মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৭৫) তওবা-এর মাক্বাম এবং সেই মাক্বামে ফানা কতিপয় আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম

সংখ্যা: ২১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

একজন সালিক বলেন, আমি কোন একটি গুনাহর কাজ না করার জন্য তওবা করতঃ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। কিন্তু তাতে ইস্তিক্বামত থাকতে পারলাম না। পুনরায় সে পাপ কাজটি করে বসলাম। আবার দৃঢ়তার সাথে তওবা করলাম। আবার পাপ কাজে লিপ্ত হলাম। এভাবে সত্তর বার তওবা করি এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ি। একাত্তর বারের সময় তওবা করার পর আমি আর উক্ত পাপ কাজে মশগুল হইনি। অর্থাৎ উক্ত পাপ করার পথটি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীদের জন্য উনার দ্বার সর্বদা খোলা রেখেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

قل يا عبادى الذين اسرفوا على انفسكم لا تقنطوا من رحمة الله. ان الله يغفر الذنوب جميعا. انه هو الغفور الرحيم.

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বান্দাদের নিকট আমার এই বাণী পৌঁছে দিন যে, æহে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলূম করেছ, তারা আল্লাহ পাক উনার রহমত বা অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি (তওবা করলে) তোমাদের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমার : আয়াত শরীফ ৫৩)

হযরত আবূ উমর জুনাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি সর্বপ্রথম হযরত আবু উসমান হারীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারকে হাত রেখে তওবা করলাম, বাইয়াত হলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরেই আবার পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়লাম। বাইয়াতের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পারলাম না। ফলে আমার সেই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। দূর থেকে উনাকে দেখতে পেলে আমি অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যেতাম। ঘটনাক্রমে একদিন উনার সাথে আমার দেখা হলো। তিনি অত্যন্ত ¯েœহমাখা কণ্ঠে আমাকে বললেন, æপ্রিয় বৎস! শত্রুর সাথে মেলা মেশা করো না। শত্রু চায় তোমার ক্ষতি সাধন করতে। তুমি অধিকতর খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যাও এটাই তার কোশেশ ও কাম্য। তুমি গুনাহর কাজ করলে সে খুবই খুশি হয়। আর নেক কাজ করলে সে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। তুমি আমার ছোহবতে আস। আমি তোমাকে সব বিপদ-আপদে সাহায্য করবো। তুমি তোমার শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।”

হযরত আবু উমর জুনাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার বরকতপূর্ণ সে বাণী মুবারক শুনে আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে পুনরায় তওবা করলাম এবং সেই তওবা, ইস্তিগফারের উপর ইস্তিক্বামত থাকার তৌফিক পেলাম। (কাশফুল মাহযূব- ১৫৭)

একবার একজন সাধক যিনি তওবা-এর মাক্বামে ফানা হয়েছিলেন, তিনি সুলত্বানুল মাশায়িখ হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ হাজির হলেন। বললেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ চাই, মনে হয় আমার হৃদয় অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে। যিকির-ফিকির, রিয়াযত-মাশাক্কাতে মন বসেনা। তার প্রতিকারের জন্য আমি অমুক অমুক শায়খের দরবার শরীফ-এ গমন করেছি। উনাদের কাছে এর প্রতিকারের জন্য পরামর্শ চেয়েছি। কেউ কেউ আমাকে রোযা আদায় করতে বলেছেন, কেউ কেউ আবার দেশ ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছেন। আমি সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছি, কিন্তু কিছুতেই কোন ফায়দা হয়নি।

উনার কথা শুনে শায়খুল মাশায়িখ হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনার রোগের চিকিৎসা হলো, রাতে যখন সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন নীরবে মসজিদে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কাকুতি-মিনতি করে কান্নাকাটি করবেন। সমস্ত গুনাহ থেকে খালিছভাবে তওবা করবেন, জীবনে কখনো আর গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন। আর দোয়া করতে থাকবেন। দোয়ার মাঝে একথাও বলবেন, হে বারে ইলাহী! আমি আপনার কুদরত বুঝতে অক্ষম। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমাকে ক্ষমা করুন। আমাকে কবুল করুন।

সেই সাধক সালিক বা মুরীদ পরে বলেছেন, আমি শায়খুল মাশায়িখ হযরত ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরামর্শ মতো কাজ করে অতি উত্তম ফল পেয়েছি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে আমার অন্তর রোগের সুচিকিৎসার ফলে অভাবিত উপকার সাধিত হয়েছে। (তাযকিরাতুল আওলিয়া-২/৮৭)

শায়খুল মাশায়িখ হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি একবার একজন অন্ধ লোককে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে দেখলাম। সে কেবল বলছিল,  اعوذبك منك আউযু বিকা মিনকা” অর্থাৎ, আমি আপনার নিকট আপনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

শায়খুল মাশায়িখ হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি লোকটিকে বললাম, এ কোন ধরনের দোয়া? তিনি বললেন, আমি একবার একজন সুশ্রী বালকের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম। তাকে দেখে অনেকটা আত্মতৃপ্তিবোধ করেছিলাম। এমন সময় কোথা থেকে এক বাতাসের আঘাত আমার চক্ষুদ্বয়ে লেগে গেল। তার ফলে আমার চক্ষুদ্বয় অন্ধ হয়ে গেল। আমি অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেলাম, তুমি একবার দৃষ্টিপাত করেছ সেজন্য একটি চড় খেয়েছ। যদি আরও বেশি দৃষ্টিপাত করতে তাহলে আরও বেশি সাজার যোগ্য হতে।” আমি খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করলাম। জীবনে কখনো এরূপ কাজ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। সেদিন থেকে এরূপ দোয়াই করছি।

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)