯৪৮ সাল থেকে ইহুদী-নাছারারা মুসলমানদের পবিত্র হজ্জ নষ্ট করার জন্য নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে যাচ্ছে। সউদী ওহাবী ও ইহুদী বংশোদ্ভূত সরকার প্রথমত: পবিত্র হজ্জের তারিখ পরিবর্তন করছে। চাঁদ না দেখে মনগড়াভাবে তারিখ গণনা করছে। দ্বিতীয়ত: বেপর্দা ও ছবির মত হারাম নাজায়িয কাজ করতে বাধ্য করছে। এরূপ আরো অনেক নিত্যনতুন চক্রান্ত করছে।

হযরত আব্দুল্লাহ খফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্দেশ্য ছিল, পথে পানির তৃষ্ণা পেলে কূপ থেকে পানি তুলে পান করবেন। কিছু পথ চলার পর উনার পানি পিপাসা দেখা দিল। তখন অনতিদূরে লক্ষ্য করে তিনি দেখতে পেলেন, একটি কূপ থেকে দুটি হরিণ পানি পান করছে। অতঃপর তিনি যখন ওই কূপটির তীরে গিয়ে পৌঁছলেন, দেখতে পেলেন, কূপের পানি বহু নীচে নেমে গেছে। তা দেখে তিনি বললেন, আয় বারে ইলাহী!  বুঝতে পারলামনা। আমি কি হরিণ থেকেও অধম? তা নাহলে তাদের বেলায় পানি উপরে থাকে আর আমার বেলায় এরূপ নীচে চলে গেল কেন? সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে অদৃশ্য আওয়াজ এলো, ওহে! হরিণ দুটির কাছে বালতি ও রশি নেই বলে পানি তাদের নিকটে এনে দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনার নিকট বালতি ও রশি আছে, তাই পানি আপনার থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছি। একথা শুনামাত্রই উনার মা’রিফাত-মুহব্বতের গুপ্তভেদ উন্মোচন হয়ে গেল। তখনই তিনি বালতি ও রশি দূরে নিক্ষেপ করে প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে সামনে চলতে লাগলেন। একটু পরেই আবার হঠাৎ অদৃশ্য আওয়াজ এলো, ওহে খাফীফ! আমি আপনার ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নিয়েছিলাম। তাতে আপনি কামিয়াব হয়েছেন। এখন আপনি ওই কূপের নিকট গিয়ে পানি পান করুন। এরূপ নির্দেশ মুবারক লাভ করে তিনি পূনরায় সেই কূপটির নিকট গেলেন এবং গিয়ে দেখলেন, এবার কুয়াটি পানি দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ রয়েছে। তখন তিনি দু’হাতের অঞ্জলি ভরে নির্বিঘে পানি তুলে পান করলেন। হযরত আব্দুল্লাহ খাফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন দুনিয়াবী সামান-আসবাব থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন, কামনা-বাসনার বস্তু থেকে মুক্ত হলেন তখন হাক্বীক্বী তায়াল্লুক-নিসবত, মুহব্বত ও নৈকট্যের সুঘ্রাণ পেলেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)

রিয়াযত-মাশাক্কাতকারী তথা সূফী-সাধকগণ

উনাদেরকে অত্যন্ত সতর্ক থাকা আবশ্যক

রিয়াযত-মাশাক্কাতকারী তথা সূফী সাধকগণকে সবসময় অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরী। উনাদের শত্রুর কোন অভাব নেই। জিন শয়তান, মানুষ শয়তান সবাই সবসময় উনাদেরকে ধোকা বা প্রতারণা করার জন্য সদাপ্রস্তুত। কখনো বা নেক ছূরতে কখনো বা প্রকাশ্যে নানাভাবে প্রতারণা করে থাকে। অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টিসম্পন্ন না হলে দীর্ঘদিনের রিয়াযত-মাশাক্কাত বা সাধনার ফসল নিমিষেই হাতছাড়া হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জনৈক খলীফার তিন হাজার দেরহাম মূল্যে কেনা একজন খুব ছূরত বাঁদী ছিল। বলতে কি, সে সময় এমন খুব ছূরত বাঁদী দ্বিতীয়টি ছিল না। তার রূপে স্বয়ং খলীফাই আসক্ত ছিলেন। এক রাতে বহু মূল্যবান অলঙ্কার ও মণি মুক্তাখচিত বস্ত্রাদিতে সজ্জিত করে খলীফা উক্ত বাঁদীকে বললেন, তোমাকে বিখ্যাত ছূফী হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় নিজেকে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে তুলে ধরতে হবে। এরূপ বলতে হবে, হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! আমার নিকট প্রচুর ধন-সম্পদ রয়েছে। এখন আমার দুনিয়ার প্রতি বিরাগ জন্মেছে। তাই আমি মনের একান্ত আকুল বাসনা নিয়ে আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছি। অনুগ্রহ করে আপনি আমাকে নিজের মুবারক ছোহবত বা সান্নিধ্য দান করুন।

আর ফলাফল কি দাঁড়ায় তা জানার জন্য বাঁদীর সাথে একজন গোলামকেও পাঠালেন।

বাঁদী নির্দেশ মত সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে উপস্থিত হলো। বাঁদী পর্দার আড়াল থেকে খলীফার কথা ও শিখানো কৌশলগুলো একে একে প্রয়োগ করতে শুরু করলো।

সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্দার আড়াল থেকে বাঁদীর সব কথাই শুনলেন। তার কথা শেষ করার পর তিনি ধীরভাবে মাথা মুবারক উত্তোলন করে একবার ‘আহ’ শব্দ করে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। বাঁদী সে প্রভাব ও শক্তির তেজ সহ্য করতে না পেরে সাথে সাথে অচেতন হয়ে পড়লো এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো।

খলীফা উনার কাছে গিয়ে কোনরূপ খলীফা সুলভ আচরণ না দেখিয়ে বরং ন¤্রতার সাথে বললেন, হযরত! আপনি কিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার একজন আশিক বান্দীকে এভাবে জ্বালিয়ে দিলেন। আপনার প্রাণে কি দয়া-মায়া নেই!

সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি জাওয়াব দিলেন, হে খলীফাতুল মু’মিনীন! আপনি মু’মিন মুসলমানের রক্ষক হয়ে এমন আকাঙ্খা করলেন যে, একজন লোকের দীর্ঘ চল্লিশ বছরের অনিদ্রা ও প্রাণান্ত পরিশ্রম একটি সামান্য বাঁদী বরবাদ করে দিক। এটা কি করে সম্ভব হল! যাই হোক, ভবিষ্যতে এ ধরণের ভ্রান্তিতে কখনও লিপ্ত হবেন না বলে আশা করি। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৮)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)