মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৮৩) রাবেতা বা তাছাওউরে শায়েখ এবং উনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২২৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

পূর্ব প্রকাশিতের পর

আপনি রাবেতা বা তাসাওউরে শায়েখ উনাকে দূর করার চেষ্টা করেন কেন? উনার দিকে সিজদা করা হয় বটে, কিন্তু উনাকে তো সিজদা করা হয় না। তাহলে মসজিদের মেহরাবকে মিটিয়ে বা দূর করে দেন না কেন? উহার দিকে তো সিজদা করা হয়? রাবেতা উনার মতো পরম নিয়ামত সৌভাগ্যবান ব্যক্তিগণ উনাদের ভাগ্যেই জোটে। সেই সালিক বা মুরীদ সর্বদা নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে উসীলা বা মাধ্যম মনে করেন। কাজেই, সব সময়ই উনার দিকেই মনোযোগী থাকেন। উনারা ওই সকল নির্বোধ- নাদানদের মতো নহেন যারা নিজকে মুখাপেক্ষী হীন ধারণ করতঃ স্বীয় লক্ষ্য নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হতে ফিরিয়ে নিয়ে অন্যের দিকে ধাবিত হয়। আর নিজের আত্মার অবস্থার মধ্যে খলোল বা বিপর্যয় সৃষ্টি করে।” (মাকতুবাত শরীফ-৪/৬৮)

খোদাপ্রাপ্তির পথে মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত একান্ত আবশ্যক। মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত অর্জিত হলে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত দিলে পয়দা হয়। নিজের ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, সহায়-সম্পদ এমনকি নিজ জীবনের চেয়েও মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে বেশি ভালোবাসতে হয়। নতুবা মহান আল্লাহপ্রাপ্তির তত্ত্বজ্ঞান হাছিল হওয়া সম্ভব নয়। আর মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি মুহব্বত অর্জনের জন্য মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছুরত বা আকৃতিকে সর্বদা কল্পনায় বা খেয়ালে আনলে তা অনেক সহজ হয়।

শয়তান আদম সন্তানের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তানের পক্ষ হতে নফসে আম্মারা মানবদেহে এক সিপাহসালার। শয়তান ও নফস সর্বদাই মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে বিমুখ করার কাজে সবসময়ই তৎপর। তাদের এই অপতৎপরতা হতে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি মনোনিবেশ করা একা একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে দুনিয়ায় থেকে চিনে নিতে হবে। পরকালে চেনার কোন উপায় নেই। কিন্তু ইহজগতে বান্দা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে চিনবে কেমন করে? মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কোন মিছাল নেই, উদাহরণ নেই, রূপক নেই, আকার নেই। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আকার ও প্রকারবিহীন। তদুপরি শয়তান ও নফস মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজে সবসময় নিয়োজিত। মানুষকে সর্বদাই শয়তান দুনিয়াবী চিন্তা ও বেহুদা কাজে লিপ্ত রাখে। মানুষের মনকে সবসময় অস্থির ও চঞ্চল রাখে। তাই দেখা যায়, আবিদ যখন ইবাদতে লিপ্ত হয়; সালিক বা মুরীদ যখন যিকির-ফিকির, মুরাকাবা-মোহাছাবায় লিপ্ত হয়, তার মন তখন পাগলা হাতির মতো ছুটাছুটি শুরু করে, মনকে উদ্দিষ্ট কর্মে লিপ্ত রাখা সম্ভব হয়না।

কাজেই, ইবাদত, যিকির-ফিকির, মুরাকাবায় একাগ্রতা আনয়নের জন্য মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তাছাওউর বা রাবেতা অর্থাৎ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত বা চেহারা মুবারক কল্পনা করতে হয়। আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম রাবেতাকে খোদাপ্রাপ্তির পথে একটি প্রয়োজনীয় রোকন হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। এরূপ কল্পনা বা খেয়াল করতে করতে এক পর্যায়ে মুরীদ বিনা চেষ্টাতেই যে দিকেই তাকায় সেই দিকেই মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত মুবারক বা আকৃতি মুবারক দেখতে পায়। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার এই ছূরত মুবারককে ছূরতে মেছালী বলে। যে মুরীদ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত মুবারক মেছালকে বিনা চেষ্টাতেই সবদিকে দেখতে পায়, সে অতি ভাগ্যবান। খোদাপ্রাপ্তি কোন তত্ত্ব হাছিল করা তার জন্য অতি সহজ হয়। বিনা চেষ্টাতে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত মুবারক বা চেহারা মুবারক খেয়ালে আসা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি মুরীদের অতীব মুহব্বতেরই বহিঃপ্রকাশ। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি মুহব্বতে জাতি পয়দা না হলে বিনা চেষ্টাতে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত মুবারক খেয়ালে আসা সম্ভব নয়। আর এই মুহব্বতে জাতি পয়দা করার জন্যই মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সবকিছুর চেয়ে অধিক, এমনকি নিজ প্রাণাধিক মুহব্বত করতে হয়। যে দিকেই তাকানো যায়, সে দিকেই যদি মুরীদ আপন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছূরত মুবারক দেখতে পায়, তবে বুঝতে হবে যে তার রাবেতা-এ-ক্বলব-ফিশ-শায়েখ হাছিল হয়েছে; যা মা’রিফাত-মুহব্বত রাজ্যের প্রথম তবকা বা স্তর।

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৮)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)