মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৭৬) তওবা-এর মাক্বাম হাছিলের উপায়

সংখ্যা: ২১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, কাইউমে যামানী, গাউসে সামদানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “মানুষের শরীরে ক্বলব, রূহ, ছির, খফী, আখফা, নফছ, আব (পানি), আতেশ (আগুন), খাক্ (মাটি), বাদ (বাতাস) নামক দশটি লতীফা আছে।”

এই লতীফাগুলোর প্রত্যেকটিরই ভিন্ন ভিন্ন খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্বলব লতীফা হচ্ছে- তওবা-এর মাক্বাম। রূহ লতীফা- ইনাবত-এর মাক্বাম। সির লতীফা- যুহদ-এর মাক্বাম। খফী লতীফা- অরা’-এর মাক্বাম। আখফা লতীফা- শোকর-এর মাক্বাম। নফস লতীফা- তাওয়াক্কুল-এর মাক্বাম। আব লতীফা- কানায়াত-এর মাক্বাম। আতেশ লতীফা- তাসলীম-এর মাক্বাম। খাক লতীফা- রিদ্বা-এর মাক্বাম। বাদ লতীফা- ছবর-এর মাক্বাম।

সালিক বা মুরীদগণ এক একটি লতীফায় এক একজন উলুল আ’যম রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের হতে ফয়েজ পেয়ে থাকেন। ক্বলব লতীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নীচে। অর্থাৎ উনার উছীলায় ফয়েজ প্রাপ্ত হন। রূহ লতীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাদের ক্বদম মুবারক-এর নীচে। সির লতীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নীচে। খফী লতীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নীচে। আখফা লতীফা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ক্বদম শরীফ-এর নীচে তথা উনার ওসীলায় ফয়েজ পেয়ে থাকেন।

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান জাতে পাক তথা অজুদ মুবারক পূর্বেকার সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শরীয়তের মূল ও জামে বা সমষ্টি। তবে খাছ খাছ কামালত প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে দেখা যায়। উনাদের ফয়েজ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকেই হাছিল হয়েছে। তাই সকলেরই মূল হচ্ছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

ক্বলব লতীফা তওবা-এর মাক্বাম। ক্বলব লতীফা-এর নূর হচ্ছে জরদ (হলুদ) রঙের। যখন কোন সালিক বা মুরীদ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিলের জন্য কোন কামিল-মুকাম্মিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হন, সকলের চেয়ে উনাকে সর্বাপেক্ষা অধিক মুহব্বত করেন, সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন মনে করেন। উনার ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু উনাদের ইতায়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে ক্বলব লতীফা-এর  সবক বা অযীফা নিয়মিত আদায় করতে থাকেন তখন সেই  কামিল-মুকাম্মিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার থেকে সেই মুরীদের উপর ফায়েজ পতিত হতে থাকে। সেই সময় মুরীদ বা সালিক এর দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে জীবনের সমস্ত গোনাহ স্মরণ করে খালিছভাবে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা এবং সেই সকল গুনাহের পূনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। সাথে সাথে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন, গোনাহের পূনরাবৃত্তি না ঘটে। সেজন্য সেই পরিবেশ, সংসর্গ, কাজ, স্থান ত্যাগ করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, কবীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকলে ছগীরা গোনাহ হতে বিরত থাকার তৌফিক বা যোগ্যতা পয়দা হয়। আর ছগীরা গোনাহ পরিত্যাগ করলে অপ্রয়োজনীয় মোবাহ কাজ পরিত্যাগ করার যোগ্যতা পয়দা হয়। তৎপরবর্তীতে নৈকট্য বা তায়াল্লুক-নিছবতের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ان تجتنبوا كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سياتكم وندخلكم مدخلا كريما

অর্থ: তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাকো তাহলে তোমাদের অপরাপর গুনাহগুলো আমি ক্ষমা করে দিব। আর সম্মানজনক স্থানে তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো। (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৩১)

ক্বলব লতীফা-এর সবক বা অযীফা আদায় করাকালীন সময়ে এবং তৎপরবর্তীতে কোন গোনাহ-এর কাজ সংঘটিত হলে তওবা-এর ফায়েজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিবন্ধকতার কারণে তওবা-এর মাক্বামের হাক্বীক্বতে (প্রকৃত অবস্থায়) পৌঁছা সম্ভব হয় না। কাজেই, সালিক বা মুরদীকে রীতিমত সবক আদায় করতে হবে আবার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবতও ইখতিয়ার করতে হবে। পূর্বের গোনাহ থেকে বেশি বেশি ইস্তিগফারে রত থাকতে হবে। আযীযী-ইনকিসারী (কাকুতি-মিনতি) সহকারে কান্নকাটি করতে হবে, কান্না না আসলে কান্নার ভান করতে হবে। তাহলে তওবা-এর হাক্বীক্বী মাক্বামে পৌঁছা সহজ ও সম্ভব হবে। ইনশাআল্লাহ!

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)