মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৮০) হক্কানী-রব্বানী শায়েখ তিনি ইচ্ছা করলে মুরীদের লতীফাগুলোতে যিকির জারী করে দিতে পারেন

সংখ্যা: ২২১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহিউস সুন্নাহ, কুতুবুল আল, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জবান মুবারকে অনেকবারই শুনতে পেয়েছি।

কথা প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, অমুক অমুক ব্যক্তির ক্বলবে যিকির তো আমিই জারী করে দিয়েছি। তারা সবাই যাত্রাবাড়ীর মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়েছিলো। ক্বলব জারি করার জন্য অনেক কোশেষও করেছে। কিন্তু কোনোমতেই তা জারী হচ্ছিলো না। একদিন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অমুক অমুক ব্যক্তির প্রতি ইশারা করে বললেন, তারা তো অনেক কোশেষ করতেছে; তাদের ক্বলব জারী হচ্ছে না। আপনার ছোহবতে গেলে তাদের ক্বলব জারী করে দিয়েন। আর তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা সবাই উনার ছোহবতে যাবে এবং যথাযথভাবে আদব বজায় রাখবে। পরে তারা আমার এখানে আসতে শুরু করলো। কয়েকদিন পরেই তাদের ক্বলব যিকির জারী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

আমি আব্বার কাছে লতীফাগুলো জারীকরণ সম্পর্কে শুনেছি। গত শতকের মহান মুজাদ্দিদ আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত হযত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন বিশিষ্ট খলীফা ছিলেন গাইবান্ধার বাজিতপুরে। তিনি প্রথম দিকে সেই বাজিতপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়েছিলেন। উনার বিছাল শরীফ-এর পর যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সন্ধান পান। পরে উনার নিকট বাইয়াত হন এবং আজীবন উনার ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ, দয়া, দান, ইহসানে থেকেই ইন্তিকাল করেন।

তিনি একদিন প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আমাদের বাজিতপুরী হুযূর রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতি বছর ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে আমাদের এলাকায় আসতেন। বাদ আছর হতে মাহফিল শুরু হতো। তিনি যেখানে অবস্থান করতেন সে বাড়ীতে আমরা সবাই উপস্থিত হতাম। উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতাম। বাদ মাগরীব তিনি আমাদেরকে বলতেন বাবারা তোমাদের যার যে সবক রয়েছে, নিয়ত করে বসে যাও। যিকির জারী না হওয়া পর্যন্ত কেউ উঠবে না। যিকির জারী হলে আমাকে জানাবে। আমরা নির্দেশ মত বসে যেতাম। যার যখন যিকির জারী হতো তখন উনার কাছে গিয়ে জানাতাম। উনি পরবর্তী সবক আদায় করতে বলতেন। এভাবে তিনি আমাদের প্রতি বছর ১/২টি লতীফার যিকির জারী করে দিতেন। মূলত একেকজন ওলীআল্লাহ উনাদের এক এক রকম খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট।

“আনফাসুল আরিফীন” কিতাবে উল্লেখ আছে, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত শাহ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। আমি যা কিছু হাছিল করেছি তা আমার শায়েখ, সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দু’টি দৃষ্টি মুবারকের দ্বারাই হাছিল করেছি। আমি যখন আমার মহান শায়েখ, সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকের উদ্দেশ্যে উনার দরবার শরীফ গেলাম। তখন উনার দরবার শরীফ উনার মধ্যে কোনো খিদমত অবশিষ্ট ছিলো না। সবাই সব খিদমত মুবারক ভাগ করে নিয়ে রীতিমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

আমি তখন টগবগে যুবক। শায়েখ উনার দরবার শরীফ উনার খিদমত ছাড়া অবস্থান করা ভালো লাগছিলো না। কিভাবে খিদমতে আঞ্জাম দিতে পারি সেই চিন্তায় সব সময় মশগুল ছিলাম। একপর্যায়ে আমার দৃষ্টি পড়লো দরবার শরীফ উনার রান্নার কাজে জঙ্গল থেকে কাঠ সরবরাহকারী উনার দিকে। দেখলাম তিনি খুবই দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ। আমি উনাকে বললাম, আপনি যদি ইযাজত দেন তাহলে আমি আপনার এ কাজে সহযোগীতা করতে পারি। তিনি আমার কথা শুনে খুশি হলেন।

আমি সেদিন থেকে বনের থেকে কাঠ কেটে জ্বালানী কাজে আঞ্জাম দিতে লাগলাম। একাজে ব্যাস্ত থাকার কারণে শায়েখ উনার সামনা-সামনি বসে উনার মুবারক খিদমত করতে পারতাম না। ছোহবত লাভ করার সময় হতো না।

একদিন আমি কাঠের বোঝা মাথায় নিয়ে আসার পথে দেখতে পেলাম অন্যান্য মুরীদরা নদীর ঘাটে শায়েখ উনাকে গোছল করাচ্ছেন। উনারা উনার পিঠ মুবারক ঘষে দিচ্ছেন। উহা দেখে আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, আজ আমিও উনার পিঠ মুবারক ঘষে দিবো। যেমন চিন্তা তেমনি কাজ। আমি যখন উনার পিঠ মুবারক ঘষে দিচ্ছিলাম; মনে হচ্ছিলো যেনো আমার ঘষানো উনার পছন্দ হচ্ছে। তাই তিনি একবার পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালেন। আর সাথে সাথে আমি ঘুরে পরে গেলাম। আমাকে ধরে পানি থেকে উপরে তোলা হলো। পরে আমার হুঁশ ফিরলো। আমি দেখতে পেলাম আমার অন্তরে যে বদ ধারণা ও খাছলতগুলো আকু বাকু করছিলো তা দুরিভূত হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!

অনেক দিন পর আবারো এরূপ একদিন সুযোগ এসেছিলো। সেদিনেও আমার খিদমত উনার ভালো লেগেছিল। তিনি আমার দিকে দৃষ্টি দিলেন। আর সাথে সাথে আমি বেহুঁশ হয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম এবং পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সময় স্থায়ী ছিলো। পরে যখন হুঁশ ফিরলো তখন দেখতে পেলাম আমার অবশিষ্ট যে বদ খাছলতগুলো ছিলো তা দুর হয়ে পরিপূর্ণ ইছলাহ (পরিশুদ্ধি) হয়ে গিয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)